ইকরামুল কবীর টিপু : বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ দিন পার হলেও সরকার তার সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ও পার হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের সরব উপস্থিতিও নেই। অনুসারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় কোনও দিক থেকেই আশার বাণী নেই। আছে ধোঁয়াশা।
‘ইলিয়াস আলী জীবিত ফিরে আসবেন’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমন আশাবাদ ব্যক্ত করায়, অনেকের মতো ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরাও কিছুটা আলোর রেখা দেখছিলেন। গতকাল শনিবার সকালেও ছিল আলোর রেখা। সকাল গড়িয়ে সূর্য যত পশ্চিমে হেলছিল শঙ্কা ততই বাড়ছিল। দুপুরে ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকন ও নাজিম উদ্দীন আলম। এ যেন ছাত্র রাজনীতির মধ্য ও শেষ লগ্নের নিয়মিত পারিবারিক সাক্ষাতের ধারাবাহিকতা। ইলিয়াস আলীর শয্যাসায়ী স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা তেমন কোনও কথাই বলতে পারেননি। তার একটাই চাওয়াÑ যেকোনও কিছুর বিনিময়ে হলেও আমার স্বামীকে ফেরত চাই। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস ও ছোট ছেলে লাবিব শাহারা তাদের পিতার বন্ধু দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ‘বাবা কবে আসবে’ একমাত্র মেয়ে সায়েরা নাওয়ালের এমন প্রশ্নে সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ইলিয়াস আলীর রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রায় আধঘণ্টার উপস্থিতি বনানীর সিলেট ভবনের পঞ্চম তলায় কিছুটা প্রাণের সঞ্চার করে। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর বাসভবনে এমনই হতাশা ও আতঙ্কিত পরিবেশ লক্ষ করা গেছে।
গতকাল শনিবার সিলেট ভবনে গেলে, ইলিয়াস আলীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী রফিক হিলালী জানান, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদি লুনা ও তার সন্তানরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও ছোট ছেলে লাবিব ও একমাত্র মেয়ে সায়েরা নাওয়াল স্কুলে পরীক্ষা দিতে পারছে না। রফিক হিলালী আরও জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যখন যে ধরনের তথ্য চাচ্ছেন পরিবারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। আমরা ইলিয়াস আলীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনার গাড়িচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ম্যাডাম বাসা থেকে বের হন না। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন। নামাজ পড়েন। সিলেট ভবনের কেয়ারটেকার আব্দুর রহমান জানান, প্রথম ঢাকাসহ সিলেটের অনেক নেতাকর্মী এসেছিলেন। এখন আর কেউ আসে না। লোকমুখে শুনতে পান, ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন। সিলেট ভবনের সামনের দোকানী আলামিন জানান, একদিন অনেক লোকজন আসার পর শুনেছি ইলিয়াস আলীকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে তেমন কাউকে দেখা যায় না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন