সাধারণ অর্থে রাজনীতি বলতে যা বুঝায়, বাংলাদেশের মসজিদের ইমামগণ এবং কওমী মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষকবৃন্দ ও তাদের অনুসারী সাধারণ দ্বীনদার মুসলমানরা সেই রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরেই অবস্থান করেন, বলতে হবে। রাজনীতিতে ধর্মীয় কোনো ব্যাপারে আপত্তিকর কোনো কিছু দেখলেই শুধু এ ব্যাপারে তারা ঈমানী তাগিদে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। গত শুক্রবার হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা যেসব ইসলামী দল সারা দেশব্যাপী যেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন, এটা সরকারি-বেসরকারি, দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমানেরই একটি ঈমানী ইস্যু। আমাদের মতো মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের আঙ্গুলে গোনা একটি নাস্তিক গ্রুপ এদেশের মাটিতে বসে মহান আল্লাহ, তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসলাম ও এর অনুসারীদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় মিডিয়ায় কুৎসা রটনা করবে, আর এদেশের সরকার ও তওহীদী জনতা তাতে নীরব ভূমিকা পালন করবে, তাহলে তাদের কি করে ঈমান থাকবে? এছাড়া সারাবিশ্বের মুসলিম-অমুসলিম সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেইবা আমাদের পরিচিতি ও মান-মর্যাদা কি করে থাকবে? খোদ মুসলিম প্রধান- এদেশের সরকার, সরকারি দল ও সরকার প্রধান তাদের সকলেরইবা কি পরিচয় দুনিয়াবাসীর কাছে ফুটে উঠবে? ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করলে বিশেষ করে আল্লাহ এবং প্রিয় নবী (সাঃ) ও ইসলামের মর্যাদার বিষয়টি ভাবলে এর প্রতিবাদ জ্ঞাপন ও সরকারের কাছে এজন্যে ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী নাস্তিক চক্রটির শাস্তির দাবি জানানো সকলের ঈমানেরই একটি অপরিহার্য অঙ্গ। অন্যথায় এদেশের সকল মুসলমানই মহান আল্লাহ এবং প্রিয় নবী (সাঃ)-এর শত্রুর বন্ধু ও তার বক্তব্যের সমর্থক হিসাবে কাল কেয়ামতে আল্লাহর দরবারে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বলাবাহুল্য, দেশের ওলামা-মাশায়েখের ডাকে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমান এ কারণেই শুক্রবার ঈমানী তাগিদে প্রতিবাদী হয়ে বিক্ষোভ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন এবং সরকারের কাছে দোষী চক্রের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের এই প্রতিবাদে তো আর সরকারের গদিচ্যুতির সম্ভাবনা ছিল না! বরং সরকারের উচিত ছিল এজন্য নিজেও নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা দেশের ওলামা-মাশায়েখ ও কোটি কোটি মুসলিম জনতাকে সান্ত্বনা দেয়া। কিন্তু তা না করে প্রতিবাদী ওলামা-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ-দেশবাসীর মধ্য থেকে এতগুলো মানুষকে সরকার পুলিশ ও নিজ সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা করলো। হাজার হাজার মানুষকে জখমী করার মধ্যদিয়ে সরকার মূলত নাস্তিকদের প্রতিই নিজেদের সক্রিয় সমর্থন জানালো। যার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। এই আচরণের মধ্যদিয়ে সরকার মূলত নাস্তিকদের প্রতিই পক্ষপাতিত্ব করলো, তেমনি ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে প্রিয় নবীর প্রতি দুশমনির মানসিকতারই পরিচয় দিলো। এছাড়া নিঃসন্দেহে এটি সরকারের সরকারসুলভ গণতান্ত্রিক সহনশীলতা ও ঔদার্যের চরম অভাবেরই প্রমাণ দিলো।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা বৃদ্ধ মুসল্লীরা যখন ঘেরাও অবস্থা থেকে নিজ নিজ ঘরে ছুটে যাচ্ছিলেন তখন সরকারি এক শ্রেণীর পুলিশ তাদের প্রতি গুলী ছুঁড়ে এবং ধরাশায়ী হয়ে মাটিতে পড়া বৃদ্ধ মুসল্লীদের মুখমন্ডলে বুটজুতার পদাঘাতে কি নৃশংসতাই না দেখালো। এ দৃশ্য টিভির পর্দায় সারা দুনিয়ার মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। অনেকের মতে পৌনে দুশ' বছরের ঔপনিবেশিক আমলের গোলামীর যুগেও এদেশের মানুষ বিধর্মীদের হাতে এত অপমান, যিল্লতী ও নির্যাতন ভোগ করেনি। পুলিশ বা পুলিশী বেশে যেসব লোক এদেশবাসী জনগণের পয়সা খেয়ে তাদের সাথে এরূপ ধৃষ্টতাপূর্ণ নির্মম আচরণ করেছে, নবীর প্রতি ধৃষ্টতা ও অশ্লীলতাপূর্ণ আচরণকারী ব্লগারদের সঙ্গে এই বেআদব পুলিশদেরও কঠোর শাস্তি প্রদান করা সরকারের কর্তব্য। ঐদিন বহু মসজিদে জুমার সময় অনেক ইমাম সাহেবান নবীর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী ব্লগার চক্রের বিরুদ্ধে যেন কোনো সমালোচনা না করেন এবং প্রতিবাদ-মিছিল বের করতে না পারেন এজন্যে অনেকের কাছে সরকারি দলের নেতা এমপিরা চিঠিও দিয়েছেন। এমনকি প্রিয় নবী (সাঃ)-এর প্রতি কটাক্ষকারী ও আততায়ীদের হাতে নিহত ব্লগার রাজিবের জন্যে দোয়া করার জন্যেও ইমাম সাহেবদের প্রতি চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কোনো কোনো ইমাম এ ব্যাপারে কোনো কোনো মসজিদে এ প্রসঙ্গে আদৌ কোনো কথা না বললেও মুসল্লীদের মধ্যে অনেক ঈমানদীপ্ত তরুণ-জোয়ানরা নামাজ শেষে সরকারের কাছে অপরাধীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিলে, তাদেরকে ছদ্মবেশী পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা মসজিদের কাছ থেকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। ধৃতদের অনেকে বার বার পুলিশকে একথা বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় যে- ‘‘আমরা সরকারের কাছে প্রিয় নবীর প্রতি ঐ ধৃষ্টতাকারীদের শাস্তির দাবি জানাতে মিছিল করতে চাচ্ছি- সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল নয়।’’ তারপরও অনেককে পুলিশ থানায় নিয়ে আটকে রেখেছে। কোনো কোনো এমপির উল্লেখিত চিঠি ও পুলিশের এ জাতীয় আচরণে সমাজের সাধারণ মুসলমান যারা মসজিদে নামাজে গিয়েছেন, অত্যন্ত বিরক্তিবোধ করেছেন। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পেয়েছে। যা হোক- যে দল ও ব্যক্তি যেই স্তরের নাগরিকই হোক, দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় আবেগে আঘাত দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কেউ আর এরূপ ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে না পারে, এজন্যে ব্লাসফেমি আইন রচনা একান্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। গত শুক্রবার ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসল্লী এবং দেশের ওলামা-মাশায়েখদের প্রতিবাদ ছিল রাজনীতির ঊর্ধ্বে সম্পূর্ণ ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে। তারপরও তাদের প্রতি পুলিশ যেই অমানবিক আচরণ করেছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এ উপলক্ষে পুলিশ যাদের প্রতি অন্যায়ভাবে জুলুম অত্যাচার করেছে ও যাদের আটক করেছে, এ ব্যাপারে অন্যায়কারীদের শাস্তি ও গ্রেফতাকৃতদের সত্বর মুক্তি দেয়া সরকারের কর্তব্য।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন