নানাভাবে পুলিশ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়। সাধারণত পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দমন-পীড়ন, জুলুম-নির্যাতনের হলেও আসল অভিযোগ হয়রানি ও ঘুষবাণিজ্যের। ক্ষমতাসীন দল পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায় বলে পুলিশ অনেক অনিয়ম ও হয়রানির সুযোগ পেয়ে যায়। গ্রেফতারবাণিজ্য নিয়ে থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এতসব অভিযোগ ছাপিয়ে নতুন অভিযোগ হচ্ছে, পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু সদস্য ক্ষমতার বরপুত্র সেজে যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগও উঠছে। পুলিশের হেডকোয়ার্টারের কোনো কোনো সদস্যও বেপরোয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ছিনতাই-মাস্তানিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন ওই অসৎ পুলিশ সদস্যরা। তারা কখন ব্যারাকে ঢুকছেন, কখন বের হচ্ছেন তারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কনস্টেবলের চাকরি করলেও অনেকেই ব্যবহার করছেন দামি মোটরসাইকেল। পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিভিল ড্রেসে চাঁদাবাজি করছেন, এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। এমনও হচ্ছেÑ ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ এগিয়ে না এসে ছিনতাইকারীকে সাহায্য করছে। নয়া দিগন্তে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতের একটি ছিনতাই নাটকে পুলিশের সম্পৃক্ততা তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো ভিন্ন বক্তব্য আমরা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, এর আগেও অসংখ্য মানুষ ওই একই স্পটে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছেন। কিন্তু ছিনতাইকারীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজারবাগের মতো এলাকায় ছিনতাইকারী পুলিশের সাহায্য ছাড়া আশ্রয় পাওয়ার কথায় নয়।
রাজারবাগ ব্যারাকের কিছু পুলিশ সদস্যই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। অভিযোগ উঠেছে, ডিউটির পর তারা কে কী করছেন তা তদারকির কেউ নেই। এই সুযোগে কিছু সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কাছাকাছি কোনো এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আছেন যারা স্থানীয় হোটেলে নিয়মিত ফাও খেয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া সিভিল ড্রেসে গিয়ে প্রায়ই কাছের দোকান থেকে ফাও সিগারেট নিয়ে যাওয়ার মতো দুঃখজনক অভিযোগও রয়েছে। তথ্যানুযায়ী ফকিরাপুলের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে যাচ্ছেন অসৎ কিছু পুলিশ সদস্য। তারা নিজেদেরকে রাজারবাগের পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে হোটেলে গিয়ে মন্দ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছেন। ডিউটি না থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত তারা ব্যারাকের বাইরে থাকার কারণও শনাক্ত করা হয় না।
এ ছাড়া ফুটপাথের অবৈধ ব্যবসায়, মাদক স্পট, রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, ভাসমান পতিতালয় ও আদম ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানসহ নানা ক্রাইম স্পটে কিছু অসৎ পুলিশ সদস্য নিয়মিত যাতায়াত করেন। সেখান থেকে তারা নিয়মিত বখরাও আদায় করেন।
আমরা মনে করি না, সব অভিযোগ শত ভাগ সত্য। তবে অনেক অতিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা সহজেই বোধগম্য। আমরা মনে করি না সব পুলিশ সদস্য অসৎ। বরং কিছু পুলিশ সদস্য পুরো বাহিনীর ভাবমর্যাদা নষ্ট করছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগগুলোর সত্যাসত্য নিরূপণ করা সময়ের দাবি। একই সাথে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করাও দরকার। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন