রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শাহবাগের রাজনীতি ও তরুণসমাজ


এরশাদ মজুমদার

শাহবাগ ঢাকার নবাবদের জায়গা ছিল একসময়। ঢাকার প্রথম থ্রিস্টার হোটেল ছিল হোটেল শাহবাগ। এখানেই সরকারি-বেসরকারি বড় বড় অনুষ্ঠান হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলিম লীগ নিষিদ্ধঘোষিত হয়। পিজির সামনে রাস্তার পাশে যেখানে পূবালী ব্যাংক আছে তা ছিল মুসলিম লীগের অফিস। পেছনে ছিল হোটেল শাহবাগ। হোটেলকে বঙ্গবন্ধু পিজি হাসপাতালে রূপান্তরিত করেনÑ যা এখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। যে জায়গায় সমগ্র ভারতের মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছে, সেখানেই তরুণসমাজ গণজাগরণের ডাক দিয়েছে। এটা খুবই আনন্দের খবর। বাপ-দাদারা এখানে মিলিত হয়েছিল নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের কৌশল নির্ধারণের জন্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন মুসলিম লীগ গঠনের প্রয়োজন হয়েছিল। ভারতবাসীর দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসই তো যথেষ্ট ছিল। কংগ্রেসের হিন্দু নেতারা যদি একটু উদার হতেন তাহলে মুসলমানদের জন্য আরেকটি রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ গঠনের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। প্রায় ২১ বছর কংগ্রেসের ভেতর থেকে মুসলমানেরা চেষ্টা করেছিল নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরার জন্য। কংগ্রেস নেতারা বলতেন, আমরা সবাই ভারতবাসী। ভারতবর্ষ বহু জাতির দেশ। মুসলমানেরা আলাদা কিছু নয়। কিন্তু মুসলমান নেতারা তা মানতে রাজি হননি। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব শুরুতে কংগ্রেসে থেকেই দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসেই ছিলেন। পরে তার ভুল ভাঙলে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। অখণ্ড ভারতে মুসলমানেরা ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। ১২০০ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত মুসলমান রাজা-বাদশাহ নবাবরাই দিল্লিকে রাজধানী করে ভারত শাসন করেছেন। এ সময়ে ফার্সিই ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভাষা। ১৭৫৭ সালে হিন্দুদের সহযোগিতায় ইংরেজরা বঙ্গদেশ দখল করে নেয়। ১৮৫৮ সালে দিল্লি দখল করে সারা ভারত তাদের কব্জায় নেয়। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত এক শ’ বছর ভারতে আলেমসমাজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ফলে ইংরেজ শাসন আমলে মুসলমানেরা তাদের শত্রু থেকে যায়। মুসলিম লীগ গঠনের পেছনে এটাই ইতিহাস।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় মওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের নেতৃত্বে। মুসলিম লীগের গণতান্ত্রিক নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন দল গঠিত হয়েছিল পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে। মওলানা সাহেব ছিলেন আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি। কেন নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করতে হয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে সুস্পষ্টভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন। মওলানা সাহেব জনসভায় বলতেনও, তা হচ্ছে খাজাগজার সরকারি মুসলিম লীগ আর এটা হচ্ছে জনগণের মুসলিম লীগ। সে সময়ে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন ছিল। ঢাকায় জনসভা করতে হয়েছিল ঢাকার সর্দারদের সমর্থন নিয়ে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ বা শুধু আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান সংগঠক। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর আওয়ামী মুসলিম লীগ দল থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়। কিন্তু নীতি ও আদর্শের দিক থেকে এটি ছিল বাঙালি মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক দল। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিতি উকিল মোক্তার, ডাক্তার, কবিরাজ, ব্যবসায়ীরা মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে লাগলেন।
১৯৫৫ সালে আতাউর রহমান খান সাহেবের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠন করে আর ১৯৫৬ সালে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্বে কেন্দ্রে মানে সারা পাকিস্তানের সরকার গঠন করে। মওলানা সাহেব তখন দলের সভাপতি। কিন্তু দলের বিদেশবিষয়ক নীতির প্রশ্নে মওলানা সাহেবের সাথে সরকারের দ্বিমত হওয়ায় তিনি দলত্যাগ করেন এবং ন্যাপ বা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। বিদেশনীতি প্রশ্নে আমেরিকার সমর্থক হয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী সাহেব ‘জিরো প্লাস জিরো’ থিওরি দিলেন। বললেন, আমেরিকা হলো এক, তার বন্ধুত্ব হলে আমাদের মূল্য বাড়বে। তা না হলে আমরা জিরো থেকে যাবো। শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নীতিকে সমর্থন দিলেন। আওয়ামী লীগ ’৭১ সাল নাগাদ আমেরিকার সমর্থক ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল। সব বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করত।
’৭২ সালে আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ রাতারাতি সমাজতন্ত্রের কথা বলতে শুরু করেছে এবং আমেরিকার সমর্থকদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। প্রতিপকে লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটানো আওয়ামী লীগের অভ্যাস। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ওস্তাদ মওলানা ভাসানীর সভা ভাঙতেও আওয়ামী লীগ কুণ্ঠা বোধ করেনি। জুলিও কুরি পুরস্কার পেয়ে তিনি বলতে লাগলেন, তিনিই বিপ্লব করবেন। তিনিই সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ছিল না।
রাশিয়া ভারত ও রাশিয়ার জোটভুক্ত দেশগুলোর উসকানিতে শেখ সাহেব হঠাৎ করে রাতারাতি গেজেট জারি একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে দিলেন। সরকারি টিভি আর পত্রিকা ছাড়া বাকি সব পত্রিকা ও রাজনৈতিক নিষিদ্ধ করে দিলেন। এভাবেই নাকি সমাজতন্ত্র চালু করতে হয়। আমি হলফ করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালোবাসতেন। তিনি খুবই ইমোশনাল বা আবেগি মানুষ ছিলেন। মার্চের জাতকেরা নাকি জীবনের সব কিছু হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করেন, মাথা দিয়ে নয়। তার আবেগকে কাজে লাগিয়েছে তার শত্রুরা। তার শত্রুরাই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মতা থেকে অপসারিত করে এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খোন্দকার মোশতাককে মতায় বসায়। খোন্দকার সাহেব সামরিক শাসন জারি করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়েই তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন। তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাত্র ৯০ দিন মতায় ছিলেন এবং প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেবের কাছে মতা দিয়ে বিদায় নেন। খোন্দকার সাহেব জেনারেল জিয়াকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেনারেল জিয়া দেশ পরিচালনার জন্য সার্বিক মতার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দেশবাসী জিয়া সাহেবের নাম প্রথম শোনেন ১৯৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ। এর আগে তার কেউ জানত না এবং কেউ শোনেওনি। তিনিই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে উদাত্তকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথমে বলেছিলেন, বিপ্লবী সরকারের প্রধান হিসেবে আমি মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতাদের তৈরি আরেকটি ঘোষণাপত্রও জিয়া সাহেব পাঠ করেছিলেন দ্বিতীয়বার। দ্বিতীয় ঘোষণায় জিয়া সাহেব বলেন, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। জিয়া সাহেবের এ ঘোষণা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং দিশেহারা দেশবাসী উজ্জীবিত ও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন কিন্তু কোনো ঘোষণা না দিয়েই তিনি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে সারেন্ডার করেন। তার সাথে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। কামাল হোসেনের শ্বশুরবাড়ি করাচিতে। ওই নয় মাস তিনি করাচিতে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। এটা ইতিহাসের অংশ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এটা হলো মিথ বিশ্বাস ও বদ্ধমূল ধারণা। ড. ওয়াজেদও তার বইয়ে এ কথা বলেছেন কিন্তু কার কথা কে শোনে। আওয়ামী লীগের একটা সুবিধা হলো, একবার নেতা নেত্রী কোনো কথা বললে সবাই সে কথা বলতে শুরু করে। হিটলারের দলের ও এ অভ্যাস ছিল। সত্য মিথ্যা বিচার না করাই হচ্ছে দলের আদর্শ। বিশ্বজিত হত্যা তো আপনারা চোখের সামনেই দেখেছেন। দলের নেতা নেত্রী সোজা সাফটা বলে দিলেন যারা হত্যা করেছে প্রকাশ্যে তারা কেউই ছাত্রলীগের সদস্য নয়। কলেজের, ভার্সিটির, স্কুলের শিকদের নিয়মিত পেটাচ্ছে। দলের আদর্শ এ ব্যাপারে ষোলো আনা ঠিক আছে। আদর্শ হলো বেমালুম অস্বীকার করা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে তেমন একটি দলও বাংলাদেশে নেই। প্রথম আলোর প্রকাশনী প্রথমা প্রকাশিত এক বইয়ে তাজউদ্দীন সাহেব বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। পাকিস্তানের কারাগারে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আরজিতে বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করেননি। বিবিসির আর্কাইভসে রয়েছে মেজর জিয়ার ঘোষণার রেকর্ড। ভারতের দলিল দস্তাবেজেও রয়েছে জিয়ার ঘোষণা। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা দেয়া এবং না দেয়াতে কিছু আসে যায় না। তার নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। জীবদ্দশায় বংগবন্ধুকে নিয়ে ঘোষণার বিতর্ক কখনোই হয়নি। পরবর্তী-পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এই বিতর্ক চালু করেছে দিল্লির পরামর্শে। জিয়া সাহেব হচ্ছেন একজন ভাগ্যবান সৈনিক, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছিলেন। ভাগ্যই জিয়াউর রহমানকে বারবার টেনে মঞ্চে নিয়ে এসেছে। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছেন। এবং একদিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। আমি তো মনে করি সব কিছুই হয়েছে আল্লাহর হুকুমে।
মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সত্য কথা, ইতিহাসের কথা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা ১০০ ভাগ। বিএনপিতে রয়েছেন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপি এ কথাটা জোরগলায় বলতে পারেনি। এ ব্যাপারে কোথায় যেন দলের দুর্বলতা আছে। কেন যেন মনে হয়, বিএনপি এ সত্য কথাটা বলতে লজ্জা পায়। মুক্তিযুদ্ধকে দলের প্রধান আদর্শ হিসেবে প্রচার করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। জিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন এবং এই মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন। এ কথাটা আজ দেশের মানুষ ভুলতে বসেছে। কারণ বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের এবং দলের প্রতিষ্ঠাতার গৌরব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া জিয়া সাহেব যে আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এ কথাটিও বলতে বিএনপি ভুলে গেছে। বিএনপির মহান সম্পদ হলো মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। তিনি জিয়াউর রহমানকে বিপদের দিনে সমর্থন করেছেন এবং দোয়া করেছেন। নতুন প্রজন্মকে জিয়ার নাম ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস রচনার জন্যই শাহবাগ রচিত হয়েছে। শাহবাগের ব্যাপারে বিএনপি ডিফেন্সিভ আত্মরামূলক ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দিয়েছে। এটা খুবই দুঃখের এবং বেদনাদায়ক। জিয়া সাহেব আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয়ের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের মা করেছিলেন আর জিয়া সাহেব সব মত ও পথের লোকজন নিয়ে দল গঠন করেছিলেন বিভেদ দূর করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধ। ল্য ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার দলের প্রতীক ধানের শীষ জিয়াউর রহমানকে দিয়ে গেছেন। বিএনপির প্রধান শক্তি এখনো মওলানা সাহেবের দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি মুসলিম লীগ মার্কা একটি দলে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে এই দলের অতীতও নেই,ভবিষ্যৎও নেই।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের তরুণেরা সুস্পষ্ট করে পেছনের এই ইতিহাসটা জানে না। তাই উল্লেখ করলাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক বহু বই রচিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওই সব রচিত হয়েছে ভাড়াটিয়া লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে। আমি কোনো ইতিহাসবিদ নই। বুদ্ধিজীবীও নই। একজন সজাগ ছাত্র হিসেবে পাকিস্তান আমল থেকে কাছাকাছি থেকে দেশের রাজনীতি দেখে এসেছি। ’৬১ সাল থেকে সাংবাদিক হিসেবে রাজনীতি দেখছি। মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। দু’জনকেই আমি গভীরভাবে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা একমাত্র শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হীনম্মন্যতার কারণে। বঙ্গবন্ধুকে সবার চেয়ে বড় এবং একমাত্র বড় দেখাতে গিয়ে শেখ হাসিনা তাকে বারবার ছোট করে চলেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ মনে করে বঙ্গবন্ধু শুধু তাদেরই নেতা। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় শেখ মণি তাকে বিতর্কিত করেছেন। মণি তো একবার লিখেই দিলেন, আইনের শাসন নয়, মুজিবের শাসন চাই। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বললে জিভ ছিঁড়ে ফেলা হবে। এর ফলেই দেশের মানুষ মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে। আগেই বলেছি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা তিনি চালু করতে চাননি। এ ব্যবস্থা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। একই রকম পরিস্থিতি এখন দেখা দিয়েছে। সর্বপ্রকার বামপন্থী, সেকুলারিস্ট, ধর্মহীন ও ধর্মবিরোধীরা শেখ হাসিনার ওপর ভর করেছে। টোপ দিয়েছে, আমাদের কথা শোনো, আবার মতায় আসতে পারবে। শাহবাগে সহজ-সরল অবুঝ তরুণদের মগজে প্রবেশ করেছে বামপন্থী ধর্মহীন ও ধর্মবিরোধীরা।
তরুণদের বুঝাতে হবে তোমরা জাতীয়তাবাদী আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এখন তথাকথিত আবেগের সময় নয়, এখন দেশগড়ার সময়। নেশন বিল্ডিং ব্রিগেড গঠন করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে হবে। হতে হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশ। ১৯৬০ সালে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরিব দেশ ছিল। তাদের তরুণেরাই দেশকে অধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
ব্লগিং করে দেশ গড়া যাবে না। কথা বলা যাবে, স্লোগান দেয়া যাবে। ব্লগে রাসূল সা: ও আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে যেসব অশ্লীল প্রচারণা দেখেছি তা বাংলাদেশের সব মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। ব্লগারদের মা বাপ, শিক ও মুরব্বিরা নিশ্চয়ই ব্লগের এসব বিষয় জানেন না। কে বা কারা তাদের সন্তানদের নবী, রাসূল ও আল্লাহর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে তা পিতা-মাতাকে অবশ্যই জানতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলেছে তরুণেরা অত্যন্ত সরলভাবে। তাদের সরলতা ও দেশপ্রেমকে লাখো-কোটিবার সালাম। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু বিচার আন্দোলনের গভীরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে তা জাতিকে এবং জাতির তরুণসমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে। তরুণেরা তো আমার আপনার সবার সন্তান। তারা বাংলাদেশেরই সন্তান। তাদেরকেই রা করতে হবে বাংলাদেশকে। দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্রকেই নস্যাৎ করতে হবে।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads