ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী:
ইসলামের পক্ষে, মুসলমানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গত এক সপ্তাহে ২৩ জন লোক শাহাদাত বরণ করেছেন। সরকারের পুলিশ বাহিনী মুসলমানদের সমাবেশ মিছিল দেখলেই নির্বিচারে গুলী করে তাদের হত্যা করতে কুণ্ঠা বোধ করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ না পেলে পুলিশের পক্ষে এমন নিষ্ঠুর কাজ করা সম্ভব হতো না। নববই শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে মুসলমানরা এমন বিপদে পড়বে, তা বোধকরি কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। জ্ঞানপাপী কিংবা মূর্খরা যে যাই বলুক না কেন, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি মুসলমান না হতো তা হলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক কোনো রাষ্ট্রের জন্মই হতো না। আমরা মুসলমান না হলে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দিতাম না। আমরা বৃহত্তর বাংলা হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থাকতাম। পাকিস্তানে না থাকলে, হিন্দু জনগোষ্ঠী থাকলে স্বাধীনতার অনুভূতি আমাদের হতো কিনা সন্দেহ আছে। প্রথমবার কলকাতা যাই ১৯৮৭ সালে। ভিসা পাই না। শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিলাম যে, পশ্চিম বঙ্গের বাইরে ভারতের আর কোনো প্রদেশে যাবো না। এতো কিছু করতাম না। করেছিলাম চিত্রশিল্পী বন্ধু সৈয়দ লুৎফুল হকের পীড়াপীড়িতে। তিনি কলকাতা যাবেন, কিন্তু ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আমাকে তার চাইই চাই। লুৎফুল হকের ভিসা হয়ে গিয়েছিল এক দিনেই। কিন্তু আমার ভিসা নিয়ে টানাপোড়েন চললো প্রায় একমাস। শেষে আমি দূতাবাসে গিয়ে বললাম, ভাই আমি আপনাদের দেশে বেড়াতে আর যাবো না। দয়া করে আমার পাসপোর্টখানা ফেরত দিন। তখন রাষ্ট্রদূত নিজেই কথা বলতে চাইলেন। দেখা করলাম। তিনি বললেন, ভিসা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির কখনও কখনও প্রয়োজন হয়। আপনি কি শুধু কলকাতা সফর করতে চান, নাকি তার বাইরে আর কোথায়ও যাবেন? আমি বললাম, কলকাতার বাইরে দীঘা যেতে পারি। তিনি একটা টাইপ করা কাগজ বের করে দিলেন। বললেন, এই কাগজটায় সই করতে আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে দয়া করে সই করে দিন। এখনই ভিসা হয়ে যাবে। কাগজটায় লেখা ছিল আমি শুধু পশ্চিম বঙ্গ সফর করতে চাই। এর বাইরে কোথায়ও যাবো না। সই করে দিলাম। ভিসা হয়ে গেল। সেই ১৯৮৭ সালে আমি ভারতের কাছে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলাম এবং এখনও আছি, সেটা শ্লাঘার কারণ। নিজের প্রয়োজনে আর কোনোদিন ভারতীয় ভিসার চেষ্টা করিনি। সরকারি দায়িত্বে থাকার সময় আরও কয়েকবার ভারত গিয়েছি। তখন ভিসার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তাদের ইতর আচরণ মনে থাকবে বাকি জীবন। এসব ঠিকুজি দিতে প্রসঙ্গের অবতারণা করিনি। প্রসঙ্গের অবতারণা কলকাতা নিয়ে। ঢাকায় ফেরার আগের দিন কলকাতার বাজারে গেলাম কিছু শপিং করতে। একটি দোকানে গেলাম। সেলসবয় একজন বিশ-বাইশ বছরের যুবক। তাকে যতই বাংলায় কথা বলি, সে ততোই হিন্দিতে জবাব দেয়। আমি বললাম, ভাই, আপনি কি বাঙ্গালী। সে স্বীকার করলো, বাঙ্গালী। আমি বললাম, তা হলে হয় বাংলা বলেন, নয়তো ইংরেজী বলেন, আমি হিন্দি বুঝি না। যুবকটি বাংলায় কথা বলতে অস্বীকার করলো। বললো, হিন্দি আমার রাষ্ট্রভাষা। অতএব আমি হিন্দিই বলবো। আমি বললাম, আমি বিদেশী, আমি তো হিন্দি নাও বুঝতে পারি, তাহলে আপনি কি আমার কাছে কিছুই বিক্রি করবেন না? সে কোনো জবাব দিলো না। আমিও ঐ দোকান থেকে কিছু না কিনেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। হিন্দুত্বের এই দেশপ্রেম নিয়ে তারা বেড়ে উঠেছে। আমরা যদি মুসলমানিত্বের দেশপ্রেম নিয়ে বেড়ে উঠি, তা হলে দোষের কী আছে, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু সরকার ইসলামের নাম শুনলেই অাঁৎকে উঠছে। আমি নিশ্চিত যে এ দেশে ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী থাকবে, ইসলামবিরোধী সরকার অধিককাল স্থায়ী হতে পারবে না। শাহবাগে এই সরকার ইসলামবিরোধী নাস্তিকদের কী চমৎকার পাহারা দিয়ে তথাকথিত আন্দোলন স্থায়ী করছে। লাখ লাখ ডায়াবেটিক ও অন্যান্য রোগী চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লাখ মানুষ যাতায়াতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আধা ঘন্টার পথ পার হতে আড়াই ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। কুম্ভকর্ণ সরকার নির্বিকার ঘুমাচ্ছে। আর ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের পশু-পাখির মতো হত্যা করছে। এটা সম্পূর্ণভাবে এক বিশাল বৈপরীত্য। শাহবাগে ধর্মদ্রোহীরা উল্লাসে নৃত্য করছে। সেসব নাচাগানা দেখতে লোকজন সমবেত হচ্ছে। সেখানে গান হয়, নাচ হয়, লাঠি খেলা হয়, যুবতীরা টিভি স্টার হতে ওড়নাহীন সংক্ষিপ্ত পোশাকে লাফালাফি করে। মজাই তো বটে। এ মজা দেখতে তরুণরা ভিড় করেন। আমিও যুবক বয়সে এসব মজার অনুষঙ্গে গিয়েছি। কিন্তু শেখ মুজিব আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই ইসলামবিরোধীরা এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এমনটা আমি দেখিনি। আর কোনো সরকার তাদের এভাবে প্রশ্রয় দিয়েছে, তেমনও দেখিনি। কেউ যদি নাস্তিক হয়, হোক। সে বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু আস্তিক আমার আল্লাহ-রসুলকে গালি দেয়ার অধিকার কারও নেই। এ পর্যন্ত কোনো নাস্তিকও তা করেনি। আমার শিক্ষক ড. আহমদ শরীফ নাস্তিক ছিলেন। তার সঙ্গে আমার মেলামেশা ঘনিষ্ঠ ছিল। আমরা একসঙ্গে লেখক শিবির করেছি। নানা আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমাকে নাস্তিকতায় তিনি কখনও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। বা কোনো আস্তিক বা ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করার মতো একটি কথাও বলেননি। আমিও কোনোদিন এ নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেইনি। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যা করছে, তা হলো বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ। বিচার বিভাগ বা বিচারপতিগণ স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা আদালতকে যে নির্দেশ দেবে, সে নির্দেশ বিচারপতিদের মেনে নিতে হবে। তা না হলে সারা ঢাকা নগর অচল হয়ে থাকবে। সরকারের এ এক দারুণ খেলা! আদালতের রায় মানি না। আমরা যা চাই আদালতকে সে রায়ই দিতে হবে। এ কেমন মামার বাড়ির আবদার। কিন্তু সরকার এমন আবদারের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাবনত হয়ে এই নাচাগানাকে মদদ দিয়ে লাখ লাখ মানুষের জন্য ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। ঢাকা এখন এক স্থবির অচল নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেড়-দুই শ' মতলবি লোক শাহবাগ চত্বর আটকে দিয়ে কোটি মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করছে, আর সরকার তাদের চার স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে জামাই আদর করছে। আর ট্রাইব্যুনাল কী করছে। গত পরশু দিনও ট্রাইব্যুনাল খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শাসিয়ে দিয়েছে, ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য। তবে কি শাহবাগীরা এসবের ঊর্ধ্বে? এদিকে সরকারের অবস্থানের বৈপরীত্যও মুখ ব্যাদান করে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। শাহবাগীদের জন্য সরকারের যে দরদ তার লেশমাত্রও আমরা দেখতে পেলাম না সাধারণ মানুষের জন্য। আল্লাহ-নবী-ইসলামের অবমাননায় সরকার যেন ধারাবাহিকভাবে মদদই দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেই না ধর্মপ্রাণ মানুষ তার প্রতিবাদ করতে গেল, অমনি তাদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে তাদের হত্যা করতে শুরু করল সরকার। সেভাবে এ পর্যন্ত ২৩ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। জানি না, সামনে আরও কী আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্লগে লেখা ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কোনো সংবাদপত্র যদি তা প্রকাশ করে দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। তথ্যমন্ত্রীর কোনো ধারণাই নেই যে, ব্লগে কত সংখ্যক মানুষ শরিক হয়। সে সংখ্যা অনেক সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার চেয়েও বেশি। সুতরাং একে উপেক্ষা করা যায় না। এও যোগাযোগের আর এক বড় মাধ্যম। আবার উপেক্ষা যদি করা যেত, তাহলে সোনার বাংলাদেশ ব্লগটি শাহবাগীদের দাবি অনুযায়ী বন্ধ করতে গেল কেন সরকার? সে ব্লগে কিছুই আপত্তিকর ছিল না। তারা দেশের সকল সংবাদপত্রে প্রকাশিত জনপ্রিয় লেখকদের লেখা এক জায়গায় প্রকাশ করতো। তাতে পাঠকদের সুবিধা ছিল এই যে, সকল সংবাদপত্র না কিনেও তাতে প্রকাশিত লেখাগুলো তা থেকে পড়ে নিতে পারতো। তাতে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা যেমন স্থান পেতো, তেমনি স্থান পেতো সিরাজুর রহমানের লেখাও। সরকার ব্লগটি বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং এর এক কর্মকর্তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত তার কোনো হদিস মেলেনি । নিখোঁজ আছেন তিনি। জানি না, তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। এসবের মাধ্যমে সরকার কার্যত ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে। প্রথম দিকে ধুয়া তোলা হচ্ছিল যে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ তারা যুদ্ধাপরাধী। এও পানি ঘোলা করার মতো তত্ত্ব। এখন যারা জামায়াত-শিবির করেন, তাদের বয়স তিরিশের ঘরে। এখন যাদের বয়স ৬০ বছরের কম, তাদের যুদ্ধাপরাধী বলা হাস্যকর ব্যাপার। আর শিবিরের যারা সদস্য তাদের কেউই স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনওনি। তাদের সবার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। তারাও অন্যদের মতো বাপ-দাদাদের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প শুনেছেন। তারা কেমন করে যুদ্ধাপরাধী হন, বোঝা দায়। এ যাবৎ সরকার জামায়াত-শিবির নিয়েই ব্যস্ত ছিল। যারা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তারা দূর থেকে তা দেখেছেন। হয়তো ব্যথিত হয়েছেন। সহানুভূতিশীল হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেননি। কিন্তু সরকার যখন ইসলামবিরোধীদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে বসলো, তখন সঙ্গত কারণেই সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। তখন সরকার দেশের গোটা মুসলমান সমাজের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। খুন করেছে ২৩ জন মুসলমানকে। এর পরিণতি কী হতে পারে সেটা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি সরকার। ডান্ডা মেরে গোটা দেশবাসীকে ঠান্ডা করে দেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সরকার চন্ডনীতি অবলম্বন করেছে। ফলে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এমন কোটি কোটি মানুষও সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সরকার শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে বাধা দিয়েছে মুসলমানদের। মসজিদের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তার পুলিশ বাহিনী মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লীদের ওপর সরাসরি গুলী চালিয়েছে। মুসলমানের রক্তে ভেসেছে মসজিদের পবিত্র প্রাঙ্গণ। ঝরে গেছে প্রাণ। তারপর আটক, পিটুনি, রক্তাক্ত করে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। তাছাড়া আরও মর্মান্তিক দৃশ্যও দেখলাম। পুলিশী এই হামলার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছিলেন একজন বয়োবৃদ্ধ মুসল্লী। পুলিশের এক সদস্য তার মুখে পরপর দুবার সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মারল। রক্তাক্ত হয়ে তিনি পড়ে রইলেন মসজিদের মেঝেতে। এসব দৃশ্য দেখে বেদনায় মুখ কুঞ্চিত হয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যরা কি আমাদের সন্তান নয়? তারা কি কোনো বাপ-দাদার ঘরে জন্মগ্রহণ করেনি? নাকি এরা কোনো উপনিবেশবাদী শক্তির প্রতিভূ? আমরা কি তবে কোনো উপনিবেশে বসবাস করছি? আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক নই? কিন্তু সরকার এর কোনো কিছুরই প্রতিবাদ করেনি। সংশ্লিষ্ট কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও বাড়াবাড়ির কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। সরকারের মনোভাব সবসময় গোপন থাকেনি। স্বযং প্রধানমন্ত্রী যখন বলে বসেন যে, মা দূর্গার কৃপায় শস্যের ফলন ভালো হয়েছে, তখন ইসলাম ধর্মের প্রতি তার মনোভাব আর অস্পষ্ট থাকে না। সে রকম একজনের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন আচরণই বোধকরি স্বাভাবিক। এই সরকারের যে যুদ্ধ আগে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা ছড়িয়ে গেছে গোটা মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে সরকারের জয়ী হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তা আমরা আলজেরিয়ায় দেখেছি। তুরস্কে দেখেছি। মিসরে দেখেছি। এখন বোধকরি বাংলাদেশেও দেখার সময় হয়ে এসেছে। যে মুসলমান শহীদের রক্তে এদেশের জমিন ভিজেছে, সে রক্ত কখনও বৃথা যাবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও তা যায়ওনি।
ইসলামের পক্ষে, মুসলমানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গত এক সপ্তাহে ২৩ জন লোক শাহাদাত বরণ করেছেন। সরকারের পুলিশ বাহিনী মুসলমানদের সমাবেশ মিছিল দেখলেই নির্বিচারে গুলী করে তাদের হত্যা করতে কুণ্ঠা বোধ করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ না পেলে পুলিশের পক্ষে এমন নিষ্ঠুর কাজ করা সম্ভব হতো না। নববই শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে মুসলমানরা এমন বিপদে পড়বে, তা বোধকরি কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। জ্ঞানপাপী কিংবা মূর্খরা যে যাই বলুক না কেন, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি মুসলমান না হতো তা হলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক কোনো রাষ্ট্রের জন্মই হতো না। আমরা মুসলমান না হলে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দিতাম না। আমরা বৃহত্তর বাংলা হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থাকতাম। পাকিস্তানে না থাকলে, হিন্দু জনগোষ্ঠী থাকলে স্বাধীনতার অনুভূতি আমাদের হতো কিনা সন্দেহ আছে। প্রথমবার কলকাতা যাই ১৯৮৭ সালে। ভিসা পাই না। শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিলাম যে, পশ্চিম বঙ্গের বাইরে ভারতের আর কোনো প্রদেশে যাবো না। এতো কিছু করতাম না। করেছিলাম চিত্রশিল্পী বন্ধু সৈয়দ লুৎফুল হকের পীড়াপীড়িতে। তিনি কলকাতা যাবেন, কিন্তু ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আমাকে তার চাইই চাই। লুৎফুল হকের ভিসা হয়ে গিয়েছিল এক দিনেই। কিন্তু আমার ভিসা নিয়ে টানাপোড়েন চললো প্রায় একমাস। শেষে আমি দূতাবাসে গিয়ে বললাম, ভাই আমি আপনাদের দেশে বেড়াতে আর যাবো না। দয়া করে আমার পাসপোর্টখানা ফেরত দিন। তখন রাষ্ট্রদূত নিজেই কথা বলতে চাইলেন। দেখা করলাম। তিনি বললেন, ভিসা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির কখনও কখনও প্রয়োজন হয়। আপনি কি শুধু কলকাতা সফর করতে চান, নাকি তার বাইরে আর কোথায়ও যাবেন? আমি বললাম, কলকাতার বাইরে দীঘা যেতে পারি। তিনি একটা টাইপ করা কাগজ বের করে দিলেন। বললেন, এই কাগজটায় সই করতে আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে দয়া করে সই করে দিন। এখনই ভিসা হয়ে যাবে। কাগজটায় লেখা ছিল আমি শুধু পশ্চিম বঙ্গ সফর করতে চাই। এর বাইরে কোথায়ও যাবো না। সই করে দিলাম। ভিসা হয়ে গেল। সেই ১৯৮৭ সালে আমি ভারতের কাছে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলাম এবং এখনও আছি, সেটা শ্লাঘার কারণ। নিজের প্রয়োজনে আর কোনোদিন ভারতীয় ভিসার চেষ্টা করিনি। সরকারি দায়িত্বে থাকার সময় আরও কয়েকবার ভারত গিয়েছি। তখন ভিসার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তাদের ইতর আচরণ মনে থাকবে বাকি জীবন। এসব ঠিকুজি দিতে প্রসঙ্গের অবতারণা করিনি। প্রসঙ্গের অবতারণা কলকাতা নিয়ে। ঢাকায় ফেরার আগের দিন কলকাতার বাজারে গেলাম কিছু শপিং করতে। একটি দোকানে গেলাম। সেলসবয় একজন বিশ-বাইশ বছরের যুবক। তাকে যতই বাংলায় কথা বলি, সে ততোই হিন্দিতে জবাব দেয়। আমি বললাম, ভাই, আপনি কি বাঙ্গালী। সে স্বীকার করলো, বাঙ্গালী। আমি বললাম, তা হলে হয় বাংলা বলেন, নয়তো ইংরেজী বলেন, আমি হিন্দি বুঝি না। যুবকটি বাংলায় কথা বলতে অস্বীকার করলো। বললো, হিন্দি আমার রাষ্ট্রভাষা। অতএব আমি হিন্দিই বলবো। আমি বললাম, আমি বিদেশী, আমি তো হিন্দি নাও বুঝতে পারি, তাহলে আপনি কি আমার কাছে কিছুই বিক্রি করবেন না? সে কোনো জবাব দিলো না। আমিও ঐ দোকান থেকে কিছু না কিনেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। হিন্দুত্বের এই দেশপ্রেম নিয়ে তারা বেড়ে উঠেছে। আমরা যদি মুসলমানিত্বের দেশপ্রেম নিয়ে বেড়ে উঠি, তা হলে দোষের কী আছে, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু সরকার ইসলামের নাম শুনলেই অাঁৎকে উঠছে। আমি নিশ্চিত যে এ দেশে ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী থাকবে, ইসলামবিরোধী সরকার অধিককাল স্থায়ী হতে পারবে না। শাহবাগে এই সরকার ইসলামবিরোধী নাস্তিকদের কী চমৎকার পাহারা দিয়ে তথাকথিত আন্দোলন স্থায়ী করছে। লাখ লাখ ডায়াবেটিক ও অন্যান্য রোগী চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লাখ মানুষ যাতায়াতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আধা ঘন্টার পথ পার হতে আড়াই ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। কুম্ভকর্ণ সরকার নির্বিকার ঘুমাচ্ছে। আর ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের পশু-পাখির মতো হত্যা করছে। এটা সম্পূর্ণভাবে এক বিশাল বৈপরীত্য। শাহবাগে ধর্মদ্রোহীরা উল্লাসে নৃত্য করছে। সেসব নাচাগানা দেখতে লোকজন সমবেত হচ্ছে। সেখানে গান হয়, নাচ হয়, লাঠি খেলা হয়, যুবতীরা টিভি স্টার হতে ওড়নাহীন সংক্ষিপ্ত পোশাকে লাফালাফি করে। মজাই তো বটে। এ মজা দেখতে তরুণরা ভিড় করেন। আমিও যুবক বয়সে এসব মজার অনুষঙ্গে গিয়েছি। কিন্তু শেখ মুজিব আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই ইসলামবিরোধীরা এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এমনটা আমি দেখিনি। আর কোনো সরকার তাদের এভাবে প্রশ্রয় দিয়েছে, তেমনও দেখিনি। কেউ যদি নাস্তিক হয়, হোক। সে বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু আস্তিক আমার আল্লাহ-রসুলকে গালি দেয়ার অধিকার কারও নেই। এ পর্যন্ত কোনো নাস্তিকও তা করেনি। আমার শিক্ষক ড. আহমদ শরীফ নাস্তিক ছিলেন। তার সঙ্গে আমার মেলামেশা ঘনিষ্ঠ ছিল। আমরা একসঙ্গে লেখক শিবির করেছি। নানা আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমাকে নাস্তিকতায় তিনি কখনও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেননি। বা কোনো আস্তিক বা ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করার মতো একটি কথাও বলেননি। আমিও কোনোদিন এ নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেইনি। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যা করছে, তা হলো বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ। বিচার বিভাগ বা বিচারপতিগণ স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা আদালতকে যে নির্দেশ দেবে, সে নির্দেশ বিচারপতিদের মেনে নিতে হবে। তা না হলে সারা ঢাকা নগর অচল হয়ে থাকবে। সরকারের এ এক দারুণ খেলা! আদালতের রায় মানি না। আমরা যা চাই আদালতকে সে রায়ই দিতে হবে। এ কেমন মামার বাড়ির আবদার। কিন্তু সরকার এমন আবদারের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাবনত হয়ে এই নাচাগানাকে মদদ দিয়ে লাখ লাখ মানুষের জন্য ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। ঢাকা এখন এক স্থবির অচল নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেড়-দুই শ' মতলবি লোক শাহবাগ চত্বর আটকে দিয়ে কোটি মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করছে, আর সরকার তাদের চার স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে জামাই আদর করছে। আর ট্রাইব্যুনাল কী করছে। গত পরশু দিনও ট্রাইব্যুনাল খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শাসিয়ে দিয়েছে, ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য। তবে কি শাহবাগীরা এসবের ঊর্ধ্বে? এদিকে সরকারের অবস্থানের বৈপরীত্যও মুখ ব্যাদান করে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। শাহবাগীদের জন্য সরকারের যে দরদ তার লেশমাত্রও আমরা দেখতে পেলাম না সাধারণ মানুষের জন্য। আল্লাহ-নবী-ইসলামের অবমাননায় সরকার যেন ধারাবাহিকভাবে মদদই দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেই না ধর্মপ্রাণ মানুষ তার প্রতিবাদ করতে গেল, অমনি তাদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে তাদের হত্যা করতে শুরু করল সরকার। সেভাবে এ পর্যন্ত ২৩ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। জানি না, সামনে আরও কী আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্লগে লেখা ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কোনো সংবাদপত্র যদি তা প্রকাশ করে দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। তথ্যমন্ত্রীর কোনো ধারণাই নেই যে, ব্লগে কত সংখ্যক মানুষ শরিক হয়। সে সংখ্যা অনেক সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার চেয়েও বেশি। সুতরাং একে উপেক্ষা করা যায় না। এও যোগাযোগের আর এক বড় মাধ্যম। আবার উপেক্ষা যদি করা যেত, তাহলে সোনার বাংলাদেশ ব্লগটি শাহবাগীদের দাবি অনুযায়ী বন্ধ করতে গেল কেন সরকার? সে ব্লগে কিছুই আপত্তিকর ছিল না। তারা দেশের সকল সংবাদপত্রে প্রকাশিত জনপ্রিয় লেখকদের লেখা এক জায়গায় প্রকাশ করতো। তাতে পাঠকদের সুবিধা ছিল এই যে, সকল সংবাদপত্র না কিনেও তাতে প্রকাশিত লেখাগুলো তা থেকে পড়ে নিতে পারতো। তাতে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা যেমন স্থান পেতো, তেমনি স্থান পেতো সিরাজুর রহমানের লেখাও। সরকার ব্লগটি বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং এর এক কর্মকর্তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত তার কোনো হদিস মেলেনি । নিখোঁজ আছেন তিনি। জানি না, তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। এসবের মাধ্যমে সরকার কার্যত ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে। প্রথম দিকে ধুয়া তোলা হচ্ছিল যে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ তারা যুদ্ধাপরাধী। এও পানি ঘোলা করার মতো তত্ত্ব। এখন যারা জামায়াত-শিবির করেন, তাদের বয়স তিরিশের ঘরে। এখন যাদের বয়স ৬০ বছরের কম, তাদের যুদ্ধাপরাধী বলা হাস্যকর ব্যাপার। আর শিবিরের যারা সদস্য তাদের কেউই স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনওনি। তাদের সবার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। তারাও অন্যদের মতো বাপ-দাদাদের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প শুনেছেন। তারা কেমন করে যুদ্ধাপরাধী হন, বোঝা দায়। এ যাবৎ সরকার জামায়াত-শিবির নিয়েই ব্যস্ত ছিল। যারা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তারা দূর থেকে তা দেখেছেন। হয়তো ব্যথিত হয়েছেন। সহানুভূতিশীল হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেননি। কিন্তু সরকার যখন ইসলামবিরোধীদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে বসলো, তখন সঙ্গত কারণেই সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। তখন সরকার দেশের গোটা মুসলমান সমাজের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। খুন করেছে ২৩ জন মুসলমানকে। এর পরিণতি কী হতে পারে সেটা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি সরকার। ডান্ডা মেরে গোটা দেশবাসীকে ঠান্ডা করে দেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সরকার চন্ডনীতি অবলম্বন করেছে। ফলে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এমন কোটি কোটি মানুষও সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। সরকার শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে বাধা দিয়েছে মুসলমানদের। মসজিদের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তার পুলিশ বাহিনী মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লীদের ওপর সরাসরি গুলী চালিয়েছে। মুসলমানের রক্তে ভেসেছে মসজিদের পবিত্র প্রাঙ্গণ। ঝরে গেছে প্রাণ। তারপর আটক, পিটুনি, রক্তাক্ত করে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। তাছাড়া আরও মর্মান্তিক দৃশ্যও দেখলাম। পুলিশী এই হামলার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছিলেন একজন বয়োবৃদ্ধ মুসল্লী। পুলিশের এক সদস্য তার মুখে পরপর দুবার সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মারল। রক্তাক্ত হয়ে তিনি পড়ে রইলেন মসজিদের মেঝেতে। এসব দৃশ্য দেখে বেদনায় মুখ কুঞ্চিত হয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যরা কি আমাদের সন্তান নয়? তারা কি কোনো বাপ-দাদার ঘরে জন্মগ্রহণ করেনি? নাকি এরা কোনো উপনিবেশবাদী শক্তির প্রতিভূ? আমরা কি তবে কোনো উপনিবেশে বসবাস করছি? আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক নই? কিন্তু সরকার এর কোনো কিছুরই প্রতিবাদ করেনি। সংশ্লিষ্ট কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও বাড়াবাড়ির কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। সরকারের মনোভাব সবসময় গোপন থাকেনি। স্বযং প্রধানমন্ত্রী যখন বলে বসেন যে, মা দূর্গার কৃপায় শস্যের ফলন ভালো হয়েছে, তখন ইসলাম ধর্মের প্রতি তার মনোভাব আর অস্পষ্ট থাকে না। সে রকম একজনের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন আচরণই বোধকরি স্বাভাবিক। এই সরকারের যে যুদ্ধ আগে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা ছড়িয়ে গেছে গোটা মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে সরকারের জয়ী হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তা আমরা আলজেরিয়ায় দেখেছি। তুরস্কে দেখেছি। মিসরে দেখেছি। এখন বোধকরি বাংলাদেশেও দেখার সময় হয়ে এসেছে। যে মুসলমান শহীদের রক্তে এদেশের জমিন ভিজেছে, সে রক্ত কখনও বৃথা যাবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও তা যায়ওনি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন