শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪

৫ জানুয়ারি : কী নামে ডাকি


দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিবস হিসেবে স্থান করে নিলো। এমন একটি খারাপ নজির বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্থান করে নেবে, তা ভাবতেও কষ্ট লাগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটারবিহীন যে নির্বাচন ৫ জানুয়ারি উপহার দিলেন, সেটা গণতন্ত্রের বুকে ছুরিকাঘাতের শামিল বলে গোটা দেশ এবং বিশ্বের গণতন্ত্রমনা মানুষেরা ধিক্কার জানিয়েছে। কিছু দলকানা দুষ্ট চরিত্রের মানুষ শেখ হাসিনার স্মৃতিফলকে একটি কলঙ্কতিলক এঁকে দিলো। এরা শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেনি, ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগকেও। এসব কথা গুঞ্জন নয়, জোরগলায় বলছেন নিজের দলের পেশাজীবী সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরাও। নিজের দল থেকে এখন সমালোচনা শুরু হয়েছে এ ধরনের অনৈতিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কেন করতে গেলেন শেখ হাসিনা। কলঙ্কের পুরো বোঝাটি এখন তার মাথার ওপর। প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের চাটুকারদের কথা শুনে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি কলঙ্কের দাগ লেপন করেছেন। রাজনৈতিক ইতিহাসে ইয়াহিয়া ও এরশাদের নামের সাথে তার নামটি এখন সংস্কৃতি অঙ্গনে স্বৈরাচারী হিসেবে রাখতে ব্যক্ত শুরু করেছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুটি সবচেয়ে বহুল প্রচারিত ও পঠিত দৈনিকে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বিশিষ্টজনদের লেখনীতে।
বাংলাদেশ গণতন্ত্রের যুদ্ধে হারতে পারে না। যদিও ৫২ শতাংশের বেশি মানুষের সুযোগ থাকেনি ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে কিন্তু এর অর্থ এই নয়, গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালেও গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু আজকের মতো এতটাই নির্লজ্জভাবে আর কখনো গণতন্ত্র পরাজিত হয়নি। গণতন্ত্র আবার ১৯৯০-এর ডিসেম্বরের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সে দিনের অপেক্ষায় গোটা জাতি চেয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে টাকা বানানোর রাজনীতির গণতন্ত্র জাতি দেখতে চায় না আর।
দুঃখজনক, ৫ জানুয়ারি পত্রিকার লিড নিউজ হিসেবে প্রথম পাতায় থাকছে না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে গোটা জাতি। একটি জাতীয় নির্বাচনে পত্রিকার প্রথম পাতার প্রথম শিরোনাম থাকে এ ধরনের শব্দচয়ন। ৫ জানুয়ারির প্রথম আলোর লিড নিউজ প্রথম পৃষ্ঠায় ছিল আতঙ্কের নির্বাচন আজ। ভোট প্রতিরোধে ব্যাপক নাশকতা, ১১১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন। শুধু একতরফানয়, প্রাণঘাতী নির্বাচন। বিতর্কের মূল কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন। কারণ তফসিল ঘোষণার পর বিগত ৪০ দিনে সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৩ জন। ৪২ বছরে গণতন্ত্র উত্তরণের পর এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। ১৪৭ আসনে ৩৯০ প্রার্থী, উৎসবের বদলে উদ্বেগ। এত কম প্রার্থী ভোটারদের সামনে আর কখনো হাজির হয়নি। ১০০ কেন্দ্রে হামলা, ব্যালট ছিনতাই, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে কুপিয়ে হত্যা। প্রথম আলোর শেষ পাতার লিড নিউজ ছিল ১৭ জেলায় সহিংসতা, ঢাকায় অর্ধেক সারা দেশে দু-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
বিবিসি ৫ জানুয়ারি সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে সংবাদদাতা রাকিব হাসান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন এবং বলেছেন, ভোটারের সংখ্যা ছিল খুব কম। বিবিসির রিপোর্টে আরেকটি সংবাদ ছিল দিনাজপুরেই ৫০টি ভোট কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় সহিংসতার কারণে। আমাদের দেশে বিগত তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেখা গেছে ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে। এবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৭ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি বলে জানান ভোট পর্যবেক্ষকেরা। উন্নয়নকর্মী ফরিদা আখতার বিবিসিকে এ কারণেই বলেছেন, এবার নির্বাচনই হয়নি। ১৫৩ জনের ফলাফল ভোটারবিহীনভাবে হয়েছে। এতে সরকার ভোটারের অধিকার ুণœ করেছেন। এ নিয়ে একটি কৌতুক বা তামাশার বই বের হবে অচিরেই। এ রকম মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে আরো অনেকেই। ফেসবুকে লিখেছেন একজন আগামীতে আমরা আর ট্যাক্স দেবো না এ তথাকথিত একতরফা নির্বাচনের জন্য। ৬ জানুয়ারির প্রথম আলোর লিড নিউজ ছিল জাল ভোট কলঙ্কিত নির্বাচন। গণতন্ত্রের অর্থই হলো মতপ্রকাশের অধিকার, যেটা পাঁচ বছর পরপর জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন ব্যালটের মাধ্যমে। সেই অধিকার সরকার ুণœ করেছে।
 
যাই হোক, দেশের জনমত ও আন্তর্জাতিক মহলের নানা তাগিদ উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ভোটারবিহীন, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হলো। একতরফা নির্বাচনে মহাজোটের একতরফা বিজয়ী এমপিরা শপথ নিয়েছেন। রোববার সরকার গঠন করা হবে বলে বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আবারো তাগিদ এসেছে বিএনপির সাথে সমঝোতা করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে না, তিনি সে পথে যাবেন। অতএব প্রশ্ন, এর পর কী হবে? কী নামে ডাকা হবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads