শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

৬২ হাজার খাম্বা কিনছে সরকার


দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ রাখতে হবে

মহাজোট সরকার বিপুলসংখ্যক বিদ্যুতের খাম্বা কিনছে। অতীতে খাম্বা কেনা নিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা না চালিয়ে খাম্বা কিনে বাণিজ্য করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশাল প্রচার-প্রপাগান্ডাও চলেছে। এবার  প্রায় ৬২ হাজার ‘খুঁটি বা খাম্বা’ কিনছে বর্তমান সরকার। এমনিতেই দুর্নীতির মড়ক লেগেছে। মাহমারী আকারে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প ভেস্তে গেছে। ব্যাংকে ঘটেছে ‘হরিলুট’-এর ঘটনা। শেয়ারবাজার হয়ে গেছে নিস্তেজ। রেলওয়েতে পড়েছে কালো বিড়ালের আছড়। কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুৎ খাত যখন নানা প্রশ্নে জর্জরিত তখন সরকারের খাম্বা কেনা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য সঞ্চালন লাইনের বিস্তৃতি দরকার। এ জন্য প্রয়োজন খাম্বা কিন্তু সেটা যেন দুর্নীতিবাজদের পোয়াবারোর জন্য না হয়, সে আকুতি সবার।
গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিপুল খাম্বা কেনার অনুমোদন দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘১৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার কাঠের ও ৫০ হাজার ৬৫০টি এসপিসি খুঁটি ক্রয়ের দরপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার কাঠের খুঁটি সরবরাহ করবে নর্ডিক উডস লিমিটেড ও এ জন্য ব্যয় হবে ২৮ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অন্য দিকে ৫০ হাজার ৬৫০টি এসপিসি খুঁটি সরবরাহ করবে যৌথভাবে কনফিডেন্স পাওয়ার লিমিটেড ও ডোয়েন্স অ্যান্ড কনফিডেন্স। যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও উপযুক্ত মূল্যে এগুলো সংগ্রহ হোক। এ জন্য ব্যয় হবে ৬১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ও ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ফলে এ খাতে মোট ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বিপুলসংখ্যক খাম্বার সাথে এই প্রকল্পের আওতায় নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ, বিদ্যমান লাইন নবায়ন, কেভি সাব স্টেশন নির্মাণ ও পুরনো সাব স্টেশনগুলোর মতা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী সঞ্চালন লাইন তৈরির জন্য ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার কেনার ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে চার লাখের বেশি নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব বলে মনে করে বিদ্যুৎ বিভাগ। দৃশ্যত এটি বিদ্যুৎসেবা পৌঁছানোর জন্য সরকারি উদ্যোগ। এতে ৪৫৩টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। এ ধরনের বাস্তবসম্মত ও জনসেবা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কথা বলেই সাধারণত অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়। শেষে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা খরচ হয় কিন্তু জনগণের লাভ হয় না। একই সাথে বৈঠকে দণি কোরিয়া থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৩৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। নতুন করে সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী ৩৫টি পাওয়ার ট্রান্সফরমার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ বিপুল পরিমাণ খাম্বা কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্রয় প্রস্তাবের অন্য প্রকল্পগুলো কমবেশি নির্বাচনকে ঘিরে। আমরা মনে করি, সরকার রাজনৈতিক চিন্তার চেয়ে জনগণের লাভালাভের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবে। আর যেন কোনো খাম্বা কেলেঙ্কারির ঘটনা না ঘটে সে দিকে সতর্ক থাকবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads