সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা


বেশ কিছু দিন নিজ অফিসে অবরুদ্ধ থাকার পর শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হলো এ সময়ের আলোচিত, বলিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে। অন্য দিকে তার সম্পাদিত আমার দেশ প্রত্রিকটি প্রকাশ করার েেত্রও সুকৌশলে সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। কোনো কারণ ছাড়াই আমার দেশের প্রেস সিলগালা করে দেয় পুলিশ।

এরপর বিকল্প পদ্ধতিতে সীমিত আকারে আমার দেশ প্রকাশিত হলেও পুলিশ তাও বন্ধ করে দেয় এবং গ্রেফতার করে নিয়ে যায় কর্মরত ১৯ নিরীহ কর্মচারীকে। পত্রিকাটি বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৫০০ কর্মচারীর পারিবারিক জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। সেই সাথে বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য তৈরি হলো একটি অবধারিত চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ সোচ্চার না হলে, ভবিষ্যতে সবাইকেই এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরা মনে করেন।
যদ্দুর যানা যায়, স্কাইপ সংলাপ ছাপানোর অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের মামলাও তার বিরুদ্ধে রুজু করা হয়েছে। এর আগেও গণতন্ত্রের ‘স্বর্ণযুগে’ প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে অগণিত মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
দৃশ্যত বিচারপতি নিজামুল হক এবং জিয়াউল হকের স্কাইপ কথোপকথন ছেপে মাহমুদুর রহমান কোনো আইনগত ও নৈতিক অন্যায় করেছেন বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন না। বরং বিচারপতি নিজামুল হক এ কাজ করার মধ্য দিয়ে আদালত অবমাননা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করেছেন। বিচারপতি নিজামুল হক যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে সারা বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ ব্যাপারে মাহমুদুর রহমানের আগে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শাস্তি হওয়া উচিত বলে সচেতন মানুষ মনে করে।
বিচারকার্য প্রভাবিত হয় এমন তথ্য গোপনে আদান-প্রদান করে বিচারপতি নিজামুল হক যে কাজটি করেছেন, তা দেশবাসীকে জানানো সাংবাদিকদের অবশ্যই কর্তব্য। সাংবাদিকদের কাজই হলো সত্য জিনিস বের করে আনা এবং তা প্রকাশ করা, মাহমুদুর রহমান সে কাজটি করেছেন। আর এটাই হলো তার অপরাধ। যিনি অন্যায় করেছেন তার বিচার না করে, অন্যায় যে ধরেছেন তাকে অযাচিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে অন্যায়। আর এই অন্যায় করছে গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান সরকার।
মাহমুদুর রহমান গাড়ি পুড়িয়েছেন বা ভাঙচুর করেছেন এমন ঘটনা বাংলাদেশের কোনো মানুষ দেখেনি। তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা এবং মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করাই এই অভিযোগের উদ্দেশ্য।
মাহমুদুর রহমান আইনের চোখে কোনো অন্যায় করে থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবেÑ এটাই স্বাভাবিক; এতে কারো কোনো দ্বিমত থাকার অবকাশ নেই। কিন্তু তার পত্রিকা কী দোষ করল? ফ্যাসিবাদী কায়দায় পত্রিকার প্রেস কেন সিলগালা করে দেয়া হলো? কেন পেটের দায়ে চাকরি করা নিরীহ ১৯ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হলো? এরা কী অন্যায় করল? এর পেছনে যুক্তি কী? এর নাম কি দিনবদল? বিংশ শতাব্দীতে এসে গণতন্ত্রের দোহাই দেয়া বর্তমান সরকারকেই এর জবাব দিতে হবে। সরকারের কাছে আমরা দাবি করব, অবিলম্বে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশের ওপর থেকে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা হোক। খুলে দেয়া হোক পত্রিকার প্রেস। দূর করা হোক পত্রিকাটিতে কর্মরত কর্মচারীদের পরিবারের অনিশ্চয়তা।
মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের গর্ব। তার সুনাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। তাকে আটকে রেখে সরকারের কোনো স্বার্থ হাসিল হবে বলে মনে হয় না; বরং শেষ পর্যন্ত সরকার চরম বেকায়দায় পড়বে। তার জন্য সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে, পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে; তার মুক্তির জন্য বিভিন্ন সংগঠন আলটিমেটাম দিচ্ছে। দেশে অশান্তি সৃষ্টি হোক এটি যারা কামনা করে না, তারা চায় মাহমুদুর রহমানের ওপর কোনো অন্যায় না করে তার রিমান্ড বাতিল করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।
মাহমুদুর রহমানের মতাদর্শের সাথে সাংবাদিক সমাজের অনেকেই একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বার্থে সাংবাদিক সমাজকে আজ সোচ্চার হতে হবে। কেননা আজ মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশের ওপর আঘাত এসেছে, কাল অন্য সম্পাদক ও পত্রিকার ওপর যে আঘাত আসবে না, এর গ্যারান্টি কোথায়। সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের পেশাগত ঐতিহ্য যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিকটিও সমুন্নত থাকে; অন্য দিকে গণতন্ত্রের ভিত হয় শক্তিশালী। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও রিমান্ড এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ হওয়াতে তিটা কিন্তু প্রত্য ও পরোভাবে গণমাধ্যমের সবার। এটি বিবেচনায় আনা সাংবাদিক সমাজের জন্য অপরিহার্য।
সাংবাদিক সমাজকে মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে এবং দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে; সাংবাদিকদের কোনো কোনো সময় সিংহের সাথে লড়াই করতে হয়, আটলান্টিক পাড়ি দিতে হয়। আর এ জন্যই বলা হয়, সাংবাদিকতার পেশা চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ; কেবল ঐক্যবদ্ধ থাকলেই এ চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবেলা সম্ভব। আশা করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বার্থে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads