শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

লংমার্চ ও মহাসমাবেশ থেকে শিক্ষা নিন



হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে গতকাল ঢাকামুখী লংমার্চ এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই লংমার্চ ও মহাসমাবেশটি ছিল ঈমান রক্ষা, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ইসলাম বিদ্বেষ এবং তাদেরই লালিত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী ও নাস্তিক ব্লগারসহ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, পবিত্র কুরআন, রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) ও তার সহধর্মিণীগণ এবং ইসলামের ইবাদতসমূহের ব্যাপারে অশ্লীল বিদ্রƒপকারী ব্যক্তিদের শাস্তির বিধানসহ ১৩টি দাবি পূরণের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ওলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুসলমানদের বিক্ষোভের একটি অভিব্যক্তি। দেশের সর্বজন মান্য আলেম, ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহ্বানে ও বরেণ্য আলেম-ওলামা এবং ইসলামী সংগঠনসমূহের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই লংমার্চ ও সম্মেলনে প্রায় বিশ লক্ষ লোকের অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে এ দেশের আলেম সমাজ এবং ঈমানদার মুসলমানরা এখনো জীবিত আছেন এবং মিল্লাতের ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। আমরা লংমার্চ উত্তর মহাসমাবেশে ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি। সরকার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশটিকে আস্তিক এবং নাস্তিক এই দু’ভাগে বিভক্ত করে ইসলাম নির্মূলের যে জঘন্য খেলায় মেতেছেন তার আমরা তীব্র নিন্দা করছি। ঈমান রক্ষার এই লংমার্চ এবং মতিঝিলের স্মরণাতীতকালের এই মহাসমাবেশ এ দেশের অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মুসলমান এবং তাদের সংগঠনগুলোকে ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত করবে বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির মোকাবিলায় ছোটখাট সকল মত-বিরোধ ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এটা ইসলামপন্থী সকল দল ও হক্কানী আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হবার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এই লংমার্চ ও মহাসমাবেশকে ঘিরে ক্ষমতাসীন সরকার যে দ্বিমুখী আচরণ ও মুনাফেকির পরিচয় দিয়েছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বলাবাহুল্য, সরকার হেফাজতে ইসলামকে লংমার্চ ও মহাসমাবেশের যথাযথ অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত দেখা গেছে যে, অনুমতি দেয়ার পরপরই তারা হেফাজতের কর্মসূচিকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশ-র‌্যাব, দলীয়ক্যাডার, জেলা-উপজেলা, প্রশাসন এবং তাদেরই সৃষ্ট ও অনুগত ২৫টি সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়েছেন। এই উদ্দেশ্যে শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার সবগুলো প্রবেশ পথে মঞ্চ তৈরি করে লংমার্চকারীদের বাধা দেয়া হয়। তারা ২৪ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করেন এবং সারাদেশের সকল জেলা-উপজেলা থেকে ঢাকামুখী সকল যানবাহন, বাস, ট্রেন, লঞ্চ প্রভৃতি বন্ধ করে দেন। ফলে কোন কোন স্থানে মাদরাসা শিক্ষক ছাত্র ও সাধারণ মুসল্লীদের নিয়ে ঢাকা অভিমুখী বাস, মাইক্রোবাসে হামলা চালানো হয়। হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ হামলা চালায় তাদের প্রচ- মারধর করে। সরকারের এই বাধা-বিপত্তি নবীপ্রেমীদের লংমার্চ থেকে নিবৃত করতে পারেনি। তারা পায়ে হেঁটে ৪০/৫০ কিলোমিটার পথ মাড়িয়েও সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। যারা যোগ দিতে পারেননি তারা বাধা পাবার স্থানেই বসে পড়েছেন এবং সেখানেই মঞ্চ তৈরি করেছেন। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও লাখ লাখ লোক চৈত্রের খরতাপে পায়ে হেঁটে মহাসমাবেশে এসে শুধু ইতিহাস সৃষ্টি নয় ঈমানদার জনতার মহাসমুদ্র সৃষ্টি করেছেন। আমরা মনে করি এই মহাসমুদ্রের মহাজোয়ার ঠেকাবার সাধ্য কারুর নেই। এর প্রতি সরকারের আচরণ দেশব্যাপী ধিক্কার কুড়িয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক দেশের হাজার হাজার মসজিদের ইমামদের শুক্রবারের জুমার নামায পড়ানো থেকে বিরত রেখে তার চরম ইসলাম বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছেন। তার এই আচরণের নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। তথাপিও এত বাধা এবং প্ররোচনা সত্ত্বেও লংমার্চ ও মহাসমাবেশের সাফল্য ছিল অনন্য; এটা ঈমানদার মুসলমানদেরই কৃতিত্ব। বদরের শহীদদের মতো হেফাজত কর্মীদের শপথ গ্রহণ এটাই প্রমাণ করে যে ইসলাম ও ঈমান রক্ষার জন্য এ দেশের মানুষ জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের গুলী এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য কোনও বাধা নয়। আমরা আশা করি সরকার এই লংমার্চ ও মহাসমাবেশের মর্ম উপলব্ধি করে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন এবং আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দকে নির্যাতন ও নাস্তিক-ধর্মদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় জনরোষ থেকে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads