বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা যাচাই করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গত ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে’র দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার যতো শতাংশের হিসাবই শোনাক না কেন, প্রকৃতপক্ষে ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ভোট দেয়নি। ভোটের আগেই ১৫৩ জন এমপি হয়ে গিয়েছিলেন। বাকি ১৪৭ আসনে ভোট পড়েছিল পাঁচ শতাংশেরও কম। এর মধ্য দিয়ে তো বটেই, সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল এবং বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের ওপর হামলা ও তাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবং তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু জনগণের ওপর কোনো আস্থা নেই বলেই জনবিচ্ছিন্ন এবং স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীনরা দেশ ও জাতিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় মেতে উঠেছেন। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যাবে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলারও কঠোর সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি খুলে দেয়ার এবং আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সকল সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমন চালিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সরকার যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং আবারও ১৯৭৫-এর মতো গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায় সাম্প্রতিক কর্মকা-ে তারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এমনকি রিমান্ডে নিয়েও সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেÑ যেটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনা করা যায় না। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমন অভিযান বন্ধ না করা হলে জনগণই সরকারকে বিতাড়িত করবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, সে গণঅভ্যুত্থানের কথাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ স্থান পাবে। জাতীয় সংগীত গাওয়ার নামে শত কোটি টাকা লোপাট ও অপচয় করার কাহিনীও একদিন প্রকাশিত হয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, বিএফইউজে’র সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় সব মিলিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তথ্যনিষ্ঠ ব্যাখ্যাসহকারে সঠিকভাবেই অভিযোগ তুলে বলেছেন, জনগণের ওপর আস্থা নেই বলে জনবিচ্ছিন্ন ও স্বৈরাচারী সরকার সব দলকে বাইরে ঠেলে দিয়ে একদলীয় তথা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে। এ উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা এমনকি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার হাস্যকর রেকর্ডও স্থাপন করেছেন। ১৫৩টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ‘নির্বাচিত’ হয়ে গেছেন তাদের প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোও নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে বাগিয়ে নিয়েছেন তারা। এভাবে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কবরই রচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়া যথার্থই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আসলেও তার মরহুম পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয় বাকশালের শাসনের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কারণ, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ঠিক এবারের মতো বিজয়ী হওয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সেবার প্রধানমন্ত্রীর পিতার নির্দেশ ও ধমকের জোরে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৭টি আসনেই জিতেছিল আওয়ামী লীগ। ওই সংসদেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতির ঘাড়ে বাকশালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত এসেও থেমে পড়েননি প্রধানমন্ত্রী। যৌথবাহিনীকে দিয়ে দমন-নির্যাতন এবং হত্যাকা- চালানোর ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী তার মরহুম পিতাকে অনুসরণ করে চলেছেন যার আমলে প্রায় ৪০ হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এসব তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতেই জনগণের উচিত ১৯ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইঙ্গিত, আশঙ্কা ও আহ্বানকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা এবং গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা। না হলে গণতন্ত্রতো হারিয়ে যাবেই, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও খুইয়ে বসতে হবে। আমরা মনে করি, গণআন্দোলনের মুখে বিতাড়িত না হতে চাইলে ক্ষমতাসীনদের উচিত সংবিধানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিধান যুক্ত করে নতুন করে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা, যে নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের দল ও প্রার্থীকে বেছে নিতে ও ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থাও সরকারকেই করতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন