সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও রবীন্দ্রনাথের কেষ্টা


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন রবীন্দ্রনাথের কেষ্টায় পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। যেখানে যত অপকর্ম হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার, তার দল এবং তাদের অনুসারী পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলসমূহ এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা সেখানেই জামায়াত-শিবিরের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দলটিকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল, হিসেবে প্রমাণ করার জন্য অধুনা তাদের যে অপপ্রচার তা একটা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে এই দলটিকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করা হচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির সাথে এই বাহিনীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামায়াত-শিবিরের প্রতিশ্রুতিশীল নেতা কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংস্থাগুলোতে লুটপাট করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। সরকার এমন সব অপপ্রচার চালাচ্ছেন মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা জামায়াত-শিবির এবং এই সংস্থাটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে এই দেশে আর কোন সমস্যা থাকবে না। দেশের মানুষের সুখ শান্তির পথে বিরাজমান সকল বাধা সরে যাবে। সরকারের অনুপ্রেরণা, প্ররোচনা ও অপপ্রচারে প্রতিবেশী ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ এমনকি আমলারাও সকলপ্রকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করে এই দলের অস্তিত্বকে তাদের স্বার্থের এবং অস্তিত্বের পরিপন্থী বলে মনে করছেন এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিককালে রহস্যজনক হামলা এবং তাদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের যেসব অবাঞ্ছিত এবং নিন্দিত ঘটনা ঘটছে তার জন্য জামায়াতকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কোনও প্রকার তদন্ত ছাড়াই দিল্লী গিয়ে তার প্রভুদের কাছে ডাহা মিথ্যা কথা বলে এসেছেন। বলেছেন, জামায়াত ৭১ সালের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের অত্যন্ত প্রাচীনতম একটি দল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পূর্বে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে এই দলটি তার কোনটিতেই অনুপস্থিত ছিল না। তার উপস্থিতি ছিল সক্রিয় ও সরব। পঞ্চাশের দশকে শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল (ঈড়সনরহবফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ ঢ়ধৎঃু-ঈঙচ) এবং পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি বা উবসড়পৎধঃরপ
অপঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব-তে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের সাথে জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একসাথে কাজ করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধেও ১৯৮৬ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছে। ১৯৯২ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জামায়াত একসাথে কাজ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপির সাথে জামায়াত জোট গঠন করার পর ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াতকে আওয়ামী লীগ শত্রু হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে। অবশ্য এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে জামায়াত বিএনপিকে সরকার গঠনে নিঃশর্ত সমর্থন দেয়ার পর থেকে। এই সময় জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সরকার গঠনের জন্য বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ, কারোরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ৫টি মন্ত্রীপদের প্রস্তাব দিয়ে সরকার গঠনের সমর্থন চেয়েছিল। কিন্তু জামায়াত তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বরং কোন প্রকার মন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করেই বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল। ফলে দলটি আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন হয়েছিল। আগেই বলেছি জামায়াত বাংলাদেশে খুবই প্রাচীন একটি দল। এই দলটি ক্ষমতালিপ্সু কিংবা বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় বা নেশায় রাজনীতি করে না। শুধু এই উপমহাদেশে নয় সারা বিশ্বে নির্ভেজাল তৌহিদপন্থী একটি দল হিসেবে জামায়াত সুপরিচিত। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তারা নেতা-কর্মীদের ব্যাপক শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন এবং কুরআন সুন্নাহ ইসলামী আইন ও তার ভিত্তিতে আকীদা বিশ্বাস ও চরিত্র গঠনে দলটি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি এই দলের সামগ্রিক কর্মকা-ের একটি অংশ মাত্র। বাংলাদেশ সরকারও এ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। ইসলামী বিশ্বাস এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরিহার না করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে এবং এই দলটির ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলছে। তাকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত করে এই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিচার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাধিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে এবং একজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশন, ইইউ পার্লামেন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনেট কমিটি, বৃটিশ পার্লামেন্টসহ সকল আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই বিচারের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে এই বিচার রাজনৈতিক এবং আইন ও বিচারের আন্তর্জাতিক সকল মানদ-ের পরিপন্থী। তারা এই বিচারকে মানসম্মত করার জন্যে বেশ কিছু সুপারিশমালাও সরকারের কাছে পেশ করেছেন। কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করেননি। ফলে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সরকার প্রতিবাদের সকল পথ তাদের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং মানববন্ধন করে প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সরকার বিক্ষোভরত জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ দিয়েছেন। এই গুলীতে ও নির্যাতনে এ যাবত জামায়াত-শিবিরের পাঁচ শর্তাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এই নির্দেশ ও গুলী করে মানুষ হত্যার ঘটনা ইতঃপূর্বে আর কখনো ঘটেনি। পুরো বিচার প্রক্রিয়াটাই এখানে প্রশ্নবিদ্ধ এবং এই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণেই জামায়াত শিবিরের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে অস্ত্র দিয়ে দমন করতে গিয়ে সরকারই সন্ত্রাস করছেন এবং তার দায় জামায়াতের ওপর চাপাচ্ছেন। জামায়াত ও সারাবিশ্ব এর বিরোধিতা করছে। জামায়াতের দুজন মন্ত্রী চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। ঐ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বকালে তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-রিসওয়াত এমনকি ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল বা অপচয়ের কোন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত অথবা তার ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বা নৈরাজ্য সৃষ্টির কোন অভিযোগ ছিল না। যেমন আছে ছাত্র লীগ যুব লীগের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের নিয়ে একসাথে কাজ করেছে তখন তাদের গায়ে দলটি যুদ্ধাপরাধের গন্ধ পায়নি। কিন্তু যখনই তারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের জোটে অংশগ্রহণ করেছে তখনই জামায়াত যুদ্ধাপরাধীতে পরিণত হয়েছে। যদিও যুদ্ধে অংশগ্রহণরত পক্ষের কোনটিতেই তারা ছিলেন না এবং তারা যুদ্ধাস্ত্র তো দূরের কথা বেশির ভাগ পাখি শিকারের বন্দুক চালাতেও জানেন না। ইতিহাসের এই চরম সত্যটি আমাদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সুশীল ও তথাকথিত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীরা জানেন নাÑ এটা বিশ্বাস করা যায় না। আওয়ামী লীগের ব্যাপারটি আলাদা। কেননা অনেকে বলে থাকেন আওয়ামী লীগ করলে নাকি মাথায় বুদ্ধি থাকে না, বুদ্ধিটা হাঁটুতে চলে আসে। আবার লজ্জাও যে তাদের লোপ পায় এখন এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। এডভোকেট আনিসুল হককে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ মন্ত্রী বানিয়েছে। ইনি সেই আনিসুল হক যাকে স্বৈরাচারী এরশাদের পক্ষে আদালতে মামলা লড়ার অপরাধে আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিষ্কার করেছিল। এখন এরশাদ এবং আনিসুল হক দু’জনই সরকারের সহযোগী, এরশাদের স্ত্রীও। অনেকে এতে লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পান না।
জামায়াতকে ১৮ দলীয় জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এখন তাকে নন্দঘোষ বানানোর সকল পন্থা কাজে লাগানো হচ্ছে। পত্রিকাগুলো, বিদেশী সংস্থা এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলের বাংলাদেশ সংক্রান্ত মন্তব্য ও পরামর্শসমূহকে বিকৃত করে প্রচার করছে। বলা হচ্ছে তারা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত বিএনপি জোটে থাকার কারণেই বিএনপি দেশের জন্য কিছু করতে পারছে না। দলটি খুবই ভালো এবং তারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছুই দিতে পারে। বিএনপি নেত্রীকে যখন অত্যন্ত অপমানকরভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলো, তার ছেলেদের উপর নির্মম অত্যাচার চলল, এমনকি মৃত আত্মীয়াকে দেখার ব্যাপারেও একে-অপরের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হলো না, বিএনপির দফতরকে কারাগার বানানো হলো, বন্ধ করে দেয়া হলো, বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের জন্য মই বেয়ে দোতলায় উঠে অফিস তছনছ করে ডাকাতির আসামীর ন্যায় তাদের থানায় নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হলো, তাদের সকল নাগরিক ও গণতান্ত্রিক এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো, তখন এসব সুহৃদরা কোথায় ছিলেনÑ আমি জানি না। তবে এসব ঘটনা ইতিহাসে কালো অক্ষরে লেখা থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। ১৮ দলীয় জোট একটি নির্বাচনী জোট। এই জোটে থাকা না থাকাটা শরিক দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আবার যারা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলেন, তারা হয়তো জানেন না যে, ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কোনটিই কারুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই জোটে অংশ নেয়নি। আবার কারুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়ে এই জোটে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেয়নি। জামায়াত পরনির্ভরশীল কোনও দলও নয়। জামায়াতকে নিয়ে বর্তমানে যে বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে এই বিতর্ক আদর্শিক ও রাজনৈতিক। ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বন্দ্বের একটি অধ্যায় মাত্র। এখানে তারা সকল প্রকার মিথ্যাচারকে ব্যবহার করছে। এতে অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাগুমের ঘটনা ঘটছে। ঈমানদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাদের ঈমানী শক্তি দুর্বল হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন সরকারের ধারাবাহিক সকল অপকর্মের উপর থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনের কয়েকদিন আগ থেকে এ যাবত সংখ্যালঘুদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হচ্ছে, তাদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট লুট করা হচ্ছে, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এর দোষ চাপানো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ওপর। এদেশে কারা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণে পারদর্শী দেশবাসী সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। বিভিন্নস্থানে এসব অপকর্ম ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের দায়ে যারা ধরা পড়েছেন, পুলিশে হস্তান্তরিত হয়েছেন তাদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। জামায়াতের কেউ নন। কিন্তু দোষটা দেয়া হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ওপর। সংখ্যালঘু সংস্থাগুলো এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরাও একথা স্বীকার করেছেন যে, জামায়াত তাদের ওপর অত্যাচার করছে না। কিন্তু গোয়েবলস-এর নাতিপুতিদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জামায়াতের পক্ষ থেকে বার বার এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ডা. শফিকুর রহমান পরিষ্কার বলেছেন যে, সংখ্যালঘুরা আওযামী সরকারের নোংরা রাজনৈতিক খেলার নির্মম শিকার। তিনি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানানোর পাশাপাশি গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তায় সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনেরও দাবি জানিয়েছেন। আসলে সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে ‘জয়ী’ হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে যে ছক তৈরি করেছেন তা বাস্তবায়নের পথে যাতে কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে না পারে এবং আন্দোলন দানা বেঁধে না উঠে তা নিশ্চিত করার জন্যই নিজের অপকর্ম বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে ব্যাপক হারে মামলা দিয়ে আন্দোলন ঠেকাতে চাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় জামায়াত এখন তাদের পথের কাঁটা, এই কাঁটা দূর করাই তাদের জামায়াত বিরোধিতার মূল কারণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি জামায়াতের নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার। তাদের এই অঙ্গীকার শাসক গোষ্ঠী ও ভারত কারোরই পছন্দনীয় নয়।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর বীরোত্তম গত ১৬ জানুয়ারি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে যথার্থই বলেছেন “আওয়ামী লীগ এবং মিডিয়া জামায়াতের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ জামায়াতই একমাত্র সুসংগঠিত দল যে ভারতীয় প্রভূত্ব কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। আমি অনুভব করি যে, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে এই দলের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি। ভারত আমাদের সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং সেনাবাহিনীর কিছু লোককে কিনতে পারলেও জামায়াতকে কিনতে পারেনি।” ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের ভাষায়-
‘জামায়াত শিবির মার খাচ্ছে, কিন্তু অস্ত্র হাতে নেয়নি, বুলেটের জবাব তারা ইট-পাটকেল দিয়ে দিচ্ছে।’ কথাগুলো অসত্য নয়।
আমার বিশ্বাস, যদি আমাদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা জামায়াতকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সরকারি দলের লাগামহীন দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, ঘুষ রিসওয়াত, অনৈতিক কর্মকা- এবং  সীমাহীন লোভ-লালসার বিরুদ্ধে কথা বলতেন এবং তাদের ঘৃণা করতেন তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যেতে পারতো। হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়া অনেক সহজ হতো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads