শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৩

সরকারের উচিত এখনই ভালোয় ভালোয় বিদায় নেয়া


সিরাজুর রহমান

এরা দেশ শাসন করছে, কিন্তু দেশের মানুষের জন্য দয়ামায়া নেই বর্তমান সরকার আর শাসক দল আওয়ামী লীগের। মানুষ মরল কি বেঁচে রইল, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাদের। লুটেপুটে দেশটাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এরা। দেশের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশের শ্রমিকের রক্ত পানি করা শ্রমের বিনিময়ে তৈরী পোশাক রফতানি আর লাখ লাখ শ্রমিক রফতানির বিনিময়ে অর্জিত বিদেশী মুদ্রায় সরকার চলছে, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন, ফুটানি করছেন। কিন্তু যে হাঁস সোনার ডিম পাড়ে সে হাঁসটিকে মেরে ফেললে কী হবেÑ একবারও ভেবে দেখছে না এ সরকার।
বৈধ ও অবৈধভাবে বহু লাখ শ্রমিক বিদেশে গেছেন। পথে অবৈধদের অনেকে কনটেইনারে দম বন্ধ হয়ে অথবা অথৈ সমুদ্রে হাড়জিরজিরে হয়ে নৌকা ডুবে মারা গেছেন। যারা বেঁচে ছিলেন তারা লুকিয়ে আর গা-ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশে কোনোমতে বেঁচে থেকেছেন। এই তো সে দিন গ্রিসের স্ট্রবেরি ক্ষেতে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় মালিকেরা। একবার রোমের রাস্তায় কুমিল্লার এক ছেলে আমার কাছে এসেছিল। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সে ছাতা বিক্রি করে। আমার পরিচয় বুঝতে পেরে লজ্জায় পালিয়ে গেল। পাতাল রেলের স্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে ফুল কিংবা সস্তা অলঙ্কার বিক্রি করতে দেখেছি বাংলাদেশী কিশোর ও তরুণদের। বছরের পর বছর প্রায় ভিখিরির জীবন যাপন করে কেউ কেউ বৈধ হয়েছে, পড়ন্ত শিল্পকারখানায় চাকরি পেয়েছে। এই কষ্টলব্ধ অর্থের যত বেশি সম্ভব দেশে ফেলে আসা পরিবার-পরিজনকে পাঠিয়েছে তারা। তাদের পাঠানো বিদেশী মুদ্রার সব সুবিধা ভোগ করছে সরকার।
কিন্তু এই অসম সাহসী আর কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের স্বার্থের দিকে সরকার নজর দেয়নি। বর্তমান সরকারের ইসলামবিরোধী নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ এবং অন্যান্য অঞ্চলেরও কোনো কোনো দেশ আর বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ করছে না। সৌদি আরব বাংলাদেশী শ্রমিকদের বহিষ্কার করছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা দিচ্ছে না বাংলাদেশী শ্রমিকদের। প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশী শ্রমিকের আয়-উপার্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। কোনো দেশ সামান্য কিছু বাংলাদেশী নিতে চাইলে সরকারি প্রচারযন্ত্র এমন ঢাকঢোল পেটাতে শুরু করে, যেন তারা লঙ্কা জয় করে ফেলেছে।
সরকারের একই ধরনের উদাসীনতা তৈরী পোশাক শিল্প সম্বন্ধে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশ। চীনের পরই এ স্থান। এ শিল্প থেকে মণ্ডামিঠাই খাচ্ছে সরকার, কিন্তু শিল্পের ভালো-মন্দের দিকে তাদের নজর নেই। ওদিকে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিদেশে এবং দেশে যে লাল সঙ্কেত জ্বলে উঠেছে, সে দিকেও খেয়াল নেই সরকারের। বর্তমান সরকার এবং তাদের এলিট গোষ্ঠীর মনোভাব এই। যত দিন তারা ক্ষমতায় আছে সব কিছু লুটপাট করে তারা পেট ভরবে, পকেট ভারী করবে। এর পর দেশটা গোল্লায় গেলেও তাদের কিছু এসে যাবে না।
গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকদের যেভাবে শোষণ করা হচ্ছে, যে ন্যক্কারজনক পরিবেশে তারা কাজ করছে, আমেরিকা ও ইউরোপের আমদানিকারকেরা অনেক দিন থেকেই এর সমালোচনা করছে। সমালোচনা না করে উপায় নেই। সেসব দেশের মিডিয়া বহু দিন ধরে বাংলাদেশী গার্মেন্ট কারখানাগুলোর দুরবস্থা এবং শ্রমিকদের নিরপত্তা ও মঙ্গলামঙ্গলের প্রতি মালিক ও সরকারের উদাসীনতার সমালোচনা করে আসছে। সেসব দেশের টেলিভিশনে বহু প্রামাণ্য ভিডিও দেখানো হচ্ছে, পত্রপত্রিকায় বহু ফিচার ছাপা হয়েছে।
নিজেদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরার জন্য শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠন করতে দেয়া হচ্ছে না, সেটাও বিদেশী ক্রেতাদের একটা বড় অভিযোগ। শ্রমিকদের নেতা আমিনুলের হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপে বারবার তাগিদ উঠছে। এরা বলছে, বাংলাদেশ সরকার এসব অবিচারের প্রতিকার না করলে তারা বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের আমদানি সীমিত করতে বাধ্য হবে। কেননা সচেতন ক্রেতারা এখন বাংলাদেশে তৈরী পোশাক কিনতে খুঁতখুঁত করছে।
গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজার ট্র্যাজেডি মালিকদের সাথে সরকারের যোগসাজশ এবং শ্রমিকদের মঙ্গলামঙ্গলের প্রতি মালিক ও সরকারের যৌথ অবহেলার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। যুবলীগের একজন স্থানীয় নেতা সোহেল রানা হিন্দু জমিসহ দখলী করা জমিতে (যার মধ্যে একটা পুকুরও ছিল) আটতলা ভবন রানা প্লাজা তৈরি করেছিলেন। এ নির্মাণে রাজউকের এবং রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন মেনে চলা হয়েছে কি না, এখনো জানা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার গদিতে থাকতেই সাততাড়াতাড়ি ভবনটি তৈরি করে টাকার পাহাড় তৈরি করা ছিল মালিক সোহেল রানার উদ্দেশ্য।
 রানা প্লাজায় যা ঘটেছিল
সে ভবনে দোকানপাট ও একটি ব্যাংক বসেছিল। সবচেয়ে বড় কথা পাঁচটি গার্মেন্ট কারখানা স্থাপিত হয়েছে সে ভবনে। আগের দিন মঙ্গলবার রানা প্লাজার গায়ে ফাটল দেখা যায়। সে ফাটল টেলিভিশনেও দেখানো হয়েছিল। দুয়েকটি দৈনিকে এর খবর আরে দিন ছাপা হয়েছিল। স্বভাবতই পোশাকশ্রমিকেরা শঙ্কিত হয়েছিলেন। বুধবার কারখানা বন্ধ রাখতে তারা আকুতি-বিকুতি করেছেন। পুলিশও দাবি করছে, তারা রানা প্লাজার ফাটল সম্বন্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। কিন্তু এক দিন কাজ বন্ধ থাকলে মালিকদের মুনাফা কিছুটা কমে যায়। এরা কিছুতেই কারখানা বন্ধ করতে রাজি হননি। এরা বলেন, রানা প্লাজা সম্পূর্ণ নিরাপদ। সরকারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও দেখেশুনে রায় দিয়েছিলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
চাকরি হারালে শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন না খেয়ে থাকবে। তাই এরা কাজে গিয়েছিলেন। আর তাদের মাথার ওপরই ভেঙে পড়ে আটতলা ভবন রানা প্লাজা। যখন এ কলাম লিখতে বসেছি, তখনকার খবর অনুযায়ী ৩০৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো বহু লাশ এবং জীবিত শ্রমিক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শ্রমিকদের বুক ফাটানো আর্তনাদ আমি ব্রিটিশ টেলিভিশনেও শুনেছি। আহত হয়েছেন শত শত শ্রমিক। এদের সবার পরিবারে চলছে মাতম আর আহাজারি।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার এটাই একমাত্র নজির নয়। মাত্র পাঁচ মাস আগে তাজরীন ফ্যাশনের কারখানায় আগুন লেগে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা গিয়েছিল। সে ঘটনার জের ধরে আমেরিকার বৃহত্তম চেইনস্টোর ওয়ালমার্ট তাজরীন ফ্যাশনের তৈরী পোশাক আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। সে রকম ঘটনা গত চার-পাঁচ বছরে আরো কয়েকটি ঘটেছে। সেসব ঘটনায় দেখা গেছে, আপদকালে কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খোলা না থাকায় মৃতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে। তা ছাড়াও অনেকগুলো অশান্তি ঘটেছে পোশাক তৈরির কারখানাগুলোতে। সব ক্ষেত্রেই কারণ ছিল শ্রমিকদের পাওনা বেতন ও ভাতা পরিশোধ, ন্যায্য বেতন ও কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দাবি ইত্যাদি।
শ্রমিকদের দিক থেকে হয়তো কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা ঘটেছিল। বিক্ষিপ্তভাবে যেখানে জনরোষ ফেটে পড়ে, অসংগঠিত শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন, তখন উচ্ছৃঙ্খলতা ঘটতেই পারে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে দেয়া হয় না বলেই এরা বিক্ষিপ্ত এবং স্থানীয়ভাবে আন্দোলন করতে বাধ্য হন। শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার এখন বিশ্বজনীনভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের তূণেও সে আইন আছে। সমস্যা হচ্ছে যে সরকার সেসব আইন প্রয়োগ করছে না। তারও কারণ আছে।
পোশাক নির্মাতাদের অনেকে বর্তমান সরকারের অনুগ্রহভাজন ও সমর্থক। তাদের কাছ থেকে সরকার বহু রাজনৈতিক সুবিধা পায়। যেমন শুনেছি যে ২৭ এপ্রিল মতিঝিলে তাদের নারী সমাবেশে পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিকদের হাজির করতে সরকার মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল। সরকার নাকি তাদের টোপ দিয়েছিল যে নারীশ্রমিকদের দিয়ে মতিঝিলে ‘বিরাট নারী সমাবেশ’ দেখানো হলে হাতিরঝিলে মালিকদের সমিতির অবৈধ ভবনটি সরকার ভেঙে ফেলবে না। অবশ্য রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির পর মতিঝিলের সমাবেশ এখন স্থগিত করা হয়েছে। সরকার ও কারখানা মালিকদের গোপন যোগসাজশের কারণে শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং রানা প্লাজার মতো ট্র্যাজেডি ঘটতে পারছে।
 প্রধানমন্ত্রীর উক্তি বাস্তববিবর্জিত
বিগত চার বছরে অনেকগুলো নতুন তৈরী সুউচ্চ ভবন ধসে পড়ার খবর মিডিয়ায় পড়েছি এবং দেখেছি। সরকার তাদের সমর্থন ও পেশিশক্তি সংগ্রহের লক্ষ্যে দলীয় লোকদের অবৈধভাবে জমি বরাদ্দ করছে। বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার বাসনায় আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই সুউচ্চ ইমারত গড়ে তুলছে। এমন অবৈধভাবে তৈরী ভবনের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার হবে বলে অনুমান মিডিয়াতেই দেখেছি। একটি খবরে দেখেছি, গত আট বছরে ভবন ধসে পড়ে ৩৫০ জন মারা গেছে। তার মধ্যে অবশ্য গত বুধবার রানা প্লাজায় নিহতদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে পড়ে। মাঝারি শক্তির একটি ভূমিকম্পও যদি আঘাত হানে তাহলে এসব অবৈধ ভবনের বেশির ভাগ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তাতে কত প্রাণহানি হবে শুধু অনুমানই করা যায়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য খালেদা জিয়া ১৮ দলের আহূত ৩৬ ঘণ্টার হরতালের বাকি অংশ প্রত্যাহার করেন। তিনি নিজেও উদ্ধারকাজ দেখতে সাভারে যান। অন্য দিকে সে ঘটনার পরই একখানি ট্রেন উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছিলেন, ফাটলের কারণে পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল, শ্রমিকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আনতেই কারখানায় ঢুকেছিল। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ভবনের মালিক সোহেল রানা যুবলীগের কেউ নয়। কিন্তু স্থানীয় যুবলীগের নেতা হিসেবে তার ছবি সংবলিত পোস্টার মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলম এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষও বলছেন, সোহেল রানা যুবলীগের কর্মকর্তা।
যেকোনো সভ্য দেশে এ ঘটনা ঘটলে সোহেল রানা ও পাঁচটি গার্মেন্ট কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে অন্তত নিহতের সংখ্যার সমানসংখ্যক হত্যা মামলা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সভ্যতার মাপকাঠিতে উতরাবে বলে মনে হয় না। দেশের শোকাপ্লুত মানুষ দায়ীদের কঠোর শাস্তি দানের দাবি জানাচ্ছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শাস্তির চেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রাণ বাঁচানো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কি একবারও গিয়েছেন সাভারে? উদ্ধারকাজেও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকেরাই মূল ভূমিকা নিচ্ছে বলে মনে হয়। তাদের মধ্যে স্থানীয় জনসাধারণ, মাদরাসাছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের লোকজনদেরই বেশি দেখতে পাচ্ছি ভিডিও ছবিতে। ওদিকে সোহেল রানা ও গার্মেন্ট কারখানাগুলোর মালিক ও কর্মকর্তারা সবাই নিখোঁজ। হেফাজতে ইসলাম থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকার সোহেল রানাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেটা তাদের জন্য অস্বাভাবিক হবে না। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সাংবাদিক দম্পতি রুনি ও সাগরের নৃশংস হত্যার পরও শোনা গিয়েছিল, সরকার অতি দ্রুত ঘাতকদের বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। সরকারের পুলিশ আজ পর্যন্ত এই দুই সাংবাদিকের হত্যাকারীদের হাজির করতে পারেনি। সুতরাং শোনা কথাগুলো বিশ্বাস না করে উপায় কী?
 সরকার বেপরোয়া, বিকৃত মস্তিষ্ক
আজ যারা ক্ষমতায় আছেন তারা মনে করেন, আর বেশি দিন তারা ক্ষমতায় থাকবেন না। হয়তো এ দেশেই থাকবেন না তারা। হয়তো সে কথা মনে করেই এমন ভয়াবহ ট্র্যাজেডির ব্যাপারেও ক্ষমতাসীনেরা এমন ‘ক্যাভালিয়ার’ (প্রগলভ, দাম্ভিক) উক্তি ও আচরণ করতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই শত শত মানুষের মৃত্যু নিয়েও রসিকতা করতে পারেন। মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ভবনের পিলারে বিএনপি-জামায়াতের ধাক্কাধাক্কির কারণেই হয়তো আটতলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে থাকতে পারে। হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধারণায় বাঁশের খুঁটির ওপরই আটতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
এই সুদূর প্রবাস থেকে যা জানতে পেরেছি, চাপা পড়া লোকদের অনেককেই হয়তো জীবিত উদ্ধার করা যাবে না। ভবনটির নিচের দু’টি তল মাটির নিচে দেবে গেছে। সেখান থেকে ধ্বংসস্তূপ ও লাশ উদ্ধার করার মতো ভারী যন্ত্রপাতিও বাংলাদেশে আছে বলে আমার জানা নেই। এ দিকে শোকে-ক্রোধে গার্মেন্টশ্রমিকেরা বেসামাল হয়ে উঠেছেন বলেই মনে হয়। এরা প্রতিবাদ করছেন, মিছিল করছেন, সড়ক অবরোধ করছেন। রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের এলাকাগুলো এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হয় না।
প্রকৃত প্রস্তাবে কোনো রকম নিয়ন্ত্রণক্ষমতাই এই সরকারের নেই। এ সরকার দেশে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে না, যেসব শ্রমিক উদয়াস্ত পরিশ্রম করে দেশের জন্য সম্পদ উপার্জন করেন, সরকার তাদের প্রাণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এমনকি সরকার ও মালিকদের অবহেলা ও উদাসীনতায় বেঘোরে মারা গেলে তাদের লাশ উদ্ধারেও সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ অবস্থায় এই সরকারের আর এক দিনও গদিতে থাকার অধিকার আছে বলে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। এ সরকার আর কালবিলম্ব না করে ভালোয় ভালোয় বিদায় নিলেই সবার স্বস্তির কারণ ঘটবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads