শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

বাংলাদেশে ইসলাম আক্রান্ত



 পশ্চিমাদের বুদ্ধিগুরু হিসেবে খ্যাত স্যামুয়েল হান্টিংটনের ‘দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস’ ‘সভ্যতার দ্বন্দ্ব’ তত্ত্বটির আলোকে কমিউনিজমের পতনের পর পশ্চিমাদের সামনে এখন একমাত্র শত্রু ইসলাম ও মুসলমান। আর এই ‘নয়া ক্রুসেড’-এর মূল লক্ষ্য মুসলমানদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদ, পশ্চাৎপদ, জঙ্গিবাদ, নাশকতাকারী, মানবতাবিরোধী,  সেকেলে অনুন্নত ও অ-আধুনিক বলে প্রচার চালানো। আমাদের দেশের একশ্রেণী সুশীল! ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী, এবং অধিকাংশ মিডিয়াই এখন তাদের হাতের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে। আর এই পথ ধরে এখন এগিয়ে চলছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দোসররা। কারণ বর্তমান আওয়ামী-বামদের ইসলামবিরোধী শক্তির সন্তুষ্টি খুব বেশি প্রয়োজন। আওয়ামী-বামদের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। বিশেষ প্রতিপক্ষ দমনের সহজ কৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যও নিজেদের বেশি বেশি সেক্যুলার প্রমাণ করতে বড় বেশি ব্যস্ত এই সরকার। কিন্তু সব করেও যেন শেষ রক্ষা নেই!!
বাংলাদেশে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে কুরআন-হাদিসবিরোধী কোনো আইন পাস না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উঠিয়ে দেয়ার জন্য চক্রান্ত শুরু করে। শুধু তাই নয়, প্রভূদের ইশারায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার নামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের জোর প্রচেষ্টা চালায় সরকার। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করার মাধ্যমে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ যুক্ত করা হয়। “র‌্যানডম হাউজ অব দ্যা ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ”-এ Secular“যা ধর্ম সম্পর্কিত নয় ((Not perlaining toor connceted with religious) এবং যা কোনো ধর্মবিশ্বাসের অন্তর্গত নয়(Not belonging to a religious order)| । আর ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে এটি একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক দর্শন যা সকল ধর্মবিশ্বাসকে নাকচ করে দেয় (Rejects all forms of religious faith)|
এখান থেকেই শুরু হয় নাস্তিক্যতাবাদীর রাষ্ট্রীয় সূচনাপর্ব। তারই ধারাবাহিকরূপের প্রকাশ্য নৃত্যানুষ্ঠান আর আস্ফালন চলছে এখন শাহবাগে। চলছে এদেশের তৌহিদী জনতার ঈমান আকিদার ওপর জঘন্যতম আক্রমণ। জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে মুছে দেয়া সম্ভব হয়নি। এই বিষয়টি এতটাই হাস্যকর যে, ¯্রষ্টার ওপরেই যেখানে কোন আস্থা থাকলো না সেখানে বিসমিল্লাহ দিয়ে কি হবে?। একেই বলে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে চুপ রাখার এটা একটা আওয়ামী কৌশল মাত্র। আসলে এটাই হলো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। আর আওয়ামী লীগ বরাবরই ধর্ম নিয়ে এমন নোংরা রাজনীতি করে আসছে শুরু থেকেই। একটা কথা বলে নেয়া দরকার, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই এদেশের তৌহিদী জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আলেম-ওলামাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, মসজিদ, মাদরাসা দাড়ি-টুপিওয়ালাদের অপমান করা কারোই অজানা নয়। অবস্থাটা এমন, তেল এবং পানি যেমনি মিশে না, আওয়ামী লীগের সাথে  ইসলামের সম্পর্কেও তার ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রতি দেশে মহান আল্লাহ, মুহাম্মদ (সাঃ) ও কালজয়ী শাশ্বত বিধান আল-ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে অবমাননা ও আক্রমণ করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ, ধিক্কার ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফুঁসে উঠেছে সারা বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম, খুন, গণহত্যা আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সরকারের  নতুন খ্যাতি সংযোজন করলো, আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের অবমাননাকারী সরকার হিসেবে। বিশ্ব দরবারে আওয়ামী লীগ আমাদের জাতিকে খুব খারাপভাবে চিত্রিত করেছে, যা সহজে মুছে ফেলার নয়। তথাকথিত ব্লগার নামধারী একশ্রেণীর ধর্মদ্রোহী যুবক ইসলাম, আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)কে নিয়ে চরম আপত্তিকর ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপে মেতে উঠেছে। তারা অবাধে ও নির্বিঘেœ নবী-রাসূলদের নিয়ে মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ, অপবাদমূলক বিভিন্ন মন্তব্য ও কথাবার্তা প্রচারের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আর এদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কি আবাক করা কা-! আবার তৌহিদী জনতার চাপের মুখে সরকার এখন নাকি তাদের খুঁজছে। অথচ নাস্তিক ব্লগাররা আছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা হেফাজতে। দেশের জনগণের সাথে ভেলকিবাজি কাকে বলে!! এই সরকার সবটাই করছে।
বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় দেয়ার জন্য এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করা হয় না।  গত বছর দুর্গা পূজার সময় শেখ হাসিনা বললেন, “আমরা জানি এবং শুনেছি, আমার মা দুর্গা প্রতি বছর কোনো না কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধনধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভাল হয়েছে। মানুষ সুখে শান্তিতে আছে। দেশেরে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।” কোন মুসলমানের  এই বিশ্বাস থাকলে ইসলামে তার অবস্থান কোথায় থাকে এটি আলেম-ওলামারাই ভালো বলতে পারবেন। নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে মুসল্লীদের বিক্ষোভ ঠেকানোর নামে সরকার জাতীয় মসজিদের গেটে এখন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রী ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপি হল জিয়ার উম্মত, জামায়াত নিজামীর উম্মত আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা মহানবীর (সাঃ) উম্মত’। এ কেমন তাচ্ছিল্যতা? ২০০৯ সালে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ধর্মকে মদ ও তামাকের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ধর্ম তামাক ও মদের মতই একটি নেশা। আরেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ (এলজিআরডি) নিজেকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি হিন্দুও নই মুসলমানও নই’। এরমধ্য দিয়ে কি আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীরা নিজেদের  ধর্মনিরপেক্ষবাদী রিহার্সাল দিচ্ছেন?
২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী তনয় জয় যুক্তরাষ্ট্রের এক ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন, বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে ৪০০ গুণ বোরকার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ্নের। ঠিক তখন বাংলাদেশ সরকারের সকল কর্তা ব্যক্তিরা বোরকাবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। গত ১৭ ডিসেম্বর-২০১২ সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ শিক্ষার্থীসহ ২১ জনকে পুলিশ আটক করেছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার স্ত্রীও রয়েছেন। তাদের অপরাধ তারা প্রত্যেকেই বোরকা পরেন। ২০০৯ সালের ১৯ জুন রাজশাহীতে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঐদিন বিকালেই মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত ঘোষণার পর আবার ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়।  ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না বলে ফতোয়া জারি করেন। গত ৩ জুলাই ২০০৯ সালে বোরকা পরার অপরাধে বরিশালের পিরোজপুরের তিন ছাত্রীকে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ। এদিকে বোরকা পরে ক্লাসে আসার অপরাধে এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে দেননি উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার গোলাম হোসেন। আরো পাঁচ ছাত্রীকে গেটে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অধ্যক্ষ বোরকাকে ‘অড’ বা দৃষ্টি কটু ড্রেস উল্লেখ করে ‘নামায আর পর্দা করার অপরাধে ৮ ছাত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বের করে দেয়া হয়। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের করা হয় নির্যাতন। বাদ যায়নি বিদেশী পর্যটকও। গত ১ অক্টোবর ২০১০ সাইপ্রাসের এক পর্যটক নারী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ছবি তুলতে গেলে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তার অপরাধ ঐ মহিলা বোরকা পরা ছিলেন। আওয়ামী ঘরানার কলামিস্ট হিসেবে সুপরিচিত ড. জাফর ইকবাল তার এক কলামে বোরকাকে নারীদের বন্দীশালা উল্লেখ করে লিখেন, “মেয়েদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল। একান্তই যদি ঘরের ভেতর আটকে রাখা না যায় অন্তত বোরকার ভেতর আটকে রাখা যাক।”
বর্তমান সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছে। ২৭ নবেম্বর ২০১১ ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ইসলামিক ফাইন্ডেশনের ডিজি শামীম আফজাল সারা বাংলাদেশের ইমাম ও আলেম-ওলামাদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণী দিয়ে অশ্লীল ব্যালে ড্যান্স আয়োজন করে। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, এর সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে!। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে তা নেই। ১০ ডিসেম্বর ২০১১ তিনি ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া একই সুরে বলেন, রাসূল (সাঃ) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি এই মন্ত্রীই ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভায় জনতার জুতা নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন।
সারা দেশজুড়ে যখন সরকারি দলের সোনার ছেলেরা নানা কুকর্মে লিপ্ত। দিবালোকে হত্যা, লুটতরাজ আর নারী কেলেঙ্কারিতে মগ্ন দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, তখন মাদরাসাগুলোকে সরকার আবিষ্কার করল জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে। ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এক অনুষ্ঠানে বলেন, “কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করছে। এসব মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপম-ুকতার সৃষ্টি করছে। ‘৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাৎ করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।” বর্তমান সরকারের আরেক এমপি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, “ব্যাঙের ছাতার মত কওমী মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে”। ছাত্রইউনিয়নের সাবেক নেতা নূরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব এবার তিন নাস্তিক নিয়ে কোমলমতি ছাত্রদের ধর্মবিমুখ বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বত্র ইতিহাস বিকৃতি, শারীরিক শিক্ষার নামে পশ্চিমা ধাচে যৌন সুড়সুড়ি ও উত্তেজনা তৈরি করে ছেলেমেয়েদের চরিত্র নষ্টের এক মহা আয়োজন করে বসেছেন। এ ছাড়া সরকারের ছত্রছায়ায় মহানবী (সাঃ)-এর নামে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০১১ সালের ১৪ জুলাই টুঙ্গিপাড়ার জিটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাস নেয়ার সময় শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস কটাক্ষ করে রাসূলের (সাঃ)-এর দাঁড়িকে ছাগলের দাঁড়ির সাথে তুলনা করে। ১৪ সেপ্টেম্বর নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষিকা নূপুর রায় রাসূল (সাঃ) ও বেহেশত- দোযখ নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেন, “কাবা ঘর থেকে মূর্তি ভাঙার কারণে মূর্তির অভিশাপে মহানবী (সাঃ)-এর বংশ নির্বংশ হয়ে গেছে।” এছাড়াও ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস বলেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। এই সরকারের আমলেই দেবনারায়ণ নামে একজন শিক্ষক পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে কুরবানির বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্টে রিট করে। বিস্ময়ের ব্যাপার, পরে তৌহিদী জনতার প্রতিবাদের মুখে এই দেবনারায়ণকে মাত্র ৫০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ২১/০৩/২০১৩- তারিখে গোপালগঞ্জে এক হিন্দু স্কুল শিক্ষক বলেছেন, “আল্লাহ ডিম পাড়ে আর সে ডিম থেকে মানুষের জন্ম” ইত্যাদি।
মিরাসী আইনের ব্যাপারে যেখানে আল্লাহর স্পষ্ট বিধান রয়েছে। সে আইনে হাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হবে। ৭ মার্চ ২০১১ এই নারী নীতির চূড়ান্তÍ খসড়া আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। কুরআন-হাদিসবিরোধী এই নারী নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে সরকার তা স্থগিত রাখে। এখনও এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সকল মহল ব্যস্ত। সিডও কর্তৃক রচিত এই নারী নীতির যে সকল ধারাগুলো কুরআনবিরোধী তা হল, ১৭.২, ২৫.২, ১৮.৪, ২৩.৫, ৫.২ সহ অনেকগুলো ধারা-উপধারা সরাসরি কুরআনবিরোধী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহানবীকে (সাঃ) অবমাননা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে রাজধানীর পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশের আয়োজন করলে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীসহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করে। ইতঃপূর্বে সরকারের ইসলামবিরোধী কাজের সমালোচনা করায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনীকে মাসের পর মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয় এবং গৃহবন্দি অবস্থায়ই এই বড় আলেমে দ্বীন মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ববরেণ্য আলেম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তথাকথিত যুদ্ধাপরাদের দায়ে ফাঁসির রায় দেয় আদালত। আরো অনেক আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করে চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। কিন্তু এদেশের মানুষের জানা আছে, আওয়ামী লীগের এই ইসলামবিরোধিতা নতুন কোন বিষয় নয়। পিছনে ফিরে তাকালে আমরা সবসময়ই আওয়ামী লীগের একই আচরণ লক্ষ্য করি। এর আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কখনো হাতে তসবিহ নিয়ে, কখনো বা মাথায় পট্টি বেঁধে ইসলাম ধর্মের সাথে বেঈমানী করেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ  প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অর্থায়নে শাহবাগে মঞ্চস্থ করল এক নাটক। প্রজন্ম চত্বরের নামে সেখানে চলছে নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাঁজা সেবন প্রভৃতি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকা- । শাহবাগে মুসলমানের ফরজ বিধান পর্দাকে কটাক্ষ করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক বলে আখ্যায়িত করা, ওলামা-মাশায়েখদের জঙ্গি, মৌলবাদী ও জারজ সন্তান বলে গালি দেয়া হয়েছে। বর্তমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের পেছনে কাদিয়ানিরাও পরোক্ষভাবে বামপন্থী ও সরকারি সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে। কাদিয়ানি কোম্পানিগুলো তাদের বিপুল অর্থ-খাদ্য প্রভৃতি সরবরাহ করছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সরকার ইসলামবিরোধী ব্লগার ও অপপ্রচারকারী নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে কিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন স্বঘোষিত নাস্তিক ও ইসলামের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা রটনাকারীকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রয়াস চালাতে পারেন? আজ বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্র চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের এ দেশীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক-মুরতাদ ও  ভাবশিষ্য বামপন্থী ব্লগাররা।  বামপন্থী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে বর্তমান সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের দীর্ঘমেয়াদী নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের বলিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। তারা আলেম-ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী-বামরা ইসলাম নির্মূলের এই মিশনে আসলে কি সফল হবেন? আওয়ামী-বামরা কালো চশমা খুলে বিশ্বের দিকে দিকে ইসলামের পুনর্জাগরণ আর আরব বসন্তের দিকে কি তাকাবেন? মূলত ইসলাম নির্মূলের এই কৌশল হচ্ছে পশ্চিমাদের। কিন্তু তারা মুসলমানদের উত্থান ঠেকাতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নিজেদের অস্তিত্বই আজ হুমকির সম্মুখীন। সম্প্রতি মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বিবেচনা করে জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল মন্তব্য করেছেন, ‘জার্মানি উইল বিকাম অ্যা ইসলামী স্টেট। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা বিশিষ্ট সাংবাদিক লরেন বুথ। আজ বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমারা নাইন-ইলেভেন ঘটিয়েছে মুসলমানদের সন্ত্রাসী বানিয়ে তাদের পুনর্জাগরণ ঠেকাতে কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পরই সবচেয়ে বেশি আমেরিকান ইসলাম গ্রহণ করেছে, যা বিগত আঠারো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। মি. বুকানন ইসরাইল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনীদের সংখ্যা ১৫ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ইহুদিদের দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা তাদের কোমর ভাঙার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানের ইন্তেফাদা আন্দোলনের কারণে যেভাবে ইসরাইলীরা তাদের বসতি ছেড়ে ফিলিস্তিন থেকে পলায়ন করছে তা আগামীতে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমেরিকায় ৩০ বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে বলে গত শতাব্দীর শেষের দিকে আশঙ্কা করা হয়েছিল। আঠারো বছর আগে আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সি¤েপাজিয়ামে এই ইঙ্গিত দেয়া হয়। ইসলামের এই পুনর্জাগরণ আজকের সারা পৃথিবীর একটি বাস্তবতা। আসলে এটা সকলেরই জানা, বাংলার এই জনপদে ইসলামের শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত। সুতরাং ইসলাম নির্মূলের সকল চক্রান্তই এদেশের তৌহিদী জনতা জীবন দিয়ে রুখে দাঁড়াবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads