মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

শুধু দিবস পালনে শ্রমিকদের কল্যাণ নেই


প্রতি বছর পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়। শুধু শ্রমিক দিবস নয়, আন্তর্জাতিকভাবে বহু ধরনের দিবস পালনের সংস্কৃতি আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে চালু আছে এবং বিভিন্ন রকমের দিবস সৃষ্টিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা হোক, আমরা দেখতে পাচ্ছি পয়লা মে শ্রমিকদের নিয়ে যে দিবসটি পালন করা হয়, এটা শুধুই লোক দেখানো বা প্রতারণাও বলা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের দিন জাতীয় পর্যায়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থার লোকজন এদিনে অনুষ্ঠান করেন,  বক্তৃতা করেন, র‌্যালি করেন ইত্যাদি। এরকম লোক দেখানো গতানুগতিক রীতির ধারাবাহিকতা চালিয়ে রেখে হাজার বছরেও শ্রমিকদের শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি; সেটাকে বাস্তবতায় রূপ দেয়ার জন্য সরকারের ন্যায়ভাবে কাজ করা উচিত। আশির দশক থেকে শুরু করে আমাদের দেশে গজিয়ে উঠেছে নব্য কয়েক হাজার পয়সাওয়ালা বা তথাকথিত শিল্পপতি। এরা লাখ লাখ শ্রমিককে চরমভাবে ঠকিয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করছে।

যে শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে তাদের এত বিপুল অর্থবিত্ত, বিলাসিতা সেই শ্রমিকদের জীবনে তেমন পরিবর্তন আসেনি। সেসব শ্রমিকের জীবনে হতাশা আর বিষণœতা লেগেই আছে। সেসব শ্রমিকের চেহারায় এখনো দারিদ্র্যতার ছাপ। আর এই নব্য গজিয়ে ওঠা তথাকথিত শিল্পপতিদের বেশির ভাগই পোশাক শিল্প ব্যবসায়ী। এদের বিদেশী ব্যাংকে প্রচুর অর্থ জমা আছে। দুই কোটি পাঁচ কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল একাধিক গাড়ি এদের মধ্যে অনেকেরই আছে। উন্নত দেশের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি তাদের রয়েছে একাধিক রাজকীয় বাড়ি। তাদের সন্তানেরা ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করছে। ঈদ বাজারসহ বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা তাদের বিদেশী মার্কেটে। অনেকে তো দেশীও পানি পর্যন্ত পান করেন না। হালকা পাতলা দাঁতে ব্যথা, পেটে ব্যথা বা আমাশয় হলেও তারা চিকিৎসা নিতে চলে যান সিঙ্গাপুর, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, সিডনি, অটোয়া। বহু রকমের আমোদ ফুর্তির অনুষ্ঠানে তারা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান তাদের জন্য রিকশার মতো সহজ। অপর দিকে তাদের শিল্প কারখানায় শ্রমিকেরা তিনবেলা ভালোভাবে খেতে পারে না। সামান্য ক’টি টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে তাদের হতাশা। তারা পারছে না দেশীও হাসপাতালে সামান্য চিকিৎসা নিতে। তাদের সন্তানদের দেশীয় সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাতে পারছে না অর্থের অভাবে। ছোট নোংরা কোনো বাসার ভাড়া দিতেও তাদের কষ্ট হয়। গাড়ি ভাড়া (বাস ভাড়া) দিয়ে তাদের বসত ভিটায় যাওয়ারও অর্থ তাদের কাছে থাকে না।
রক্তচোষা ওইসব শিল্পপতি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতায় বড় বড় কথা বলেন। এদের মধ্যে অনেকে রাজনীতি করেন। কেউ এমপি কেউবা মন্ত্রী-উপদেষ্টা। এদের মধ্যে যারা রাজনীতি করেন না তারা রাজনৈতিক নেতাদের বস্তায় বস্তায় টাকা চাঁদা দিচ্ছেন। উপঢৌকন দিচ্ছেন। তবে এসব সুবিধা পাচ্ছেন যারা সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ তারা। টাকা দিয়ে মাস্তান ও সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী পুষে রাখছেন। পুলিশকেও দুধ-কলা দিয়ে পুষে রাখছেন। কিছুসংখ্যক অসৎ সাংবাদিককে খামে ভরে টাকা দিচ্ছেন। ভণ্ড প্রতারক বহু শ্রমিক নেতাদের নিয়মিত চাদা দিচ্ছেন। এসব কিছুই সাম্রাজ্যবাদী কুকর্ম। আর এই কর্ম বা সংস্কৃতিই আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি। এগুলোই চলছে। যা আমি নিজে কয়েক বছর সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২০০৭ সালের ৫ মে পর্যন্ত আমি দেশের বড় মাপের একজন শিল্পপতির কোম্পানির করপোরেট অফিসে ছোট একটি পদে চাকরিতে ছিলাম। ঢাকার অভিজাত এলাকায় বিশাল অট্টালিকায় সেই অফিস। এরপর ২০০৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত অন্য একটি শিল্প কারখানায় অফিসিয়াল স্টাফ ছিলাম। সেখানেও প্রত্যক্ষ করলাম যৌথ ব্যবসায়ী ওই মালিকদের বিভিন্ন শয়তানি কর্মকাণ্ড। মাস্তানদের টাকা দিয়ে নিরীহ শ্রমিকদের বাসায় তারা হামলাও চালিয়েছিল।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন আপনারা শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করবেন না। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করুন। সামান্য কয়েকজন কারখানা মালিকের সাথে সুসম্পর্ক রাখার চেয়ে লাখ লাখ শ্রমিকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা জ্ঞানীদের কাজ। তবে কারখানা মালিকদের সাথেও সুসম্পর্ক রাখুন কিন্তু শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads