শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৪

৫ জানুয়ারির নির্বাচন আর ছেঁড়াখোঁড়া তাস


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

এক অবিশ্বাস্য অকল্পনীয় প্রহসন হয়ে গেল বাংলাদেশ জনপদে। মনে হলো এই জনপদের মানুষ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিবিহীন পোষা এক প্রাণিকুল। প্রধানমন্ত্রী তাদের যেভাবে তাড়াবেন, যে পথে তাড়াবেন সেভাবেই, সে পথে যেতে এরা বাধ্য। আর এই ১৬ কোটি প্রাণীর মনের কথা শুধু তিনিই জানেন। ফলে তিনি বলতে পারেন, এদের এ পথেই যাওয়ার কথা যে পথে আমি তাদের নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বাংলাদেশে যে জনগোষ্ঠী, এর ১৬ কোটিই মানুষ। এই মানুষের বিভিন্ন চিন্তা-চেতনা আছে, মত-পথ আছে। এদের নিজস্ব সংস্কৃতির ভাবনাও আছে। আর এরা নিতান্তই পোষা প্রাণী নয়। এরা বিবেকবোধসম্পন্ন জাগ্রত মানুষ। সেই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেকবোধের অবমাননা হয়ে গেল বাংলাদেশে।
এই জনপদের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের আশা-আকাক্সাকে পদদলিত করে সরকার নির্বাচনের নামে গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব প্রহসন মঞ্চস্থ করল, তা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান হোতা হিটলারের কাছেও তা সম্ভবত কল্পনার অতীত ছিল। হিটলার জার্মান নাগরিকদের মধ্যে জজবা তৈরি করেছিলেন বটে, কিন্তু এমন নির্বাচন অনুষ্ঠান করেননি। এই নির্বাচন এমন এক গোঁজামিলের সংশোধিত সংবিধানের আওতায় করা হলো, যেটার আগা মেলে তো পাশ মেলে না। সামনে ছুটলে পেছনে টানে। এক সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদের নির্বাচন পৃথিবীর কোথাও হয়নি। আবার এক সংসদে এমপিদের স্থায়িত্বকাল শেষ হওয়ার আগেই আরেক সংসদের সদস্যরা কোনো দিন শপথ নেননি। সংবিধান সংশোধন করে বিধান আনা হয়েছিল যে, এক সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অন্য সংসদ শপথ নিতে পারবে না। আবার একই সংবিধানে বলা হয়েছে, নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে নতুনদের শপথ নিতে হবে। আগে বিধান ছিল নতুনরা শপথ নিলে পুরনোরা এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সে ব্যবস্থা রদ করা হয়েছিল। কোথাও মিলল কি মিলল না, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে কুলাল কি কুলাল না, তা দেখার বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে অবস্থা যা দাঁড়াল, তা হলো শেখ হাসিনা যা বলবেন সেটাই সংবিধান। সেটাই সংবিধানের ব্যাখ্যা।
টেলিভিশনগুলোর কল্যাণে নির্বাচনের দিন দেশের কোটি কোটি মানুষ ক্যামেরায় লাইভ কৌতুক-নাটক দেখতে থাকল। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চেয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দিকে সরকার মোটেও ভ্রƒক্ষেপ করেনি। জনগণ কী চেয়েছে সেটা বড় কথা নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী চেয়েছেন সেটাই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় কথা। দেশের মালিক জনগণ, কিন্তু জনগণের চাইবার কোনো অধিকার নেই। শেখ হাসিনা মনে করেছেন নির্বাচন এভাবেই হবে। তার খেয়াল-খুশিমতো হবে। সেটাই হবে এখানে আবার কথা কী! বিরোধীদলীয় নেত্রী এই নির্বাচন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তার ১৮ দলীয় জোটের তরফ থেকে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিলেন। জনগণ সে অবরোধ কর্মসূচিতে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবরোধ এখনো চলছে। তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান এই নির্বাচন বর্জনের। সেই আহ্বানে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া যায়। ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যায়নি সাধারণ মানুষ। আবার এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের আগেই ১৫৩ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে কেড়ে নেয়া হয় পাঁচ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার। এর পরে যে ১৪৭টি আসনে তথাকথিত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়, সে ভোটও বর্জন করে সাধারণ মানুষ। শুধু সাধারণ মানুষ বলি কেন, এ ভোট বর্জন করে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের সমর্থকেরাও। অর্ধশত ভোটকেন্দ্রে একজন লোকও ভোট দেননি। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর শরিকদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছিল, ছিল তাদের এজেন্টরাও। কিন্তু তারাও কেউ ভোট দেননি। কেন দেননি? কারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকেরাও বুঝেছিলেন যে, এ নির্বাচন তামাশার নির্বাচন। বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচন। তাই ভোট দেয়া-না-দেয়া সমান। শত শত ভোট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে একটি, দুটি, পাঁচটি ও দশটি। কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের নেতার সংখ্যাই দুই-চার-পাঁচ শথাকার কথা ছিল। তারাও ছিলেন অনুপস্থিত। অর্থাৎ নির্বাচনকে কেউই গুরুত্বসহকারে নেয়নি। আর এই নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের প্রতি শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তাও ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অপনারাও আসুন। ভাগ দেবো, যে লুটের মালের ভাগবাটোয়ারার আসর বসেছে বাংলাদেশে। আসেন। আসেন। নির্বাচনে যোগ দেন। আমি রেখে যতটুকু বাঁচে সেই উচ্ছিষ্ট কিছু দেবো। আসেন। আসেন।
কোনো সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এ ধরনের নির্বাচনী আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না। ১৮দলীয় জোটও দেয়নি। এর মধ্যে আবার শর্তের ছড়াছড়ি। উচ্ছিষ্ট নিতে হলে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। দেশ-বিদেশে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষেরা এ রকম ভোট দেখে চমকিত হয়েছেন। পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশগুলো বলছে, এ নির্বাচন জনপ্রতিনিধিত্বমূলক নয়, এতে জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। তাই সব দলের অংশগ্রহণে সরকার যেন নতুন নির্বাচন করে। কেবল তাহলেই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়।
কিন্তু চোরের মায়ের গলা সব সময় বড় থাকে। এরা বলতে শুরু করেছেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এরা জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছেন। এবং আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। পাঁচ বছর কেন, শেখ হাসিনা ২০২১ সালের পর এখন বাংলাদেশের মানুষকে ২০৪১ সালের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে চিরজীবী করুন। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার একমাত্র পৃষ্ঠপোষক দিল্লি তথা ভারতের কংগ্রেস সরকার। নির্বাচন যে এ রকম হবে সেটি ভারত সরকার আঁচ করতে পারেনি এমন মনে করি না। সরকারের জনসমর্থন যে শূন্যের কোঠায় সেটি ভারত তাদের গোয়েন্দা সূত্র এবং বাংলাদেশে ছয় লক্ষাধিক চরের মাধ্যমে নিশ্চয়ই আগে থেকে অবহিত ছিল। তারপরও ভারত শেখ হাসিনাকে চায়। শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কিংবা বাংলাদেশকে ভারতের ভূখণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে যেসব চুক্তি গোপনে সম্পাদিত হয়েছে, সম্ভবত সেগুলোও বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনাকে তাদের দরকার। সেটি কেউ প্রকাশ করছে না। ভারতের কাছে এটি অজানা নয় যে, বর্তমান বিশ্বে এ রকম একটি নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো সরকার যদি ক্ষমতায় আসীন থাকতে চায় তবে তা পৃথিবীর কেউই মেনে নেবে না। আর বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয় যে, পৃথিবীর সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শুধু ভারতের মদদে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে।
এ ধরনের চাপাচাপির পরিণাম ভারতের জন্য কোথাও ভালো হয়নি। শ্রীলঙ্কায় হয়নি। নেপালে হয়নি। এমনকি মালদ্বীপেও নয়। মালদ্বীপে ভারতীয় দালাল বলে পরিচিত মোহাম্মদ নাশিদকে ক্ষমতায় রাখতে ভারত প্রাণান্ত কোশেশ করেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারবার নাশিদকে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ। শেষ পর্যন্ত ভারত সেটা মেনে নিতেও বাধ্য হয়েছে। ভারতীয় দুর্বৃত্তদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশের মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। এটি জয় করা এত সহজ কাজ নয়।
কিন্তু ভারত জানত, যে নির্বাচন আওয়ামী লীগকে দিয়ে তারা করাতে চাচ্ছে সেটি যেমন একদলীয় শাসনের নীলনকশা তেমনি জনমতের প্রতিফলনহীন। তাহলে কী দাঁড়াবে? খুব দ্রুত এই নির্বাচন থেকে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। তার জন্য রয়েছে ভারতের বহুল ব্যবহৃত সংখ্যালঘু কার্ড। গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনী তামাশার বাটোয়ারায় যারা মনোনীত হয়েছেন তাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান টেলিভিশনে লাইভ প্রচারিত হয়েছে। ঘোষিকা অনুষ্ঠানটি কিভাবে সম্পন্ন হবে সেটি বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম কী প্রবল উৎকণ্ঠায় শেখ হাসিনা নিজে ঘোষিকার দিকে তাকিয়ে বারবার স্বাক্ষর করার ভঙ্গি করছিলেন। তিনি সম্ভবত এই বলে অনুষ্ঠান ঘোষিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন যে, তার আগে শপথপত্রে নতুন মনোনীতদের স্বাক্ষর করা দরকার। তার উৎকণ্ঠা দেখে মনে হচ্ছিল যদি কোনো দৈব ক্ষমতা বলে তিনি ওই শপথপত্রে মুহূর্তের মধ্যে স্বাক্ষর করিয়ে ফেলতেন! যেন ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। এক্ষনি তাতে লাফিয়ে ওঠা দরকার। এক সেকেন্ডও দেরি করার সময় নেই। স্বাক্ষর হয়ে গেলেই নতুন এজেন্ডা। সামনে তার অনেক কাজ বাকি।
পরবর্তী পদক্ষেপ যদিও আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত ৫ জানুয়ারি রাত থেকেই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অওয়ামী লীগারেরা হামলা চালাতে শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের উসকানি দেয়ার জন্য এরা নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। এবং প্রায় সাথে সাথেই হল্লাচিল্লা শুরু হয়ে গেল যে, এখানে বিএনপি-জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের জীবন বিপন্ন। এই জিগির যদি জাগিয়ে তোলা যায় তাহলে খুব দ্রুতই বিশ্ববিবেক জনপ্রতিনিধিত্বহীন নির্বাচনের চেয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা তা সে যেই করুক না কেন, অবশ্যই শক্ত হাতে দমন করতে হবে। কিন্তু তাদের ওপর হামলা মানেই বিএনপি-জামায়াতের কাজ, এমন ঢালাও অবস্থান থেকেও প্রমাণিত হয় যে, সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার চেয়ে বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করার দিকে অধিক মনোযোগী। সরকার কেন ধরে নেবে যে, এসব হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতই দায়ী? তদন্ত করে দেখুন, অসলে কে দায়ী। এখন আস্তে আস্তে একটু একটু করে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই বলতে শুরু করেছেন, হামলা করে আওয়ামী লীগ; দোষ হয় বিএনপি-জামায়াতের। তবে বাংলাদেশে এখন আওয়ামী ত্রাসের রাজত্বে শুধু সংখ্যালঘুরাই নয়, ৯০ শতাংশ সংখ্যাগুরুর জীবনও বিপন্ন।
ফলে এই কার্ডও যে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি করে খেলা যাবে আপাতদৃষ্টিতে তা আর মনে হচ্ছে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যেমন সাজানো নাটক ছিল, সংখ্যালঘু নির্যাতন তেমনি সাজানো নাটকই। এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নেয়নি। বহু স্থানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কেন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বেছে নিল তার প্রতিশোধ হিসেবে নৌকা মার্কার অওয়ামী লীগ ক্যাডাররা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দোষ হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের। কিন্তু এমন নয় যে, ওই সংখ্যালঘুরা বিএনপি বা জামায়াতকে ভোট দেয়নি বলে এমনটি হয়েছে। কারণ নির্বাচনে এরা প্রার্থীও নয়। আবার অর্ধশত কেন্দ্রে কোনো অওয়ামী লীগারও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেননি। এবং একজনও ভোটকেন্দ্রে হাজির হননি।
নির্বাচনের পরদিন গণভবনের সবুজ লনে শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর নষ্ট, বিকল মাইকের সামনে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। পাশে দাঁড়িয়ে তাকে ডিকটেট করছিলেন জাসদের হাসানুল হক ইনু। কিন্তু সেই মাইক্রোফোনটি সচল ছিল। দর্শকেরা যারা টেলিভিশনের সামনে ছিলেন, এরা তার বিবরণ শুনেছেন। শেখ হাসিনা ইনুকে বলতে বাধ্য হয়েছেন, শেষ পর্যন্ত জাসদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে? এটা আবার সেই জাসদ, যে জাসদ শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশব্যাপী গণবাহিনী গঠন করে গণযুদ্ধকরেছিল। ওই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়। কত শতাংশ ভোট পড়েছে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তিনি এমন একটা ভাব করলেন যে, কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেটা নির্ধারণ করতে নির্বাচন কমিশনের সময় লাগবে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ফলাফল আসবে তো। সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করে এটি জানাতে সময় লাগবে। অথচ আমরা এর আগের নির্বাচনগুলোতে দেখেছি, ভোট গণনার সাথে সাথে ভোটারের হিসাব পাওয়া যেত। যা হোক, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা বললেন, জনগণ যতটুকু ভোট দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। ভোটের ফলাফল প্রকাশের আরো এক দিন পর নির্বাচন কমিশন জানান দিলো, ভোট পড়েছে ৪০.৫৬ শতাংশ। পরে আবার দু-একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে বলতে শুনলাম ভোট পড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ তখনো গোঁজামিলের হিসাবটি মেলানো যায়নি। পরে শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে না। সাবাস! 
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করেছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে তার নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) রেখে আওয়ামী লীগসহ বাকি সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। মাত্র চারটি সংবাদপত্র নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সে সময় বাকশালে তার সাথে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। এবারের চিত্র প্রায় একই। আওয়ামী লীগের একদলীয় পথযাত্রায় তার সঙ্গী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা), হানসানুল হক ইনুর জাসদ, রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি। বাকি সব রাজনৈতিক দল প্রায় নিষিদ্ধ। নেতা-নেত্রীরা সব কারাগারে। খালেদা জিয়াও নিজ বাসভবনে অন্তরীণ ছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ। বাকশাল করে শেখ মুজিবের পরিণতি ভালো হয়নি।
তবে অমরা শুধু বলতে চাই, বেশি আত্মতুষ্টিতে না ভোগাই ভালো। আয়নায় দেখা পরিপাটি চেহারার পেছনে আসল ছবিটির যে কদর্যতা লুকিয়ে আছে তা একদিন আপনাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads