মামলার জালে আটকে পড়েছে বিএনপি। এসব মোকাবেলা করতে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারছে না ১৯ দলীয় জোট। মামলার ক্ষেত্রে আগামীতে যেন সরকার দমনের আন্দোলন জোরদার না করতে পারে এ জন্য বিরোধীদল নির্মুলের এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা ঠুকে দেয়া হয়েছে। এসব মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারছে না বিএনপি। দলীয় কর্মকা-ের চেয়ে মামলা মোকাবেলায় আইনজীবীদের চেন্বারে সময় দিতে হচ্ছে বেশি। প্রতিদিন সকালে দলীয় কর্মকান্ডে নেতাদের ব্যস্ত থাকার কথা কিন্তু দলের সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই আদালতের বারান্দায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।এসব মামলায় নীতি নির্ধারকসহ অনেক নেতা ধারাবাহিকভাবে কারাভোগ করছেন। ফলে বার বার ব্যাহত হচ্ছে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ। সর্বশেষ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল কারাগারে যাওয়ায় স্থগিত হয়ে যায় মহানগরী নতুন কমিটি। জানাগেছে, ১৯ দলীয় নেতা কর্মীদর বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মামলা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। মামলার ক্ষেত্রে কেউ কেউ সেঞ্চুরী করেছেন। যুবদলের সভাপতি মুয়াজ্জাম হোসেন আলাল ও ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি বিএনপির নির্বাহী কমিটির বর্তমান সহ- ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নামে সর্বাধিক ১১০টা মামলা রয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন মামলায় নেতাদের আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দলীয়ভাবে গঠিত আইন সহায়তা কেন্দ্রের আইনজীবীরা ও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কবে কোন মামলার শুনানি নোট বুকে লিখতে লিখতে লেখকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এদিকে উচ্চ আদালতের আগাম জামিন পথ সংকুচিত হওয়ায় বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা কোন না কোন নেতাকে প্রতিদিন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার আন্দোলন দমনের নামে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এসব মামলার কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দলীয় লোকদের মামলা দেওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ফেলে রেখে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও বাকিগুলো গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা। একটি মামলায় বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৬ বছরের সাজা হয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি মামলা দুটির চার্জ গঠন বাতিল করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। একই সাথে মামলা দুটির কার্যক্রম স্থগিত করে ও বিচারিক আদালতের নথি তলবের আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এছাড়া খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি ও নাইকো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপি সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। মানি লন্ডারিং মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ চারটি মামলা বিচারাধীন। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা ও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের নামে একটি মামলা রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে এজহারভুক্ত মামলা রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে ৬টি মামলার চার্জসিট দেয়া হয়েছে। বাসে অগ্নিকা-, উস্কানি দেয়া, বাংলামোটরে পুলিশ হত্যা মামলা পরীবাগে পেট্রোল ছুড়ে মানুষ হত্যা, নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলা। এসব মামলায় প্রায় এক মাস জেল খেটে ৯ই এপ্রিল জেল থেকে বের হয়েছেন। এর আগে তিনি তিন বার গ্রেফতার হন। একবার এক রাত ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হলে দুবার কারাভোগ করেন। দলের অন্যতম নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হেসেন ম্যানি লন্ডারিং মামলায় কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ২৩টি। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪৬টি।স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামে রয়েছে ১০টি মামলা। সচিবালয়ে বোমা হামলার মামলায় বছর খানেক তিনি জেল খাটেন। জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার নামে ১৩টি মামলা রয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে মামলা রয়েছে ৮টি। দুই মাসের বেশী সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রুদ্ধ। নেতা-কর্মীদের কোন পদচারনা ছিল না সেখানে। বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের নামে ৪০টি মামলা রয়েছে। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের নামে আছে ৩৪টি মামলা। মানি ব্যাগ চুরি কলা থেকে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুব দলের সভাপতি মুযাজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা। যুব দলের সাধারন সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের নামেও রয়েছে শতাধিক মামলা। ৫৩টি মামলায় তিনি আগাম জামিন পাননি। তাই গ্রেফতার এড়িয়ে চলায় দলীয় কাজে সময় দিতে পারছেন না। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক মীর শরাফত আলী সফুর ও সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল বারী উভয়ের নামে ২২টি করে মামলা রয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের নামে ৪৭টি মামলাও সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের নামে রয়েছে ৯৫টি মামলা। এই দুই নেতা ৫ মাস ধরে কারাগারে আছেন। এছাড়া আরও মামলার শিকার হয়েছেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, হান্নান শাহ, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, সালাউদ্দীন আহমেদ, আব্দুস সালামসহ আরও অনেকে। এনারা সবাই কারাভোগ করেছেন ্।এদিকে সরকার একদলীয় নির্বাচন করতে যেয়ে দেশের অর্থনীতি শেষ করে ফেলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ব্যবস্থাপনায় চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি, হলমার্ক, বিছমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ফলে ব্যাংকিং খাতে মুলধন সঙ্কট, খেলাাপী ঋণ বৃদ্ধি, যুবক, ইউনিপেটু ও ডেসটিনির মালটিলেভেলের মার্কেটিং ব্যবসার নামে প্রতারনার ফাঁদ এবং শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ইত্যাদির কারণে আমদানির হার কমেছে। ব্যাংকখাতের শেয়ারের দামের বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর মূল কারণ, ব্যাংকের দুর্নীতি ও ব্যবসায়িক মন্দা ঋণ জালিয়াতি। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বেসরকারি সব ব্যাংকের ডিভিডেন্ড গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১২অর্থ বছরে কম ছিল। চলতি অর্থ বছরে আরো কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু ব্যাংক লভ্যাংশের মুনাফা শেয়ার হোল্ডারদের দিতে পারেনি। শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতে এমন করুণ অবস্থা স্বাধীনতার পর আর কখনও দেখা যায়নি। মুনাফা কমেছে ২১ ব্যাংকের। বিগত বছরে জানুয়ারি থেকে ডিসেন্বর পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে ২১টির নীট মুনাফা কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। লোকশানে রয়েছে তিনটি ব্যাংক।২০১৩ সালে প্রথম তিনমাসে লোকশান দাঁড়িয়ে ছিল ১৯৯কোটি ৭৭লাখ ৯০ হাজার টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক বিগত বছরে ছয় মাসে লোকসান হয়েছে ১৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিগত বছরে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির লোকশান হয়েছে ১৭২ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। মিউচিয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ৯১ শতাংশ। যমুনা ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ৮৭ শতাংশ। বিগত অর্থ বছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ মুল বাজেটে নেয়া লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী। তথ্যাভিজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাই রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রধান কারণন। ভ্রান্ত ও একদেশ তথা ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়েছে। সে কারণে ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কোন কোন দেশ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠিয়েছে। এখানে সৌদি আরবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তথা মোট রেমিট্যান্সের ৩৫ শতাংশই এসেছে সৌদি আরব থেকে। চাকরীর বাজারে বাংলাদেশীদের জন্য দরজা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিদেশে চাকরিরতদের সংখ্যা ২২ লাখ থেকে কমে এসেছে ১৫/১৬ লাখে। আরও কয়েক লাখ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাবার উদ্যোগ চলছে। অর্থাৎ বিদেশে বাংলাদেশের জন্য চাকরির বাজার অনেক সংকুচিত হয়ে আসছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের জন্য চোখে শুধু সরষের ফুল ছাড়া আর কিছু দেখার থাকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষ মাসে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। প্রথম ১১ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ছিল ১২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ৩০ জুন এসে সেই ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এসব কারণে ব্যাংকগুলো মূলধন সঙ্কটে পড়েছে বিধায় লভ্যাংশে আঘাত হেনেছে। এসব ঋণ নিয়ে সরকার কী উন্নয়ন করেছে তার ফিরিস্তি পাওয়া যায়নি। অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, প্রথম ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট ৬৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের এই হার গত তিনটি অর্থবছরের তুলনায় কম। দেশে আইনের শাসন বলতে যা বুঝায় সেটা এখন নেই। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রে মোটা অংকের চাঁদাবাজি বিনিয়োগ কমার আরেকটি বড় কারণ। রাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণীত, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ সঙ্কুচিত করেছে। এর ফলে সার্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পরিবর্তে কর্মসঙ্কোচনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে স্বাভাবিক মুদ্রা প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করতে না পারলে নতুন কর্মসংস্থান ও জাতীয় প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে না।। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি হারানোর বেদনায় তাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে পুঁজি হারানোর বেদনায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে অনেকের। এমএলএম ব্যবসায়ের প্রতারকেরা কয়েক হাজার কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে আত্মসাৎ করলে ক্ষতিপূরণ দেয়নি এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থাও করেনি সরকার। সরকারের নাকের ডগার ওপর দিয়ে এত মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। সেটা সরকার দেখেও না দেখার ভান করেছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) মূসক খাতে ৪৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা এবং আয়কর ৪৮ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকাসহ মোট ৯৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে টালমাটাল হয়ে উঠছে তাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। রাজস্ব আদায় যথানিয়মে না হলে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। ফলে ব্যাংকের ওপর চাপ বাড়বে ঋণ গ্রহণের কারণে। নতুন অর্থবছরে তাই নানা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশে পাঁচ কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বছরে ২০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের পথে পা বাড়াচ্ছে। সে হিসাবে তেমন কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। মানুষ কর্মহীন হলে অনৈতিক কাজ করে এবং অবৈধ পথে আয়ের প্রচেষ্টা চালায় টেন্ডারবাজি, কোটি টাকার ফুটপাত বাণিজ্য, দখলবাণিজ্য এসব বাড়তে থাকে। ফলে জনজীবনে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। ব্যাংক, বীমা, চামড়া, চিনি, পাট, সুতা ও কাগজসহ সেক্টর করপোরেশনগুলো দিন দিন রুগ্ন হয়ে পড়ছে। পাটকলগুলোও বন্ধ বা রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে সমতা নেই বহু আগে থেকেই। বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ৪২ বছর পর আমাদের মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ৯২০ ইউএস ডলার। স্বাধীনতার আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে মাথাপিছু গড় আয় যাদের কম ছিল, অর্থাৎ ১০০ থেকে ২০০ ডলার ছিল, তাদের গড় আয় কারো কারো এখন তিন থেকে পাঁচ হাজার ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণায় ব্যয় না থাকার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে এখনো পেছনে পড়ে আছে। বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে রফতানি আয় পড়ে রয়েছে রেমিট্যান্স। তবে প্রকৃত পক্ষে বলা যায় রেমিট্যান্সই হলো প্রধান উৎস। রফতানি আয়ের বিপরীতে আমদানি করতে হয়। কিন্তু রেমিট্যান্স হলো নিট বৈদেশিক মুদ্রা, যার বিপরীতে কোন ব্যয় নেই। এটা অব্যাহতভাবে কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ড. জায়েদ বখত বলেন, আমাদের রেমিট্যান্সের প্রধান বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে শ্রমিক ফিরে এসেছে,কিন্তু সেভাবে যায়নি। আমরা মালয়েশিয়ায় কাংক্ষিতহারে শ্রমিক পাঠাতে পারেনি। এর বিপরীতে নতুন কোন শ্রমিক বাজার সৃষ্টি হয়নি। ফলে জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার এ প্রবনতা সরা সরি প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের ওপর। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রবনতা সামনে অব্যাহত থাকবে বলে বিশেষ্জ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করলে দেখা যায়। অর্থ বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাই ছাড়া অন্য সব মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে। ওই মাসে রেমিট্যান্সের প্রবিদ্ধ হয়েছে ৩ শতাংশ। কিন্তু এর পর থেকে অব্যাহতভাবে কমতে থাকে। গত আগষ্টে দেখা যায় রেমিট্যান্স এসেছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১৫ শতাংশ কম। তেমনি সেপ্টেন্বরে ১৩ শতাংশ, অক্টোবরে সাড়ে ১৫ শতাংশ কম আসে। নবেন্বর ডিসেন্বর, জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকে। গত বছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের প্রবাস আয় এসেছিল ৮৭৩ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি বছর একই সময়ে এসেছে ৮০২ কোটি ডলার। হিসেবে কম এসেছে ৭১ কোটি ডলার। আর শতকরা হিসেবে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক সংকটে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। আর বিনিয়োগ স্তবিরতার কারণে শিল্পের মুলধনী যন্ত্রপাতিসহ সামগ্রিক আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা না থাকায় বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ৪ফেব্রুয়ারী দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয় এক হাজার ৮০৭ কোটি মার্কিন ডলার। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি আমাদের প্রধান অর্থনৈতিক খাত ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের আয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও কৃষকদের কোন আয় বাড়েনি। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, সুবিধা ভোগীরা রাজনীতিবিদরা নিজেদের দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে তারা অসহায়ের মত কপাল চাপড়ায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছে। শহরের লোকেরা সহনীয় দামে ফুল কফি,বাঁধা কফিসহ সবজি কিনতে পারছেনা। এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শীতকালীন সবজির দরপতনের কারণে কৃষকের আনুমানিক ৪শত কোটির বেশি টাকা লোকশান দিতে হয়েছে। বাম্পার ফলনে উত্তরাঞ্চলের আলু চাষীদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। ৩ মাসে পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ শিল্পে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। ৩০ শতাংশ খামার ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। যারা টিকে আছে তারাও পথে বসার পথে। বিগত ৩ মাসে ব্রয়লার বাচ্চায় প্রায় ১৬৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ডিম উৎপাদন হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এতে ১৩ সপ্তাহে লোকশান হয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ ডিম গড়ে ৫টাকা দরে বিক্রি করায় প্রায় ৩৬৪ কোটি টাকা লোকশান হয়েছে। হিমায়িত রপ্তানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। রপ্তানিমুখে বাজার হারানোর কারণে মজুদ পণ্যে ৭৭কোটি টাকার ইতিমধ্যে ক্ষতি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকটে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকরন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি আদেশ বাতিল হচ্ছে অন্যদিকে নতুন রপ্তানি আদেশ আসছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ রয়েছে এক হাজার ৭শ কোটি টাকার ঋণ। এর ওপর সুদ বেড়েছে ৪০ কোটি টাকা। এ সময় আয় না থাকায় ও বিভিন্ন খরচ দিয়ে হিমায়িত রপ্তানিখাতে ১৮০ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে র্গামেন্টসহ অন্য পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে রফতানি অর্ডার শুধু কমে যাচ্ছে না। পুরনো অর্ডারও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। রানা প্লাজার বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তৈরি পোশাকের এক চতুর্থাংশ ক্রয়াদেশ ভারতীয় রফতানিকারকদের হাতে চলে যাবে বলে বিদেশী ক্রেতারা বলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি বছরেই তৈরি পোশাক রফতানির সিংহভাগ থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে। যার ফলে এখাত থেকে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেই বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে না বরং প্রায় চল্লিশ লাখ নারী শ্রমিকসহ বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়ে পড়বেন। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের ভয়ংঙ্কর মিশনকে সামনে রেখেই দিল্লীর নীতি নির্ধারকরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য ৫ই জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনের আগে এবং পরে ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখে পক্ষান্তরে শেখ হাসিনাকে গোয়ার্তুমিতে প্রলুব্ধ করছে। ভারতের নীতি নির্ধারকরা মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোকে ৫ই জানুয়ারির তথাকথিত এবং বিতর্কিত নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের পক্ষে টানার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলোকে ভারতের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু দিল্লী আওয়ামী লীগ পশ্চিমা দেশগুলোর মতামতকে তোয়াক্কা না করে প্রধান বিরোধী দল বি এন পির সঙ্গে অনমনীয় মনোভাব দেখাবার পরামর্শ দিয়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগ তথাকথিত বিতর্কিত নির্বাচনের পর এক দলীয় শাসন কায়েমের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের মানুষের সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আর এমন পরিস্থিতিতে ষোল কলা সুযোগ নিতে শুরু করেছে ভারতের তৈরী পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ ক্রমেই হারাচ্ছে রফতানি বাজার। বিশ্লেষকদের মতে,ভারতের মুল মিশন হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রলন্বিত করে তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করা। আর এ অশুভ উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি এক পেশে সমর্থন থেকে সরে দাঁড়াবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের ৫ই জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করানোর মতো হীন উদ্দেশ্যে ও ভারত বিভিন্ন লবিস্টের মাধ্যমে গোপনে কাজ করছে।ভারতের এই অপচেষ্টা সফল হলে বাংলাদেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এইচ এম আব্দুর রহিম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন