৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে খুবই কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান। গত বুধবার বাংলাদেশ সফরশেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিরোধী দল অংশ না নেয়ায় ‘অস্বাভাবিক’ হলেও ওই নির্বাচন ‘বৈধ’। সে কারণে বর্তমান সরকারও ‘বৈধ’। এই সরকার পাঁচ বছর টিকে থাকবে কি থাকবে না সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তার দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান সংসদের বিরোধী দল নিয়েও কথা বলেছেন। তার মতে সরকারের ভেতরে থেকে বিরোধী দল করাটাও গণতন্ত্রের জন্য ‘অস্বাভাবিক’। উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম ও হস্তক্ষেপের খবরেও ব্রিটেন উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন এই বিটিশ মন্ত্রী। তিনি আরো বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে ‘যথার্থ গণতন্ত্র’ দেখতে আগ্রহী। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর ব্রিটেন চেয়েছে, বাংলাদেশে গণমুখী ও সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফিরে আসুক। নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। জবাবদিহিতাসহ গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থায় ফিরে আসার জন্য তিনি সরকারি ও বিরোধী দলসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, গণতন্ত্র এমন হতে হবে যেখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করবেন এবং জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পসহ আরো কিছু বিষয়ে বক্তব্য রাখলেও ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, একদিকে তিনি বলেছেন, বিরোধী দল অংশ না নেয়ায় ওই নির্বাচন ‘অস্বাভাবিক’, অন্যদিকে তিনিই আবার সে ‘অস্বাভাবিক’ নির্বাচন ও তার মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত সরকারকে ‘বৈধ’ বলে রায় দিয়েছেন। একে একবাক্যে স্ববিরোধিতা বলাটাও সম্ভবত যথেষ্ট নয়। বাস্তবে কৌতূহলোদ্দীপক তো বটেই, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর রায় তথা মন্তব্যটিকে তাৎপর্যপূর্ণও বলতে হবে। কারণ, নির্বাচনের অনেক আগে থেকে তার দেশ ব্রিটেনসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও আওয়ামী লীগ সরকারের একতরফা নির্বাচন চেষ্টার বিরোধিতা করে এসেছে। নির্বাচনের পরপর শুধু নয়, অতি সম্প্রতিও এসব দেশের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করে নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে গত ২৪ ও ২৫ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আগত ইইউ’র সংসদীয় প্রতিনিধি দলের বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। এই সফরশেষে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারায় এবং সংকট ক্রমাগত আরো ঘনীভূত হতে থাকায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী অচলাবস্থার কারণে শুধু নয়, উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং নির্বাচনের আগে-পরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায়ও তারা উদ্বেগই প্রকাশ করেছেন। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক পছন্দের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করার জন্যও তারা আহ্বান জানিয়েছেন। ইইউ সংসদীয় দল এই বলে আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং উদার ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইইউ সংসদীয় প্রতিনিধি দল কিন্তু পরোক্ষভাবেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং সে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত বর্তমান সরকারকে ‘বৈধ’ বলে স্বীকৃতি দেননিÑ যেমনটি দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের অবশ্য উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ‘অস্বাভাবিক’ কথাটার মধ্য দিয়ে একই প্রতিমন্ত্রী আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে সংশয় ও আপত্তি রয়েছে। অন্য একটি মন্তব্যের মাধ্যমেও ব্রিটেনের প্রকৃত মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। প্রতিমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করবেন। এর ব্যাখ্যায় দেখা যাবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও বর্তমান সরকারকে ‘বৈধ’ বলে সার্টিফিকেট দিলেও কথার মারপ্যাঁচে ব্রিটিশ মন্ত্রী কিন্তু একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ওই নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে এবং তারা এমন নির্বাচন দেখতে চান, যা হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই শুধু অংশ নেবে না, জনগণও বাধাহীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবে। আমরা মনে করি, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর এই কথাটুকুর তাৎপর্য এবং এর মাধ্যমে প্রকাশিত ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত মনোভাব অনুধাবন করা দরকার। ক্ষমতাসীনদের উচিত প্রথমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল করা এবং তারপর নতুন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এটা যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া সম্ভব নয়Ñ সে কথাটাও ক্ষমতাসীনদের অনুধাবন করতে হবে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পসহ আরো কিছু বিষয়ে বক্তব্য রাখলেও ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, একদিকে তিনি বলেছেন, বিরোধী দল অংশ না নেয়ায় ওই নির্বাচন ‘অস্বাভাবিক’, অন্যদিকে তিনিই আবার সে ‘অস্বাভাবিক’ নির্বাচন ও তার মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত সরকারকে ‘বৈধ’ বলে রায় দিয়েছেন। একে একবাক্যে স্ববিরোধিতা বলাটাও সম্ভবত যথেষ্ট নয়। বাস্তবে কৌতূহলোদ্দীপক তো বটেই, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর রায় তথা মন্তব্যটিকে তাৎপর্যপূর্ণও বলতে হবে। কারণ, নির্বাচনের অনেক আগে থেকে তার দেশ ব্রিটেনসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও আওয়ামী লীগ সরকারের একতরফা নির্বাচন চেষ্টার বিরোধিতা করে এসেছে। নির্বাচনের পরপর শুধু নয়, অতি সম্প্রতিও এসব দেশের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করে নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে গত ২৪ ও ২৫ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আগত ইইউ’র সংসদীয় প্রতিনিধি দলের বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। এই সফরশেষে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারায় এবং সংকট ক্রমাগত আরো ঘনীভূত হতে থাকায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী অচলাবস্থার কারণে শুধু নয়, উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং নির্বাচনের আগে-পরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায়ও তারা উদ্বেগই প্রকাশ করেছেন। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক পছন্দের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করার জন্যও তারা আহ্বান জানিয়েছেন। ইইউ সংসদীয় দল এই বলে আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং উদার ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইইউ সংসদীয় প্রতিনিধি দল কিন্তু পরোক্ষভাবেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং সে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত বর্তমান সরকারকে ‘বৈধ’ বলে স্বীকৃতি দেননিÑ যেমনটি দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের অবশ্য উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ‘অস্বাভাবিক’ কথাটার মধ্য দিয়ে একই প্রতিমন্ত্রী আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে সংশয় ও আপত্তি রয়েছে। অন্য একটি মন্তব্যের মাধ্যমেও ব্রিটেনের প্রকৃত মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। প্রতিমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করবেন। এর ব্যাখ্যায় দেখা যাবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও বর্তমান সরকারকে ‘বৈধ’ বলে সার্টিফিকেট দিলেও কথার মারপ্যাঁচে ব্রিটিশ মন্ত্রী কিন্তু একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ওই নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে এবং তারা এমন নির্বাচন দেখতে চান, যা হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই শুধু অংশ নেবে না, জনগণও বাধাহীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবে। আমরা মনে করি, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর এই কথাটুকুর তাৎপর্য এবং এর মাধ্যমে প্রকাশিত ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত মনোভাব অনুধাবন করা দরকার। ক্ষমতাসীনদের উচিত প্রথমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল করা এবং তারপর নতুন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এটা যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া সম্ভব নয়Ñ সে কথাটাও ক্ষমতাসীনদের অনুধাবন করতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন