মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

এ কেমন আত্মঘাতী অরাজকতা


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী :
 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর যখন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে পৈশাচিক বর্বরতায় হামলে পড়েছিল, কিংবা তাদের যেভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল, আমাদের কেউ কেউ তখন শিক্ষকদের পক্ষ অবলম্বন করেছিলাম। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম, পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যরা তবে কি কখনও স্কুলে পড়তে যায়নি। যে শিক্ষক এদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, এদের সযতনে বিদ্যা অর্জন করিয়েছেন তাদের গায়ে হাত তুলতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হাত কী একবারও কেঁপে উঠল না? একবারের জন্যও কি এদের মনে ভাসেনি, যে স্কুল পেরিয়ে এসে তারা এই পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি হয়েছিল, সেই দরিদ্র স্কুল শিক্ষকদের কারো চেহারা? কিংবা এই স্কুল শিক্ষকদের পিটিয়ে তক্তা বানানোর নির্দেশ যারা দিলেন, তারা কি স্কুলের গন্ডি না পেরিয়েই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন? আমলা-মন্ত্রী, উজির-নাজির হয়েছেন? তাহলে কী শিক্ষা, কী মূল্যবোধ এই পুলিশ সদস্য কিংবা তাদের নির্দেশদাতারা পুষে আসছেন? আমাদের কান্ডজ্ঞানে তার কোনো জবাব খুঁজে পাই না।
এবং আশ্চর্যের ঘটনা এই যে, সুশীল সমাজ বলে যারা নিজেদের পরিচিত করেন, যারা জাতির বিবেক বলে নিজেদের জাহির করেন, তাদেরও কেউ সেদিন এই দরিদ্র স্কুল শিক্ষকদের পাশে এসে দাঁড়াননি। শিক্ষকদেরও দাবি সামান্যই ছিল। পেট চালানোর জন্য, গায়ে ন্যূনতম বস্ত্র ধারণের জন্য, পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য যারা আন্দোলন করছিলেন, আর পুলিশের পিটুনিতে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন, কোনো সুশীল গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াননি। কিংবা কলমও ধরেননি।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন পাপ-পঙ্কিলতা বাসা বেঁধেছে। মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটেছে। সৌজন্যবোধ, দয়া, মায়া-মমতা, স্নেহ-প্রেম যেন এ সমাজ থেকে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। নৈতিকতা শিক্ষার শুরু হয় ধর্মীয় শিক্ষার ভেতর দিয়ে। যে কোনো ধর্মগ্রন্থই মানুষের মনকে প্রসারিত করার শিক্ষা দেয়। হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার শিক্ষা দেয়। অসৎ পথের জীবন-জীবিকার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার শিক্ষা দেয়। এগুলো সমাজ গঠনের মৌল ভিত্তি। আদিকালের মানুষ যখন অরাজক সমাজকে শৃক্মখলায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন তারা এসব মৌল ভিত্তিকে জোরদার করার পথ দেখিয়েছিলেন। সর্বজীবে দয়ার কথা বলেছিলেন। গুরুজন, পিতামাতাকে শ্রদ্ধার কথা বলেছেন। সদা সত্য কথা বলতে বলেছেন। অপরের সম্পদের প্রতি লুব্ধ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পরশ্রীকাতর না হতে বলেছেন। প্রেমময়, ভালবাসাময়, হিংসাবিদ্বেষহীন সমাজ গঠনের কথা বলেছেন।
তারপরও মানুষ সেখান থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কখনও অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অনাচারে লিপ্ত হয়েছে। তখন পৃথিবীতে নতুন নতুন ধর্ম এসেছে। তার মর্মবাণী ছিল একই। শান্তি-শৃক্মখলা, মানবতা, পরস্পরের প্রতি দয়াশীলতা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা-এর সবই ছিল তার মর্মবাণী। পৃথিবীতে দার্শনিকরাও এসেছেন যুগে যুগে, একই মর্মবাণীকে সামনে নিয়ে। কারণ তারা উপলব্ধি করেছেন যে, সমাজ সুশৃক্মখলভাবে না চললে, সেখানে শান্তি, প্রেম, ভালবাসা না থাকলে, মানব সমাজের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠতে বাধ্য, যা কোনো মানুষেরই কাম্য নয়। সাময়িকভাবে হলেও দার্শনিকদের এসব মতবাদ সমাজের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু মানুষ কেন এসব পথ গ্রহণ করেছে? কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মীয় অনুশাসনগুলোকে সযত্নে লালন করেছে, সে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, মানুষ তার নিজের অস্তিত্ব এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের কল্যাণের জন্য সমাজের ভেতরে শৃক্মখলা চেয়েছে। তা না হলে নিজেদের অস্তিত্ব যেমন বিপন্ন হয়ে পড়তে বাধ্য, তেমনি ভবিষ্যৎ বংশধররাও অবধারিত বিনাশের পথে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে মানব সমাজের বিকাশ সাধন হয়েছে। এসব পথ অবলম্বন করেছিল বলেই পৃথিবী ক্রমেই অধিকতর বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর দিকে দিকে সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছে। প্রযুক্তির বিকাশ সাধিত হয়েছে। মানুষ চাঁদে নেমেছে। মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালিয়েছে। মহাশূন্য গবেষণায়ও এই মানবসমাজই বিশাল অবদান রেখে চলেছে।
তারপরও সমাজের অধঃপতনের কাল আছে। আধুনিককালে সে অধঃপতনের জন্য ব্যক্তিমানুষ যতটা না দায়ী হয়, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিতরা তার চেয়ে অধিক দায়ী থাকেন। রাষ্ট্র যখন ব্যক্তির অধঃপতনকে উস্কে দেয়, দুষ্ট যখন পুরস্কৃত হয়, শিষ্ট যখন তিরস্কৃত হন, তখন এই অধঃপতন ক্রমেই চূড়ান্ত রূপ নিতে থাকে। এখানে সুশীল সমাজের দায়িত্বও কম নয়। সুশীলের লেবাসে যারা সরকারের এই অধঃগমন উদ্যোগে নীরব অথবা সরব সমর্থন জানায়, তখন সে অধঃপতন আরও তরান্বিত হয়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী অথবা এই মতলববাজ সুশীলেরা কিছুতেই বুঝতে চান না যে, সমাজকে অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেয়ার এই প্রক্রিয়ায় বস্তুতপক্ষে তারা নিজেদেরই কবর খোঁড়ে। অন্যের জন্য খোঁড়া কবরে শেষপর্যন্ত তাদের নিজেদেরই ঠাঁই নিতে হয়। পৃথিবীর এটাই নিয়ম।
আজ বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী দেশকে তেমনি এক অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ন্যায়নীতি, সম্ভ্রম, শ্রদ্ধা, প্রেম, ভালবাসা-সবকিছু এখন তিরোহিত-প্রায়। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ঘৃণা-বিদ্বেষের এক সর্বনাশা আবহ তৈরি করেছে। মানুষে মানুষে ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ, খুন, রাহাজানি, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো এখন পুরস্কৃত হচ্ছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে চেয়ে চেয়ে দেখছি, খুনের দায়ে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত গুরুতর অপরাধীরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। আর যাদের আপনজন খুন হয়েছে, তারা পুনরায় আরও কোনো নিকটজনের খুনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত দিন কাটাচ্ছেন। ছাত্রলীগ নামক এক ঘাতক বাহিনীকে সরকার লালন করছে। বিরোধী মত দলনের জন্য ছাত্রলীগকে অস্ত্র হাতে পুলিশের পাশাপাশি নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশের সামনেই তারা কুপিয়ে মানুষ হত্যা করছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ এই সমাজে ন্যায় বিচার থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি সারাক্ষণ যাপন করছেন আতঙ্কিত জীবন।
এই সরকার সমাজের ভেতর থেকে সব ধরনের শৃক্মখলা, নীতি, নৈতিকতা, আইন, বিচার সব কিছু অবিরাম মুছে দেয়ার চেষ্টা করছে। মূল্যবোধ বলে অবশিষ্ট কিছু আছে বলে মনে হয় না। শ্রদ্ধা, প্রেমপ্রীতি, ভালবাসা এখন সমাজ থেকে উধাও হওয়ার পথে। শাহবাগ হিস্টিরিয়ায় তরুণ অভিভাবকরাও যেন কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। শিশুকে দয়া, মায়া, স্নেহ, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, এসব শেখানোর বদলে তারা হত্যার দাবি তুলতে শেখাচ্ছেন। সম্প্রতি নিহত ব্লগার রাজীব ইসলাম, তার আমল আকীদা, তার বিধিবিধান, নবী করীম (সাঃ) ও সাহাবীদের সম্পর্কে যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করেছে, তাতে তাকে পারভার্ট ছাড়া আর কিছু বলা চলে না। কোনো কাফেরও সম্ভবত এ ভাষায় এ পর্যন্ত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে আক্রমণ করেনি।
কিন্তু আমরা কি বিবেচনা করে দেখেছি যে, এসব কুরুচির উৎস কোথায়? এতটা নৈতিক অবক্ষয়ই বা সমাজের ভেতরে কেমন করে প্রবেশ করলো? এই রাজীবই বা কীভাবে এমন পারভার্ট হয়ে উঠতে পারলো? আসলে আমরা তেমন এক পরিবেশই সমাজের ভেতরে সৃষ্টি করেছি। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম, যখন জানলাম যে, এই রাজীবের স্ত্রী-সন্তানও আছে। সাধারণত বিবাহিত মানুষ, সন্তানের পিতার কাছ থেকে জনগণ দায়িত্বজ্ঞান আশা করে। নৈতিকতার দিক থেকে কতটা অবক্ষয়িত হলে মানুষ এমন কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে উঠতে পারে, সেটা কল্পনা করাও দুষ্কর। কিন্তু হয়েছে তো তাই। কারণ আমরা সমাজের এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছি যে, ইসলামকে, তার নবী, তার নিয়মকানুনকে কষে গাল দিতে পারলে শাসকদের বাহবা পাওয়া যায়। উন্মূল নৈতিকতা-বর্জিতদের কাছ থেকে সাবাসী পাওয়া যায়। সে সাবাসীর আয়োজনও আমরা দেখেছি।
এই পরিস্থিতি তো আর একদিনে তৈরি হয়নি। ক্রমেই ইসলামের বিরুদ্ধে জিগির তুলতে তুলতে সরকার সে জিগিরকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে ফেলেছে। এই সরকারের এক সহযোগী দীর্ঘদিনের গলা-পচা এক বাম রাজনীতিক বলে ফেলেছিলেন যে, মসজিদে যারা যায়, তাদেরও তালিকা তৈরি করতে হবে। তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে। এরকম কথা বলে তিনিও সম্ভবত বাহবাই পেয়েছিলেন। সরকারের তরফ থেকে তার কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি, বরং করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে।
আর সমাজের ভেতরে কী ঘটছে, সম্প্রতি দেখলাম এক শহরের কেন্দ্রস্থলে গোলচক্করের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ঘৃণা-স্তম্ভ। এর পাশ দিয়ে প্রতিদিন কোমলমতি শিশুরা স্কুল-মাদরাসায় যায়। তাদের শৈশব থেকেই ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে। কিন্তু এটাই কি তাদের শিখবার কথা? ঘৃণা কীভাবে করতে হয়, শিশুদের তো সেটা জানা থাকবার কথা নয়। তবে কি তারা যতবার এই পথে যাবে, ততবারই ঐ স্তম্ভের গায়ে থুথু ছিটাবে? কিংবা শহরের কেন্দ্রস্থলের এই স্তম্ভে প্রাকৃতিক কার্যাদি সারবে? এই স্তম্ভ যারা গড়েছেন তারা শিশু নন। কিন্তু এই স্তম্ভ নির্মাণ করে তারা ঐ শহরের শিশুদের ভবিষ্যৎ কলঙ্কিত অন্ধকার করে তুলেছেন। এই কলঙ্কের দায় শুধু তাদের নয়। ঐ শহরের বাসিন্দা যারা, তাদের উপরও এ দায় বর্তায়। শিশু সন্তান সবারই আছে। সবাই মিলে যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা হতো, তাহলে কিছুতেই এ স্তম্ভ গড়ে উঠতে পারতো না। তেমনিভাবে পারতো না শিশুদের ভবিষ্যৎ সর্বনাশের পথ প্রশস্ত করতে। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, কোনো শহরে কেউ গড়ে তোলেনি সম্প্রীতি বা ভালবাসার স্তম্ভ। তাহলে শিশুরা ঘৃণার পরিবর্তে প্রেম-ভালবাসা, মায়ামমতায় উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারতো।
তেমনিভাবে সেদিন ঢাকার রাজপথে আরও এক আত্মবিনাশী ছবি দেখলাম। সেদিন সম্ভবত ঢাকায় জামায়াতের প্রতিবাদ মিছিল বের হবার কথা ছিল। তখনই চোখে পড়লো সেই সর্বনাশ। এক স্কুলছাত্র রেস্টুরেন্টে বসে নাশতা করছিল, তার গোঁফও ওঠেনি। জামায়াত শিবির ভেবে পুলিশ তাকে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে পৈশাচিক নির্মমতায় পিটিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে। মনে হলো, এই হানাদার পুলিশের দল সম্ভবত নিঃসন্তান। সন্তানের প্রতি মায়া, মমতা, মহত্ত্ব কাকে বলে, এই সাধারণ মানবিক শিক্ষাও তাদের নেই। এদের কারো কি মনে হয়নি যে, তাদেরও ঘরে এমনি কিশোর সন্তান আছে, যারা হোটেল রেস্তোরাঁয় শখের বসেও খেতে বসতে পারে। কারো কি মনে হয়নি যে, তার সন্তানকে অন্য কেউ যদি এইভাবে টেনে-হিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে প্রায় লাশ বানিয়ে ফেলত তাহলে তাদের কেমন লাগত। ১/১১-র সামরিক শাসনের সময় তরুণ সেনা কর্মকর্তারা প্রবীণ মানুষের গালে সজোরে চপেটাঘাত করেছে, তখনও উদ্বেগের সঙ্গে একই কথা বলেছিলাম। মনে হয়েছিল এরা বোধ করি আমাদের কারো সন্তানই নয়, এরা বোধ করি কোনো হানাদার বাহিনী। তাদের বিবেকের কাছেও প্রশ্ন তুলেছিলাম, হে তরুনেরা ভারী অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি এসব সহ্য করে না। এরা আইনস্টাইন পড়েনি, যে আইনস্টাইন মৃত্যুর আগে মানব সমাজকে এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে, ‘নেচার প্রিফার্স সিমপ্লিসিটি, অ্যাভয়েডস ভ্যাকুয়াম।' প্রকৃতি সরলতা পছন্দ করে আর শূন্যতা পরিহার করে।
এই সরলতা এখন বাংলাদেশ থেকে তিরোহিত। ক্ষমতার ডান্ডা যাদের হাতে আছে তারা কান্ডজ্ঞানহীন। তারা প্রকৃতির নিয়ম মানে না, ধর্মের নিয়ম মানে না, নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না। কিন্তু সকল ঢিলের জবাবে পাটকেল অবধারিত। পুলিশেরও সম্ভবত সে কথা বোঝার দরকার আছে। সেদিন আর একটা দৃশ্য দেখে আমার পিতার কথা মনে হয়েছে। আমার দাদার কথা মনে হয়েছে। আমার আশপাশের সকল বয়োঃজ্যেষ্ঠ সকল মানুষের কথা মনে হয়েছে। এমনকি আমার বন্ধুদের কথা মনে হয়েছে। তাদের সকলেরই মুখে দাড়ি আছে। আমি ষাট বছর বয়স অতিক্রম করে জীবন সায়াহ্নের দিকে রওনা হয়েছি। আমি বলতে পারি না মৃত্যু আমাকে কখন ডাক দিবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমাকে যে সত্যের সাধনা করেই যেতে হবে। ছবিটি দেখে আমি মুষড়ে পড়েছিলাম।
একদল পুলিশ তার পাশে ছাত্রলীগের এক তরুণ মাঝখানে অসহায়ের মতো সত্তর বছরের এক প্রবীণ সাধারণ মানুষ। তার চেহারায় সাধারণত্ব, তার পোশাকে সাধারণত্ব। দেখে মনে হচ্ছিল না রাজনীতি কাকে বলে তিনি তা জানেন। ঐ তরুণ এই প্রবীণের শ্বেতশুভ্র দাড়ি চেপে ধরে তাকে অবিরাম ঘুষি মেরে চলছিল। এবং তিনি বেবুঝ অসহায়ের মতো কিছুই বুঝতে না পেরে নীরবে তা সহ্য করছিলেন। পুলিশের যে সদস্য পাশে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল, তার কী বাবা আছে? তার কী দাদা ছিল? তার চৌদ্দগোষ্ঠীর কারো কী দাড়ি ছিল? টেলিভিশনের পর্দায় এবং পরদিন সংবাদপত্রে ছবি দেখে আমি নিভৃতে হু হু করে কেঁদে ফেলেছিলাম, আল্লাহ তুমি আমাদের রক্ষা করো। বাংলাদেশের ১৪ কোটি মুসলমানদের হেফাজত করো এবং জালেমের জুলুম থেকে আমাদের রক্ষা করো, আমীন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads