মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

সংলাপ সম্ভাবনাও কারারুদ্ধ


আবারো কারারুদ্ধ হয়েছেন মাহমুদুর রহমান। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক (ঢাকা জেলা প্রশাসন এখনো তাকে সম্পাদক হিসেবে স্বীকৃতির ছাড়পত্র দেয়নি), সরকারের সাবেক বিনিয়োগ বিকাশ সংস্থাপ্রধান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার টেকনোক্র্যাট উপদেষ্টা, সফল শিল্পপতি ও প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বর্তমান সরকারের আমলে দ্বিতীয়বার কারারুদ্ধ হলেন।

আদালত অবমাননার অভিযোগে এর আগে মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালের ১ জুন পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যায় করেননি বলে আদালতের কাছে মাপ্রার্থনা করতে অস্বীকার করায় তাকে ১০ মাস ১৭ দিন কারাবন্দী রাখা হয়। আমার দেশ পত্রিকাটিও ৪৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে রিট আবেদনক্রমে অন্য আদালতের আদেশে পত্রিকা আবার প্রকাশিত হয়। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই সময় থেকে ৬২টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবারের গ্রেফতারের কায়দাও ছিল নাটকীয়। বিলাতের দি ইকোনমিস্ট পত্রিকায় ফাঁস হওয়া ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি আমার দেশ পত্রিকায় তর্জমা করে প্রকাশ করেন মাহমুদুর রহমান। দি ইকোনমিস্ট  সম্পাদক বলেছেন, হ্যাক করা ওই তথ্য তাদের হাতে আসায় জনস্বার্থে সেই তথ্য প্রকাশ তারা সমুচিত বলে মনে করেছে, তাতে হ্যাক করার অপরাধ তাদের ওপরে বর্তায় না। একই নীতি অনুসরণ করেছেন মাহমুদুর রহমান। বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করে দায় স্বীকার করেছেন। তবে তাকে অসদাচরণের কোনো শাস্তিভোগ করতে হয়নি, উল্টো হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে দি ইকোনমিস্ট  সম্পাদককে নাগালে না পেয়ে হাতের কাছে আমার দেশ  সম্পাদককেই দোষী সাব্যস্ত করে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মাহমুদুর রহমান ও প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬ ও ৫৭ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪এ, ৫০৫এ, ১২০বি ও ৫১১ ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে ওই দিন ম্যাজিস্ট্রেট তেজগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা রুজু হয়। ওই মামলার নামে হয়রানি আর তদন্তের আগেই অন্য কোন স্থান থেকে গ্রেফতার এড়াতে মাহমুদুর রহমান প্রায় চার মাস ধরে কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় আমার দেশ কার্যালয়ে দিন-রাত অবস্থান করে আসছিলেন। ১১ এপ্রিল ভোরে অতি সতর্কতা ও গোপনীয়তা রা করে আমার দেশ কার্যালয়ের আশপাশে ও ওই ভবনের বিভিন্ন ফোরে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাদা পোশাকে ৬-৭ জন পুলিশ আমার দেশ কার্যালয়ে যায়। রিসিপশনিস্ট কাম সিকিউরিটি আবদুর রহমানের কাছে তারা জানতে চান পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আছেন কি না। জবাবে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন রিসিপশনিস্ট। তাদের কথোপকথনের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন সাদা পোশাকের আরো প্রায় ১৫-২০ জন গোয়েন্দা পুলিশ। আবদুর রহমান তাদের বসতে বলে ইন্টারকম ফোনের রিসিভার তোলেন মাহমুদুর রহমানের অনুমতির জন্য। কিন্তু পুলিশ তার কাছ থেকে রিসিভার কেড়ে নিয়ে চড় থাপ্পড় দিয়ে তাকে সেখানেই বসিয়ে রেখে নিজেরাই গেট খুলে ভেতরে ঢুকে সোজা চলে যান মাহমুদুর রহমানের ক।ে ডিবি পুলিশকে সামনে দেখে তাদের বসতে বলেন মাহমুদুর রহমান। তারা সে কথায় সাড়া না দিয়ে তেজগাঁও থানায় ১৪ ডিসেম্বর দায়েরকৃত তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কথা উল্লেখ করে তাদের সাথে তাকে যেতে বলেন। মাহমুদুর রহমান তাদের কাছে পাঁচ মিনিট সময় চান পোশাক পরিবর্তনের জন্য। ডিবি পুলিশ নিজেরাই তার ব্যাগ থেকে একটি পায়জামা ও আন্ডারপ্যান্ট বের করে তার দিকে এগিয়ে দেন। এরপর পোশাক পরিবর্তন করে দু’টি বই এবং একটি কুরআন শরিফ নেন তিনি। এ সময় পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি যে কুরআন শরিফ ধরলেন আপনার কি অজু আছে? প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান সব সময় পাকপবিত্র থাকে। পুলিশ যাওয়ার সময় মাহমুদুর রহমানের ক থেকে সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক, কম্পিউটার, তার মোবাইল ফোন ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়। সকাল ৯টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় মাহমুদুর রহমানকে। সেখানে তেজগাঁও থানার গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে আরো দুটি গ্যাংকেসের আসামি হিসেবে তার নাম জুড়ে দেয়া হয়।
দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে সিএমএম কোর্টের আদালতে নেয়া হয় তাকে। ২টা ৫৭ মিনিটে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে করে মাহমুদুর রহমানকে আদালতের গারদখানায় নেয়া হয়। সাড়ে ৩টায় আদালতে তোলা হয়। আদালতে উপস্থিত বিস্মিত ও বিুব্ধ শতাধিক আইনজীবী মাহমুদুর রহমানের পে শুনানির জন্য আদালতে গেলেও তিনি কাউকে ওকালতনামা না দিয়ে নিজেই আদালতে কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপ থেকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। আমি জানি সরকারের নির্দেশে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সে কারণে আমাকে জামিন দেয়া হবে না। রিমান্ডে দেবে। আদালত সরকারের নির্দেশে চলে। আর সে কারণে আমি আইনজীবীদের নিয়োগ দেইনি আমার পে কথা বলার জন্য। তেজগাঁও থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আমি ভাঙচুর করিনি। হরতালের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত নই। ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজারে গত ২৬ মার্চ এবং ১৭ মার্চ যে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনেছে তা সত্য নয়। কারণ আমি ৪ মার্চ আমার দেশ পত্রিকায় অবরুদ্ধ ছিলাম। বিষয়টি হাস্যকর। মিথ্যাচার করছে রাষ্ট্রপ।’
স্কাইপ সংলাপের বিষয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার দেশ কারো মনগড়া মন্তব্য প্রকাশ করে না। ইকোনমিস্ট পত্রিকায় স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের পর আমার দেশ পত্রিকায় তা প্রকাশ হয়। সরকারের প থেকে ইকোনমিস্ট পত্রিকার বিষয়ে উচ্চ আদালতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পদপে নেয়া হয়েছে; জানি না সে বিষয়ে কী হয়েছে। আমার দেশ পত্রিকার বিষয়ে প্রসিকিউশন একটি মামলা করলে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক রুল দেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা স্থগিত করে দেন। এরপর কী আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা হয়? মীমাংসিত বিষয়ে কোনো মামলা করা যায় না। আমি জানি, জামিন চাইলে আদালত জামিন দিতে পারবেন না। কারণ সরকারের নির্দেশ ছাড়া কিছুই করার নেই।’
এ পর্যায়ে আদালতে সরকারপ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল তর্কবিতর্ক শুরু হয়। আদালত বলেন, এখানে সবাই আইনজীবী, কেউ মূর্খ নন। আদালতে আসামিও উচ্চ শিতি। কাজেই সুন্দর ভাষা ও শালীন বক্তব্য দেয়া উচিত। তিন মামলায় সরকারপ ২৪ দিনের জন্য মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড চাইলেও আদালত মোট ১৩ দিন তথা তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাত দিন এবং একই থানায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাসহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের বাকি দুটি মামলায় তিন দিন করে ছয় দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে; কারণ তিনি শাহবাগী ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী প্রচার ও কুৎসা তার পত্রিকায় হুবহু ছাপিয়ে ধর্মভীরুদের মনে আঘাত দিয়েছেন এবং ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করেছেন। শাহবাগী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে সন্তোষ প্রকাশ করে পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন : ‘আমরা যখন মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের দাবি তুলেছিলাম, তাকে তখন গ্রেফতার করলে দেশে এত দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হরতাল হতো না। মাহমুদুর রহমান আমাদের মহানবীকে সা: কটা করে তার পত্রিকায় বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়েছেন। এতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তৈরি হয়েছে। মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ের ওপর হামলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ তিনি আরেকজনের ব্যক্তিগত ডায়েরি নিজের পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। স্কাইপ’র কথোপকথন প্রকাশ করেছেন।
প্রতিক্রিয়া : ধিক্কার দিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ‘মাহমুদুর রহমান সত্য প্রকাশে আপসহীন সাহসী এক বীরযোদ্ধা। তিনি দেশের স্বাাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আগ্রাসী যে কোনো হুমকির ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করতে যেমন কখনো বিলম্ব করতেন না, তেমনি ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন
নাস্তিক্যবাদীদের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা সম্পর্কেও জাতিকে সজাগ করে প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ােভ প্রকাশ করে বলেন, যারা আল্লাহ, রাসূল সা:, কুরআন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা রটনা করে মুসলমানদের মনে চরম আঘাত ও ােভ তৈরি করছে, সরকার তাদের গ্রেফতার ও সাজা দিতে কোনো পদপে না নিয়ে বরং উল্টো ইসলামবিদ্বেষীদের অপকর্ম উদ্ঘাটন করার অপরাধে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নাস্তিক্যবাদের পাবলম্বন করেছে। এটা জাতির জন্য অশনি সঙ্কেত ছাড়া আর কিছু নয়।’ অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তিদানসহ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে সব তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের দিনই বিকেলে জরুরি বৈঠক করে হেফাজতে ইসলামের তরফ থেকে ঘোষণা হয়, পরদিন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে বাদ জুমা সারা দেশে বিােভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হবে।
অন্য দিকে সরকারবিরোধী ১৮ দলীয় মোর্চার তরফে আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বলেছেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকারের বাকশালী চরিত্রের প্রকৃত স্বরূপ উšে§াচিত হয়েছে। খালেদা জিয়া আরো বলেন, বিরোধী দলের সংবিধান বর্ণিত অধিকারগুলো দুঃশাসনের নিষ্ঠুর যাঁতাকলে পিষ্ট করা হচ্ছে। মিথ্যা, হাস্যকর ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের জেলে আটক করা হচ্ছে। সাড়ে চার বছরে এই সরকারের অপকর্মের পাল্লা এতই ভারী যে, এর বিরুদ্ধে জনগণের ােভ ছাইচাপা আগুনের মতো আর লুকানো থাকছে না, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো তা প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। জনগণের ক্রোধকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার নানা চক্রান্তের জাল বুনে যাচ্ছে।
এ দিকে সাংবাদিকসমাজ (মাতব্বরির দ্বন্দ্বে বিবাদি ুদ্র একটি অংশ বাদে) মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের সাথে সাথে প্রবল প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। দাবি তুলেছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে প্রেস কাবে হাজির না করলে ‘রাজপথে মোকাবিলা হবে’। ১৩ এপ্রিল প্রেস কাবের সামনে সাংবাদিক সমাবেশে আলজাজিরার একটি সংবাদ উধৃত করে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়: মাহমুদুর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তাকে হত্যার জন্য ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে গোয়েন্দা বাহিনী আনা হয়েছে। ওই গোয়েন্দারা মাহমুদুর রহমানের শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে এমন বিষ প্রয়োগ করবে, যাতে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে সে বিষ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। ঘোষণা করা হয় : ‘আমাদের এ আন্দোলন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা যাতে ব্যাহত না হয় সেই জন্য। ইতোমধ্যে তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ হরতাল দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলতেন। তাই এই ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে গ্রেফতার করেছে। তার ওপর নির্যাতন করছে।’
এভাবেই স্পষ্টবাদী মাহমুদুর রহমান শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নির্যাতিত হয়ে জনসমাজের ‘হিরো’ বা নন্দিত নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। তবে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বিষয়টাকে দেখছেন উপসর্গ হিসেবে, তারা বলছেন, এ দেশের রাজনীতিতে অন্য কোনো কোনো দেশের মতোই কাঠামোগত পরিবর্তনের পূর্বলণÑ এসব বেপরোয়া সরকারি পদপে। ও দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ আর সিলেটে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে, রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ করে হেফাজত পাকাপাকি নোটিশ দিয়েছে, ৫ মে’র মধ্যে তাদের দাবি না মানলে সরকারকেই লেজগুটিয়ে পালাতে হবে। এক কথায়, হেফাজত সরকারকে এক মাসের সময় দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেয়া সত্ত্বেও সরকারই তাদের সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।  ইতোমধ্যে শিবিরের ১১ এপ্রিলের হরতাল ‘প্রতিহত’ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের মোটরসাইকেল মিছিলের দাপট যেভাবে ফটিকছড়িতে ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীর রোষানলের শিকার হয়েছে, সংঘর্ষে গোলাগুলি ছুড়েও জনপ্রতিরোধে প্রশাসন ও সরকারি দলকে পিছু হটতে হয়েছে, তিন ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছে, ১০টি গাড়ি ও ২ শতাধিক মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়েছে প্রশাসন কিভাবে দেশবাসীর আস্থা হারিয়ে বসে আছে। সুশীলসমাজ আবারো দুই প্রধান জোটের মধ্যে সংলাপের কিছু কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, নানা ফর্মুলা আওড়াচ্ছে। তাতে মীমাংসার কোনো লণ নেই। বস্তুত সংলাপের সম্ভাবনাও কারারুদ্ধ।
এ দেশেরই পূর্ব ইতিহাস থেকে যদি পরিস্থিতির তুলনা খোঁজা হয়, তবে বলতে হয়, অনুরূপ সঙ্কটাবস্থা ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে, যখন বিতর্কিত সংবিধান বাতিল করে জাঁদরেল আইয়ুব খান একটা নিরপে নির্বাচনের জন্য সেনা বাহিনীপ্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে মতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অথবা তুলনা করা যেতে পারে ১৯৯০ সালের সঙ্কটাবস্থার সাথে, যখন সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারিয়ে গণবিােভে কোণঠাসা জাঁদরেল এরশাদ বিােভরত রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাভাজন প্রধান বিচারপতির কাছে মতা তুলে দিয়ে সেনাসমর্থিত প্রশাসনের তদারকিতে সাধারণ নির্বাচন ও সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তনের পথ খুলে দিয়েছিলেন। একক মতাধর শেখ হাসিনা এখন কোন্ পথে যাবেন কে জানে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads