শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৪

চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও এরশাদ


বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত, সমালোচিত, বিতর্কিত, ‘ডিগবাজিতে দএকটি নাম এইচ এম এরশাদ। ১৯৮২ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে মতা দখল করেন তিনি। দীর্ঘ নয় বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছিলেন। অবশেষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ সব দলের তুমুল আন্দোলনের মুখে পতন হয় এ আলোচিত রাষ্ট্রপ্রধানের। সেই সময় বিভিন্ন সমাবেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বৈরাচারী ও বিশ্ববেহায়া বলে তাকে সম্বোধন করতেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে বারবার জাতির সামনে তিনি ওয়াদা করছেন, একক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না। কারণ তা করলে জাতি তাকে বেঈমানউপাধি দেবে, জনগণ তাকে থুথু  দেবে। তাই শেষ বয়সে তিনি প্রয়োজনে জেল খাটবেন, তবুও জাতীয় বেঈমানের কলঙ্ক মাথায় নেবেন না বলে স্থির সিদ্ধান্তের কথা মিডিয়ার মাধ্যমে জাতিকে জানিয়ে দেন। তার পরও চাপে পড়ে সর্বদলীয় সরকারের অংশীদারিত্ব তিনি গ্রহণ করেন। এটা ছিল জাতীয় পার্টির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ বিগত পাঁচ বছরে জাপা শুধু একজন মন্ত্রী ছাড়া তেমন কিছু পায়নি। এক দিনের জন্য হলেও প্রেসিডেন্ট হয়ে স্বৈরাচারের অপবাদমুক্ত হওয়া কিংবা মামলা থেকে অব্যাহতি কোনোটিই এরশাদের কপালে জোটেনি। অথচ এ সময়ের মাঝে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি থেকে শুরু করে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বহু নেতাকর্মী অব্যাহতি পেয়েছেন। দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, বিরোধী দলের বহু নেতা ও কর্মী হত্যা, গুম, হামলা, মামলা নির্যাতন প্রভৃতি দেখে এরশাদের ঘুমন্ত বিবেক হয়তো জেগে উঠেছে। তিনি তার দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা নিয়েছেন এবং সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদের রাজনৈতিক জীবনে এটি সাহসী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছেন, গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনে আত্মহত্যা করবেন। এ থেকে বোঝা যায় সরকারের প থেকে তার ওপর প্রচণ্ড চাপ ও হুমকি রয়েছে।
গণতন্ত্রমনা সব মানুষ এরশাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বালু দিয়ে জোয়ারে বাঁধ দেয়ার মতো মনকে প্রবোধ দিয়ে বলেছেন, এরশাদ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। কিন্তু এবার  দেখা যায়, তিনি ওয়াদা রা করছেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের অনুরোধও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য এরশাদের নির্দেশ শোনামাত্র জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উৎসাহিত হয়েছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরের নেতাকর্মীরা গরু জবাই করে আনন্দ উৎসব করেছেন। সারা দেশে অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। মন্ত্রিপরিষদে দল যোগ দেয়ায় ুব্ধ হয়ে কাজী জাফর আহমদ বিকল্প জাতীয় পার্টি গঠন করেছেন। সার্বিক অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, এরশাদ এ সরকারের পক্ষে থাকলে জাতির কাছে বেঈমান, ভাঁড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন এবং পার্টি নিশ্চিতভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ফলে ইতিহাসের পাতায় আরো নিন্দিত একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এরশাদ স্থান পাবেন। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে সরকারের প থেকে মামলাসহ বিভিন্নভাবে আক্রোশের শিকার হতে পারেন। তবে দেশব্যাপী এরশাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং জনপ্রিয়তা বাড়বে, কিন্তু একবারে শেষ কথাটি বলা কঠিন, দুই নৌকায় পা রেখে চলার অভিযোগ এখনো এরশাদের ওপর থেকে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads