সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ইসলামবিদ্বেষী আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন



আসিফ মহিউদ্দীন
রাজীব ওরফে থাবা বাবাতেই শেষ নয়, অনলাইনে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছাড়ানো ও নাস্তিক্যবাদ প্রসারে তৎপর আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি তার চরম বিরাগ। নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেয়া শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মানুষের কোনো উপাস্য নেই, এমনকি আল্লাহও। হাজারো ঈশ্বরের সৃষ্টি মানুষের অমিত সৃষ্টিশীলতারই নিদর্শন।’ আসিফ অনলাইনের অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট। থাবা বাবার মতো ব্লগারদের সহযোগী।
এ দিকে গতকাল নয়া দিগন্তে  থাবা বাবাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নাস্তিকদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত ধর্মকারী ডটকম ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আসিফ কেবল নিজেই নাস্তিক নন, অন্যদেরও তিনি এ বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন। থাবা বাবার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস, যেটি ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট আপডেট করা, তাতে থাবা বাবা লিখেছেন, ‘ঈশ্বর কি আস্তিক না নাস্তিক’। এর প্রথম উত্তরদাতা হলেন আসিফ মহিউদ্দীন।
তিনি লিখেছেন, ‘অবশ্যই নাস্তিক, মানে আমাগো দলে আর কী। ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তাকে কেউ সৃষ্টি করেছে। সে বলে সে স্বয়ম্ভু। তেমনি নাস্তিকও বিশ্বাস করে না তারে কেউ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ ঈশ্বর একজন নাস্তিক।’
সেখানে আরেকজন লিখেছেন, ‘ঈশ্বর কি মানুষের মতো  কিছু নাকি এলিয়েন টাইপ? ধর্মগ্রন্থের বর্ণনায় তো মনে হয় মানুষের মতো। মুহাম্মদ মেরাজ থেকে এসে কী বর্ণনা দিয়েছিল।’
ব্লগার থাবা বাবার পক্ষে গতকালও অনলাইনে চলছে প্রচারণা। তার সমর্থক বেশির ভাগ ব্লগার এটাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে থাবা বাবার ব্লগ সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই।  তবে এর জবাব দেয়া হয়েছে ব্লগার ডা. ইমরান এইচ  সরকারের প্রজন্মতে। যাতে ডজনখানেক লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে থাবা বাবার অনৈতিক লেখাগুলো সম্পর্কে পাঠক ধারণা পেতে পারেন। তার সবচেয়ে হালকা একটি ব্লগ এখানে তুলে ধরা হলো।  সামহয়্যারইন ব্লগে থাবা বাবা ব্লগটি লিখেছেন ৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে। তাতে- ‘মানবজন্ম ও একটি প্রশ্ন’ শিরোনামের ব্লগটি সরাসরি তুলে ধরা হলো
‘চারজন মানুষ, একজন একটি বিবাহিত দম্পতির সন্তান, একজন গভীর প্রেমে আবদ্ধ কিন্তু অবিবাহিত যুগলের সন্তান, একজন ধর্ষণের শিকার একটি অসহায় মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার ফলাফল, শেষ জন একজন  বেশ্যার সন্তান। এই চারজন মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমাদের সমাজ এই চারজন মানুষের মধ্যে শেষের তিনজনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। কেন? কারণ শেষের তিনজনের মা-বাবার মধ্যে কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক নেই।’
থাবা লিখেছেন, ‘আমাদের সাহিত্য থেকে শুরু করে সমাজ সবাই সন্তান জন্মের প্রক্রিয়াটাকে খুব সুন্দর করে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। বলা হয় দু’জন মানুষের ভালোবাসা থেকে সন্তানের জন্ম হয়। ভালোবাসা ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব না। এই চাদর মুড়ি দেয়া সত্যের সংজ্ঞায় ধর্ষিতা মেয়েটির সন্তান কি তাহলে মিথ্যে? অবিবাহিত একটি যুগল, যারা নিজেদের প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের সন্তান তাহলে সত্য না কেন? শুধু বিয়ে নামের একটা সামাজিক আচারের অভাবে? আর সন্তান জন্মদানের পরে তাদের প্রেমকে অবৈধ বলারই বা যুক্তি কোথায়?’
থাবার মতে, ‘বিয়ে হলেই সেখানে খুব ভালোবাসা থাকবে তার কি কোনো ধরনের নিশ্চয়তা আছে? এখনো অগণিত বিবাহিত মেয়ে প্রতি রাতে তাদের স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হয়। স্বামীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটি যখন তার ধর্ষক স্বামীর ঔরসে সন্তানের জন্ম দেয়, তখন তাকে বৈধতা দেয়ার যুক্তি কি? সেও তো একজন ধর্ষিতার সন্তান। এখনো আমাদের সমাজে বাড়ির বউদের স্ত্রী হিসেবে একটা অদৃশ্য বা অব্যক্ত ভূমিকা আছে। সেটা হলো তারা স্বামী বলে একজন পুরুষের যৌন ুধা মেটানোর একটা যন্ত্র, বিনিময়ে মেয়েটা স্বামীর কাছ থেকে খাওয়া-পরা-থাকার সুবিধা পায়। একজন প্রচলিত বেশ্যার সাথে এই মেয়েটার পার্থক্য একটাই, একজন বেশ্যাকে এক এক সময় এক একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়, আর এই মেয়েটিকে সারা জীবন একজন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হিসেবেই কাটাতে হয়। একজন বেশ্যা যেমন আমৃত্যু তার আবদ্ধ জায়গায় শুধু দেহদান করে বন্দিজীবন কাটায়, এই মেয়েটিও তাই। তাহলে তার সন্তানের সাথে বেশ্যার সন্তানের পার্থক্য করা কেন?’
থাবা লিখেছে, ‘মসজিদের ইমাম নির্বাচন করা প্রসঙ্গে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। অবৈধ প্রেমের ফল, বেশ্যার ছেলে, যুদ্ধশিশু ও ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া অবাঞ্ছিত কেউ ইমাম হতে পারবে না। তাহলে বিয়ের নামে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির সন্তান কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? ভাত-কাপড়ের বিনিময়ে যে মেয়েটি তার জীবন বিকিয়ে সারা জীবন স্বামী নামক একটা মানুষের যৌনচাহিদা মেটায় তার ছেলে কি মসজিদের ইমাম হতে পারে? আর বাবা-মায়ের প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে জন্ম হওয়া ছেলেটি, যার বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনটি ছিল না, মসজিদের ইমাম হতে তার দোষটাই বা  কোথায়?’
কুরআনের আয়াত ও ইসলাম নিয়ে আসিফ মহিউদ্দিনের কটা : আসিফ মহিউদ্দিন (গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১টা) ব্লগে একটি পোস্ট লেখেন। সেখানে ইসলাম ও কুরআনকে কটা করে তার লেখা হলো :
‘বিসমিল্লহির রহমানির রাহিম। আউজুবিল্লা হিমিনাশ শাইতানির নাস্তিকানির নাজিম।’
গত বছরের ৫ মে পবিত্র কুরআন শরিফকে মহাপবিত্র ‘আহাম্মকোপিডিয়া’ লেখার মতোও ধৃষ্টতা দেখায় এ ব্লগার। পরে তীব্র প্রতিবাদের মুখে এ পোস্টটি সে তার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে (এর স্ক্রিন শট এখনো আছে)।
আসিফ মহিউদ্দিন তার ফেসবুক ওয়ালে মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ সা:-কে নিয়ে লেখে, ‘মুহাম্মদ নিজেকে আইডল বা নিজেকেই ঈশ্বর না বলে একটি কল্পিত ঈশ্বরকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ যেন ব্যক্তিপূজায় আসক্ত না হয়, তাকেই যেন মানুষ ঈশ্বর বানিয়ে পূজা করতে শুরু না করে, সে ব্যাপারে তিনি কঠোর ছিলেন। তাই তার সমস্ত রচনাই তিনি আল্লার নামে চালিয়ে দিয়েছেন, এর রচয়িতা হিসেবে আল্লাকে সৃষ্টি করেছেন!’ আরেক লেখায় সে লিখেছে, ‘ধর্মান্ধ মুসলিমদের উত্তেজনার শেষ নেই। তাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে কে মুহাম্মদের ছবি আঁকলো, কে ধর্মের সমালোচনা করল। অথচ এতে মুহাম্মদ/আল্লার কখনই কিছু যাবে আসবে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুহাম্মদের ছবি আঁকা হলে স্বর্গে মুহাম্মদ সাহেব কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে আত্মহত্যা করছেন! আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, তার উম্মতরা ঠিকই তাকে একজন পীরে পরিণত করেছে।’ ফেসবুকে বিশ্বনবীর একটি কাল্পনিক ছবিকে দেখিয়ে সে লেখে, এই ছবিটা মুহাম্মদের উন্মাদ উম্মতদের উদ্দেশ্যে একটা জবাব হতে পারে।’
ইসলামের বিধান পর্দা বা বোরকা নিয়ে সে লিখেছে, ‘বোরকা পরাটা সমর্থন করি না, বোরকা হিজাব মূলত আরবির বর্বর সমাজের প্রতীক। একটা সমাজে অত্যধিক বোরকার প্রাদুর্ভাব থাকা মানে হচ্ছে সেই সমাজের পুরুষগুলো সব এক একটা ধর্ষক, সেই ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সকল নারীকে একটা জেলখানা নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এইসব অজুহাতে নারীকে যুগ যুগ ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কখনো ঘরের ভেতরে, আবার কখনো বোরকা নামক চলমান জেলখানার ভেতরে।’
ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দান নিয়ে কটা করে সে লিখেছে, ‘ধার্মিকদের মাথায় স্বার্থচিন্তা থাকে যে, এই উপকারে সে পরকালে হুর পাবে। এমনকি তারা কোনো দরিদ্র, দুস্থ, পঙ্গু মানুষকে দেখলেও বেশির ভাগ সময়ই স্বার্থপরের মতো নিজের কথাই ভাবে। আর যদি ওই পঙ্গু লোকটির কথা ভাবেও, তাতেও তাদের মাথায় থাকে স্বর্গে হুরী সঙ্গমের অশ্লীল চিন্তা।’ তার মতে, ‘জনগণের সুখ ও অর্থনৈতিক সাম্যের জন্য সর্বপ্রথম যা করতে হবে, তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের উচ্ছেদ।’
তবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে এমন অবমাননা ও উসকানিমূলক পোস্ট দিলেও আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads