শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অপকর্ম


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনার জন্য দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত ও মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সরবরাহের অভিযোগে লালমনিরহাটে ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উল্লেখ্য যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় লালমনিরহাটের ২২টি কেন্দ্রে গত শুক্রবার বেলা আড়াইটায় পরীক্ষা শুরু হয়। এতে ১৩ হাজার ৫৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষা শুরুর আগের রাত থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান  নেন পরীক্ষার্থীরা। আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে স্থানীয় দোয়েল গেস্ট হাউজে অবস্থান নেন অনেক পরীক্ষার্থী। তারা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত এমন অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে একটি দল ওই গেস্ট হাউজে বেলা ২টায় অভিযান চালায়। সেখানে অবস্থানরতদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনার সাথে জড়িত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদফতর সম্পাদক কাদের এলাহী লাবলু, পৌর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মিল্লাত, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও পানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিমন প্রামাণিক, পাটগ্রাম পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদসহ ২৩ জন। এরা সবাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এই খবরটি আমাদের সমাজ ও শিক্ষাঙ্গনের জন্য খুবই দুঃখজনক। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি, তবে এবার একই সাথে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সরবরাহের বিষয়ও লক্ষ্য করা গেল। এই ঘটনায় এই বিষয়টিই প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সমাজে অপরাধপ্রবণতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আমরা জানি, চাকরি মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকরির খুবই প্রয়োজন। চাকরির জন্য মানুষ চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার বদলে যদি চাকরি পাওয়ার জন্য অবৈধ পথ অবলম্বন করা হয় এবং অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের মতো অনৈতিক কর্মতৎপরতা চালানো হয়, তাহলে আমাদের পেশার মান ও পরিবেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। আর শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যদি এমন অনৈতিক কর্মকা- জড়িয়ে যায়, তাহলে এমন শিক্ষা পরিবেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কী অর্জন করবে? আমরা জানি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং পেশাগত মানোন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় লক্ষ্য করা গেল, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের মতো কর্মকা-ে যারা জড়িত, তারা সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। সরকারি ঘরানার লোকজনই যদি এমন অনৈতিক কর্মকা-ে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে যায় তাহলে সমাজকে পথের দিশা দেখাবে কে?
জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা আমরা কম শুনিনি। সরকারের মন্ত্রিবর্গ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা এ বিষয়ে কথা একটু বেশিই বলেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তারা কতটা আন্তরিক? বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের যে পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ কতটা সম্ভব হবে? আর কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা প্রদানের জন্য যদি নৈতিক মেরুদ-হীন ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে আমাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তাই লালমনিরহাটে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে সঙ্গত শাস্তি প্রদান প্রয়োজন। প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখা ভাল যে, শিক্ষাঙ্গনে উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি ঘরানার লোকজনের দায়িত্ব বেশি। কিন্তু তারা সে দায়িত্বের কথা কতটা উপলব্ধি করেন, সে প্রশ্ন আজ জেগেছে জনমনে। সরকারি দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দাপট ও হস্তক্ষেপে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে তাদের বোধোদয় প্রয়োজন। নয়তো দেশের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার দায়ে তাদের একদিন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads