বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

২০১৪ সালের বিশ্ব


এক অস্থির অবস্থার মধ্যে বিদায় নিয়েছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ২০১৩ সাল। ২০১৪ সালটিও তেমন বা আরো বেশি অস্থিরতার মধ্যেই কি কাটবে? এ প্রশ্ন অনেকের। যারা বিশ্বব্যবস্থা ও এর গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন তারা মনে করেন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসন পরিবর্তন এবং মানচিত্র বিন্যাসের যে নেপথ্য প্রচেষ্টা চলছে তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা যেমন আনতে পারে, তেমনিভাবে স্থিতি প্রতিষ্ঠার কারণও হতে পারে।

২০১৪ সালে বিশ্বব্যবস্থায় যেমন কিছু পরিবর্তন প্রবণতা দেখা যেতে পারে, তেমনিভাবে কয়েকটি উত্তপ্ত এলাকায় তাপর্যপূর্ণ ঘটনাও ঘটতে পারে। এখনো একক পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকার ভূমিকা বিশ্বব্যবস্থায় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ফলে নতুন সালে আমেরিকার অভ্যন্তরে এবং দেশটির বৈদেশিক নীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সাল আমেরিকার জন্য নির্বাচনের বছর। এ সময় দেশটিতে সিনেট, প্রতিনিধি সভা ও বিভিন্ন রাজ্য গভর্নর আইনসভার নির্বাচন হবে। ৪ নভেম্বর প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সব কটি, সিনেটের ১০০টির মধ্যে ৩৩টি ও ৩৮টি রাজ্যের গভর্নর এবং ৪৬টি রাজ্য আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দুই বছর আগের নির্বাচনে বারাক ওবামার ডেমোক্র্যাট দল প্রতিনিধিসভার নিয়ন্ত্রণ হারায়, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে কোনোভাবে। এর মূল্য বাজেট পাস নিয়ে চরমভাবে দিতে হয়েছে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকে। নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের মধ্যবর্তী এ নির্বাচনে সাফল্যের ওপর বাকি সময়ে তিনি কতটুকু কাজ স্বস্তির সাথে করতে পারবেন তা যেমন নির্ভর করবে তেমনিভাবে পরবর্তী মেয়াদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি কিনটনের ভবিষ্যৎও অনেকাংশে নির্ভর করবে। সিনেটে মাত্র একটি আসন বেশি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাটদের। এবার বেশ কটি ডেমোক্র্যাট আসন তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব আসন হারানোর মধ্যে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা প্রেসিডেন্টের জন্য সত্যিকার অর্থেই বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। সে তুলনায় প্রতিনিধিসভা নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভালো করার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও আছে। স্বাস্থ্য বিল নিয়ে রিপাবলিকানদের বাড়াবাড়ি দেশটির মধ্যবিত্তরা পছন্দ করেননি। বাজেট পাস নিয়ে সরকারে অচলাবস্থার সৃষ্টির বিষয়টিও রিপাবলিকানদের অনুকূলে আসেনি। 

আগামী নির্বাচনে আমেরিকান নির্বাচনের ফলাফল কী দাঁড়ায়, তা বেশ কিছুটা নির্ভর করবে অর্থনীতির অবস্থার ওপর। মার্কিন অর্থনীতির অতীত রেকর্ড অনুসারে প্রতি চার থেকে ছয় বছর পরপর অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দাভাব দেখা যায়। ২০১৪ সালে সে হিসেবে অর্থনীতিতে নি¤œগতি আসার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। বাজারে চাহিদার ক্ষেত্রে এখন কিছুটা গতি থাকলেও বেকারত্বের হার রয়ে গেছে উচ্চপর্যায়ে। একই অবস্থা গৃহঋণ চিত্রে। আবাসন খাতে আরো একটি উন্নতি দেখা যেতে পারে, তবে এর পরও এটি রয়ে যাবে ভঙ্গুর অবস্থায়। কংগ্রেসের বাজেট অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৪ সালে আমেরিকান অর্থনীতি নিস্তেজই থেকে যাবে এবং বেকারত্বের হার ৮ শতাংশের পর্যায় থেকে নামবে না। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও রয়ে যাবে গতানুগতিক পর্যায়ে। 

অর্থনীতির এই দুর্বল সম্ভাবনার প্রভাব দেখা যায় আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতিতে। দেশটি ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে যে নির্গমন পরিকল্পনা রয়েছে তাতে কিছু আমেরিকান সেনা সেখানে রেখে দেয়া হলেও বড় রকমের আমেরিকান সংশ্লিষ্টতা আর থাকবে না। ২০১৩ সালে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে পিছিয়ে আসার প্রধান কারণ হলো আমেরিকানেরা নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারণে প্রভাবশালী শিকাগো স্কুলের অভিমত হলো কোনো প্রতাপশালী শক্তির যখন অবনয়ন শুরু হয় তখন দেশটি তার শক্তিমত্তা দেখানোর জন্য নিজের কাজকে আরো আগ্রাসী করে তোলে। আর এতে পতন আরো দ্রুততর হয়। এর পরিবর্তে সামর্থ্য হ্রাসের সাথে মানিয়ে ক্রম প্রত্যাহার নীতি গ্রহণ করলে দ্রুত অবনতি ঠেকানো সম্ভব হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুত পতন এ ক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ।

প্রেসিডেন্ট ওবামা ও বর্তমান মার্কিন নীতিপ্রণেতারা শিকাগো স্কুলের এ অভিমতকে গ্রহণ করেছেন। আমেরিকার অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে মার্কিনসংশ্লিষ্টতাকে ধীরে ধীরে এখন কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকানেরা নিজেকে বেশ খানিকটা গুটিয়ে নিতে পারে। এর অংশ হিসেবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন একটি শান্তিচুক্তিতে পৌছার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বেশ উদ্যোগী হয়েছেন। এ ব্যাপারে একটি অগ্রগতি ২০১৪ সালে দেখা যেতে পারে। ইরানের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছার বিষয়টিও নতুন মার্কিন নীতির একটি অংশ হতে পারে। আমেরিকানেরা তাদের গৃহীত নীতির কারণে ২০১৪ সালে পৃথিবীর কোনো অঞ্চলেই বড় ধরনের কোনো সঙ্ঘাতে না জড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। 

বিশ্বের প্রভাবশালী অন্য দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থা ততটা ভালো নয়। ২০১৪ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের কোঠায় থেকে যেতে পারে। দেশটিতে এ সময়ে যতটা বিনিয়োগ গতি দেখা দেবে বলে আগে মনে করা হয়েছিল, ততটা দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতিও রয়ে গেছে উচ্চপর্যায়ে। এ অবস্থা রাশিয়ার আগ্রাসী কোনো পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের অনুকূল নয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকানদের গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতার সুযোগে রাশিয়া সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। তবে তা স্থিতাবস্থার বড় রকমের পরিবর্তন করতে পারবে না। সে তুলনায় চীনের অর্থনৈতিক সামর্থ্য অব্যাহতভাবে বলীয়ান থেকে যাবে। চীন এবারো তার কাঠামোগত পুনর্গঠন উদ্যোগের কারণে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় থেকে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতির ৩ শতাংশ সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিতে চীনের বড় অবদান থেকে যাবে। 

চীন বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর আগ্রাসী ধরনের প্রভাব বিস্তার প্রচেষ্টায় এখনো যায়নি। তবে আস্তে আস্তে সক্রিয়তাবাদী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ সীমানা নিয়ে জাপানের সাথে বিরোধে বেইজিংয়ের শক্ত অবস্থানে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে চীনের অধিক সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইরানের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক রেখেই সৌদি আরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের নতুন মাত্রা সৃষ্টির উদ্যোগ চীনা নীতিতে বিশেষভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। ২০১৪ সালে এ প্রবণতা আরো কিছুটা স্পষ্ট রূপ নিতে পারে।

ইউরোপীয় অর্থনীতির দুরবস্থা ২০১৪ সালে কিছুটা নমনীয় হলেও তা বড় রকমের উল্লম্ফনের ভিত্তি তৈরি করতে পারবে না। এ সময়ে অর্থনৈতিক বিকাশ হার ইইউর ১ শতাংশের কোঠায় থেকে যাবে। যদিও সমস্যাক্রান্ত বেশ কটি দেশের জিডিপি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় থেকে যেতে পারে। ইউরোপের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে কর্মসংস্থান এবং ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা। ইইউ অঞ্চলে এখনো গড় বেকারত্বের হার রয়ে গেছে ১২ শতাংশে, যা যুবক বেকারত্বে হিসাব করা হলে দ্বিগুণে দাঁড়ায়। এমনকি ইইউর কোনো কোনো দেশে বেকারত্ব ২৬ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে কর্মসংস্থানহীনতা ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আশা ২০১৪ সালে সেভাবে নেই। অবশ্য জার্মানির মতো কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান চিত্র বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। অর্থনৈতিক গতিহীনতা পুরোপুরি কাটাতে না পারলেও সামাজিক অস্থিরতা কিছুটা কমে আসতে পারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। 

এ অঞ্চলের দেশগুলোকে বিশ্বরাজনীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা না গেলেও জার্মানিকে যথেষ্ট সক্রিয় দেখা যাবে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিচুক্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে জার্মানি ও ফ্রান্সের। 

২০১৪ সালের জন্য সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চল হলো মধ্যপ্রাচ্য। ২০১৩ সালে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে দৃশ্যমান একটি অগ্রগতি অর্জিত হতে পারে। জন কেরি শান্তিচুক্তির ব্যাপারে একটি কাঠামো ঠিক করেছেন। এতে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে মৌলিক যেসব বিরোধ রয়েছে, তার সমাধান ফর্মুলার প্রস্তাব রয়েছে। এতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে যেসব ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়েছে, তার মধ্যে কোন কোনটি রেখে এর বিপরীতে ভূমিবিনিময় করা হবে এবং কোন কোন ইহুদি বসতি ফিলিস্তিনিদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে তার উল্লেখ রয়েছে। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের দেশে ফেরার জটিল ইস্যু নিয়েও প্রস্তাব রয়েছে এতে। এ ছাড়া জেরুসালেম, রাজস্ব বণ্টন ও নিরাপত্তা ইস্যুতেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এতে রয়েছে। জন কেরির প্রস্তাবের ব্যাপারে খুব সহজেই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা সম্মত হয়ে যাবে এমনটি মনে না হলে ব্যবধান কমানোতে তা সাহায্য করতে পারে। এ প্রচেষ্টায় মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার নীতির কারণে ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটি সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে। ২০১৪ সালে সত্যি সত্যিই যদি ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যায়, তা হলে এর প্রভাব চার পাশের দেশগুলোতে পড়বে। 

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত ভূমিগুলোর মধ্যে একটি হলো মিসর। বিশ্বশক্তিগুলোর সমর্থনপুষ্ট হয়ে দুই আঞ্চলিক পরাশক্তি ইসরাইল ও সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দেশটিতে প্রথম নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাসমর্থিত সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। এর পরে ব্যাপক গণহত্যা ও দমনাভিযানেও সমর্থন থাকে এই শক্তির। তবে গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে বিশ্বশক্তির সাথে সেনা জান্তা ও আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোর বিরোধ দেখা দেয়। আমেরিকান সহায়তা কিছুটা সঙ্কুচিত করে আনা হয় মিসরে। এরপর সৌদি মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক তৈরিতে এগিয়ে যায় মিসরের সেনাশাসকেরা। দেশটি কী ধরনের নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে তা নিয়ে সেনা জান্তার মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে এবং সহায়তাকারী ইসরাইল ও সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। সেনাশাসকদের ইন্ধন দিয়ে ইসরাইল যেখানে মিসরে থেকে মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইসলামি শক্তির নির্মূল কামনা করে, সেখানে সৌদি আরব ব্রাদারহুডকে দুর্বল করতে চাইলেও এই শক্তির নির্মূল কামনা করে না নিজের স্বার্থেই। এটি বাস্তবে সম্ভব হবে বলেও মনে করে না। 

এখন ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে সেনাশাসকেরা তাদের নির্মূল করার সর্বগ্রাসী অভিযান শুরু করেছে। একই সাথে আলজেরিয়াসহ কয়েকটি আরব দেশের সহায়তায় আরব লিগে ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন চিহ্নিত করার একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। ইসরাইল চাচ্ছে এই প্রস্তাব পাস হোক এবং আরব দেশগুলোতে সঙ্ঘাত ও হানাহানি স্থায়িত্ব লাভ করুক। এই প্রস্তাব সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের সমর্থন লাভ করলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ব্রাদারহুডের গণতান্ত্রিক কাঠামোর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের একটি অংশ সহিংস ধারায় অগ্রসর হতে পারে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য এই শক্তিকে সমর্থন দিলে রাজতান্ত্রিক আরব দেশগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এ কারণে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজ ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মুরকিন বিন আবদুল আজিজসহ একটি বড় অংশ এই কট্টর নীতির বিরোধিতা করছেন। অন্য দিকে সৌদি প্রিন্স খালেদ ফয়সল ও গোয়েন্দা প্রধান বন্দর বিন সুলতানের অভিমত রয়েছে কট্টর ধারায়। শেষ পর্যন্ত সৌদি নীতি মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে ইসরাইলের নির্মূল ধারায় যাবে বলে মনে হয় না। এ ধারায় গেলে ২০১৪ সালে মিসর আরো রক্তপাত ও অস্থিরতার দিকে যাবে। আর তার পরিবর্তে মুসলিম ব্রাদারহুডকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে সঙ্কটের সমাধানের দিকে এগোলে স্থিতিশীলতার পথে এগোতে পারে মিসর। ইসরাইল প্রথমোক্ত ধারায় এগোতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ইনকুসিভ বা সমেতকরণ ধারার পক্ষে বলে মনে হয়। এটি হলে নতুন বছরে মিসরে পুরোপুরি শান্তি ও স্থিতি না এলেও সহাবস্থানের ধারায় অগ্রসর হতে পারে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টা সফল হলে এ ধারার জয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

২০১৪ সালে সিরীয় সমস্যার সমাধান হবে বলে অনেকে আশা করেন। তাদের আশা জেনেভা-২ আলোচনায় একটি সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে। এ সূত্রানুযায়ী বাশার আল আসাদ তার বাকি মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও নতুন করে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন না। জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর নতুন সরকার হবে। অন্তর্বর্তী সময়ে যে পক্ষের যে এলাকার ওপর কর্তৃত্ব রয়েছে, সেটি বলবৎ থাকবে। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের একটি ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট নয়। ইরান তার কৌশলগত কারণে সিরিয়ার ওপর কর্তৃত্ব হারাতে চায় না। দেশটি সুন্নি প্রভাব বলয়ে চলে যাওয়ার পরিবর্তে বিভাজিত হয়ে একটি অংশে শিয়া কর্তৃত্ব বজায় রাখাকে উত্তম মনে করে; কিন্তু সিরিয়ার রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে দেয়া হলে এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে; যে কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো এ বিভাজনে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এ কারণে শেষ পর্যন্ত দেশটি একটি শিথিল ফেডারেশনে রূপ নিতে পারে, যেখানে এটি তিন ভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হবে এবং তিন এলাকায় সুন্নি, শিয়া ও কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তবে ২০১৪ সালে এটি কতটা পরিণতি লাভ করবে, তা বিশেষভাবে নির্ভর করবে ইরান, সৌদি আরব ও তুরস্কের ওপর। 

২০১৩ সালের শেষ পর্বটা তুরস্কের জন্য পার হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে এরদোগান সরকারের তিন প্রভাবশালী মন্ত্রীতনয়, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও বড়মাপের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা তদন্তের নামে তাদের গ্রেফতার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। দ্বিতীয় দফা দুর্নীতি মামলায় খোদ প্রধানমন্ত্রী এরদোগানকে জড়িত করার ইঙ্গিত দেয় প্রসিকিউটর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এত দিন সেকুলার রাজনৈতিক শক্তির সাথে এরদোগানের বিরোধ ছিল, এখন একেপির একসময়ের মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা মধ্যপন্থী ধর্মীয় নেতা ফতেহ উল্লাহ গুলেন ও কার সারভিস আন্দোলন প্রতিপক্ষে চলে যায়। গুলেন আন্দোলনের সাথে এরদোগান সরকারের এ বিরোধ সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে একধরনে বিভক্তির সৃষ্টি করে এবং বিদ্যমান ভারসাম্য নষ্টের উপক্রম হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী এরদোগান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে শাসক দলকে। এ বছরের শেষার্ধে রয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে এরদোগান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে। সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এমনকি ২০১৫ সালের যে সংসদ নির্বাচন রয়েছে সেটিও এগিয়ে আসতে পারে ২০১৪ সালে। 

এরদোগানের সামনে এ ধরনের চতুর্মুখী সঙ্কটের পেছনে অভ্যন্তরীণ শক্তির সাথে যে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তার ইঙ্গিত এরদোগান একাধিকবার দিয়েছেন। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সঙ্কট উত্তরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তিনি ফতেহ উল্লাহ গুলেনের সাথে আলোচনার কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সাথেও সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে শেষ পর্যন্ত এ চ্যালেঞ্জে উত্তরণ ঘটতে পারে একে পার্টির সরকারের। তবে এ জন্য আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে যেমন ছাড় দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক ইসলামি সংগঠনগুলোর অবস্থান নিয়েও একটি বৃহত্তর সমঝোতা হতে পারে যার মধ্যে মিসর ফিলিস্তিন সিরিয়া লিবিয়াসহ আরো বিভিন্ন দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এ ধরনের সমঝোতার প্রভাব ২০১৪ সালের মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর সার্বিকভাবে পড়তে পারে। 

আরব জাগরণের উৎপত্তি ভূমি হিসেবে তিউনিসিয়ার পরিস্থিতির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি রয়েছে। এখানকার পরিস্থিতির ব্যাপারে আন-নাহদা আন্দোলনের প্রধান ড. রশিদ ঘানুশির রয়েছে বিশেষ উদার দৃষ্টিভঙ্গি। জয়ী হওয়ার পরও তিনি নিজে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হননি। একজন সেকুলারিস্টকে করেছেন প্রেসিডেন্ট। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানানো সরকারের পদত্যাগের দাবিও তিনি মেনে নিয়েছেন গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে। দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আরব বসন্তের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার সাফল্য অব্যাহত থাকবে। যদিও আরব জাগরণের যেকোনো সাফল্যকে কোনো কোনো আরব দেশ তাদের রাজতান্ত্রিক শাসনের মৃত্যু পরোয়ানাতুল্য মনে করে। 

নানা ধরনের অস্থিরতার পরও লিবিয়ায় সরকারের জাতীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক সময় গোত্রে গোত্রে সরাঘাতের যে শঙ্কা এবং বিচ্ছিন্নতার আওয়াজ জোরাল হচ্ছিল তা অনেকখানি কেটে গেছে। সরকার অর্থনীতিকে সংহত করে রাষ্ট্রিক কাঠামো ও আইনশৃঙ্খলার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশটি আরো সামনে এগোতে পারবে। আলজেরিয়ার সাথে এক ধরনের সমঝোতায় আসায় এটি দেশটিতে সরকারের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। আলজিয়ার্স বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপকে গোপনে সহায়তা করে আসছিল। 

সুদানে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা দানাবেঁধে উঠছিল। সরকারের মধ্যে ব্রাদারহুড ঘরানার ইসলামি আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণের অজুহাত দেখিয়ে অস্থিরতা তৈরির এক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় ইসলামি আন্দোলনের নেতারা স্বেচ্ছায় দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টের পদসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে সাবেক সেনাকর্মকর্তাদের। এতে আগামী নির্বাচনের আগে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কাকে অঙ্কুরে দূর করা অনেকখানি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুদানের আগামী নির্বাচনে জেনারেল বশির আর প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সুদানে ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে প্রতিবেশী মিসরের পরিস্থিতির একটি বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। দেশ দুটোর মধ্যে নীল নদের পানিবণ্টন নিয়ে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়েছে। 

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে লেবাননের অবস্থা সিরিয়া সঙ্কটের নিষ্পত্তি কিভাবে হচ্ছে তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর স্থিরতার বিষয়টি নিয়ে একটি নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। জিসিসি দেশগুলোর সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলনে একটি অভিন্ন সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব পাস করেছে সৌদি আরব। এটি কার্যকর হলে তা উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা সঙ্কট দূর করতে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের একটি কাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি করবে। এত দিন সৌদি আরব নিজস্ব সেনাবাহিনী দিয়ে এটির সমাধানের চেষ্টা করেছে। এর অংশ হিসেবে বাহরাইনে এক সময় সেনা পাঠায় সৌদি আরব। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্তঃসীমানার যাতায়াত বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার একটি প্রস্তাব ওমানের বিরোধিতার কারণে পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। এটি হলে কয়েকটি ুদ্র দেশের জনসংখ্যা বিন্যাসে ভারসাম্যহীনতা দূর করা যেত বলে মনে করে রিয়াদ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকা নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে বলে মনে করায় আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজস্বভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা বিন্যাস করার অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের মূল লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাবকে ঠেকানো এবং একটি শক্তিশালী সুন্নি বলয় সৃষ্টি করা। এ ক্ষেত্রে দেশটি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমের সমঝোতাকে একটি বড় বিপত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। এটি ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন নিয়ে একটি শিয়া প্রভাব বলয় তৈরিতে তেহরানের কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে রিয়াদ আশঙ্কা করে। এই প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে ইরাক ও ইরানের কিছু কিছু সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাখার গোপন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে তেহরানের আশঙ্কা। 

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের এই মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ ও প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগানোর জন্য কাজ করছে ইসরাইল। দেশটি শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাতকে জিইয়ে রাখার জন্য নিজ গোপন গোয়েন্দা তৎপরতাকে নিয়োজিত রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভ্রাতৃঘাতী অস্থিরতায় এই তৎপরতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু কিছু দেশের জন্য ২০১৪ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলকে ঘিরে নতুন গ্রেড গেম বা মহাখেলা শুরুর কথা বলা হয়। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। আফগানিস্তানের অনাহরিত অঢেল খনিজসম্পদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দেশটি কয়েক দশক ধরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ২০১৪ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এটি নতুন রূপ নিতে পারে। প্রত্যাহারের পরও ১০ থেকে ১৫ হাজার আমেরিকান সৈন্য থেকে যেতে পারে। এর পর শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন না হলে সেখানে সৌদি আরব ও ইরানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই দেখা যেতে পারে। আফগানিস্তানের পশতুন তালেবান গ্রুপগুলো যেখানে সৌদি-পাকিস্তানের সহায়তা লাভ করে সেখানে নর্দান অ্যালায়েন্সকে সব ধরনের সহায়তা দেয় ইরান।  বিষয়টি আফগানিস্তানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নতুন সঙ্ঘাতের জন্ম দিতে পারে ২০১৪ সালে। 

এ ছাড়া মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে চীন। রাশিয়াও এই অঞ্চলে তার কর্তৃত্ব হারাতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিশেষ প্রভাব বিস্তারের সুযোগ লাভ করতে পারে। 

পূর্ব এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ডে এখন যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তাতে ইংলাক সিনাওয়াত্রার পক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। এখানে ইংলাককে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে অথবা সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটতে পারে, যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে পরবর্তী সরকারে যাতে থাকসিনের কোনো কর্তৃত্ব না থাকে। এ বিষয় নিয়ে সঙ্ঘাত আরো কিছু দিন চলতে পারে। 

মিয়ানমারে ২০১৫ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে পারে। পশ্চিমের প্রতি খোলা দুয়ার নীতি চীনের কর্তৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও এতে বড় ধরনের ব্যত্যয় বেইজিং ঘটানোর উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না, বরং চীন নতুন পরিস্থিতির সাথে তার প্রভাবকে সমন্বয় করতে পারে। 

২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ভারতের নির্বাচন এ অঞ্চলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দৃশ্যত এ নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিআই জোট নিশ্চিতভাবেই আর ক্ষমতায় ফিরে আসছে না; কিন্তু এর পরিবর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটই যে শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করবে তা না-ও হতে পারে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পাঁচ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তিনটিতে বিজেপির সরকার গঠনে দলের প্রার্থী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাবনাকে জোরালো মনে করা হচ্ছে; কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে এখনো আঞ্চলিক দলগুলোর ব্যাপক প্রভাব রয়ে গেছে। এসব দল কোনো নতুন জোট গঠন না করলেও এটি সামনে একটি রূপ পেতে পারে। এটি হলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে একটি অকংগ্রেসি ও অবিজেপি সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হতে পারে ভারতে। 

২০১৪ সাল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশটির রাজনীতির সাথে ভারত যতটা নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে এতটা আগে কখনো দেখা যায়নি। এতে ভারতের সামনে সম্ভাবনা ও আশঙ্কা দুটোই সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ তীব্র বৈরী জনমতের কারণে শক্তি দিয়ে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি না সে ব্যাপারে ভারতীয় পত্রিকাগুলো সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তাদের আশঙ্কা সত্যি হলে বাংলাদেশে যেকোনো ক্ষমতার পরিবর্তন ভারতের জন্য প্রভাব হ্রাসের কারণ হতে পারে। আর সে পরিবর্তন যেকোনো সময় ঘটতে পারে বলে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads