সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪

রবি ঠাকুরের বাঙ্গালীরা কি মানুষ হবেন না?


সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ গত ২৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হরতাল অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জাতীয় অর্থনীতির চারটি খাতে প্রায় ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকা ক্ষতির একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী এই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ খাতে ১৬৬৮৯ কোটি টাকা, কৃষি ও কৃষিজাত শিল্প খাতে ১৫৮২৯ কোটি টাকা, রফতানিমুখী বস্ত্র শিল্পে ১৩৭৫০ কোটি টাকা ও পর্যটন খাতে ২৭৫০ কোটি টাকা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সিপিডি ক্ষতির এই আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির মোট ১৭টি খাত রয়েছে। অবশিষ্ট খাতগুলোর ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ যদি সিপিডি সংকলন করে প্রকাশ করত তাহলে এই ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লাখ কোটি টাকা হবার সম্ভাবনা ছিল। অবশ্য সিপিডির ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে এই সহিংসতায় ও পুলিশের গুলীতে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের মূল্য টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা হয়নি। একজন মানুষের জীবনের মূল্য কত আমি নিজেও টাকার অঙ্কে তার হিসাব দিতে সক্ষম নই। কেন না জীবন টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তা অত্যন্ত মূল্যবান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে প্রায় ত্রিশ সহ¯্রাধিক লোক নির্মমভাবে জীবন দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে সারা পদশকে এখন মৃত্যুপুরী বানানো হচ্ছে। এ জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ কত হবে সিপিডি তা বলেনি এবং তার বলার কথাও নয়। কেননা এগুলোর গড়হরঃধৎরংধঃরড়হ সিপিডির ম্যান্ডেটে পড়ে না। তবে তারা চার খাতের ছয় মাসের যে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন তাতে আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি ভয়াবহ চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়। একটি অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিপিডির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তারা আরেকটি কাজ করলে বোধ হয় খুবই ভাল হতো এবং সেটা হচ্ছে মন্ত্রী, এমপি, শাসক দল, ছাত্রলীগ যুবলীগসহ লীগ পরিবারের দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটন। সেটা করতে পারলে তারা চড়ষরঃরপড় বপড়হড়সরপ জবংবধৎপয-এর অনেক নতুন উপাদান খুঁজে পেতেন। মাত্র কিছুদিন আগেই ইলেকশন কমিশনের ওয়েব সাইটের বরাত দিয়ে নির্বাচন প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাতে শুধু সাতজন মন্ত্রী-এমপি তাদের ক্ষমতার পাঁচ বছর মেয়াদে যে সম্পদ আহরণ করেছেন তার খবর শুনে সাধারণ মানুষের লোম খাঁড়া হবার মতো অবস্থা হয়েছে। পাঁচ বছরেই এই সাতজন আওয়ামী লীগ নেতা যে জমি আহরণ করেছেন তা যোগ করলে রাজধানী ঢাকা শহরের এক দশমাংশ এলাকার সমান হয়। ঢাকা শহরের এক-দশমাংশের মূল্য কত? আমার ছোট মাথায় এই অঙ্ক কষা সম্ভবপর নয়। গত রোববার বিমানের চরম বিপর্যয় ও ল-ভ- অবস্থার একটি চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় এয়ার লাইনস-এর যে অবস্থা দেখা গেছে তাতে বাংলাদেশী বা বিদেশী কেউ বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণের আগ্রহ রাখবেন কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। সরকার বড় ঘটা করে একজন বিদেশীকে বিমানের এমডি করেছিলেন। তিনি কয়েকদিন আগে বিমানের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তা পিলে চমকানোর মতো। তারও আগে জিএম কাদেরের মন্ত্রিত্বকালে বিমানের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল এবং বিমানের জমি কেলেঙ্কারির একটি ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এর কোন প্রতিকার হয়নি। এই দুর্নীতিতে জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা রাজনৈতিক কোন সহিংসতার কারণে নয়। পাঠকদের হয়ত মনে আছে যে, (মনে আছে বলছি এ কারণে যে আমরা সহজেই সত্য ঘটনাগুলো ভুলে যাই) শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, আইটিসিএল, ইউনিপেটুইউ, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের ঋণ কেলেঙ্কারি, টেলিকমিউনিকেশন, রেলওয়ে, সব সরকারি দফতরের কেনাকাটা, লোক নিয়োগ, বিআরটিসির এসিবাস ক্রয়, পদ্মাসেতু, বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনে রূপান্তরকরণ প্রভৃতি কাজে যে দুর্নীতি হয়েছে পত্র-পত্রিকাগুলো তার পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকারও বেশি বলে রিপোর্ট করেছে। কিন্তু এই সব দুর্নীতির কোন বিচার হয়নি। দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত মন্ত্রী হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও গ্রেফতার হননি। অন্যরাও বহাল তবিয়তে বুক ফুলিয়ে দেশ-বিদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। এ যেন এদেশের মানুষের নিয়তি হয়ে পড়েছে। এদের শাস্তি দেয়ার দায়দায়িত্ব মহাজোট সরকারের ছিল, বিএনপি, জামায়াত নয়। আবার এসব দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তারাও বিরোধী দলের না, সরকারি দলের।
এখন রাজনৈতিক সহিংসতার প্রশ্নেই আসি। এই সহিংসতার ফলে দেশ আজ ল-ভ- হয়ে পড়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সহিংসতার মূল কারণ কি? কারা এর জন্য দায়ী? মার্কিন সিনেট এই সহিংসাতার জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে দু’টি কারণ হচ্ছে মুখ্য। এক. সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান সংযোজন করা। এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তার দলের ক্ষমতায় টিকে থাকার অনন্য ব্যবস্থা হিসেবেই এটি করা হয়েছে এবং এই একগুঁয়েমির ফল যে কি দেশ-বিদেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে। এখানে একটি কথা বলা দরকার যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা বাতিল করে জামায়াতকে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল এবং অবরোধ, অসহযোগ ও রাজনৈতিক সহিংসতায় ঐ সময়ে গোটা দেশ অচল করে দেয়া হয়েছিল। আমার যতদূর মনে পড়ে সিপিডি তখনও ছিল কিন্তু এর ফলে দেশের যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারা তার কোন অঙ্ক কষেননি। দেশের মানুষ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনে বিশ্বাসী, তারা সেই ক্ষতি মেনে নিয়েছিল। সরকার বাধ্য হয়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। সেই ব্যবস্থাটিকে ল-ভ- করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তা বাতিল করে দেয়ার ফলে জনমনে বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে এবং সরকার দেশবাসীর বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সকল পথ রুদ্ধ করে দেন এবং অস্ত্র দিয়ে তা মোকাবেলা করার ফলে সহিংসতা আরো বৃদ্ধি পায়। মার্কিন সিনেট দ্বিতীয় যে কারণটিকে এর জন্যে দায়ী করেছে সেটি হচ্ছে একটি ত্রুটিপূর্ণ আইনের আওতায় রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার অনুষ্ঠান এবং তাদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফাঁসির দ- প্রদান এবং একজনের ফাঁসির রায় কার্যকরকরণ। জামায়াত শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধের বা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে ছিল। তাদের অবস্থান ছিল তাদের কোন নেতা বা কর্মী এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তারা চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি আদালতে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিচারানুষ্ঠান। সারা দুনিয়ার মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং আইন-বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ব্যাপারে একমত ছিলেন এবং তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আইন সংশোধন ও নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনেকগুলো সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাদের সেই সুপারিশ গ্রহণ করেননি। কেননা তা করতে গেলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা যাবে না এবং তা করতে না পারলে অনেকের মতে বাংলাদেশের মাটিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকদের জনসমর্থন নিয়ে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়বে। স্কাইপী কেলেংকারী আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অভিযুক্তের সাক্ষী অপহরণ, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী সংগ্রহ এবং সরকার পক্ষের সাক্ষীর তুলনায় অভিযুক্তদের পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস করে দেয়ার নির্দেশ এবং বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ফলে স্বাভাবিকভাবেই জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই বিচার ও সরকার বিরোধী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সরকার অস্ত্র দিয়ে এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশের চেষ্টা না করে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দিলে এই সহিংসতা সৃষ্টি হতো না। সরকার তাদের মৌলিক মানবাধিকার এবং সংবিধান প্রদত্ত সকল রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। জামায়াত-শিবির ইট-পাটকেল দিয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের গুলীর জবাব দিয়েছে মাত্র তারা তাদের গুলীতে পাখির মত মরেছে এবং আহত হয়েছে। এখন যৌথবাহিনীর নামে সরকারের অভিযানে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি বলে কথিত বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য গ্রাম বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং প্রতিদিনই নিহতের তালিকা বাড়ছে। বাস্তুহারা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। দেশ-বিদেশে এমনভাবে এখন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, মনে হয় জামায়াত-শিবির ছাড়া বাংলাদেশে আর কোন সমস্যা নেই। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াতকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছে আবার ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ তাদের ভাষায় আজকে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নিয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপিকে সরকার গঠনে জামায়াত সহযোগিতা করেছিল। তখন থেকে এই দলটি জামায়াতকে শত্রু মনে করতে শুরু করে। কিন্তু তা কৌশলগত কারণে গোপন রাখে। ঐ সময় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রচ্ছন্নভাবে এই কমিটিকে সমর্থন করেন। কিন্তু ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে তারা নির্বাচনে হেরে যায় তখন তাদের জামায়াত বিরোধিতা প্রকাশ্য ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে এবং তাদেরই ইঙ্গিতে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠিত হয়। জামায়াতের বিরুদ্ধে এখন এমন সব অপপ্রচার হয়, তার ওপর এমন সব অপরাধ আরোপ করা হচ্ছে যা ইতঃপূর্বে কেউ শোনেননি। কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ তো ১৯৭১ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। ঐ সময়ে দেশে কি ঘটেছে না ঘটেছে যারা দেশে ছিল তারাই প্রত্যক্ষ করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ কি এই দেশের হতাহতের সংখ্যা নির্ণয় এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো? যদি করে থাকে তাহলে সেই কমিটির রিপোর্ট কোথায়? আর যদি না করে থাকে তাহলে পাইকারী হারে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি দলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ও অব্যাহতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কারণ কি? বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন মানুষ কি এই দেশে নেই?
আমার রবীন্দ্রনাথের একটি আক্ষেপের কথা মনে পড়ে। তিনি তার একটি কবিতায় আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘সপ্তকোটি সন্তানেরে হে বিমুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি।’ বাঙ্গালীরাকি আসলে কখনো মানুষ হবে না? রবীন্দ্রনাথের ঐ কবিতা লেখার পর অনেক বছর পার হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষায়, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে লেখাপড়ায়, অর্থবিত্তে জমিদার কবি রবীন্দ্রনাথের আমলে বাঙ্গালীদের চেয়ে এখনকার বাঙ্গালীরা অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের মন ও মননশীলতার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? সত্যকে সত্য বলে মানার এবং মিথ্যাকে বিসর্জন দেয়ার সাহস কি তারা অর্জন করেছেন?
বাঙ্গালী চরিত্র সম্পর্কে লর্ড মেকলে’র একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘মহিষের যথাশৃঙ্গ, মৌমাছির যথা হুল, ব্যাঘ্রের যথা থাবা, নারীর যথা সৌন্দর্য বাঙ্গালী জাতির তদ্রুপ প্রবঞ্চনা। বড় বড় প্রতিজ্ঞা, তথা প্রতিশ্রুতি, মোলায়েম অজুহাত, অবস্থাগত মিথ্যা প্রমাণাদির উপস্থাপনা, ছলচাতুরী মিথ্যা শপথ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান,  জালিয়াতি এইগুলো হচ্ছে নি¤œগাঙ্গেয় উপত্যকার বাসিন্দাদের আত্মরক্ষা এবং আক্রমণের চিরন্তন অস্ত্র।’ লর্ড মেকলে বাঙ্গালী চরিত্রের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সাথে আমরা অনেকেই হয়তো একমত হবো না। তিনি হয়তো মীরজাফর, জগৎ শেঠ ও উমিচাঁদদের চরিত্রকেই সামনে রেখে এই মন্তব্য করে থাকবেন। কিন্তু আমরা আজ বাংলাদেশে যে চরিত্রগুলো দেখছি সেগুলো কি মেকলে’র দেখা চরিত্র থেকে ভিন্ন? পাঠকরাই বিবেচনা করুন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads