শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৩

কত কোটি মানুষকে আসামি বানাতে চায় সরকার?


দেশের কত মানুষকে আসামি বানাতে চায় সরকার? কত ঘরকে এরা পুরুষশূন্য করতে চায়?

গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় হাজার মানুষ আজ আসামি। গ্রামের পর গ্রাম, মহল্লার পর মহল্লা পুরুষশূন্য। পুলিশ আর সরকারদলীয় সহযোগী সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে ঘরছাড়া এরা। এমন গ্রাম, মহল্লা আর মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। কোথাও একটা কিছু হয়, আর অমনি সরকার হাজার হাজার মানুষকে আসামি বানিয়ে ফেলে এবং আসামি ধরার নামে শুরু করে দেয় অভিযান। এভাবে চলতে থাকলে মনে হয় অল্প দিনেই এ দেশে এ ধরনের আসামি ও ঘরছাড়া পুরুষের সংখ্যা কোটি থেকে কোটি কোটিতে ঠেকে যাবে। জানি না সরকারের লক্ষ্য কী? দেশের কত মানুষ আসামি ও ঘরছাড়া হলে তাদের প্রয়োজন পূরণ হবে?
সরকার কি মনে করে কোটি কোটি মানুষকে আসামি ও ঘরছাড়া করতে পারলেই ক্ষমতাসীনেরা স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে? সাময়িক কিছু সুবিধা হলেও এসব করে বাঁচার চিন্তা দুরাশাই শুধু। এসব করে কেউই কখনো বাঁচতে পারবে না। বাঁচার পথ এটা নয়, লজ্জাকর ও করুণভাবে তাদের বিদায় হতে হবে। কিন্তু তার আগে দেশটার সর্বনাশ এরা করে যেতে পারবে ঠিকই। দেশের মানুষের দুশ্চিন্তা এখানেই।
অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার মানুষকে আসামি বানানোর কৌশলটা একেবারে অনৈতিক ও একান্ত নিচু মনোবৃত্তির। তবে কৌশলটা বেশ সুবিধাজনক ঠেকে ক্ষমতাসীনদের কাছে। পুলিশের জন্য তো এটা পোয়াবারো। কাঁচা পয়সা দিয়ে দু’হাতে পকেট ভরে ফেলার বসন্তকাল তাদের জন্য। কিন্তু সব সময় এ কৌশল কাজে লাগে না; বরং তা হিতে বিপরীত হয়। দেশের মানুষকে নিরাপত্তা ও স্বস্তি দেয়ার বদলে যদি তাদের ঢালাওভাবে হয়রানি ও বিপদগ্রস্ত করা হয়, তাতে সরকার নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে। সরাকর বুঝুক আর না বুঝুক তারই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ইতোমধ্যে।
অনেক এলাকাই আছে, আজ যেখানে পুলিশ যেতে সাহস পাচ্ছে না। গেলেই সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ হচ্ছে। পুলিশ মার খেয়ে ফিরে আসছে। মহিলারা পর্যন্ত ঝাঁটাহাতে তাড়া করছেন। এমপিরা তাদের এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না। পুলিশের হয়রানি ও জুলুমে এ দেশর মানুষ বহু দিন থেকেই তাদের প্রতি ভয়ানক ুব্ধ। সামান্য দুই-একটি ব্যতিক্রম বাদে পুলিশকে মানুষ দেখতে পেয়েছে অভদ্র, অশালীন, অত্যাচারী ও ভয়ানক দুর্র্নীতিপরায়ণ হিসেবে। এই পুলিশের আরো অধঃপতন দেখতে পাচ্ছে মানুষ এখন। তার ওপর এরা দেখছে পুলিশ রাষ্ট্রের স্বার্থে নিয়োজিত একটি বাহিনী না হয়ে একটা দলের বাহিনী হয়ে গেছে। দলের বাহিনী বললেও বোধ হয় ভুল হয়; ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সহযোগী বাহিনী বললেই মনে হয় ঠিক হয়। পুলিশ হয়ে গেছে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনাচার ও অত্যাচারের প্রশিক্ষিত বাহন। ফলে পুলিশের প্রতি আগে থেকেই ুব্ধ হয়ে থাকা মানুষের ক্ষোভ  বেড়ে এখন একটা সক্রিয় রূপ ধারণ করেছে। এই পুলিশের দমন ও পীড়ন মানুষ আর মুখ বুজে মেনে নিতে চায় না। অবাঞ্ছিত হলেও এটাই স্বাভাবিক।
পুলিশের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কখনো কোনো প্রতিকার পায়নি। মানুষ তাই আর এখন পুলিশের বাড়াবাড়ি, জুলুম ও বিশেষ দলীয় আচরণ সহ্য করতে রাজি নয়। অত্যাচারী রাষ্ট্রকেও চিনে ফেলেছে মানুষ। এখন এরা পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের সাধ্যমতো নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।
পুলিশের প্রতি এই যেখানে মাুনষের মনোভাব, সেখানে পুলিশ দিয়ে সরকার আর বেশি কিছু করতে পারবে না। করতে গেলে পুলিশকে শুধু বন্দুক দিয়ে আর আসামি বানিয়ে কাজ হবে না, ট্যাংক ও কামান দরকার হবে। দেশেরই লাখ লাখ মানুষ মেরে ফেলতে হবে তাদের। তা কি তারা পারবে বা করতে রাজি থাকবে? মনে রাখা দরকার, পুলিশের জুলুমবাজ ও দলবাজ চরিত্র ছাড়া নৈতিক মনোবল বলে এখন আর কিছু নেই। একটু মার খেলে এ ধরনের মানুষ শক্ত প্রতিরোধ দেখলে ভয়ও পেয়ে যায় তাড়াতাড়ি। যে পুলিশকে সরকার তাদের শক্তি ও সাহসের ভিত্তি ভেবেছিল, সেই পুলিশই তাদের লাঞ্ছনা ও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর অবস্থা হয়ে যেতে আর খুব একটা বাকি আছে বলে মনে হয় না।
সরকার যা করছে এবং তার প্রতিক্রিয়া যা দেখা যাচ্ছে, তাতে সরকারের কর্তৃত্বের পরিধি দিন দিন কমছে বই বাড়ছে না। এর চূড়ান্ত পরিণতিতে এমনও হতে পারে যে, সরকার একটা সময় বাস্তবে কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। নেতৃত্বও আজ ঢাকার হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছে। দেশের মানুষ আগের মতো আর কেবল ঢাকার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাচ্ছে না। ঢাকা এবং ঢাকার মানুষই আসলÑ এই দিন মনে হয় শেষ হওয়ার পথে। দেশের মানুষ এখন নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজন মোতাবেক স্থানীয় বিকল্প নেতৃত্বও গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এই নেতৃত্ব ঢাকাকে আর সম্ভ্রম করে না। এই নেতৃত্ব ঢাকার অবাধ্য হতেও দ্বিধা করে না। ঢাকার চার দিকে জমাট অন্ধকারের মধ্যে এটা একটা উজ্জ্বল আলোর রেখা।
চালাক মানুষদের একই সাথে ভয়ঙ্কর নির্বোধও হতে দেখা যায়। আল্লাহ তায়ালাই এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। না হলে চালাক মানুষদের দৌরাত্ম্যে অন্য মানুষদের বাঁচার আর উপায় থাকত না। বর্তমান সরকারের লোকজনের সম্বন্ধে এটা বেশ ভালোই খাটে। তারা চালাকি করতে করতে সাথে সাথে এতসব নির্বুদ্ধিতার কাজও করে গেছে যে, এখন তাদের অবস্থা সেই রাজার মতোÑ যে উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর খুব খুশিমনে ভাবছে, সে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে আছে এবং সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে। মতলবি পরিষদ ও চাটুকারদের নয়, বরং শিশুর সহজ ও সরল দৃষ্টি ভালো জানে রাজার অবস্থাটা আসলে কী। দেশের অগণিত মানুষের মনের মধ্যে এ শিশুটি যে এখনো বেঁচে আছে, এ কথাটা সরকারের লোকজন কোনোদিন ভেবে দেখেছিল বলে মনে হয় না।
কত মানুষকে সরকার জেলে জায়গা দিতে পারবে? মাঠ, প্রান্তরÑ সব জেলখানা বানিয়ে ফেলতে হবে। কোটি কোটি এসব আসামিকে পাহারাই বা দেবে কিভাবে? পাহারা দেয়ার লোক কি বাইরে থেকে ধার বা ভাড়া করে নিয়ে আসবে? জানি না কিভাবে একটা সরকার ভাবতে পারে এত মানুষকে এভাবে উৎপীড়ন করেও তারা সহজে পার পেয়ে যাবে। সামনে তাদের দিন আরো কঠিন না হয়ে উপায় নেই, এটা বোধ হয় নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে সাথে সাথে দেশের মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যাবে। সবচেয়ে দুঃখ ও দুর্ভাবনার কথা এটাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads