কাজী জহিরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা যদি মাঠের রাজনীতিকদের মতো কথা বলেন তাহলে তারা কেবল নিজেদের দায়িত্বহীনতা এবং অজ্ঞতারই পরিচয় দেন না, এর দায় পুরো জাতির ওপরই বর্তায়। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, ‘কারও বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়।’ হত্যাকারীরা এতে আহলাদিত হলো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দায়িত্ব পালনে নিরুত্সাহিত বোধ করল। কিছুদিনের মধ্যেই আবারও বেডরুমে হত্যাকাণ্ড ঘটল, এবার ঢাকার আরেক অভিজাত এলাকা, গুলশানের এক গৃহবধূ বেডরুমে খুন হলেন। দেশে ক্রমেই গুম-হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে। বিএনপি নেতা নাজমুল খুন হয়েছে চার মাস পার হয়ে গেল, আজ অব্দি পুলিশ খুনিদের টিকির সন্ধানও পায়নি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ঘুষ কেলেঙ্কারির গরম খবর নরম হতে পারেনি, এর মধ্যে বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা করে দিলেন, ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া গুম করেছেন! বিশ্বব্যাংক যখন আবুল হোসেনের দুর্নীতির জন্য টাকা দেয়া বন্ধ করে দিল, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে বিএনপি আমলের দুর্নীতির জন্য তারা টাকা দেবে না।
কিছুদিন আগে তিনি নানান জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে বলতে লাগলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ৫ কোটি রুপি নিয়েছেন নির্বাচন করার জন্য। ক’দিনের মধ্যেই পাকিস্তানের যথাযথ কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি জানিয়ে দিল—এটা সর্বৈব মিথ্যা খবর। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন অপপ্রচার চালানোর জন্য নিশ্চয়ই একটি বড় অংকের অর্থদণ্ড দাবি করে মানহানির অভিযোগ করা যায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথা বিশ্বাস করতে চাই। দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের কর্তব্য। কিন্তু যখন দেখি বার বার প্রমাণিত হচ্ছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্টেটমেন্টগুলো অসত্য, তখন দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা কী করে এই প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখি? প্রধানমন্ত্রীও একজন মানুষ, তিনিও কখনও কখনও ভুল তথ্য পরিবেশন করতেই পারেন। এমন ঘটনা কেবল ঘটতে পারে সরকারযন্ত্রের কোনো শাখার অদক্ষতার কারণে, তাকে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকলে। এমন ঘটনা যদি কখনও ঘটে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো, যারা দেশের মালিক, তিনি যাদের সেবক, সেই জনগণের কাছে আরেকটি বিবৃতি দিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশনের জন্য ক্ষমা চাওয়া। তাহলেই কেবল প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে, সরকার ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। নিজেদের অতি ঠুনকো স্বার্থের জন্য ক্রমাগত মিথ্যা বলে পুরো সরকার ব্যবস্থা তথা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার খেসারত বহির্বিশ্বের কাছে প্রতিদিন দিতে হচ্ছে কোটি কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীকে।
ফিরে আসি ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে। ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া গুম করেছেন, একথা বললেই কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ? আপনার সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী, লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য—এরা কি এত অদক্ষ যে খালেদা জিয়া কাউকে লুকিয়ে রাখলেন আর পুরো সরকার তাকে খুঁজে বের করতে পারছে না? আমাদের উচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করা। নিশ্চয় গোয়েন্দা সংস্থা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ প্রধানমন্ত্রীকে এই খবর দিয়েছে যে, খালেদা জিয়া ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছেন। সরকারের যথাযথ সংস্থা নিশ্চয়ই এটাও জানে, ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন। এখন তো সরকারের আর পেছানোর কোনো পথ নেই। সরকারের সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করা এবং উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করে মানুষ গুম করার অপরাধে খালেদা জিয়াকে বিচারের সম্মুখীন করা। যদি এটা করতে না পারে, তাহলে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উচিত ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা। আর দ্বিতীয় পথটি খুব সোজা, জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলার জন্য ক্ষমা চাওয়া।
মিথ্যা বলে দায়িত্ব এড়ানো যায় না, ক্রমাগত মিথ্যার খেসারত দিয়েও কি সরকারের এই বোধোদয় হবে না? আপনাদের সব সময় বলতে শুনি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ। কিন্তু কখনোই আপনাদের কাজে-কর্মে এই উক্তির প্রতিফলন দেখতে পাই না। দেশের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী হয়েও আপনারা যখন কেবল দলের স্বার্থে কথা বলেন, কাজ করেন, তখন তো স্পষ্টতই প্রমাণ হয়, আপনাদের কাছে দেশ নয় দল বড়, আপনারা বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী নন, কোনো একটি দলের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী। সরকারের নির্বাহী দায়িত্ব গ্রহণের শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসুন এবং প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলেই আপনাদের কথায়-আচরণে দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটবে।
লেখক : কবি, কলাম লেখক
কিছুদিন আগে তিনি নানান জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে বলতে লাগলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ৫ কোটি রুপি নিয়েছেন নির্বাচন করার জন্য। ক’দিনের মধ্যেই পাকিস্তানের যথাযথ কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি জানিয়ে দিল—এটা সর্বৈব মিথ্যা খবর। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন অপপ্রচার চালানোর জন্য নিশ্চয়ই একটি বড় অংকের অর্থদণ্ড দাবি করে মানহানির অভিযোগ করা যায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি কথা বিশ্বাস করতে চাই। দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের কর্তব্য। কিন্তু যখন দেখি বার বার প্রমাণিত হচ্ছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্টেটমেন্টগুলো অসত্য, তখন দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা কী করে এই প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখি? প্রধানমন্ত্রীও একজন মানুষ, তিনিও কখনও কখনও ভুল তথ্য পরিবেশন করতেই পারেন। এমন ঘটনা কেবল ঘটতে পারে সরকারযন্ত্রের কোনো শাখার অদক্ষতার কারণে, তাকে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকলে। এমন ঘটনা যদি কখনও ঘটে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো, যারা দেশের মালিক, তিনি যাদের সেবক, সেই জনগণের কাছে আরেকটি বিবৃতি দিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশনের জন্য ক্ষমা চাওয়া। তাহলেই কেবল প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে, সরকার ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। নিজেদের অতি ঠুনকো স্বার্থের জন্য ক্রমাগত মিথ্যা বলে পুরো সরকার ব্যবস্থা তথা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার খেসারত বহির্বিশ্বের কাছে প্রতিদিন দিতে হচ্ছে কোটি কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীকে।
ফিরে আসি ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে। ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া গুম করেছেন, একথা বললেই কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ? আপনার সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী, লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য—এরা কি এত অদক্ষ যে খালেদা জিয়া কাউকে লুকিয়ে রাখলেন আর পুরো সরকার তাকে খুঁজে বের করতে পারছে না? আমাদের উচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করা। নিশ্চয় গোয়েন্দা সংস্থা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ প্রধানমন্ত্রীকে এই খবর দিয়েছে যে, খালেদা জিয়া ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রেখেছেন। সরকারের যথাযথ সংস্থা নিশ্চয়ই এটাও জানে, ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়া কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন। এখন তো সরকারের আর পেছানোর কোনো পথ নেই। সরকারের সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। ইলিয়াস আলীকে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করা এবং উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করে মানুষ গুম করার অপরাধে খালেদা জিয়াকে বিচারের সম্মুখীন করা। যদি এটা করতে না পারে, তাহলে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উচিত ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা। আর দ্বিতীয় পথটি খুব সোজা, জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলার জন্য ক্ষমা চাওয়া।
মিথ্যা বলে দায়িত্ব এড়ানো যায় না, ক্রমাগত মিথ্যার খেসারত দিয়েও কি সরকারের এই বোধোদয় হবে না? আপনাদের সব সময় বলতে শুনি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ। কিন্তু কখনোই আপনাদের কাজে-কর্মে এই উক্তির প্রতিফলন দেখতে পাই না। দেশের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী হয়েও আপনারা যখন কেবল দলের স্বার্থে কথা বলেন, কাজ করেন, তখন তো স্পষ্টতই প্রমাণ হয়, আপনাদের কাছে দেশ নয় দল বড়, আপনারা বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী নন, কোনো একটি দলের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী। সরকারের নির্বাহী দায়িত্ব গ্রহণের শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসুন এবং প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলেই আপনাদের কথায়-আচরণে দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটবে।
লেখক : কবি, কলাম লেখক
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন