বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৪

আওয়ামী লীগ কেন জিতল না


আওয়ামী লীগ সত্যি সত্যিই হেরে গেল। বিরোধী দল জিতল কি না, সেটা আরো গভীর মূল্যায়নের বিষয়। তবে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক আম্পায়ারের প্রয়োজন বাড়ল। আওয়ামী লীগ কঠোর হতে চাইলে পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সরকার জোর খাটাতে পারছে গণমানুষের শরীরের ওপর, মনের ওপর নয়। মানুষের মন ও মননের তোয়াক্কা না করার কারণেই তামাশার নির্বাচন বর্জিত হয়েছে।

সবার স্মরণে পড়ার কথা, আমরা যখন দশম সংসদ নির্বাচনের নামে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জানাজা নিয়ে ব্যস্ত, তখন ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন জানিয়ে দিলো আমরা আবার তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হচ্ছি। আমরা যে একটা বিরাট খাদ কিংবা গর্তের কূলে দাঁড়িয়ে আছি সেটা প্রভাবশালী বিশ্বমিডিয়া আগেই জানিয়ে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন ও মহাজোট সরকারের যৌথ প্রযোজনায় গণতন্ত্রের যে পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নিলো, সেটা এখনো ইনকিউবিটরে জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানে রয়েছে। একতরফা, প্রাণঘাতী, আতঙ্ক ও প্রহসনের ভোটারবিহীন এ নির্বাচন কোনো দিন নৈতিকভাবে বৈধতা পাবে না। সংবিধানের দোহাই কতটা অনৈতিক ছিল সেটা এখন স্পষ্ট। 

সরকার নাটকটা যেভাবে সাজিয়েছিল, সেটা একেবারেই ফপ মেরেছে। বিরোধী দল ছাড়াই যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তার হিসাবের জারিজুরি নিয়ে সাধারণ মানুষ মোটেও উৎসাহী নয়। সরকার যেভাবেই অঙ্ক সাজাক, জনগণ যা বোঝার সেটা বুঝে নিয়েছে। এখন ভাতের চেয়েও ভোটের অধিকার বড় হয়ে এলো। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে ১৫৩ জন নির্বাচিত হলেন, ভোটের নামে সাজানো প্রতিদ্বন্দ্বিতার নাটকে যারা এমপি-মন্ত্রী  পদবিটা কিনলেন তারা ইতিহাসে থাকবেন- তবে নন্দিত হয়ে নয়। ৫ জানুয়ারির এমপিদের নামের সাথে আলাদা একটা বিশেষণ যুক্ত হবে। তারপরও প্রচারণাটা এমন যে, শুধুই বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকার ও সরকারপন্থীদের এ প্রচারণা শুধু মিথ্যাই নয়, জনগণকে প্রতারিত করার কৌশল মাত্র। 

বি. চৌধুরীর ভাষায়, ভোটের তামাশার নামে প্রতারণা। কর্নেল অলি মনে করেন, দেশকে তাঁবেদার বানানোর চেষ্টা। কাজী জাফর বললেন, তামাশার নির্বাচন। কাদের সিদ্দিকী মনে করেন, চেঙ্গিস-ইয়াহিয়ার সারিতে শেখ হাসিনা, তিনি গণতন্ত্রকে নিহত ও নির্বাচনের ফাঁসি হতে দেখলেন। আ স ম রবের ভাষায়- সরকারের কুলখানি অতঃপর চল্লিশা হবে। ভণ্ডামির নির্বাচন আখ্যায়িত করলেন শফিউল আলম প্রধান। ইতিহাসের কালো অধ্যায় বললেন, চরমোনাইয়ের পীর। ১৮ দলীয় জোটের বাইরে ডান-বাম ও বেশ কটি ইসলামি দল প্রহসন ও তামাশা আখ্যায়িত করে  নির্বাচন বর্জন করেছে।

ড. কামাল মনে করেন, অবৈধ এই নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। ড. আকবর আলি খানের প্রশ্ন- পাঁচ কোটি ভোটার নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? খন্দকার মাহবুব প্রহসনের নির্বাচনের কথাই বললেন। ড. শাহদীন মালিকের মন্তব্য, এমন নির্বাচনের দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, ক্ষমতার দাপটে সরকার যা মনে চাইছে তাই করছে। এর বাইরে সুশীলসমাজের অসংখ্য প্রতিনিধি ও পেশাজীবী নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তুখোড় ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা চেপে যাওয়া এক ধরনের শঠতা, ছলনা ও প্রতারণা। খলের ছলের অভাব হয় না। কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িতরা কি নীতি-নৈতিকতার ধারেকাছেও থাকতে চান না। জনগণকে বোকা ভেবে এমন কাজ করার কারণে প্রলয় বন্ধ হওয়ার নয়।

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের বক্তব্য সবার জানা। ইসলামপন্থী সব দলের বক্তব্য ও মন্তব্য সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারে নেই এমন বামদের মন্তব্যও সরকারের জন্য বিব্রতকর ছিল। কিন্তু সরকার বিবেচনায় নেয়ার কোনো দায় বোধ করেনি।

মানুষের ঘৃণার মাত্রাটার প্রকাশ ঘটেছে ভোট কেন্দ্রে মলমূত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে। এটা শুধু বিরোধী দলের ভোট বর্জন ও প্রতিহত করার কারণে নয়, বিগত পাঁচ বছর যে পরিস্থিতি জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে তারই ফল। এক হেফাজত ইস্যুতে সরকারের মুখপাত্ররা সম্মানিত আলেমদের নিয়ে যে নির্লজ্জ আচরণ করল, তার নজির এ দেশে নেই। আমরা কোনো সালতামামি কিংবা সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান নিয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। গত পাঁচ বছরে খুন, রাজনৈতিক হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণপিটুনিতে নিহতের একটা খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি। কারণ এই সময়টিতে নিরাপদ ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পায়নি জনগণ। জনগণ এতটা ক্ষোভ প্রদর্শন করল, যার ফলে এখন সরকারের অবস্থান অনৈতিক ও অবৈধ হয়ে আছে। গণতন্ত্র  ও জনগণের ম্যান্ডেটের ভাষা বুঝে সত্য মানলে এই সরকার আর একমুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অধিকার রাখে না। প্রদত্ত ভোটের হার বাড়িয়ে সরকার আর কারো চোখে ধুলো দিতে পারবে না। সরকার আগেই ক্ষমতাচর্চা করেছে রাষ্ট্রশক্তির জোরে। ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে সরকার নীতি, নৈতিকতা, মানবতা, নৈতিক মূল্যবোধ, লোকচুর ভয় কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি। পাঁচটি বছর তারা মানুষের প্রাণ, সম্মান ও ইজ্জত নিয়ে খেলেছে।

তারও একটা খতিয়ান দেয়া সম্ভব। সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে- জানুয়ারি ২০০৯  থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত দেশে ২০ হাজার ৬৯৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩৩০ জন। এ ছাড়া এ সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৭৭৫ জন। এ হিসাব বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে পাওয়া। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন খুন হয়েছেন। সরকারের পাঁচ বছরে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন এক হাজার ৩৩০ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ২২ জনেরও বেশি রাজনৈতিক সহিংসতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৮৩ জন। প্রতিদিন গড়ে ৪৪ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ১৭৮ জন। অধিকারের  দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু বিগত ২৫ নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৪৯ জন নিহত এবং চার হাজার ৮৮৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ হিসাবগুলো কোনো দিন সরকারকে ভাবায়নি। অথচ জনগণ প্রতিটি ঘটনা মনে রেখেছে। হ্যাঁ’-‘নাবলার প্রথম সুযোগে তারা সদ্ব্যবহার করেছে।

জনগণ কেন এ সরকারকে বারবার না বলছে তা আওয়ামী লীগ ও তাদের বন্ধুরা হিসাবে নিতে চাচ্ছে না। ভিন্নমাত্রার একটা খতিয়ান দিতে চাই। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নিজ সংগঠনের নেতা যুবায়েরকে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ বিষয়টি আমলে নিলো না। দায় চাপাল অন্যের ঘাড়ে। রাজধানীতে বিরোধী জোটের অবরোধের সময় ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ। আওয়ামী লীগ মন্ত্রী ও সরকার প্রথমে তামাশা দেখাল, পরে বিচারের কথা বলল। অথচ গোটা জাতি স্তম্ভিত হলো। বোধোদয় ঘটল না সরকারের।

সরকারের পাঁচ বছরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ৭৭৫ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ১৩ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪০৪ জন কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সরকার জাতিকে কোনো কৈফিয়ত দিতে চাইলো না, বরং ক্ষমতার দম্ভ জাহির করল। ফেলানী ইস্যুতে জাতি ক্ষোভে ফুঁসে উঠল। বিশ্বজুড়ে নিন্দাবাদ হলো, সরকার নতজানু থাকল।

এ ছাড়া বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও হামলা ছিল লণীয়। বিশেষ করে বিগত বছরের প্রথম ও শেষ দিকে এটা মাত্রাহীনভাবে পরিলতি হলো। আর ২০১৩ সালে এসে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করল। শুধু ২০১৩ সালেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ২৬৭ জনের। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বিরোধী জোটের পূর্বঘোষিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন এবং ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীতে একজন নিহত হলো। ৬০টি প্রাণ ঝরে গেল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। দেশজুড়ে বিুব্ধ জনতার মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে এসব লোক মারা গেল। অধিকারের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই বিরোধীদলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষ। সরকার ভাব দেখাল জামায়াত-শিবির আর পোকামাকড় নিধন যেন সাধারণ বিষয়। অথচ জনগণ বিষয়টি মেনে নিতে পারল না।

সরকারের পাঁচ বছরে সারা দেশে শুধু গণপিটুনিতেই নিহত হলো ৭২০ জন। সে হিসাবে প্রতি মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু ঘটেছে ১২ ব্যক্তির। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা লণীয় বিষয় হলেও সরকার একটুও আমলে নিলো না।

গণপিটুনিতে সাভারে ছয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে মানুষ এখনো আঁতকে ওঠে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী কর্তৃক সন্দেহভাজনদের আটক করে, পরিবেশ সৃষ্টি করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে এ সময়। প্রতিটি ইস্যুতে সরকার কখনো তামাশা দেখেছে, কখনো বিরোধী দলকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছে। 

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শাসনামলের পাঁচ বছরে ১৮ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এ সময় আক্রমণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩৮৯ জন। এর মধ্যে ৮২২ জন সাংবাদিক আহত, ২৬৭ জন লাঞ্ছিত ও ৩০০ জন হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। সর্বশেষ প্রেস কাবে হামলা, মাহমুদুর রহমান নিয়ে বাড়াবাড়ি, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, ডিটিভি, ইসলামিক টিভি নিয়ে এক ধরনের বাড়াবাড়ি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। দেশের সম্মানিত নাগরিকদের নিয়ে গত পাঁচ বছরে সরকার যে ধরনের আচরণ করেছে- তাতে জনগণ বারবার বিব্রত বোধ করেছে।

তা ছাড়া কতকগুলো মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সরকারকে ভাবায়নি, কিন্তু জনমনে প্রচণ্ডভাবে দাগ কেটেছে। নাড়াও দিয়েছে। যেমন সাগর-রুনি হত্যা, ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম হত্যা, যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসায়ী দম্পতিসহ ট্রিপল মার্ডার, গুলশানে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে গুলি করে হত্যা, মগবাজারে যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী সরদার হত্যা, খিলগাঁওয়ে প্রকৌশলী হত্যা, মহাখালীতে কর্মচারী নেতা সিদ্দিকুর রহমান হত্যা, খিলগাঁওয়ে গৃহবধূ কণিকা হত্যা, মিরপুরে ইডেন কলেজের ছাত্রী মেনকা হত্যা, স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হত্যা, ব্লগার রাজীব হত্যা, নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা, যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা ও স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা খুন। এ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড, উপজেলা চেয়ারম্যান নিহত, মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা খুন, ডা: মাকলুকুর রহমান হত্যাকাণ্ড, গোপীবাগে ছয় খুন, সাংবাদিক আফতাব আহমদ হত্যাকাণ্ডও এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

দেশে যে একটি স্থিতিশীল ও গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল না, এটাই তার স্বাক্ষর বহন করে। দেশে যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ছিল না, এটাও একটি বড় প্রমাণ। ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচনে জনগণ শেয়ারবাজারকে বিবেচনায় নিয়েছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, যুবক, ডেসটিনি, হলমার্ক, ব্যাংক লুণ্ঠনও সামনে রেখেছে। অথচ সরকার কিছু বিষয় লুকাতে চেয়েছে। অবশিষ্ট বিষয়গুলো দম্ভ, অহমিকা ও ক্ষমতার জোরে পাশ কাটাতে চেয়েছে, যার খেসারত হয়ে এলো ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন। 

আগেই বলেছি, মানুষের শরীরের ওপর জোর খাটানো যায়, মনের ওপর নয়। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি দ্রুত বিবেচনায় নিন। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা হাতে কলমে দেখিয়ে দিলো।

ক. রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

খ. মন্ত্রী-এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্যের কারণে নির্বাচন পরিচালনার সাথে জড়িত কেউ স্বাধীন ও  নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।

গ. আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দেখেও কিছু না দেখতে বাধ্য ছিল।

ঘ. ভোটারহীন নির্বাচনের যে চিত্র টিভি চ্যানেলে দেখা গেছে ভোট শেষে মিডিয়া আগের অবস্থানে থাকতে পারেনি।

ঙ. জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ছিল একেবারে সাধারণ বিষয়। অসহায় ২০ প্রার্থী দিনের মধ্যভাগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন। কারো কাছে নালিশ জানানোর ভরসা পায়নি।

চ. অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে ভোটদানের হার বাড়িয়ে দেয়া হলো। ভোটারহীন নির্বাচনে অসংখ্য কেন্দ্রে যেখানে কোনো ভোটই পড়ল না তারপরও কোন ভুতুড়ে ভোটের কারণে ভোটের হার অস্বাভাবিক হতে পারল।

ছ. দলীয় মেজাজে সাজানো প্রশাসনের অনৈতিক সহযোগিতার কারণেই জনগণের দেখা চিত্র পাল্টে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

জ. আইন ছিল- প্রয়োগ ছিল না। আচরণবিধি ছিল তার অনুসৃতি ছিল না।

একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন পরিচালনা করলে কিছু ছোটখাটো সমস্যা হয়তো হতো, কিন্তু ৫ জানুয়ারি যা ঘটেছে তা  কস্মিনকালেও হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও আওয়ামী লীগ ও তাদের বিবেকহীন বশংবদেরা সত্য মানবে না। তারা যে হেরে গেছে কিংবা জিততে পারেনি তা-ও গলার জোরে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে। এই শ্রেণী চরিত্রের নামই আওয়ামী লীগ এবং পতিত বাম। 

এখন প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের যে সুর বাজিয়ে শোনালেন, তা এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার বিস্তার ঘটানোর টার্গেট দুটো ক. বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করে দেয়া, খ. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বিরোধী দলকে ঘায়েল করা ও ওপারের সিম্প্যাথি আদায় করা। ষোল কোটি মানুষের দেশে এসব গণবিরোধী কর্মকাণ্ড কাউকে শেষ রক্ষার সুযোগ দেবে না। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads