গুজরাটের কসাই খ্যাত নরেন্দ্র
মোদি এখন ‘নমো’। নমো কারো কাছে তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত শব্দ। কারো
কাছে আদুরে নাম, ভালো লাগা ও ভালোবাসার প্রতীক। নমোকে অনেকেই পছন্দ করেন না। আবার
কেউ কেউ বেশি পছন্দ করেন। এই পছন্দ করা-না-করার কারণ নাকি তিনি হিন্দুত্ববাদের কথা
বলেন। এই একটি মাত্র কারণে যারা নমোকে অপছন্দ করেন তাদের সাথে আমরা সহমত পোষণ করি না।
একজন হিন্দু যদি আপন বৃত্তে হিন্দুত্ববাদ নিয়ে মাতামাতি করে তাতে আমাদের রগ চটার কোনো
কারণ নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বিবেচনায় যে ধর্মেরই হোক ধার্মিক মাত্রই মানবিক, নীতিজ্ঞান সমৃদ্ধ এবং অন্য ধর্মের প্রতিও সমান আচরণে বিশ্বাসী মানুষ। কোনো
যুগেই ধার্মিক মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য উপকারী ছাড়া ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়নি। ধর্মের
নামে বাড়াবাড়ি, বক ধার্মিকতা ও ধর্মান্ধতা ভিন্ন জিনিস। যেমন ধর্ম ব্যবসায় ও ধর্ম
নিয়ে রাজনীতি কেউ পছন্দ করেন না। এটা পছন্দ করার কোনো কারণও নেই। একজন ধার্মিক মানুষের
প্রতিকৃতি চিন্তা করে নমোকে বিবেচনায় নিলে আমরা একজন নীতিনৈতিকতা সম্পন্ন মানুষের কথা
ভাবতে পারি। বাস্তবে নমো কি ধার্মিক না ধর্মান্ধ সেটা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। সেই প্রমাণের
পরীক্ষায় নরেন্দ্র বাবুকেই উত্তীর্ণ হতে হবে। অতীত তার অনুকূলে নেই। বর্তমান মিশ্র।
ভবিষ্যতের বিষয়টি সবার কাছে অজানা। মোদির হার-জিত নিয়ে কেউ বেশি ভাবছেন, কেউ মোটেও ভাবার পক্ষপাতী নন। আবার অনেকেই বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের
লাভ-ক্ষতি মিলিয়ে যোগ-বিয়োগ করে দেখছেন। কেউ ভাবছেন মোদি আশীর্বাদ হবেন, কারো ভাবনায় তিনি আসবেন অভিশাপ হয়ে। তা ছাড়া শত্রুর শত্রু বন্ধুÑ এ বিবেচনায়ও কেউ কেউ মনে করেন, অপশাসন ও দুঃশাসনের কারণে কংগ্রেস
আর ক্ষমতায় আসা উচিত নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের মুক্তবুদ্ধির লেখক-বুদ্ধিজীবীদের
কেউ কেউ মনে করেন, কংগ্রেস সরকারের বাংলাদেশ নীতি অভিশাপ হওয়ার মতো। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী
ও ধার্মিক মানুষদের অভিশাপ রয়েছে কংগ্রেস সরকারের দ্বৈত ও বৈষম্যমূলক নীতির প্রতি।
বিষয়টি মোটেও ভারত বিরোধিতা নয়।
নরেন্দ্র
মোদি, আদভানি, বাজপেয়িরা অখ্যাত কোনো মানুষ নন। যতটা উত্তরাধিকার
রাজনীতির বর্ণাঢ্য অতীত নিয়ে রাহুল গান্ধী রাজনীতি করছেন, তারচেয়ে সাধারণ দোকানির ঘরে জন্ম নেয়া হাজার গুণ অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ নমো ভারতীয়
রাজনীতির দিকপাল হয়ে উঠেছেন। রামমন্দির গড়বার জেদ ধার্মিক মনের যুক্তিহীন ভাষা ও ভাব
হওয়ার কারণে এবং বাবরি মসজিদ ভেঙে পাথর কুচি করে দেয়ার জন্য তার দায় তিনি হয়তো কোনো
দিন এড়াতে পারবেন না। এখানে নমো গোঁড়া ও ধর্মান্ধ। গুজরাট দাঙ্গায় মুসলিম নিধনযজ্ঞে
ঘৃতাহুতি দেয়ার অভিযোগ কখনো তাকে দায় মুক্ত করবে না। ভারতীয় মুসলিমদের অস্তিত্ব অস্বীকার
করে পাকিস্তান কিংবা আরব চলে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক নছিহত তাকে সবসময় ধাওয়া করে বেড়াবে।
তার দলীয় নেতা বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি দাবি করলে কিংবা হিন্দু এলাকা থেকে মুসলিম
তাড়ানোর খবরে আমরা বিস্মিত হই না, কারণ স্বাধীন বঙ্গভূমিওয়ালাদের উৎপাত ও ভারত কর্তৃক
আশকারা দেয়ার বিষয়টি আমাদের জানা। আমাদের পার্বত্য ইস্যুতে শান্তি বাহিনীরা কাদের অর্থ
ও অস্ত্র দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাও সবার নখদর্পণে। বাংলাদেশকে নিয়ে এই খেলা অনেক পুরনো। সেই খেলা নেহরু, প্যাটেল, গান্ধীসহ অনেক নেতার শুরু করে যাওয়া খেলারই অংশ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের
ইতিহাস ঢাকা ভুলে যায়নি।
আমাদের
চেয়ে মাত্র চার মাসের বড় নমোর জন্ম ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সংঘ পরিবারেই তার রাজনৈতিক
চৈতন্যের হাতেখড়ি। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে সংঘ পরিবার কখনো একেবারে অপাঙ্ক্তেয় ছিল
না। এখনো নয়। কংগ্রেসের রাজনীতিতে হিন্দি হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ কখনো অনুপস্থিত ছিল
না। এখনো নেই। কংগ্রেস যা লুকিয়ে বলে ও করে, বিজেপি সেটা প্রকাশ্যে বলে এবং
বাস্তবায়ন করতে চায়। সবার স্মরণে থাকার কথা, আমরা যখন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাসে
বাঁধভাঙা জোয়ারে ভাসছি, তখন ইন্দিরা গান্ধী যিনি কি না অর্ধেকটা অগ্নিপূজক, সিকি পরিমাণ পৌত্তলিক, অবশিষ্ট সিকি ভাগ প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ। তিনি
পাকিস্তান ভাঙার উচ্ছ্বাসে হাজার বছরের বদলা নেয়ার শ্লাঘায় বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তা ছাড়া
কংগ্রেস শাসনে সীমান্ত হত্যা কমেনি, বেড়েছে; পানির ন্যায্য হিস্যা মেলেনি উপরন্তু বাংলাদেশ প্রতারিত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়
হয়নি, কংগ্রেস দৃঢ়তা দেখায়নি বলে। সীমান্ত বিরোধ মেটেনি, ঢাকার ওপর আধিপত্য বেড়েছে, ঢাকা থেকে আইএসআইয়ের অভিযোগ তুলে
ভারতীয় গোয়েন্দারা লোক তুলে নিয়ে গেছে। এভাবে আমাদের সরকার, জনগণ ও রাষ্ট্রের বস্ত্র হরণের পর সার্বভৌমত্ব কি প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। তার ওপর
অসম বাণিজ্য অব্যাহত আছে। কংগ্রেস সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণে কোনো নজির রাখেনি। সার্ক
কার্যকর হতে দেয় না ভারত।
বাংলাদেশীদের
কাছে তাই কংগ্রেস কেন নমস্য হবে, আর বিজেপি কেন ঘৃণিত হবে! গুজরাট ভারতের অর্থনৈতিক
সাম্রাজ্য বিস্তারের স্নায়ুকেন্দ্র। এই গুজরাটেরই সন্তান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী। আরো অনেক কৃতী সন্তান গুজরাটের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন।
এই গুজরাট উপমহাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনীতিতে কখনো কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় ছিল না, এখনো নেই।
গত শতকের
আশির দশকে (১৯৮০) জন্ম নেয়া বিজেপিকে মনে করা হয় সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক শাখা। আরএসএসকে
প্রেরণার উৎস ধরেই বিজেপির জন্ম। এসব ইতিহাসের সাথে কংগ্রেসের সম্পর্কও প্রত্যক্ষ, তাই ভারতীয় জাতীয়তাবাদভিত্তিক রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বিজেপির অবস্থান কখনো যমজ
সন্তানের মতো, কখনো ভাইয়ের শত্রু ভাইয়ের মতো। যারা ভাবছেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে
ভারত পাল্টে যাবে, তারা প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ব্যাকরণ মাথায় না নিয়েই বলছেন। আর
ভোট ব্যাংকের রাজনীতিতেও ধর্ম ব্যবসায় কংগ্রেস বিজেপির চেয়ে অনেক এগিয়ে। অন্তত ধর্ম
নিয়ে রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কাছে বিজেপি এখনো দুগ্ধপোষ্য শিশু মাত্র। বিজেপি
ইন্ডিয়ান ডকট্রিনের সাথে হিন্দুত্ববাদের নামে একধরনের ধর্মান্ধতার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে।
কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সাথে ইন্ডিয়ান ডকট্রিনের মেলবন্ধন করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের
একটা আবহ সৃষ্টি করে রাজনীতি ও ক্ষমতা চর্চা করে আসছে। ভারত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রজনন
কেন্দ্র। মুসলমান, শিখ, নমঃশূদ্র বা হরিজনেরা বঞ্চিত। কাশ্মির প্রশ্নে কংগ্রেসের
হাত রক্তে রঞ্জিত। আছিয়া আন্দ্রাবি, মকবুল বাট ও আমান উল্লাহদের রক্ত
কংগ্রেসের হাতে লেপ্টে আছে। কাশ্মির, সাতবোন, শিখ সম্প্রদায়, মাওবাদী চারু বাবু কার রক্তে হোলি খেলছে না কংগ্রেস শাসকেরা। কোনো কোনো ইস্যুতে কংগ্রেস ও বিজেপির অবস্থান একই সমতলে।
আমরা দেশ
বিভাগোত্তর প্রজন্ম। ভারতের রাজনীতি সম্পর্কে উৎসাহ থাকুক বা না থাকুক ভারতীয় রাজনীতি
ভালো-মন্দ আমাদের জানা। আমরা অভিন্ন অনেক ইতিহাসের উত্তরাধিকার। আবার দ্বিজাতিতত্ত্বের
বাস্তবতাও ভুলে থাকা অসম্ভব। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান ও ভারতের রাজনৈতিক মেরুকরণের
মধ্য দিয়ে আমরা বড় হয়েছি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ আমাদের স্মৃতিতে এখনো তাজা। আমাদের
মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় জীবনকে নতুন আঙ্গিকে ভাবতে শিখিয়েছে। ইতিহাস ভুলে যেতে বলেনি। আমাদেরকে
স্বাধীনতার পথে সাহায্য করেও অনেক নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে ভারতের শাসকেরা।
তারপরও ভারতের রাজনীতির নিষ্ঠাবান পাঠক হিসেবে আমরা কিছু ব্যাপারে ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।
অনেক ব্যাপারে সংুব্ধ। এর নাম ভারত বিরোধিতা বা অভিমান নয়। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও
সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদ মাত্র। কংগ্রেস সরকার স্বাধীনতার ঊষালগ্নে আমাদের জনগণের
সাথে প্রতারণা করেছে। ৯৩ হাজার পাক সেনাকে জামাই আদরে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে।
চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছে। মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের সহযোগীদের বিচারের
নামে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তুলে জাতিকে বিভক্ত করে দিতে কংগ্রেস সরকার প্রধান
পৃষ্ঠপোষক সেজেছে। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আর কাকে বলে।
যারা ভাবেন
বিজেপি জিতলে কিছু একটা হবে, কংগ্রেস জিতলে ভিন্ন কিছু হবে। বাস্তবে দিল্লির
রাজনীতি, সাউথ ব্লকের কূটনীতি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব
বলয় বৃদ্ধির নীতিতে তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিএনপি, আওয়ামী লীগ, ডান-বাম ও ইসলামপন্থীরা দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে
রাজনীতি করলে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে গুণগত পরিবর্তন কম হওয়ারই কথা ছিল। ভারতের বিদেশ
নীতিতে ভারসাম্যহীনতা আছে শুধু প্রতিবেশীদের বেলায়। অর্থনৈতিক কূটনীতি ও বিশ্বজুড়ে
প্রভাব বলয় বাড়ানোর জন্য বিজেপি ও কংগ্রেস একই সমতলে থাকবে। সেখানে গুণগত তফাত কম।
আমাদের বিদেশীনীতি ভারসাম্যহীন করেছে আওয়ামী লীগ। ভারতীয় জনগণের সাথে নয়, কংগ্রেস পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগ পরিবারের দেশ ভাবনার ঊর্ধ্বে যে সখ্য, ভারত সেটাকে অপব্যবহার করেছে। ভারত সেই সম্পর্ককে রাজনীতির কুটিল ও জটিল পঙ্কে
রেখেই ব্যবহার করেছে। এ কারণেই একটি জাতীয়তাবাদী দল হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ ভারতীয় অন্যায্য
আবদার ও বাড়াবাড়িকে হজম করে নিয়েছে। অসম চুক্তি করেছে। ক্ষমতার স্বার্থে এতসব অপকর্ম
জনগণের ওপর ভীষণ রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে নেপালি কংগ্রেসের
মতো ভারতীয় দালালির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ। আর ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের ক্ষোভ বিদ্বেষে রূপ নিয়েছে।
সিপিবি-বাসদের মতো বিটিম ধরনের দলকে জনগণের সিম্প্যাথি পেতে ৪২ বছরের শোষণ-শাসন ও আগ্রাসনের
অভিযোগ না তুলে উপায় থাকছে না। বাংলাদেশের জনগণ বুঝে নিয়েছে। ভারত নিজ দেশে গণতন্ত্র
চায়। বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন দেয় স্বৈরতন্ত্র। কংগ্রেস নিজ দেশের জন্য অবারিত বিদেশনীতি
অনুসরণ করে, বাংলাদেশকে প্রেসক্রিপশন দেয় এক ঘরে থাকার। নিজেরা মুক্তবাজার
অর্থনীতি চর্চা করতে সচেষ্ট, আমাদের জন্য আরোপ করে ভারত নির্ভরতার একচেটিয়া আধিপত্য।
ভারত নিজ দেশের সংবিধান চর্চা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা, নির্বাচন কমিশনের স্বাতন্ত্র্য ও প্রতিষ্ঠানিক মর্যাদা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আর বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসন-শোষণে তারা নৈরাজ্যের উসকানি দেয়।
বিজেপি
ধার্মিক না ধর্মান্ধ সেটি ভারতের জনগণ দেখবে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো ফোবিয়া নেই; বরং সব ধর্মের ধার্মিক মানুষের প্রতি মমত্ববোধ রয়েছে। ধর্মপন্থী দল হিসেবে
বিজেপি ক্ষমতায় বসলে ভারত ও বাংলাদেশের ধর্মবিদ্বেষী অশুদ্ধ ও অচ্যুত বাম রাজনীতিবিদদের
গালে কষে একটা ধাপ্পড় পড়বে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর যাদের যত সব ঘৃণা জমাট বেঁধেছে, তারা বমি করে পেট পরিষ্কার করার সুযোগ পাবে। তা ছাড়া কংগ্রেস-বিজেপির তারতম্য
করার এখতিয়ারও ভারতীয় জনগণের। আমরা নিরাপদ ও বন্ধুভাবাপন্ন স্থিতিশীল প্রতিবেশী চাই।
আমাদের সব ধরনের বিশ্বাস আমাদের নিজস্ব। সেটি পাল্টানো-না-পাল্টানোর এখতিয়ারও আমাদের
জনগণের। মানুষ বিশ্বাস পাল্টাতে পারে। বন্ধুত্বের বিষয়টিও আপেক্ষিক। কিন্তু ইচ্ছা করলেই
কোনো দেশ প্রতিবেশী পাল্টাতে পারে না। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। বড় দেশ। অনেক
বড় অর্থনীতির দেশ। উদীয়মান পরাশক্তি। গণতন্ত্রের মাত্রায়ও ভারত বৃহত্তম। এসব কিছু আমাদের
জনগণ জানে। তাই বলে ষোলো কোটি মানুষ আত্মসম্মানবোধ, স্বকীয়তা ও সার্বভৌম সত্তাকে
বিসর্জন দিয়ে শুধুই সমীহ প্রদর্শন করবেÑ তা বোধ করি এই জাতি ও উম্মাহর
রক্তে ও ধাতে নেই। তা ছাড়া এর সাথে ভারত বিরোধিতার সূক্ষ্ম কিংবা প্রকাশ্য সম্পর্ক
থাকার কথা নয়। ভারত থেকে মুসলমান তাড়াবার দুঃসাহস দেখালে ভারত ছোট হয়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ
দুনিয়াজুড়ে ভারতকে বাণিজ্য ও কূটনীতির হাত গুটিয়ে নিতে হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে
না। কারণ পাকিস্তানবিদ্বেষ ও মুসলিমবিদ্বেষ কখনো সমার্থক ছিল না। এখনো নয়। তাই ভারতবাসীর
শুভকামনা ও একটি নিরাপদ সংবেদনশীল প্রতিবেশী পাওয়ার প্রত্যাশা ছাড়া নমো ও রাহুলদের
কাছে আমাদের বড় কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকার কথা নয়। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিষয়গুলো তো শুধুই
বোঝাপড়ার ব্যাপার। আন্তরিক হলে সহজেই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।
মাসুদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন