শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

প্রেমের আরেক নাম যাতনা ও টিআইবির ঘোষণা


মিনার রশীদ

নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাজ্যে থাকার সময় একটি টিভি অনুষ্ঠান খুব আগ্রহভরে দেখতাম। দাম্পত্য জীবনের অবিশ্বস্ততার কাহিনী নিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো থাকত। জীবনসঙ্গী কিংবা কয়েক দিনের বিছানাসঙ্গী অন্য কারো সাথে মিশে সবচেয়ে অনাকাক্সিত ত্রিভুজ সৃষ্টি করে বসেছে। এই খবর প্রতারিত সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে ক্যামেরার সামনে বিশেষ ঘটা করে জানিয়ে দেয়া হতো। যেকোনো উত্তেজক বিষয় বা বস্তুতে এসব উন্নত দেশের মানুষের আগ্রহ অত্যধিক। একদম তরতাজা অনুভূতি এবং জীবন্ত সেই ফাইটিংগুলোও দেখানো হতো। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকটি ওই বগা বা মুর্গার অতি আপনজন কিংবা অতি কাছের কোনো এক বন্ধু। দু’জন সুঠামদেহী গার্ড প্রস্তুত রাখা হতো সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে এই খেলার ‘ শিকার আর শিকারিকে’ রক্ষা করতে।
অন্যের সঙ্গীকে বাগিয়ে নেয়ার মজাই আলাদা। বগা বা মুর্গাটি যন্ত্রণায় ছটফট করলেও ওই ছিনতাইকারী বা ছিনতাইকারিণীর মধ্যে একধরনের বাহাদুরির ভাব ফুটে উঠত। অনুষ্ঠানটি দেখে মনে হতো, এসব দেশে ছয় কোটি মানুষ থাকলে এই ধরনের বগার সংখ্যাও প্রায় ছয় কোটি। আর ছিনতাইকারী ও ছিনতাইকারিণীর সংখ্যা ছয় কোটির অনেক ওপরে। অর্থাৎ যে একজনের হাতে বগা হয়, সে কমপক্ষে আরো দুইজনকে এমন করেই বগা বানায়। যুক্তি ও সান্ত্বনা একটাইÑ তুমি পারলে আমি পারি না?
পৃথিবীর একেকটি এলাকার মানুষ একেক কিসিমের যাতনা বা ইঁদুরের কলে আটকা পড়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, দাম্পত্যনীতি সব জায়গাতেই অসংখ্য ফাঁদের ছড়াছড়ি। প্রেম আর রাষ্ট্রনীতি একসাথে মিশেও ফাঁদ তৈরি হতে পারে। এমন একটা ভূরাজনৈতিক ফাঁদে আটকা পড়েছে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি। এই কলে আটকা পড়লে অনেক ইঁদুর বুঝতে পারে, সে আটকা পড়েছে। কিন্তু কোনো কোনো বগা তা বুঝতে পারে না। আমরা হলাম ভূরাজনৈতিক অনুভূতির বিচারে এই ধরনের একটা ‘বগা’।
বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক পরিসরে এই ধরনের ইঁদুর মারার একটি কলের নাম রাজাকার ধরার কল। এই কলটির ইজারাদারদের আমরা চিনি না। এসব কল বা ফাঁদের আতঙ্ক ছড়িয়ে শিকারকে একটা বিশেষ জায়গা বা অবস্থান থেকেও দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
এই কল থেকে সবাই গা বাঁচিয়ে চলতে চান। ‘বুদ্ধিওয়ালা’ বুদ্ধিজীবীগণ তাই অনেক ভেবেচিন্তে পা ফেলেন। এই মুল্লুকে ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। কাজেই কথাটি সত্য হলেই এখানে পার পাওয়া যাবে না। এই বোধটির মাঝখান থেকে উদয় হয়েছে আরো কিছু চেতনা। সেসব চেতনার ব্যাকরণটিও আয়ত্তে আনতে হয়। কাজেই এ দেশে স্বাধীনতা-উত্তর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক মানসটি এই ধরনের রাজাকার আতঙ্ক নিয়েই বেড়ে ওঠে।
অভাগা দেশটির অবস্থা হয়েছে হতভাগা মেয়েটির মতো। ধর্ষণকারীর হাত থেকে যে উদ্ধার করেছে, সে এখন সকাল-বিকাল ইভটিজিং করে। মাঝে মাঝে নাইট-টিজিংও বাদ রাখে না। আরো কিছু করে, যা মুখ ফুটে বলা যায় না। এই মুখ বন্ধ করে রাখার নাম দেয়া হয়েছে ‘স্বাধীনতার চেতনা’। অন্য কথায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’। ফালানীদের লাশ কাঁটাতারে ঝুললেও এই চেতনায় কোনো টনক নড়ে না। এই ধরনের অনেক কষ্ট দীর্ঘ দিন বুকে চেপে সেদিনের সেই পিচ্চি মেয়েটি আজ প্রৌঢ়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ব্যবহারের কারণে এসব ইঁদুর মারা কলের কার্যকারিতা কিছুটা নষ্ট হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ কথা বলেন তরুণ এমপি গোলাম মওলা রনি। তাকেও শিবির বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অথচ শিবির নয়, আবুলদের গল্পই তিনি এযাবৎ বেশি শুনিয়েছেন। তার পাশেও কিছু ইঁদুর (শিবির ) ধরার কল ফিট করে রাখা হয়েছে, যাতে তিনি বুঝেশুনে কথা বলেন বা সন্তর্পণে পা ফেলেন। তরুণ রনির মতো আরেকটু সাহস থাকলে তোফায়েল আহমেদও মুখ খুলতে পারতেন। আজীবন আওয়ামী লীগে থাকার একটা পণ করেছিলেন বলেই তিনি মুখটি খুলতে পারছেন না। তোফায়েল আহমেদের যে ভয়, সেই ধরনের ভয় থেকে আজ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মুক্ত। তাই তিনি নির্বিঘেœ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেবায় নিবেদিত এক বড় কর্মকর্তার মুখোশ উন্মোচন করতে পেরেছেন। এই মস্তবড় ‘হেফাজতে পাকিস্তান’ হলেন তখনকার ময়মনসিংহের ডিসি ম খা আলমগীর। অনেকগুলো ইঁদুর (রাজাকার) ধরার কল ফিট করিয়েও সাহসী এই বীরকে সত্য কথা বলা থেকে বিরত রাখা যায়নি। অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়লেও মাঝে মাঝে মনে হয়, এই দেশের প্রতি বোধহয় আল্লাহর একটি বিশেষ রহমত রয়েছে।
বিএনপির চার দিকেও ইঁদুর ( যুদ্ধাপরাধী ) ধরার কল ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল। দেড়ফুটি গণতন্ত্র আর এই ইঁদুর (যুদ্ধাপরাধী ) ধরার কলের আতঙ্কে ‘নো নড়ন-চড়ন’ অবস্থা হয়ে পড়ে বিএনপির। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করলেও তা ‘যুদ্ধাপরাধী রক্ষার আন্দোলন’ হয়ে যায়। কিন্তু সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে চার পাশে ফিট করা এই ইঁদুর (যুদ্ধাপরাধী) ধরার কলগুলো একে একে মাথায় তুলে মাটিতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। তাতে প্রমাদ গুনে এই ইঁদুর মারা কলের স্থানীয় এজেন্টরা। রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াতের ‘মহিলা আমির’ উপাধি দেন।
নূর নবী নামে একজন পাঠক জনকণ্ঠের সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের একটি আর্টিকেলের লিংক পাঠিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন এই লেখা পড়ে যেন কিছু লিখি। লেখাটিতে সাবেক তত্ত্ব্াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মো: হাফিজ উদ্দীন খানকে জামায়াতের একনিষ্ঠ কর্মী বানিয়ে ফেলেছেন বিক্ষুব্ধ স্বদেশ রায়। ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আর কিছু সত্য বলে ফেললে টিআইবির সুলতানা কামাল চক্রবর্তীকেও জামায়াতের মহিলা নায়েবে আমির হিসেবে ঘোষণা করে বসবেন। কলামটিকে তাই খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে।
নিজে সংবাদপত্র জগতের মানুষ নই। বাই চান্সে কলামিস্ট সেজেছি। খুব বেশি সাংবাদিককে চিনি না। এই স্বদেশ রায় সম্ভবত যায়যায়দিনের সেই স্বদেশ রায়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কলামগুলোকে কয়েকজন বোদ্ধা পাঠকদের কাছ থেকে নিয়ে সাধারণ পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়েছিল যে ‘যায়যায়দিন’ সেই টিমের তিনিও একজন সদস্যÑ যার কলামের বিশ্লেষণী দক্ষতায় আমার মতো অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন। সেই মুগ্ধতার কিছুটা আবেশ আমার মধ্যে এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। কাজেই মনোযোগ দিয়েই তার পুরো লেখাটি পড়লাম। শফিক রেহমান সম্পাদিত যায়যায়দিনের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। প্রায় সব লেখায়ই চমৎকার  রাজনৈতিক বিশ্লেষণ পাওয়া যেত। কোনো সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে কোনো পাঠক কখনোই অনুভব করতেন না। আজকের জনকণ্ঠের স্বদেশ রায় সেই অবস্থা থেকে অনেকখানি সরে গেছেন বলে মনে হয়েছে।
তবে তিনি একটি অতি মূল্যবান কথা লিখেছেন। টিআইবি একটি বিদেশী এনজিও। এরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারে না। দেহটি বিদেশে থাকলেও স্বদেশ রায়ের এই স্বদেশপ্রীতি দুই শত ভাগ সমর্থন করি। কিন্তু সমস্যা হলো, এই টিআইবির অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য দেশের গণতন্ত্রের বিপক্ষে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে। তখন কিন্তু এই দাদারা ‘ মাইন্ড’ করতেন না। আজ যখন টিআইবির একাট ফর্মুলা দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণœœ রাখার পক্ষে এসেছে, তখন সেই দাদারা ‘মাইন্ড’ করে বসলেন। হোয়াং হো নদী যেমন চীনের দুঃখ, স্বদেশ দাদাদের এই ‘মাইন্ডগুলো’ তেমনি বাঙালি জাতির দুঃখ।
নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দাবি দেশের সর্বস্তরের জনগণের দাবি হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ এই দাবির মওসুমি সমঝদার। বিরোধী দলে থাকলেই এই ব্যবস্থা তাদের জন্য দরকার। এই মুহূর্তে না চাইলেও ভবিষ্যতে এই একই আওয়ামী লীগ আবারো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইবে। জনগণ এটি জানে বলেই আগে থেকেই চাওয়া শুরু করেছে।
টিআইবি, সুজনরাও আজ জনগণের এই চাওয়ার বাইরে থাকতে পারছে না। আওয়ামী লীগ তাই নিজের ছায়ার দিকেও ক্ষেপে যাচ্ছে। টিআইবি এত দিন যে বিশেষ ‘সার্ভিস’ দিয়েছে, তার সব কিছু গাফফার চৌধুরী ও স্বদেশ রায়রা ভুলে গেছেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে দুদকের চেয়েও বেশি পেরেশান হয়ে সরকারকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছে এই টিআইবি। বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও সুলতানা কামাল তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সরকারকে বেশ ভালো নম্বর দিয়েছেন। বিএনপির জমানায় এই ধরনের শেয়ারবাজার, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, কালো বিড়াল, কুইক রেন্টাল পেলে টিআইবি এবং সংশ্লিষ্ট সুশীলেরা এ দেশে কেয়ামত সৃষ্টি করে বসতেন।
টিআইবির নির্বাহী প্রধান ইফতেখারুজ্জামানের রাজনৈতিক আনুগত্যটুকু স্বদেশ রায় না জানলেও অন্য সবাই জানেন। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি হলেন আওয়ামী ঘরানার বিশেষ লেখিকা সেলিনা হোসেন। ট্রেজারার মাহফুজ আনাম ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ হিসেবে আওয়ামী লীগই তার একমাত্র গণতান্ত্রিক চয়েস। দীপু মনির স্বামী তৌফিক নেওয়াজের পরিচয়টি এই বেলায় না বললেও চলে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার আওয়ামী প্রেম অন্যদের মতো তীব্রভাবে প্রদর্শিত না হলেও বিএনপির প্রতি চরম বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন। ফলে সুশীলসমাজে তার ব্যারোমিটারের পারদটি ওপরের দিকে উঠেছে।
তা ছাড়া সচেতন নাগরিক সমাজ নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে ৪৫টি কমিটি করা হয়েছে, সেসব কমিটির ৬২৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩১৪ জন সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ৪৪ জন বিএনপি-জামায়াত ঘরানার, পাঁচজন জাতীয় পার্টির এবং বাকিরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন বামপন্থী দলের। কাজেই সেই টিআইবি যখন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের ফর্মুলা উপস্থাপন করে, তখন স্বদেশ রায়রা হতাশ হতেই পারেন।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, ট্রাস্টি বোর্ডে অন্য অনেকে থাকলেও সাংবাদিক মহাশয় ক্ষেপেছেন মূলত দুইজনের ওপর। একজন হাফিজ উদ্দীন খান। অন্যজন আবদুুল্লাহ আবু সাঈদ। এই প্রথম আমাদের ঢাকা কলেজের অতি প্রিয় শিক্ষক আবদুুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের বিরুদ্ধে কাউকে কিছু লিখতে দেখলাম। আলোকিত এই মানুষটির ওপরও স্বদেশ রায় নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আরোপ করেছেন। ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের সময় প্রকৃতিপ্রেমিক এই মানুষটি নাকি নীরব ছিলেন।
এ দেশে একটি দুর্ভাগ্যজনক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সরকার বিদায় নেয়ার সময় পূর্বতন সরকারি দলের সোনার ছেলেরা নতুন সরকারি দলের রুপার ছেলেদের রোষানলে পড়ে। বিরোধী দলকে পিটুনি দেয়ার সময় যে ছিল ছাত্রলীগ, ফিরতি পিটুনি খাওয়ার বেলায় সে হয়ে পড়ে সংখ্যালঘু। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি আওয়ামী লীগের জন্য বাড়তি একটা সুবিধা। এই সুবিধা নিতে আওয়ামী ব্র্যান্ডের মানবতাবাদীরা যে স্বর ও ভঙ্গিতে কান্নাকাটি করেন, তা থেকে একটু ভিন্ন ঘরানার আবদুুল্লাহ আবু সাঈদদের কান্নার ভঙ্গিটি সামান্য ভিন্ন হতেই পারে।
শুধু সরকার বদলের সময়েই নয়। একটু বেকায়দায় পড়লেই আওয়ামী লীগ এই বাড়তি সুবিধাটি গ্রহণে প্রলুব্ধ হয়। অটোমেটিকভাবে কাজটি সংঘটিত না হলে নিজেরাই ম্যানুয়েল বাটনটি চেপে দেয়। শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে ধরা খায় খোদ ছাত্রলীগের কর্মী। আওয়ামী মহল তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ছেড়ে দেয়। সংখ্যালঘুদের ওপর যত সব আক্রমণ, সব হচ্ছে রাতের আঁধারে। অথচ পৃথিবীর কোথাও রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রাতের আঁধারে হয় না। রাতের আঁধারে ওই আক্রমণগুলোকে দেশের মিডিয়া সামান্য অনুসন্ধান ব্যতিরেকে বিরোধী গ্রুপের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এই আক্রমণকারী সম্পর্কে খোদ সংখ্যালঘু জনগণের মনেই নতুন ভাবনার উদয় হয়েছে।
কারণ তারা নিজেরা ভুক্তভোগী হলেও এজাতীয় হামলার খবরে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদি অনুমান করেই আক্রমণকারীকে বের করতে হয়, তবে বেনিফিশিয়ারিই প্রথম সন্দেহের কাতারে থাকা উচিত। মানুষ আজ আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি সচেতন (well informed)। একটি জনকণ্ঠের বিপরীতে অনেকগুলো গণকণ্ঠ দাঁড়িয়ে গেছে; সেই হিসাব বোধহয় স্বদেশ রায়রা রাখেন না।
বিজেপি ও শিবসেনার অনেক বিবৃতি আছে, যাতে ইন্ডিয়ার মুসলমানদেরকে লাথি মেরে পাকিস্তানে পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে। এ দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি এ ধরনের ঘৃণা বিএনপি তো দূরের কথা স্বয়ং জামায়াত-শিবির বা অন্য কোনো ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কোনো বক্তব্য-বিবৃতিতে পাওয়া যায় না। বরং সংখ্যালঘুদের মন জয় করার জন্য তাদের মধ্যেও একটা প্রচেষ্টা অনেক সময় দেখা যায়। ছাত্র শিবিরের ছেলেরা এবার বিভিন্ন জায়গায় মন্দির এবং অন্যান্য উপসনালয় পাহারা দিয়েছে। কাজেই যে দেশটিতে স্বদেশ রায়রা অবস্থান করছেন, সেই মাটি ও মানুষের এই বৈশিষ্ট্যটিকে একটা আক্রোশের বশে বিকৃত ও বিভ্রান্ত করা ঠিক হবে না।
আজ কিছু কথা ও ভাবনা দেশের সংখ্যালঘুদের মনে উদয় হচ্ছে। স্বদেশ রায়দের জবানিতে সেই ভাবনা উঠে আসছে না। তাই দৈনিক আমার দেশের সঞ্জীব চৌধুরীদের মতো বিবেকরা দাঁড়িয়ে গেছেন। তার লেখা সুধীজনের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এ দেশের হিন্দুরাও বুঝতে পারবেন, কে তাদের প্রকৃত সুহৃদ। দেশের মধ্যে কোনো একটা সম্প্রদায়কে অস্বস্তিতে রেখে কোনো জাতি এগোতে পারবে না। একজন খাবার খেলে যখন অন্য জনের নামে বিল আসে, তখন খাদকরা উৎসাহিত হয়। এই উৎসাহদাতারা আর যা-ই হোক, ভুক্তভোগীদের শুভাকাক্সী হতে পারে না। ‘জানি, আমার কান্নার শব্দটি আপনার দরকার; কিন্তু মহাশয় হাতে চাপটি তো খাচ্ছি আমি।’ কাজেই এ ধরনের নোংরা রাজনীতিকে উৎসাহিত করলে এ দেশের সংখ্যালঘূু সম্প্রদায় আরো সঙ্কটের মুখে পড়ে যাবে। এ দেশের লুটেরা শ্রেণী শিকারের ধর্ম দেখে কখনোই শিকার করে না। যে দুর্বল তাকেই এরা টার্গেট করে।
এই দেশকে হিন্দু-মুসলমান সবার জন্যই সোনার দেশ করতে পারে এই সঞ্জীব চৌধুরীরাই। কাজেই ইঁদুর ধরার হরেক রকম কলের ইজারাদারদের নয়, এ দেশে দরকার আরো কিছু সঞ্জীব চৌধুরীর।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads