খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিকদ্রব্য, মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের পর এবার জীবনের অন্যতম উপাদান রক্তেও ভেজাল হচ্ছে বলে সম্প্রতি টিভি চ্যানেল ও খবরের কাগজের মাধ্যমে উদ্বেগজনক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মাদকাসক্তের রক্ত বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে। চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করেও কেনা হচ্ছে ভেজাল ও নকল রক্ত। অথচ রক্তশূন্যতার রোগী কিংবা দুর্ঘটনার শিকার রোগীদের জীবন বাঁচনোর জন্য জরুরিভিত্তিতে রক্ত দেবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু একশ্রেণির রক্তব্যবসায়ী পরীক্ষা ছাড়াই মাদকাসক্তের দূষিত কিংবা ভেজাল রক্ত হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করে এবং তা জরুরি রোগীদের দেহে পুশ করা হয়। এছাড়া একব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুইব্যাগ বানানো হয় বলে রিপোর্টে প্রকাশ। ঢাকা মেডিকেল ও বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষাবিহীন রক্তের ব্যাগ পাওয়া গেছে। অথচ এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবাণু পরীক্ষার পর রক্ত নেবার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না বলে সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বেআইনীভাবে গড়ে ওঠা বেশকিছু ব্লাডব্যাংক ও ক্লিনিক চিহ্নিত করেছে। এ অবৈধ ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয় বলে জানা গেছে।
মানুষ নীতি-নৈতিকতার মাথা খেয়ে কতটা নীচে নামলে ভেজাল, নকল ও পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে বিপন্ন রোগীদের কাছে বিক্রি করতে পারে, তা ভাবলে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। অথচ একশ’-দেড়শ’ টাকা ব্যাগের রক্ত দেড়-দু’হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও অধিক মূল্যে রক্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে রিপোর্টে জানা গেছে। এমনই এক অকল্পনীয় অরাজকতা চলছে বিপন্ন রোগীদের প্রয়োজনীয় রক্ত নিয়ে। অথচ হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিপন্ন রোগীর জন্য বিশুদ্ধ রক্ত প্রায়শ জরুরি হয়ে পড়ে। এ সংকটের সময় মানবিক কারণেই রোগীদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করা দরকার। কিন্তু তা না করে একশ্রণির চিকিৎসক ও রক্তব্যবসায়ী অমানবিক আচরণ তো করেই, তার ওপর প্রতারণার মাধ্যমে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ভেজাল-নকল ওষুধের সঙ্গে এখন দূষিত ও ভেজাল রক্ত সরবরাহ করে অর্থ হাতিয়ে নেবার ব্যবস্থা করে থাকে। ভেজাল ও দূষিত রক্ত রোগীর শরীরে পুশ করলে রোগী তো সেরে ওঠেই না বরং আরও জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি স্বাভাবিক রক্তশূন্যতার রোগীও মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমনই অনিশ্চিত এবং ভয়ঙ্কর হয়ে পড়েছে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা। ফলে খুব সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্যও বিদেশে যেতে হয় এদেশের অনেক রোগীকে। কিন্তু বিপুল অর্থ খরচ করে বিদেশে যাবার সাধ্য ক’জন রোগীর থাকে।
যাইহোক, চিকিৎসাক্ষেত্রে আর অনিশ্চয়তা ও অরাজকতা চলতে দেয়া যায় না। ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিপন্ন রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ রক্তের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অন্যথায় বিপন্ন মানুষ আরও বিপন্ন ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাদের চিকিৎসা-সেবা হয়ে পড়বে যেমন দুষ্প্রাপ্য, তেমনই জীবনের আশাও দিতে হবে ছেড়ে। কাজেই বিপন্নœ রোগীদের আরও বেশি বিপন্ন হবার অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন