সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

রোহিঙ্গাদের ছবি বাংলাদেশী হিন্দুদের নামে প্রচার!


শিরোনামের প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কিছু বলা প্রয়োজন মনে করি। আরএসএস, বিজেপি, হিন্দু সংহতি সঙ্ঘÑ ভারতের টপ অর্ডারের মুসলিমবিদ্বেষী সংগঠন তথা রাজনৈতিক দল। এদের কাছে মানবতার সংজ্ঞা শুধু হিন্দুদের জন্য, মুসলমানদের জন্য নয়। এরা এমনই কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবের যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থে কথা বলতে গিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে সাধারণ হিন্দুদের উত্তেজিত করতেও দ্বিধা করেন না। ৪ মার্চ ২০১৩ প্রকাশিত ‘হিন্দু এক্সিসটেন্স’ নামে তাদের ওয়েবসাইটে (www.kallyan-ibrahim.com/) হাত কাটা (চাপাতি দিয়ে কোপানো) এক শিশুর লাশের ছবি দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের রিপোর্ট করা হয়। বীভৎস হওয়ায় ছবিটি আমরা দিতে পারলাম না। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়Ñ ‘নোয়াখালীতে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে চাপাতি দিয়ে এমনই নৃশংসভাবে এক শিশুকে হত্যা করে বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির’। অথচ সেই ছবির আসল পরিচয় পাওয়া যায়  নিচের লিঙ্কেÑ www.columnpk.com /2012/07/14/, যা গত বছরের জুলাই মাসে রাখাইন কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের সময় পাকিস্তানের এক পত্রিকায় রোহিঙ্গা এই শিশুর লাশের ছবিটি দেখা যায়। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা শিশুর ছবিটি বাংলাদেশী হিন্দুর বলে প্রচার করে বিজেপি গং ভারতের সাধারণ হিন্দুদের উত্তেজিত করছে আর বাংলাদেশের মুসলমানÑ বিশেষ করে একটি দলের বিরুদ্ধে তাদের মনে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

এ দিকে এটা আমরা সবাই জানি, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই সরকার কর্তৃক গণহত্যা ও চলমান সহিংসতায় কয়েক জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, মন্দির-মূর্তি ভাঙচুর, আগুন লাগা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও কেউ মারা যায়নি। অথচ বিজেপি মৃত্যুর গুজব ছড়াচ্ছে। এ দিকে ঘটনার পরই আমরা ল করলামÑ সরকার কোনো তদন্ত ছাড়াই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের জন্য ‘জামায়াত-শিবির’কে দায়ী করে। যদিও জামায়াত এ েেত্র বারবার অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এ দিকে দেশের চলমান দোষারোপের এই রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ জানতেই পারছে না, কারা এ দেশের সর্বধর্মের মধ্যকার সম্প্রীতির সম্পর্ককে  নষ্ট করতে চায়। তবে অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখি, বেশির ভাগ লুটপাট-ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড ও হামলার সাথে আওয়ামী লীগই জড়িত। আমরা সবাই জানি, উখিয়ার বৌদ্ধবিহারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যানের নির্দেশেই সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা হয়। তা ছাড়া কিছু দিন আগে বগুড়ায় শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান যুবলীগের এক কর্মী। কিন্তু জামায়াতের বিরুদ্ধে এমন কোনো সহিংসতার খবর কখনো জানা যায়নি, বরং এবার জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মন্দির পাহারা দিতেও দেখা গেছে। এ দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে সরকারের প্রতি সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বললেও আওয়ামী সরকার যেন নির্দিষ্ট দলের নামে অপপ্রচার করে, ভোট নেয়ার স্বার্থেই এই ইস্যুটিকে জিয়িয়ে রাখতে চায়। তা নাহলে সরকার নিশ্চয়ই নিরপে তদন্ত করে জাতির উদ্দেশে বিষয়টি পরিষ্কার করতেন। সুতরাং কারা সংখ্যালঘুদের নিয়ে নষ্ট রাজনৈতিক খেলা খেলছেÑ এটা বেশ পরিষ্কার।
এ দিকে যারা মূল ঘটনাকে পুঁজি করে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে, তাদের উদ্দেশ্য বুঝে নিতে হবে যে, অপপ্রচারকারীদের ভিন্ন কোনো অভিপ্রায় আছে। যেমনÑ আমরা শুরু থেকেই ল করছিÑ আওয়ামী লীগ কথায় কথায় জনগণের উদ্দেশে বলে, ‘জামায়াত এই দেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানাতে চায়।’ এমন অযৌক্তিক ও অবাস্তব কথা শুনে বেশ হাসি পায়। কারণ মাঝখানের বৃহত্তর ভারতকে পেরিয়ে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সংযুক্তি কি আদৌ সম্ভব? আর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের বাংলাদেশী, যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবতে যাবেই বা কোন দুঃখে? এ দিকে আওয়ামী লীগের ভাষণে যতবার ‘পাকিস্তানে’র নাম চলে আসে সে রকম তো জামায়াতকে বলতে শোনা যায় না। সুতরাং কারা সেই ’৭১-এ ফিরে যেতে চায়? বরং ’৭১-এর পরিস্থিতির মধ্যে ফিরে যাওয়ার জন্যই কি সরকার কৌশলে সীমান্ত খালি করে বিজিবিকে (বর্ডারগার্ড অব বাংলাদেশ) রাজপথে নামাচ্ছে? ভারতের বিজেপির জন্য ঢাকামুখী লংমার্চের ব্যবস্থা করছে? আজ আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ সাধারণ একটা হরতালে বিজিবিকে রাস্তায় নামানো হচ্ছে। প্রশ্ন হলোÑ তাহলে সীমান্ত পাহারা দেবে কারা? নাকি সীমান্ত ফাঁকা করে ভারতের সেনাবাহিনীর জন্য পথ তৈরি করা হচ্ছে? এ দিকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পরপরই সরকার যদি অহেতুক বাক্য ব্যয় না করে তদন্ত করত, তাহলে কি আজ বিজেপি অপপ্রচারের সুযোগ খুঁজে লংমার্চের সাহস পেত? নাকি এ সবই হচ্ছে আওয়ামী খেলা সেই ’৭১-এ ফিরে যাওয়ার ল্েয?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads