মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৪

জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব


মানুষের জীবনের যেন কোনো মূল্য নেই। তুচ্ছ ঘটনায়ও এখন মানুষ মানুষকে হত্যা করছে। প্রতিপক্ষ হলে তো কথাই নেই, সামান্য স্বার্থের কারণে নিজ দলের লোকদেরও হত্যা করতে এখন হাত কাঁপে না রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গত ২৬ এপ্রিল। বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালি ইউনিয়নের বারপোতা গ্রামে গত শনিবার সকালে স্থানীয় প্রভাবশালী  দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত হয়েছে দুই যুবক। নিহতরা হলেন, বেনাপোল পৌর মেয়র গ্রুপের সমর্থক যুবলীগ কর্মী ইমান (৩৫) ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শেখ আফিলউদ্দিন গ্রুপের সমর্থক লালন (২৪)।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পুটখালি সীমান্তের চোরাচালানি ঘাটের দখল নিয়ে ক্ষমতাসীন দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে এসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বেনাপোলের পল্লী এলাকায় চোরাচালানের পথ ‘ঘাট’ নামে পরিচিত। পুটখালি ঘাট এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় বদিয়ার রহমান গ্রুপ ও আলাউদ্দিন গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে বদিয়ার গ্রুপ মেয়র লিটনের সমর্থক ও আলাউদ্দিন গ্রুপ এমপি আফিল উদ্দিনের সমর্থক। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, একই দলের সমর্থক হওয়ার পরও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াতে কিংবা পরস্পরকে হত্যা করতে কারো বিবেকে বাধলো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কী নিয়ে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত? ন্যায়-অন্যায় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এখানে দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটলো চোরাচালানের ঘাট দখলের মত একটি নিকৃষ্ট বিষয় নিয়ে। ভাবতে অবাক লাগে, এমন নিকৃষ্ট দ্বন্দ্বের সাথে জড়িয়ে আছেন এলাকার মেয়র ও এমপি। এলাকার মেয়র ও এমপি কেন নির্বাচিত হয় ? তারা তো জনগণের কল্যাণ, ন্যায়-নীতির প্রতিষ্ঠা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার পক্ষে কাজ করার কথা। চোরাচালান কিংবা চোরাচালানির ঘাট দখলের কথা বলে তো তারা জনগণের কাছে ভোট চাননি। তাহলে এখন প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে অর্থ ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির লালসায় তারা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন কোন বিবেচনায়?
আমরা জানি, চোরাচালান একটি অপরাধমূলক কাজ। আর এই অপরাধে যখন মেয়র ও এমপির মত জনপ্রতিনিধিরা জড়িয়ে পড়েন তখন তা আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে। যার উদাহরণ আমরা লক্ষ্য করলাম বারপোতা গ্রামে। চোরাচালান ও চোরাচালানের ঘাট দখলের দ্বন্দ্বে সেখানে প্রাণ হারালো দুই যুবক। আমরা মনে করি, এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারাই জড়িত আছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। মেয়র কিংবা এমপি পদবীর কারণে কেউ আইনের বাইরে থাকতে পারেন না। বরং দায়িত্বের বিপরীতে কাজ করার জন্য কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হওয়াই তাদের জন্য স্বাভাবিক। আসলে আমাদের সমাজে রথী-মহারথীরা অন্যায় ও অপকর্মের সাথে জড়ানোর কারণেই অন্যরা অন্যায় কর্মের সাথে জড়াবার সাহস পায়। আলোচ্য ঘটনায় জড়িত সাধারণ অপরাধীদের সাথে রথী-মহারথীদেরও যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সবার জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি হতে পারে। এতে সমাজে অন্যায় ও অপরাধে জড়াবার প্রবণতা যেমন কমবে, তেমনি জনপ্রতিনিধিরাও উপলব্ধি করবেন তাদের কাজ আসলে কোনগুলো। জনপ্রতিনিধিরা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করলে জনগণের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি সমাজও প্রগতির পথে চলতে পারবে সহজেই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads