রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শাহবাগমঞ্চের নায়কদের বিরুদ্ধে আওয়ামী ওলামা লীগেরও অভিযোগ



আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়। প্রতিটি মামলারই বাদী হয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগমঞ্চ থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সেই আল্টিমেটামের পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একই সুরে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের হুমকি দেন। দু'মন্ত্রীর হুমকি ও শাহবাগীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ বাদী হয়ে ওই পাঁচটি মামলা দায়ের করে।
সমমনা ইসলামী ১২ দলের কর্মসূচিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় কেন আমার দেশ সম্পাদককে আসামী করা হলো- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে রমনা জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) এস এম শিবলি নোমান বলেন, তিনি তার পত্রিকায় গণজাগরণ ও ব্লগারদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ধর্মীয় চেতনাধারী ও ইসলামী ভাবধারার ব্যক্তিদের উস্কে দিয়েছেন। আমার দেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে আলেম-ওলামা ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মাঝে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার ওই বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা যায় যে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কারণ হলো, গণজাগরণমঞ্চ ও ব্লগারদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গণজাগরণমঞ্চ ও ব্লগারদের নিয়ে আর কোনো পত্রিকা কি প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি? আমরা জানি যে, বাংলাদেশের সব পত্রিকাতেই ওইসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শাহবাগমঞ্চ থেকে আইনবিরোধী, উস্কানিমূলক ও এমন বহু সন্ত্রাসী বক্তব্য দেয়া হয়েছে, যা অনেক গণমাধ্যমে ফেনিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ঐসব গণমাধ্যমের সম্পাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ তো কোনো মামলা করেনি। এমন আচরণ থেকে সরকার ও পুলিশের অনুরাগ ও বিরাগের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমার দেশ পত্রিকা যদি কোনো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করতো কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামার উস্কানি দিতো তাহলে পুলিশের আচরণের একটি যুক্তি খুঁজে পাওয়া যেতো। কিন্তু আমার দেশ পত্রিকা ঐ ধরনের কোনো ইয়েলো-জার্নালিজম করেনি। বরং পত্রিকাটি দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের ঈমান-আকিদায় আঘাত হানার বিষয়টি তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ-রাসূল ও মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানার মাধ্যমে যারা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের মুখোশ উন্মোচন করা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পবিত্র ও জাতীয় দায়িত্ব। আমার দেশ পত্রিকা বস্তুনিষ্ঠভাবে সেই দায়িত্ব পালন করায় এখন ব্লগার ও সরকার রুষ্ট হয়েছেন মাহমুদুর রহমানের ওপর অনুরাগ ও বিরাগের এমন চেতনা দিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা মোটেও সম্ভব নয়, বরং এতে যে দেশের আইনশৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায়, সেই বিষয়টি গত কয়েকদিনে লক্ষ্য করা গেছে।
আমার দেশের প্রতিবেদন যে জনস্বার্থে প্রকাশিত হয়েছে এবং জনগণ তা গ্রহণ করেছে সেই বিষয়টি উপলব্ধি করা যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগের বক্তব্যেও। তারা ডাঃ ইমরান এইচ সরকার ও আহমেদ হায়দার রাজিবসহ শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ব্লগারদের শয়তানরূপী নাস্তিক উল্লেখ করে তাদের ব্লগ নিষিদ্ধ ও শাস্তির দাবি জানান। তারা আরো বলেন, এই নাস্তিকরা রাসূল (সাঃ) ও ইসলাম সম্পর্কে অবমাননাকর কুরুচিপূর্ণ ও জঘন্য লেখা প্রকাশ করে যাচ্ছে। তাদের ব্লগগুলো দেশী-বিদেশী এনজিওর মদদে অনবরত ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিরোধীদেরও উস্কে দিচ্ছে। আমরা জানি না, আওয়ামী ওলামা লীগের এই বক্তব্য শাহবাগমঞ্চে জড়িত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন পড়েছেন কিনা। আর সরকারের সাথে ব্লগার ও শাহবাগ মঞ্চের বিষয় নিয়ে আওয়ামী ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দের কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা আমরা তাও জানি না। তবে আওয়ামী ওলামা লীগের উপলব্ধির সাথে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের উপলব্ধির যে মিল নেই তা তাদের আচরণে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মিল থাকলে মাহমুদুর রহমানের পরিবর্তে শাহবাগ মঞ্চের ষড়যন্ত্রকারী ও ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করে তাদের আইনের আওতায় নেয়াটাই ছিল পুলিশের জন্য সঙ্গত। কিন্তু তেমন কোনো যৌক্তিক আচরণ আমরা লক্ষ্য করিনি।
দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও হুমকি ধমকির বিরুদ্ধে সমাবেশের আয়োজন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তারা গণতন্ত্র ও স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বার্থে শাহবাগ মঞ্চের হুমকিদাতাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন। আমরা জানি না সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসন আমলে নিয়েছেন কিনা। তবে প্রসঙ্গত আমরা ক্ষমতা গ্রহণের সময় সরকারের মন্ত্রী বাহাদুরদের উচ্চারিত শপথের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে দেশ শাসন না করার যে শপথ তারা নিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি কি একেবারে ভুলে গেছেন? এমন ভুলের মাশুল কিন্তু খুব বড় হয়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কতটা সচেতন হন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads