বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

সিভিল প্রশাসনে অস্থিরতা ও সরকারের ক্ষমতাপ্রীতি


সরকারের ভ্রান্ত নীতি, দলীয়করণ, দুর্নীতিপ্রীতি এবং অথর্ব আমলাদের সন্তুষ্ট রেখে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কৌশল  বেসামরিক প্রশাসনকে অস্থিতিশীল ও স্থবির করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। সচিবালয় এবং তার অধীন দফতর-অধিদফতর ও আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ কর্মযজ্ঞ ও নীতিনির্ধারণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে না বরং অদক্ষ-অথর্ব দলীয় কর্মকর্তাদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী সিভিল প্রশাসনকে সরকার এখন দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছেন। তাদের সরকারপন্থী ও বিরোধীদলপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পদোন্নতি, পদায়ন এবং বিদেশ প্রশিক্ষণের ন্যায় সুযোগ সুবিধার বণ্টন চলছে। এ ক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতা এবং জ্যেষ্ঠতা কোনও স্থান পাচ্ছে না। ফলে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ক্ষোভ ও বঞ্চনার অনুভূতি প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। এতে করে সচিবালয়সহ সরকারি দফতরগুলো তাদের স্বাভাবিক গতিশীলতা এবং উদ্ভাবনী উদ্যম ও উদ্যোগ হারিয়ে ফেলছে। বলাবাহুল্য, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে প্রশাসন দলীয় মুক্তকরণ এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, জ্যেষ্ঠতা এবং দক্ষতাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের ইশতেহারে প্রশাসনিক সংস্কারের অঙ্গীকারও ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা শুধু এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই করেনি বরং বিপরীত কাজটিই করেছেন। তারা সর্বত্র এতই দলীয়করণ করেছেন যে প্রশাসন এখন দ্বিধাবিভক্তই শুধু হয়নি সিনিয়ররা জুনিয়র হয়েছেন এবং চেইন অব কমান্ডে শুধু ভাঙ্গন নতুন নতুন সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। ফলে, বিভিন্ন সরকারি সেবা পাওয়ার যে জনপ্রত্যাশা তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। বেসামরিক প্রশাসনে এখন স্থিতিশীল কোনও কাঠামো নেই। মেধাবীদের বেশিরভাগই এখন ওএসডি অথবা চাকরিচ্যুত। সিনিয়ারদের ডিঙ্গিয়ে প্রায় ২৫০০ ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেয়ায় সিভিল প্রশাসনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনুমোদিত পদের দিকে তোয়াক্কা না করে দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়ার নিয়মনীতি এবং আইন দু’টি লংঘন হয়েছে। সমস্ত ঐতিহ্য নিয়ম ভেঙ্গে কর্মকর্তাদের খুশি রাখার জন্য সিনিয়ার সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ১১০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ২৩৯ জন অতিরিক্ত সচিব কাজ করছেন। ৩৪১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ১০১৯ জন যুগ্ম সচিব। একইভাবে  যেখানে উপ-সচিবের ৮২৮টি পদ রয়েছে সেখানে কাজ করছেন ১৩২০ জন উপসচিব। ব্যাপকভাবে পদের প্রতি লক্ষ্য না রেখে পদোন্নতি দেয়ায় তাদের অনেককেই যেমন বসার স্থান দেয়া যাচ্ছে না তেমনি কাজও দেয়া যাচ্ছে না। সরকারের এই খেয়াল-খুশির ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের অপচয় হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ দিকে কাঠামোগত সংস্কারের আওতায় সরকারের আকার সীমিত করার কথা থাকলেও তা না করে সরকার ২৮৬০০০টি নতুন পদের সৃষ্টি করেছেন যাদের পুষতে হলে জনগণের খাজনা ও করের টাকা বৃদ্ধি করতে হবে। বলাবাহুল্য বর্তমানে সচিবালয় থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৪,০৫,৫২৪টি পদ রয়েছে এবং সরকারের রাজস্ব বাজেটের বৃহদাংশ এদের পেছনে ব্যয় হয়। এদের সাথে আরো ২৮৬০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগ হলে বাজেটের পরিসরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। কেন না সরকার ইতোমধ্যেই বেতন কমিশন গঠন করেছেন। এবং এর সব কিছুই করা হয়েছে ইলেকশনকে সামনে রেখেই। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে দেশ গোল্লায় যাক, আমাদের ক্ষমতায় থাকতেই হবে। এ জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে রাখা দরকার। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে  সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads