বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

দেশ সত্যিই ধ্বংসের গভীর খাদের কিনারে!


সাম্প্রতিককালে মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনাকালে তারা বলেছে যে, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বহুমুখী সংকটের গভীর খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে! অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী আমাদের দেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছে। তার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বর্তমান সরকারের একগুঁয়েমি মনোবৃত্তিকে দায়ি করেছে। এবং গণতন্ত্র নামের প্রতিষ্ঠানটিকে অস্তিত্বহীন করে দিচ্ছে। শুধু তাদেরই মন্তব্য নয়, পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই মনোভাব ব্যক্ত করেছে। যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অসম্মানের। জনগণ আজ হতাশায় নিমজ্জিত। জন আকাক্সক্ষার প্রতি বর্তমান সরকার এতটাই উদাসীন যে, সরকার যেন সেই ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ‘রোম নগরী জ্বলছে, নীরু বাঁশি বাজাচ্ছে’। হ্যাঁ, বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা তাই দাঁড়িয়েছে।
আর এ সংকট নিরসনের জন্য বিদেশী কূটনীতিকদেরও বেশ দৌড়-ঝাঁপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ সফর করে বর্তমান সরকারকে এক ধরনের আল্টিমেটামই দিয়ে গেলেন যে, বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য সরকারকেই প্রথমে উদ্যোগ নিতে হবে। বিরোধী দলের সাথে সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে একটি সমাধানের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য। পাশাপাশি বিরোধী দলের নেত্রীর সাথেও সাক্ষাৎ করে বলেছেন অনমনীয় মনোভাব ছেড়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সরকারের সাথে একটি বৈঠক করে জনভোগান্তি কমিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যেতে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে। এ ব্যাপারে বিরোধী দলের পক্ষে সমঝোতায় পৌঁছতে এগিয়ে আসার জন্য প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিও একটি অগ্রগতির ধাপ দেখা গেছে কিন্তু সরকার প্রধান এ ব্যাপারে তেমন কোন সাড়া দেয়ার কোন বাস্তব পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয় নাই। শুধুমাত্র সংলাপ নামের নাটক মঞ্চস্থ করা ছাড়া আর তেমন কিছুই আন্তরিকতার সাথে বাস্তব কোন পদক্ষেপ নেই। একদলীয় বাকশালী পদ্ধতিই যেন সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর বর্তমান সরকারের কর্মকা-ও তাই প্রমাণ দিচ্ছে।
দেশের বিশিষ্ট জনগণ ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের টক শো’তে এ ব্যাপারে কত প্রকার নসিহত করছে সরকারের উদ্দেশ্যে তা আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাচ্ছি। এমনকি সরকারপক্ষীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাংবিধানিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন এমন কঠোর মনোভাব পর্যন্ত ব্যক্ত করছেন নানা পেশাজীবীর সচেতন ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করছেন না। বরং কথার তুবড়ি মেরে বিরোধী পক্ষের বক্তব্যকে অসাড় বলে প্রমাণ করার হীন মন্তব্য করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। বর্তমান সরকার প্রধানের ভারত প্রেম এতবেশি জাগ্রত হয়েছে যে, ভারতের প্রেসক্রিপশন ছাড়া তিনি এক পাও নড়ছেন না। দেশের জনগণকে খুশি করার চাইতে ভারত সরকারকে বেশি খুশি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎ করে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনের মধ্যে বর্তমান সংকট সমাধানের নানা পরামর্শ দিলেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এককথায় বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাই বলবেন তাই আমাদের পালন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার আমাদের আর কোন রাস্তা নেই’- এর সমর্থনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ একথা বলেছেন (মিডিয়ায় প্রচারিত)। গত কিছুদিন আগে বিশেষ একটি মিডিয়ার টকশো’তেও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন যে, আমাদের নেত্রী যা বলেন তার বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় এবং কারো যোগ্যতাও নেই। আমরা ইতিহাসে হিটলার-মুসোলিনীদের অনেক ঐতিহাসিক বক্তব্য জানি, যাদেরকে ইতিহাসে ফ্যাসিস্ট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এ স্বৈরাচারিনী ফ্যাসিস্ট নেত্রীর কথা আগামী ভবিষ্যৎ ইতিহাস কীভাবে লিখবে তা আমরা জানি না। কিন্তু কথা হচ্ছে একটি দেশের বারোটা বাজাতে এমন একজন নেত্রী খুঁজে পাওয়া বিশ্বে বিরল বলেই মনে হবে। সেজন্যই জনগণের মুখরোচক একটি উক্তি প্রায়শই শুনতে পাওয়া যায় যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে যে, ‘বাপকা বেটি’। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে। যা তার পিতাও দুঃসাহস দেখাননি। তবে বাড়াবাড়ির ফল যে কখনো ভাল হয় না সে কথা হয়তো বর্তমান ক্ষমতায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা সরকারের সে ধরনের হুঁশজ্ঞান সম্ভবত লোপ পেয়েছে। নতুবা জনস্বার্থে কিছুটা হলেও বিবেকবোধে নাড়া দিত। সে চেতনাবোধ একেবারেই অক্কা পেল কী না জনগণের কাছে তা এক বিরাট প্রশ্ন! বড় আক্ষেপ করে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন যে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে আর কোন সংবিধান বিশেষজ্ঞ নেই, একজনই আছেন, তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রতিটি কথাই এখন সংবিধান।
এদেশকে অন্ধকারের গভীর খাদে নেয়ার সে আশংকা মার্কিন কংগ্রেসে আলোচনা হয়েছে, তা এদেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী মহলও ভেবে আঁতকে উঠছেন যে, কোথায় চলেছে এদেশ ‘অদ্ভুত উটের পিঠে’ নয়তো! হ্যাঁ, এ আশংকা এখন দেশের প্রতিটি নাগরিকের। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষসহ সর্বশ্রেণীর মানুষের যেন একই উৎকণ্ঠা আমরা স্বস্তিতে শান্তিতে এদেশে থাকতে পারব তো! নাকি নেতৃত্বের টানা হেঁচড়ায় আমরা সাধারণ জনগণ মরিচ পেষা হয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে সে ভাবনাতেই অস্থির। এতকিছুর পরও বর্তমান সরকার নির্বাচন নিয়েই এগুচ্ছে কোন প্রকার ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না করেই। মনে হচ্ছে যেন জনগণ প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। তিনি যা ভাবছেন তা যে সম্পূর্ণ অলিক ভাবনা সে বিষয়টি আমলেই আনছেন না প্রধানমন্ত্রী। দু’চারজন খয়ের খাঁ প্রকৃতির মন্ত্রী সভা গঠন করে এর নাম দিলেন সর্বদলীয় সরকার (বুদ্ধিজীবীদের ভাষায়-বাকশালীয় একদলীয় সরকার) এর মধ্যে ‘থুতু বাবা’ ও ‘বিশ্ব বেহায়া’ খ্যাত হোসেইন মুহম্মদ এরশাদও যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনার পাতানো ফাঁদে। কিন্তু তাও কী শেষ রক্ষা হবে। তা সময়ই বলে দেবে, জনগণ ধৈর্যের সাথে অপেক্ষায় আছে। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে- ''অ ংঃরপয রহ ঃরসব ংধাব হরহব'' হ্যাঁ এখনও সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। নইলে সময় হারালে আর সংশোধনের সময় পাওয়া যাবে না।
অতএব আর কাল বিলম্ব না করে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে উপায় খুঁজে বের করুন। নইলে সেই যে আশংকা থাকতেই পারে যে, দেশকে অন্ধকারের গভীর খাদের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণে। আসুন, আমরা সবাই মিলে দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads