ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো
ছত্রভঙ্গ থাকায় ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হওয়ায় এবারে ভারতের
লোকসভা নির্বাচন সমস্যাকুল মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়া
বিশৃঙ্খল-বিজেপি খুব একটা ভালো অবস্থায় না থাকা সত্ত্বেও গোটা নির্বাচন পর্বের মূলমঞ্চে
আসতে সচেষ্ট শুধু মাত্র নরেন্দ্র মোদির অভিক্ষেপের মধ্য দিয়ে। সন্দেহ নেই যে এ সময়ে
মোদিই শিল্প মালিক, তথ্যপ্রযুক্তি বা বিভিন্ন করপোরেট সংস্থার ডার্লি
বা প্রিয়পাত্র। সমাজের সাম্প্রদায়িক ভাবধারার অনুসারী অনেক ক্ষেত্রে মোদির সমর্থক।
বিজেপি-রাষ্ট্রীয়
সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা এবং তা তাদের হিন্দুত্ববাদ এজেন্ডার বাস্তবায়নের
মাধ্যমে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। বিজেপি ২০০৪ সাল থেকে ক্ষমতার
বাইরে, যদিও এর আগে ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের জন্য এবং এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪
পর্যন্ত দলটি শেষবারের মতো ক্ষমতাসীন থাকে। যদিও অল্প অল্প করে দলটির লোকসভা নির্বাচনে
ভোট কমে যাওয়া অব্যাহত থাকে। অবশ্য এখন মোদির অভিক্ষেপ একটি দলের জন্য একটি দ্ইু দিকেই
ধারবিশিষ্ট অস্ত্র। মোদির প্রার্থিতা ভারতীয়দের একটি অংশকে সন্তুষ্ট করলেও আরেকটি অংশকে
অসন্তুষ্ট করবে। ফলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ঐক্যকে বিভাজিত করতে বাধ্য।
বিজেপি
সামগ্রিকভাবে সঙ্ঘ পরিবারের অংশ। বিজেপি জানে, এর নির্বাচন পরিচালিত হয় যার
উদ্দেশ্যেই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে তার স্থলে একটি হিন্দু ধর্মভিত্তিক জাতি গঠন। আরআরএসের
মতাদর্শে রয়েছে হিন্দুত্ববাদ, এটি একটি শব্দ যা শুধু হিন্দু ধর্ম বা হিন্দুত্বকেই
সামনে তুলে ধরে। কিন্তু আরএসএস প্রকৃত প্রস্তাবে হিন্দুত্ববাদ। আজকাল ভারতে অনেক সাম্প্রদায়িক
ধারা প্রবহমান। এর মধ্যে শুধু দু’টিরই প্রতিঘাত উপলব্ধি করা যায়। এই দু’টি সাম্প্রদায়িক ধারায় রয়েছে সামাজিক রাজনৈতিক মুসলিম ও হিন্দু সাম্প্রদায়িক
ধারা।
হিন্দু
সাম্প্রদায়িকতার অন্তর্ভুক্ত মতাদর্শ হিন্দুত্ববাদে। আরআরএস-ই আসলে বিজেপির চালিকাশক্তি
রাজনৈতিকভাবে যারা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এবং সমগ্র সঙ্ঘ পরিবার বিশ্বাস
করে যে সেটা সম্ভব হিন্দুত্ববাদ এজেন্ডার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। বিজেপি বা এনডিএ শেষবারের
মতো ক্ষমতায় ছিল ১৯৯৬ সালে। নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে অভিক্ষেপকে
অনেকে দুই পাশে ধারালো অস্ত্র মনে করছে।
বিজেপির
সুবর্ণ সময়েও কদাচিত বিজেপিতে কোনো প্রধানমন্ত্রিত্বের ছাপযুক্ত প্রার্থী দাঁড় করানো
হয়নি। বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাÑ বাজপেয়িও ভারতীয় সংবিধানের ধারামাফিক ক্ষমতারোহণ
করেছেন। তবে নরেন্দ্র মোদির জন্য অসাংবিধানিক নিয়ম থাকবে কেন। মোদির সমর্থকেরা মোদিকে
নিয়ে একটি মিথ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। নরেন্দ্র মোদি যে সবরমতিদের অযোধ্যা থেকে ফেরানোর
পথে গোধরা নামক স্থানে কে বা কারা আরোহীদের পুড়িয়ে হত্যা করেছিল নরেন্দ্র মোদি ঠাণ্ডা
মাথায় এই ঘটনার প্রতিশোধ নিয়ে গুজরাটের কসাই-এ পরিণত হয়েছিল। উল্লেখ্য, হিন্দুপ্রধান রাজ্য হলেও গুজরাটে একটি মুসলিম সচ্ছল ব্যবসায়ী কমিউনিটি থাকলেও
মোদির চাতুর্য, অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, কট্টর হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসের
কাছে ভারতের সোচ্চার সুশীলসমাজ, মিডিয়া এর সব কিছু হেরে গিয়েছিল। শোনা যায় যে নরেন্দ্র
মোদি তার রাজ্য এবং মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য তাকে এক ধরনের নৈতিক সততা দিয়েছিল। গান্ধী
পরিবার যখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, মোদির দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। কাশ্মিরের
যুদ্ধে আমদানি করা বোফোর কামানের দুর্নীতি এখন পর্যন্ত ঢাকা যায়নি। এটি শুধু দুর্নীতির
একমাত্র দিক নয়। অধুনা ভারতে ব্যাপক দুর্নীতি অরবিন্দ কেজরিওয়ালার উদ্ভব ঘটিয়েছে।
শুধু অতীতের
চমকপ্রদ ইতিহাস দিয়ে রাজনীতির অনেক দুর্নামই ঢাকা যায় না। এ কথা ঠিক, এখনো গান্ধী পরিবারে চোখধাঁধানো ব্যক্তিত্ব আছে। তবু রবার্ট ভদ্রও প্রিয়াঙ্কার
স্বামী দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেছে। সেক্স স্টার্ভড ভারতীয়রা এখন বিদেশী পর্যটকদের জলজ্যান্ত
গণধর্ষণের শিকার। শতাব্দীর ঐতিহ্যমণ্ডিত কংগ্রেস যদি মোদির মতো মারাত্মক লোকের কাছে
হার স্বীকার করে। ভারতের জন্য মোদির জয় অন্তত দু’টি বিষয়ে ভারতীয়রা বাধা পড়ে থাকবে।
তার একটি বহিরাগতদের অর্থাৎ যারা আদি ভারতের নয় তাদের বিতাড়ন। কৌশলগত দিক থেকে তা একই
ধরনের ভয়াবহ। পারমাণবিক যুদ্ধে ফার্স্ট স্ট্রাইকের অধিকার কংগ্রেস যে সম্প্রতি অনেকটি
রাজ্য অ্যাসেমব্লিতে গোহারা হেরেছে তাতেই বোঝা যায় কংগ্রেসের স্থিতি এখন কোথায়।
এম. আবদুল হাফিজ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন