রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উৎপাটিত হোক



অপর সম্ভাবনার দেশ হলেও বাংলাদেশের বড় সমস্যা এখন অনিয়ম-দুর্নীতি শুধু দেশের ভাব-মর্যাদারই মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে না, অনেক সম্ভাবনার পথও রুদ্ধ করে দেয়। দেশ যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনার সামনে, তখন অবকাঠামো খাত থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম অনিয়ম-দুর্নীতিও কঠোর হস্তে বন্ধ করার বিকল্প নেই। জাতির বৃহত্তার স্বার্থেই এটা করতে হবে। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই, দ্বিমত প্রকাশের সুযোগও নেই। তারপরও অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ হরদম সৃষ্টি হয়। লোপাট হয়ে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা। লোপাট হয়ে যাওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের উন্নয়নের কাজে লাগালে অর্থনৈতিক তৎপরতা আরো বিকশিত হতো, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতো, জনস্বার্থ পুরোপুরি রক্ষিত হতো।
সর্বশেষ তৈরি করা কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অফিসের ৬১টি অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে পত্রিকান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রচলিত আর্থিক বিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে ১৯ মন্ত্রণালয়ে এই আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে। খবরে এও জানানো হয়েছে, সিএজি অফিস সম্প্রতি অডিট রিপোর্টগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে। শিগগিরই এ রিপোর্ট প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অডিট রিপোর্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরের কার্যক্রমের ওপর এসব আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ লুটপাটের অধিকাংশ ঘটনা ধরা পড়েছে।
রেলওয়ে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অধিদফতর, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ইত্যাদিতে এসব আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থার এ ধরনের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগের চিত্র উদ্বেগজনক, সন্দেহ নেই। সরকারের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয় মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের প্রত্যাশা, মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোতে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অবকাশ থাকবে না। সিএজি অফিসের অডিট রিপোর্টগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতি দেশে সর্বাধিক আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাব-মর্যাদাও কম ক্ষুণ্ণ হয়নি। আজকের যুগে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভাব-মর্যাদার ওপর একটি দেশের অর্থনীতিসহ অনেক বিষয়ই বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পত্রিকান্তরে এক জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতার প্রধান অভিযোগা দুর্নীতি। দুর্নীতি একটি বিষবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতির নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিসূচকে কিছুটা উন্নতি হলেও মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি ও দুর্নীতির ব্যাপ্তি বেড়েছে। যোগাযোগ, এলজিআরডি ইত্যাদি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে হরদম খবর প্রকাশিত হয়ে থাকে। হলমার্কসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতের নানা কেলেঙ্কারির খবরও ইতোমধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সরকারদলীয় স্থানীয় একশ্রেণীর নেতা-কর্মীর টেন্ডারবাজির খবর প্রায় নিয়মিতই প্রকাশিত হয়ে থাকে। রাজনীতি ও ক্ষমতা-বলয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার খবরও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
অনিয়ম ও দুর্নীতি নিরসনের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠা ও দেশ-জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আর সরকার তার মন্ত্রণালয়গুলোর মাধ্যমেই উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত করে, অর্থনৈতিক তৎপরতায় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। সরকারের মন্ত্রণালয়, সংস্থা তথা প্রশাসন যদি সতর্ক থাকে এবং সর্বাবস্থায় বিধিবিধান প্রয়োগ করায় কঠোরতা অবলম্বন করে, তাহলে এমনিতেই অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, নিদেনপক্ষে বহুলাংশে হ্রাস পাবে। অনিয়ম-দুর্নীতি নিরসনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎপরতার প্রয়োজন থাকবে না।  এজন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং বাস্তব ক্ষেত্রে সেই সদিচ্ছার কঠোর প্রয়োগ। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই অনিয়ম-দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উৎপাটিত করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads