রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৪

সারশূন্য এক নির্বাচন এবং অন্তঃসারশূন্য সংসদ


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সংসদে ফিরে গেছেন, সেখানে এখন শুধু তার নিজের কণ্ঠস্বরেরই প্রতিধ্বনি হবে। কিন্তু সে প্রতিধ্বনিও হবে সারশূন্য, যেমন সারশূন্য ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ভারতের ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ব্যাকিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে মতামত কলামে এমন মন্তব্য করেছেন সিএনএন আইবিএনএর ফরেন এডিটর সুহাসিনী হায়দার। নির্বাচনে সারা বিশ্বের সমালোচনা সত্ত্বেও ভারতের সমর্থনের সমালোচনা করেন তিনি। প্রসঙ্গত তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থায় ভারতের উচিত হবে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলা, কোনো দলের  পক্ষে নয়। যদি সব দল সমঝোতায় না আসে এবং সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন না হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে  বলা যায়, এই সংসদ হবে ক্ষণস্থায়ী। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাষ্যকার থমাস কেইনে সম্প্রতি বলেছেন, সমাধানের জন্য কোনো খারাপ নির্বাচন কোনো নির্বাচনই নয়।
বিদেশী বিশ্লেষকরা এখন বলছেন, নতুন সংসদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধু তার নিজের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি শুনতে পাবেন। পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, এমন প্রতিধ্বনি না গণতন্ত্রের প্রতিধ্বনি, না জনগণের কলধ্বনি। নতুন সংসদ যে একটি অন্তঃসারশূন্য সংসদ হবে তা ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন থেকেই উপলব্ধি করা গিয়েছিল। যে নির্বাচনে বিরোধী দল থাকে না, যে নির্বাচনে ভোটার যায় না, সে নির্বাচন কি করে অর্থপূর্ণ হবে। অথচ এমন একটি নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা এখন যে তর্জন-গর্জন করছেন এবং প্রতিদিন বিরোধী দলের শত শত নেতা-কর্মী গ্রেফতারের মাধ্যমে পুরো দেশটিকে একটি কারাগারে পরিণত করেছেন, তাতে তাদের মধ্যে লজ্জার কোনো পরমাণুও অবশিষ্ট আছে কি না তাতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সরকারি দলের এমন নির্লজ্জ নেতা-নেত্রী  ও পারিষদবর্গের বিরুদ্ধে বিরোধী দল কিভাবে আন্দোলন করবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই সরাকর তো বিগত ৫ বছরে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ এমনকি মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিকেও বরদাস্ত না করে চরম ফ্যাসিবাদী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। নতুন মেয়াদের শুরুতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য এমন হুমকির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের টেলিফোন বার্তা। শিবশঙ্কর মেনন কোনো রকম নরম মনোভাব না নিয়ে শক্ত হাতে বিরোধী দলের আন্দোলনকে রুখে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মূল¯্রােতে নিয়ে আসা হয় এবং তা করা হলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জোরের জায়গা ও গুরুত্ব আরও বাড়বে। পায়ের তলায় লড়াইয়ের বাড়তি জায়গাটুকু পাবেন হিন্দু সম্প্রদায়। ভাবতে অবাক লাগে, এমন আগ্রাসী পরামর্শ তারা কেমন করে দেন? এবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের টেলিফোন বার্তার পর আওয়ামী লীগ সরকার নিপীড়নমূলক আর কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটাই দেখার বিষয়। এখনতো বিরোধী দলের কোনো নেতা কোনো জায়গায় বক্তব্য রেখে নিরাপদ থাকতে পারছেন না। বক্তব্য রাখার পরেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং রিমান্ডের যাঁতাকলে পিষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন আচরণের মাধ্যমে সরকার আসলে নিজেদেরকে অগণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। এখানে বলার বিষয় হলো বাংলাদেশের জনগণ কখনও অগণতান্ত্রিক কিংবা ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে মেনে নেয়নি, এবারও যে মেনে নেবে না তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে এবার যে বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করেছে তা হলো, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের দৃষ্টিকটূভাবে নাক গলানো এবং নির্বাচন পরবর্তী সরকারকে ডিক্টেট করার মানসিকতা। মানুষের মনে এখন প্রশ্ন জেগেছে, বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি কি শিবশঙ্কর মেননদের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে? এমনটি হলে তো আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অহঙ্কারে আঁচ লাগবে। জনগণের গণতান্ত্রিক চেতনায়ও আঘাত আনা হবে। বাংলাদেশের জনগণ কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে এমন অগণতান্ত্রিক ও আগ্রাসী ভূমিকা কামনা করে না। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণের সাথে মৈত্রীর বন্ধনকে দৃঢ় করতে চায়। কিন্তু শিবশঙ্করদের এমন আচরণে তা কতোটা সম্ভব হবে তেমন প্রশ্ন করাই যায়।
বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে এখন ভারত যেভাবে নাক গলাচ্ছে, ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারে তেমন নাক গলানোর বিষয়টিকে ভারত কিভাবে দেখবে? একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত নিশ্চয়ই নাক গলানোর বিষয়টিকে পছন্দ করবে না। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদশও যদি নাক গলাতে চায়, ভারত কি তা মেনে নেবে? তাহলে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের দাদাগিরিকে বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিবে কেমন করে? আসলে অন্তঃসারশূন্য ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাকে টিকিয়ে রাখার সঙ্গ দিলে তা অসৎ সঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ বিষয়টি ভারত বা বাংলাদেশ কারো জন্যই মঙ্গলজনক বলে বিবেচিত হবে না। এ কারণেই এখন পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, কোনো বিশেষ দলের পক্ষ না নিয়ে ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের পক্ষ নেয়া। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads