শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

গণতন্ত্রের নতুন মডেল!


নয়া এক গণতন্ত্র আমরা পেয়েছি বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের গণতন্ত্র এ মুহূর্তে চালু নেই। পশ্চিমা গণতন্ত্রের জন্মদাতারা বেঁচে থাকলে হয়তো তারা বড্ড বেশি লজ্জা পেতেন। কারণ, প্রচলিত ধারার গণতন্ত্রের সংজ্ঞার সাথে বাংলাদেশী গণতন্ত্রের  মিল নেই। অদ্ভুত কিসিমের এই গণতন্ত্রে কোনো ভোটের প্রয়োজন হয় না। সংসদেও দরকার হয় না বিরোধী দলের। বিরোধী নেত্রী আছেন। আছেন তার দলের মন্ত্রীরা। সে দলের প্রধান সরকারের বিশেষ দূতও। সরকার আর বিরোধী দলকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কথা হচ্ছে জটিল এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা এটা অর্জন করেছি। পশ্চিমা গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের অবিচল আনুগত্য আর নেই। কারণ, আমরা নিজেরা নয়া এক মডেল তৈরি করেছি। এখন সংবিধান সংশোধন করে নিলেই সব মামলা চুকে যায়। বুদ্ধিজীবীরা সমানেই টিভির টকশোতে নয়া সব তত্ত্ব হাজির করছেন। বলছেন এটাই গণতন্ত্র। কে ভোট দিতে গেল আর না গেল, তা দেখার সুযোগ বা সময় কোথায়? ভোটের বাক্স ছিল। দাওয়াতও দেয়া হয়েছিল ভোটারদের। নিরাপত্তাও ছিল। কেউ যায়নি, তাতে কী?

শাসন কায়েম হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে স্বীকৃতিও এসে গেছে। তাই আসুন, আমরা সবাই যোগ দিই গার্ডেন উৎসবে। যদিও সবার জন্য দরজা খোলা নয় এই উৎসবের। যারা সহযাত্রী তারাই যোগ দেবেন বা দিয়েছেন। আগে ব্যতিক্রম থাকতেন নিরাপত্তা বসরা।এবার তারাও কোরাসে যোগ দিয়েছেন। খানাপিনায় অংশ নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন। বলেছেন, বাড়তি মজা দেখছি। আগে আমাদের কেন দূরে ঠেলে রাখা হতো। এটাইতো ভালো। সবাই মিলেমিশে এক পতাকাতলে যোগ দিলে দেশে শান্তি আসবে। ভিন্ন মতের কী প্রয়োজন? ওরা তো গাড়ি পোড়ায়, রাস্তা অবরোধ করে। কথায় কথায় হরতাল ডাকে। জ্বালাও পোড়াও ছাড়া ওদের যেন আর কাজ নেই। একদা আমজনতার আওয়াজ অন্য স্রোতে বেশি ছিল। এখন ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ওদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার ওষুধ পেয়ে গেছি। দেখছেন না জেলায় জেলায় থানায় থানায় কিভাবে নতুন শব্দে ঘুম ভাঙে। কেউ জাগে, কেউ চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে যায়।

নয়া মডেল দরকার। আসাদরা গাদ্দাফিরা কোনো মডেল দিতে পারেনি। তারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে ছিল বা আছে। এখানে তো সংসদ বহাল। বিরোধী দলও থাকছে। একটু অন্যরকম আর কি। সরকার আর বিরোধী দল একযোগে কাজ করবে। বিরোধী মতের কী প্রয়োজন। অযথা বাড়তি টেনশন। কথার যুদ্ধ। জনগণকে উসকে দিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা। বাংলাদেশী  নতুন মডেলে এর জায়গা নেই। ধীরে ধীরে এই জঞ্জাল সাফ করতে হবে। বিরোধী মতের আপাতত কোনো দরকার নেই। ভবিষ্যতে দেখা যাবে। পশ্চিমা দুনিয়ার কয়েকজন চেঁচামেচি করবে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। ওরা কী চায়। ব্যবসা, সুযোগ সুবিধা। সবই তারা পাবে। দেখলেন না চীন কিভাবে রাতারাতি পাল্টে গেল। আরো বড় শক্তি? অপেক্ষা করছে। দেখবেন, সেটাও ম্যানেজ হয়ে গেছে। বিরোধীরা যে কেন ভোটে এলো না, তা বুঝতে পারি না। তারা এলেই অনেক কিছু পেত। সবাইকেই দিয়েছি। গোলমালটা হচ্ছে ইউরোপীয় একটি শক্তিকে নিয়ে। তারা ওয়েস্ট মিনস্টার ধারণার অন্য ব্যাখ্যা মানতে চায় না। তাই তারা আপত্তি করেছে। সংসদে প্রস্তাবও পাস করেছে। আপাতত বৈরী। পরশু সকালে দেখবেন বিলকুল ঠিক। বিরোধীরাও চুপ হয়ে যাবে। সামনে কত যে খেলা অপেক্ষা করছে। উপজেলা যাক নাÑ দেখবেন হিসাব মেলাতে পারছে না। রাজনীতি চার দেয়ালের মধ্যেই বন্দি হয়ে যাবে। মিডিয়া তো কাবু হয়েই গেছে। আমাদের কিছু করতে হয়নি। নিজেরাই ম্যানেজ হয়ে গেছে। নতুন আইন করতে যাচ্ছি তাতে ওয়েব দুনিয়াও ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। কজনের সাহস আছে আইন অমান্য করে আন্দোলনে যোগ দেয়ার। তার মানে কী? মানে খুবই সোজা। এক নেতা, এক দেশ,’ স্লোগানটি একসময় শুনতে ভালো লাগত। মাঝখানে অরুচি ছিল। এখন নয়া মোড়কে মোড়ানো হচ্ছে। ভালো লাগতেও পারে। না লাগলে চলে যান অন্য দেশে। কার কী আপত্তি। কেউ আপত্তি জানাবে না। নিরাপত্তার জন্য, সুশাসনের জন্য প্রজারা নানা সময় নানা কিছু করেছেন। এই ভূখণ্ডেও তাই দেখা গেছে। প্রজারা রাজাকে বসান। আবার হটিয়েও দেন। রাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মিল খুঁজতে গিয়ে অযথা বাড়তি চিন্তা করছেন কেন? সময় শেষ হয়ে যায়নি। অপেক্ষা করুন, দেখুন। নয়া কিছুর জন্য কষ্ট করতে হয়। রূপকথার গল্প শেষে সব সময় বলা হয়, এরপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। এটা রূপকথা কি না, তা নিয়ে আপনি বিতর্ক করতে পারেন। আমি অন্তত করছি না।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads