মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

গণদাবি উপেক্ষার আরেক নজির


জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো বিধান ছাড়াই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবে। আগের ইসিও সেনা মোতায়েনের বিধান রাখার প্রস্তাব দেয়নি। আরপিও সংশোধনের ব্যাপারে তখনকার প্রস্তাবকেই সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে সংস্কার করার পর এবার চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের একজন অব: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জাবেদ আলী গত সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান বলে পত্রপত্রিকা খবর দিয়েছে। ১১ এপ্রিল আরপিও চূড়ান্ত হয়েছে। ওই নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আরপিওতে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর’ সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীর বিধান না রাখা হলেও ৫(১) (২) ধারা এবং সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা প্রদান করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯ মার্চ ইসির কাছে যে পত্র দিয়েছে, এতে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। ২০০১ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ২০০৯ সালের অধ্যাদেশে তা আর রাখা হয়নি। কমিশনার জাবেদ আলী আরো বলেন, আরপিওতে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে, ইসি প্রয়োজন বোধ করলে যেকোনো বিভাগ বা সংস্থা ইসিকে সহায়তা দিতে হবে। অন্যথায় শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংসদ বা পার্লামেন্ট নির্বাচন। বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় সংসদ নির্বাচন অন্তত পাঁচ বছরের জন্য দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করে বললে অত্যুক্তি হয় না।

বাংলাদেশের এটাই বাস্তবতা যে, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা নেই এবং দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকলে তারা নির্বাচনে যথাসাধ্য প্রভাব বিস্তারে তৎপর হবেন বলে সবাই মনে করেন।
এই প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং নির্বাচনকালে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনÑ এ দু’টি দাবি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ, জনগণ অতীতে দেখেছে, যখনই নির্দলীয় অস্থায়ী সরকারের তত্ত্বাবধানে এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সংসদ নির্বাচন হয়েছে; তখনই তা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও কারচুপিহীন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সব মহলে। বর্তমানে ক্ষমতায় আছে যে দল, তার নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও এই অভিজ্ঞতার অংশীদার। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের অঙ্গীকার বিস্মৃত হয়ে এবং গণদাবি উপেক্ষা করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়েছে। তেমনি তারা নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জনদাবির সাথেও একাত্ম নন। এ অবস্থায় ইসি যেভাবে আরপিও চূড়ান্ত করছে, এতে সরকার খুশি হলেও তা নিয়ে জনগণের মনে বিরাট সন্দেহ থেকে যাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে।
আমরা মনে করি, সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং কারচুপি ও ভোট ডাকাতি প্রতিরোধ তথা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সবার আস্থা অর্জনের স্বার্থে সেনা মোতায়েনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরপিওতে শেষমুহূর্তে সংশোধন বা সংযোজন করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads