মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

বাতির নিচে অন্ধকার


শাহবাগ চত্বরে ফাঁসির দাবিতে জ্বালানো হয়েছে হাজারো মোমবাতি। কিন্তু বিশ্বাসের আলো ছাড়া শুধু মোমের আলোয় মনকে আলোকিত করা যায় না। আর মনের আলো ছাড়া শুধু বাইরের আলোয় কোনো দিনই অন্ধকার দূর হবে না। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা নিজেদের আলোকিত মানুষ বলে দাবি করছে। কিন্তু শাহবাগের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মনে হয়েছে সেখানে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। পৃথিবী সেখানে অবাক বিস্ময়ে প্রত্য করছে, আন্দোলনের নামে শাহবাগে মানুষকে জবাই করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে, ভিন্নমতের বুদ্ধিজীবী, সমর্থক, গণমাধ্যম, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য উসকানি দেয়া হচ্ছে। সেখানে ফাঁসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার একাকার হয়ে গেছে। সেখানে শেখানো হচ্ছে ঘৃণা, হিংসা, বর্বরতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, মারামারি, বেহায়াপনা ও আইন অমান্য করা। মানুষকে জবাই করার স্লোগান শেখানো হচ্ছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। সেখানে শেখানো হচ্ছে কিভাবে পত্রিকা অফিসে আগুন দেয়া যায় এবং নিরীহ মানুষের বাড়িতে আক্রমণ করা যায়। যদিও আন্দোলকারীরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিকে সামনে এনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রকৃতপে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চায় না। তারা চায় ফাঁসি এবং ইসলামি রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা। তারা ইয়াহিয়া-ভুট্টোসহ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। চি?িহ্নত ১৯৫ জন পাকিস্তানি আর্মির বিচার দাবি করে না। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন আন্দোলনকারীরা তাদেরও বিচার দাবি করে না। তারা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকতা ও বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের বিচার দাবি করে না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যুদ্ধাপরাধ বিচারের মুখোমুখি করা হলে স্যা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এসব আওয়ামী নেতাদের বিচার দাবি করছে না। তারা হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু দুর্নীতিসহ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অপকর্ম ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো গণদাবির পওে কোনো কথা বলছে না। ভারত কর্তৃক সীমান্তহত্যার ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। ফালানী হত্যার কথা নেই তাদের মুখে, ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্বজিৎ হত্যা, শিকদের লাঞ্ছিত করা, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি অপকর্মের বিচারের জন্য তাদের কোনো দাবি নেই। পুলিশ কর্তৃক জামায়াত-শিবিরকে মিছিল-মিটিং করতে না দেয়ার জন্য তাদের কোনো সহমর্মিতা নেই। বিনা উসকানিতে মিছিলে গুলি করে পাখির মতো মানুষ হত্যা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। গণতন্ত্র রার জন্য তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে মনে হবে আন্দোলনকারীরা মূলত সরকারের মদদপুষ্ট এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ক্রীড়নক হিসেবে আন্দোলন করছে। এ ল্েয তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে পুঁজি করে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।

তথাকথিত ব্লগারদের আহ্বানে শহবাগের আন্দোলন মূলত মিডিয়াই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করছে। যে শহরে কোটি মানুষের বাস সেখানে গুটিকয়েক ব্লগারের সমাবেশকে কোনো কোনো মিডিয়া ১৬ কোটি মানুষের সমাবেশ বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। কথিত ব্লগার নেতাদের অনেকেই নাস্তিকতার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ভয়ঙ্কর নাস্তিকচক্র ব্লগে যা লিখেছে তা খুবই কুরুচিপূর্ণ ও ইসলামবিদ্বেষী। তারা মহান আল্লাহ ও আমাদের প্রিয় রাসূল সা: সম্পর্কে নানা ধরনের অশ্লীল, অশ্রাব্য ও বিকৃত কথা ব্লগে লিখছে। তারা মূলত ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করে ব্লগ লিখে ঈমানদার মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে। এ আন্দোলনের আয়োজকদের বেশির ভাগই বামরাজনীতির সাথে জড়িত।
এ আন্দোলকারীদের অনেককেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রিয়ান মানসিক রোগের চিকিৎসক সিগমান্ড ফ্রয়েডের অনুসারী বলে মনে হয়েছে। তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কটা করতেন। তিনি আত্মা ও আধ্যাত্মিক জগৎকে অস্বীকার করতেন এবং সব কিছুকে যৌনতা ও ভোগের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতেন। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ফিউচার অব অ্যান ইলিউশনে (The Future of an Illusion) তিনি ধর্মবিশ্বাসকে এক ধরনের মানসিক রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং মানবজাতির অগ্রগতির সাথে সাথে সে বিশ্বাসের বিলুপ্তি অনিবার্য বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিংশ শতাব্দীতে নাস্তিকতা রাজনীতি ও সামাজিক নৈতিকতার েেত্রও প্রভাব ফেলেছিল। সমাজতন্ত্র ছিল নাস্তিকতার সামাজিক ফল। মার্কস, অ্যাঙ্গেলস ও লেনিনসহ কমিউনিস্ট শাসকেরা নাস্তিকতাকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তারা সবাই ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে নিরীশ্বরবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এ ল্য হাসিলের জন্য তারা সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং আর কোনো নতুন কৌশল না পেয়ে বিশ্বাসীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়েছিলেন।
ধর্ম বিরোধিতার ইতিহাসে হিপ্পি আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ আন্দোলনের প্রবক্তারা ঈশ্বরবিহীন দর্শন, অবাধ যৌনাচার ও ব্যাপক মাদক গ্রহণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভ করা যায় বলে প্রচারণা চালাত। তাদের প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে একদল তরুণ-তরুণী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জন লেননের (John Lennon) মতো গান গাইত। রাষ্ট্রহীন, ধর্মহীন একটি বিশ্বের কথা ছিল এসব গানের বিষয়বস্তু। এর ফলে বিংশ শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে ছড়িয়ে পড়া অবাধ যৌন বিপ্লব (Sexual Revolution) সমাজের অসামান্য তি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সত্তরের দশকে হিপ্পি নেতাদের অনেকেই আত্মহত্যা করেছিল এবং মাদকাসক্তির কারণে অনেকেরই করুণ মৃত্যুকে বরণ করতে হয়েছিল। একই অবস্থা হয়েছিল তাদের সমর্থকদেরও। বর্তমান শাহবাগ আন্দোলনের ব্লগারচক্রের অনেকেই এই ধরনের অবাধ যৌনতার প।ে ব্লগারচক্রের একজন সম্প্রতি খুন হওয়া রাজীব। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তার মনগড়া কথায় ফুটে উঠেছে অশ্রাব্য যৌন সুরসুরি বিকৃত ধ্যান-ধারণা।
বর্তমান শাহবাগ চত্বরের আন্দোলনকে মিডিয়া আজ ‘গণজাগরণ’ বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। অথচ বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলামানের চিন্তা-চেতনা এ আন্দোলনকারীদের বিপরীত। বিশ্বাসী জনগণ যদি শাহবাগ আন্দোলনের নেতাদের জীবনচরিত ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হতেন তাহলে সমর্থন দেয়া তো দূরের কথা বরং এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সাধারণ জনগণ এখনো জানে না যে, শাহবাগের আন্দোলন বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র।
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের কার্যকলাপ দেখে স্পষ্টতই মনে হয় তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ছদ্মাবরণে ধর্মহীনতার ধারণাকে বাস্তবায়ন করার জন্যই সরকারের প্রত্য মদদে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শাহবাগের তথাকথিত আন্দোলকারীরা বাংলাদেশ থেকে ইসলামি চেতনাকে মুছে দিতে চায়। এ কারণে আন্দোলনকারীরা অন্যান্য তথাকথিত ইসলামি রাজনৈতিক শক্তিকেও কাছে টানার চেষ্টা করছে এবং জনগণকে বোঝাতে চাচ্ছে যে, এ আন্দোলন দলনিরপে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads