বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের আমরা প্রতিবাদ করছি



দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক ও বহুল প্রচারিত দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানকে গতকাল সকালে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর প্রথমে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অপরাহ্নে মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে পুলিশ তার ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন জানায়। বলাবাহুল্য, এর আগে জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান জনাব নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ এবং গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার কর্তৃক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ও তার সহধর্মীনীগণ ইসলাম এবং ইসলামের এবাদতসমূহ বিশেষ করে নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতিকে অশ্লীল ভাষায় ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ ও অবমাননা সম্পর্কে দৈনিক আমার দেশে তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগে মোট তিনটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মহানগর হাকিম পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে জনাব মাহমুদুর রহমানের ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জনাব মাহমুদুর রহমান অকুতোভয় একজন সাংবাদিক, সম্পাদক। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন, জুলুম, নির্যাতন, দুর্র্নীতি ও অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের তিনি একজন কড়া সমালোচক। তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠস্বর। জনাব মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও রিমান্ড চাওয়ার আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনটিই সংবাদপত্রের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশের নীতিমালার খেলাফ নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান নিজামুল হক ও বেলজিয়াম প্রবাসী একজন আইনজীবীর গোপন স্কাইপি সংলাপের তথ্য প্রকাশ একটা সংঘটিত ও প্রকাশ হয়ে পড়া ঘটনার প্রকাশ মাত্র এবং তাদের ঐ সংলাপ ব্যক্তিগতও নয় এবং অফিসিয়ালও নয়। আমাদের মতে এর সাথে জাতীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশের একটি আদালত ও তার বিচারক এবং বিচারের গোপনীয়তা ও পবিত্রতার সম্পর্ক ছিল যা লঙ্ঘন করা হয় সংলাপের মাধ্যমে। এই সংলাপের তথ্যটি যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা সাপ্তাহিক দি ইকোনমিস্টেও প্রকাশিত হয়েছিল। ইকোনমিস্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে এর বিস্তারিত ছাপেনি এবং এর সম্পাদক কেলেঙ্কারির সত্যতা এবং পত্রিকায় প্রকাশের আইনগত দিক যাচাই-বাছাই ও তদন্তপূর্বক পরবর্তীকালে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছিল তাদের তদন্তে স্কাইপি সংলাপের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং সংলাপের ধরন, প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপটে জনস্বার্থে তা প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয় বলে তারা মনে করেছেন। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এবং বিচারবিভাগীয় কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে জনাব মাহমুদুর রহমান স্কাইপির তথ্য প্রকাশ করে সংবাদপত্রের বস্তুনিষ্ঠতা লঙ্ঘন করেননি বরং দায়িত্বশীলতার পরিচয়ই দিয়েছেন। একইভাবে নাস্তিক ব্লগারদের ধর্মবিদ্বেষ, ইসলামের অবমাননা এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার সহধর্মীনীগণ নামায, রোজা প্রভৃতি সম্পর্কে অশ্লীল কটূক্তির বিষয়টি প্রকাশ করে তিনি একটা চলমান অপরাধ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন। অবহিত হওয়ার পরই মানুষ অপরাধ সম্পর্কে সোচ্চার হয়েছে এবং সরকারেরও সুযোগ হয়েছে অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার। এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি জনাব মাহমুদুর রহমান সর্বপ্রথম তার পত্রিকায় ছাপেননি, প্রথম ছেপেছিল অন্য একটি দৈনিক। সব মিলিয়ে জনাব মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের প্রতি একটা আঘাত বলেই বিবেচিত হবে। এছাড়াও সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের ঈমানদার মুলমানদেরও আহত করবে বলে আমরা মনে করি। এমনই সমস্যা ও সঙ্কটের ভারে দেশ আজ ন্যুব্জ। ইতোমধ্যেই তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। সাংবাদিকরাও অব্যাহত কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহার ও তাকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads