বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর নানাভাবে একের পর এক আঘাত আসছে। নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, সংগ্রাম, দিগন্ত টেলিভিশনসহ কয়েকটি সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে সরাসরি। দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংবাদপত্র পোড়ানো হয়েছে হাজার হাজার কপি। ক্ষমতাসীন জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এসব গণমাধ্যমকে বর্জন করা হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু অসহিষ্ণুতা নয়; সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা; এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক আচরণ। আমরা দেখছি, শাহবাগে গত শুক্রবার কিছু তরুণের এই আহ্বান জানানোর পর নয়া দিগন্ত অফিস ও প্রেসে আগুন দেয়া হয়। প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পত্রিকার গাড়ি। ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্টপোষকতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটছে বলেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। স্পষ্টত গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।
সংবাদপত্রে এ ধরনের আঘাতের প্রতিবাদে দেশের সাংবাদিকসমাজ ক্ষুব্ধ ও হতাশ। গণমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত বুধবার জাতীয় প্রেস কাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকেরা। তারা নয়া দিগন্ত অফিসে আগুন দেয়ার ঘটনার সাথে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সাংবাদিক নেতারা সমাবেশে বলেছেন, গণতন্ত্রকে সংহত করতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হবে অবশ্যই। অতীতে যারা ক্ষমতার জোরে গণমাধ্যমের ওপর আঘাত হেনেছেন তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। যারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তারা দেশের সার্বভৌমত্বে ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে সংবাদপত্র বন্ধের যে দাবি জানিয়েছেন, সমাবেশে তার নিন্দা জানানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা নয়া দিগন্ত অফিসে আগুন দেয়া ও সংবাদপত্র পোড়ানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকে মনে করছেন, ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করে দেশে ক্রমান্বয়ে আবার একদলীয় শাসন কায়েমের অংশ হিসেবে এসব ঘটনা ঘটছে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকেরা নয়া দিগন্ত অফিসে আগুন দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেছেন।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে যারা এই ঘটনার প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ করেছেন, তারা মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করছেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। নয়া দিগন্ত অফিসে এসে যারা সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন সে ঘটনার পর, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আশা করব, সরকার সাংবাদিকসমাজের উপর্যুক্ত আহ্বানে সাড়া দেবেন। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। সংবাদপত্রসহ মিডিয়া অফিসের ও প্রেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া সংবাদপত্র বর্জনের মতো বাক স্বাধীনতাবিরোধী সিদ্ধান্ত পরিহার করা হবে বলে আমরা আশা করি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন