মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

একশ্রেণীর ব্লগারের ইসলামবিদ্বেষী কুৎসিত আচরণ



বহুল আলোচিত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শুভ হত্যার ঘটনার তদন্তে ব্যক্তিগত ও নারীঘটিত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এরই মধ্যে তার দুই বান্ধবীসহ বেশ কয়েকজনকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এবং কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত আলামত ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট এবং মোবাইল ট্র্যাকিং করে পুলিশ ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পল্লবী থানা পুলিশ ও রাজীবের আত্মীয়রা জানিয়েছে যে, আড়াই বছর আগে পুরান ঢাকার অনলাইন বান্ধবী বাসন্তী ওরফে আনিকাকে বিয়ে করে রাজীব। এরপর থেকে সে পলাশনগরের বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতো কিন্তু একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পরকীয়ায় আসক্তি লিভ টুগেদারসহ নানা কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দফায় দফায় ঝগড়া হতো তার। কয়েক মাস আগেও তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাজীবের স্ত্রী বাসন্তী বাবার বাসায় চলে যান। গত রোববার বাসন্তী ও তার পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। সেখান থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে তদন্ত সংস্থা রাজীবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে এর কললিস্ট থেকে হত্যাকারীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে পুলিশের ধারণা।
আমরা চাই রাজীব হত্যা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং খুনিরা ধরা পড়ুক। কোনো হত্যাকান্ডকেই সমর্থন করা যায় না, কারণ হত্যাকান্ড সমাজ ও মানবতাবিরোধী এক জঘন্য অপরাধ। আমরা জানি হত্যাকান্ডের শাস্তি খুবই কঠোর। হত্যাকারীকে ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের দন্ড দেয়া হতে পারে। তাই এমন অপরাধের তদন্ত নিরপেক্ষ ও যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গিতে হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু রাজীব হত্যার পরে কোন অনুসন্ধান ও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই শাহবাগ মঞ্চ থেকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হলো জামায়াত শিবিরকে এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীও রাজীব হত্যার দায় জামায়াত-শিবিরের উপর চাপিয়ে তাদের রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। এমন আচরণে রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে কিন্তু ন্যায় বিচারের আকাঙ্ক্ষা বা লক্ষণ নেই। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সুবিচার মানুষের কাম্য। কিন্তু সুবিচারের বদলে যদি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কৌশলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জব্দ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে দেশে অন্যায়-অবিচারের সাথে সাথে প্রতিহিংসার মাত্রাও বাড়তে পারে। তাই দেশের মানুষ চায় রাজীব হত্যার বিচার যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে হোক এবং রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা যেন এই বিচারে প্রভাব ফেলতে সক্ষম না হয়। গত কিছুদিন ধরে শাহবাগ মঞ্চ থেকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জাননো হচ্ছে। আর রাজীব হত্যার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করার কথা বললে বিশেষ মহলের লম্ফ-ঝম্ফ আরো বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় গত রোববার বাংলাদেশ প্রতিদিন এক অনলাইন জরিপের আয়োজন করে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, এত প্রোপাগান্ডার পরেও মাত্র ০৫.৬৩% নাগরিক জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন, কিছু লোক কোন মন্তব্য করেননি, কিন্তু ৯৩.৭৮% নাগরিক জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এই জনমত জরিপ থেকেও উপলব্ধি করা যায়, শাহবাগ মঞ্চটাই বাংলাদেশ নয়।
তথ্য-প্রযুক্তি প্রসারের বর্তমান সময়ে মতপ্রকাশের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ব্লগকে একশ্রেণির যুবক ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক এই যুবকরা মহান আল্লাহ, পবিত্র কোরআন, মহানবী (সাঃ), ঈদ, নামাজ, রোজা ও হজ্জ সম্পর্কে জঘন্য মন্তব্য করে মুসলমানদের ঈমান আকিদায় আঘাত হানছে। তাদের কুৎসিত ও অশ্লীল লেখা পড়লে শুধু মুসলমান নয়, বিবেকবান অমুসলিমদেরও গা শিউরে উঠবে। এসব ধর্মদ্রোহী ব্লগারের অন্যতম ছিলেন নিহত ব্লগার, আহমেদ রাজীব হায়দার শুভ। রাজীব ‘থাবা বাবা' নামে প্রচারণা চালাতেন। তার অপপ্রচারে দেশজুড়ে উঠেছে নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আল্লাহ, রাসূল, পবিত্র কোরআন ও ইসলামের রীতি-নীতি নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী ব্লগে তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এখন সাইবার মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তা প্রকাশ পেলে দেশের জনগণ গভীরভাবে আহত হয়। ফলে এখন মানুষ রাজীবের বিরুদ্ধে প্রকাশ করছে ঘৃণা ও ধিক্কার। এসব ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায়, ধর্মবিদ্বেষী একশ্রেণীর ব্লগার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছে। নইলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে এত উত্তেজনার কি কারণ থাকতে পারে? বিচারতো হবে আদালতে। বর্তমান সরকারই তো আদালত গঠন করেছে, বিচারক নিয়োগ দিয়েছে এবং বিচারকরা রায় দিতেও শুরু করেছেন। কিন্তু একটি রায় ‘যাবজ্জীবন' হওয়ায় তারা আদালতের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য শাহবাগ এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে নানা জঙ্গি ও ফ্যাসিবাদী স্লোগান ও বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন তৎপরতায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, শাহবাগ মঞ্চের ব্লগাররা কি দেশের আইনের বাইরে? জনগণ যেমন যুদ্ধাপরাধের স্বচ্ছ ও সঠিক বিচার চায়, তেমনি বিচার চায় ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার-চক্র ও আইন-শৃক্মখলাবিরোধী ফ্যাসিস্টদেও। এখন সরকার শপথের আলোকে সুশাসনের পথে অগ্রসর হয় না কি বিশেষ রাজনৈতি উদ্দেশ্যে ফ্যাসিস্টদেরই প্রশ্রয় দিয়ে যায়- সেটিই দেখার বিষয়। এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জনগণ সবই লক্ষ্য করছে এবং যথাসময়ে হিসেব-নিকেষ নিতে একটুও ভুল করবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads