মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

গণতন্ত্রের শবযাত্রা


আলফাজ আনাম

বাংলাদেশে নতুন এক গণতন্ত্র কায়েম হতে যাচ্ছে। এর প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় পর্যায় সম্পন্ন হয়ে গেল ৫ জানুয়ারি ভোটার উপস্থিতিবিহীন এক নির্বাচনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নির্বাচনের ট্রেনে চড়ে গণতন্ত্রের শবযাত্রা শুরু হয়েছে। এই যাত্রার শেষ কোথায় তা এখন দেখার বিষয়। এ কারণে ইতিহাসে এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আগামী দিনে বাংলাদেশে যে রক্তাক্ত পরিণতি অপেক্ষা করছে তা বুঝতে হলে এই নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে এখন থেকে পর্যালোচনা হওয়া দরকার। 

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ 

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে ভোটের আগেই ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচ কোটি ৮৩ লাখ ভোটার ভোট না দিয়েই তাদের জনপ্রতিনিধি পেয়েছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী হচ্ছেন ১২৭ জন। এরপর ৫ জানুয়ারি ১৪৭ আসনে ভোট হয়েছে। কোথাও কোথাও ৩ থেকে ৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি ঠিক করেছেন। বিরোধী জোটের ভোট প্রতিরোধের আন্দোলনে আট আসনে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছে। অর্থাৎ ১৩৯টি আসনে ভোট হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হয়েছে ১০৫ জন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এখন ২৩২ জন। মনে রাখতে হবে, বাকশাল কায়েমের ১৯৭৩ সালের সংসদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল ২৮২। তবে এবারের নির্বাচনে এমন সব অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন মাত্র ১১ জন, এবার হয়েছে ১৫৩ জন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৩১ আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সংবিধানের ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মধ্যে দিয়ে যে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছিল তার সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন। 

নজিরবিহীন ঘটনা

এবারের নির্বাচনে কিছু নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এবারই বাংলাদেশে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো যে নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ভোট দিতে হয়নি। কারণ তাদের আসনে প্রার্থীরা ভোটছাড়া আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। এই প্রথম এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো যেখানে ভারত ও ভুটান ছাড়া আর কোনো বিদেশী পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন না। দেশের ৬৪টি ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটারও ভোট দেননি। সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে অনেক স্থানে ব্যালট পেপার বা নির্বাচনী কর্মকর্তারা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। নির্বাচন প্রতিরোধে সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ২৬ জন মানুষ। এর আগে কোনো নির্বাচনে এত মানুষের প্রাণহানি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে একাই ভোট দিয়েছেন ৪৭৫টি। নির্বাচন প্রতিরোধের কারণে ৫৩৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আসনেই ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দলের একজন প্রার্থী ভোট দিতে এসে দেখেন তার ভোট আগেই দেয়া হয়েছে। রাগে দুঃখে তিনি সাথে সাথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সারা দিনে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ভোটের দিন এভাবে ২১ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও ভোট দেয়ার ব্যাপারে বা এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। 

বিরোধী দলের নেতা 

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েও জাতীয় পার্টি এখন প্রধান বিরোধী দল। তাদের আসনসংখ্যা ৩৩। মনে রাখতে হবে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের আসনসংখ্যা ছিল ৩৪। মাত্র এক আসনের হেরফের। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুরের একটি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর র‌্যাব তাকে চিকিৎসার জন্য কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করিয়েছে। সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে গলফ খেলছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিয়েও তিনি বিজয়ী হয়েছেন। শপথের জন্য তাকে হয়তো আমরা র‌্যাবের পাহারায় হাসপাতাল থেকে সংসদ ভবনে আসতে হবে না। কারণ জাতীয় পার্টি থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানিয়েছেন, বেগম রওশন এরশাদ হবেন বিরোধী দলের নেতা। তার এই বক্তব্য সঠিক হলে আমরা ধরে নিতে পারি এরশাদ হয়তো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন না কিংবা তিনি আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পদে থাকছেন না। এরশাদকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার কী পরিণতি ভোগ করতে হয় তা দেখার বিষয়। শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকে আবার কারাগারে যেতে হতে পারে। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। আবার ভয়ে সংসদ ভবনে শপথ অনুষ্ঠানে হাজিরও হতে পারেন। 

অবরুদ্ধ গণতন্ত্র 

এই নির্বাচনের প্রভাব আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বহুমাত্রিক সঙ্কটের সৃষ্টি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনের পর দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে দ্রুততম সময়ে সবার অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের কোনো আভাস দেননি। বরং বিরোধী দলের প্রতি তিনি যে কঠোর হবেন তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া সংসদে যে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে আর বসছেন না এ জন্য তাকে উৎফুল্ল মনে হয়েছে। বলেছেন বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে তিনি আর বসতে পারছেন না। মনে রাখতে হবে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বিরোধী দলের নেতাকে তার বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এর আগেও তিনি অবরুদ্ধ বা কারাবন্দী হয়েছেন। তিনি প্রথমবার গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৮৩ সালের ২৭ নভেম্বর। দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন ১৯৮৪ সালের ৩ মে। এরপর ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পূর্বাণী হোটেলে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে বাড়িতে অন্তরীণ করা হয়। সামরিক স্বৈরশাসকের আমলে তিন বার অন্তরীণ হয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন সরকার তাকে আবার গ্রেফতার করে। এক বছর এক সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর মুক্তি পান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। এভাবে তাকে নেতাকর্মী বা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। তবে এবারের অন্তরীণ করা হয়েছে অভিনব কায়দায় পুলিশ র‌্যাব ছাড়াও তার বাড়ির সামনে পাঁচটি বালুর ট্রাক রেখে দেয়া হয়, যাতে তিনি বাসা থেকে বের হতে না পারেন। নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় এমন অভিনব প্রতিভা এরশাদেরও ছিল না। অবশ্য এরশাদকে হাসপাতালে পাঠিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রমাণ করেছে সামরিক শাসকের চেয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কৌশল অনেক বেশি কার্যকর কিংবা হাস্যকর। প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দলের নেতাকে অবরুদ্ধ আর তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতাকে বাধ্যতামূলক হাসপাতালে পাঠিয়ে অবরুদ্ধ দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। 

আরো সঙ্ঘাত আরো রক্তপাত 

প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সাথে আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছেন হরতাল অবরোধ রাজনৈতিক সহিংসতার মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে হবে। একই সাথে তিনি বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন। বিএনপি কার সাথে কিভাবে রাজনীতি করবে তা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয় বিরোধী দলের সাথে আগামী দিনে ক্ষমতাসীনদের কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আগেই লন্ডন থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অবৈধ সরকারের সাথে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তিনি নেতাকর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র ১৫টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে বাকিরা সবাই স্বাধীনতা বিরোধী। একই হিসাবে যদি আমরা ধরে নিই ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে তাহলে কি দেশের ৯০ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানে আছেন। লক্ষণীয় দিক হলো, নির্বাচনের এক দিন পরও নির্বাচন কমিশন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী বলেননি কত শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনের এক দিন পর কমিশন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম বলছে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সরকার সমর্থক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে ৩০ শতাংশ। যদিও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স ফেমা ও মানবাধিকার কমিশন শতকরা ১০ ভাগের বেশি ভোট পড়েনি বলে দাবি করেছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরুদ্ধে। আগামী দিনগুলোতে যৌথ বাহিনীর নির্মম অভিযানে হয়তো আরো বহু লোকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ আর গুমের নামে টার্গেট কিলিং শুরু করতে পারে। যার কিছু আলামত এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

ভারতের আকাক্সা 

বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক মহল হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় আরো কয়েকটি দেশ সবার অংশগ্রহণমূলক দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের ওপর তাগিদ দিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। নির্বাচনের পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথেই চলতে দিতে হবে। এই নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অংশ। দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে এবং কারা জনপ্রতিনিধি হবে- বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। সহিংসতার পথে কোনো সমাধান আসে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথেই চলতে দিতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতি কার্যত বাংলাদেশের সরকারের অবস্থানের পরিপূরক। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত। বরং ভারতের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে বির্তকিত নির্বাচিত সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ মোকাবেলার জন্য কাজ করবে ভারত। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এখন দিল্লির হাতে চলে গেছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা মূলত দিল্লির প্রচেষ্টা। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের ভোটাধিকার হরণের সাথে কোনো প্রকার রাখঢাক ছাড়াই সরাসরি যুক্ত হয়েছে দিল্লি। এক অর্থে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে দিল্লি দাঁড়িয়েছে। 

নতুন গণতন্ত্রের অভিযাত্রা 

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হলো। নির্বাচনের আগের দিন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনের পর বিরোধী দলকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। এর আগে অর্থমন্ত্রীও এমন ঘোষণা দিয়েছেন। বাতাসে এখন গুঞ্জন চলছে জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাও জানিয়েছে, দিল্লি ও ঢাকাতে জরুরি অবস্থা দিয়ে সরকার টিকিয়ে রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বলা হয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। বাংলাদেশেও তা হচ্ছে, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের দুটি বড় সাফল্য ছিল খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার। দ্বিতীয়ত, স্বল্পতম সময়ে একটি সংবিধান উপহার দেয়া। কিন্তু স্বাধীনতার দুই বছরের মধ্যে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছিল। এবারো এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একই কাজ করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কাজটি করতে সহায়তা করেছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দাবিদার দেশ ভারত। দেশের একজন খ্যাতিমান সম্পাদক মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কবরে ফুল দেয়ার জন্য ভারত ও ভুটান দুজন পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। ভারতের সহায়তায় নতুন গণতন্ত্রের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে তার পরিণতি হিসেবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন দুর্বল একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে। যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় দিল্লিতে। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads