বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা


গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ঝড় বয়ে গেছে, তাতে দেশটি যে সত্যিকারের সঙ্কটকাল পেরুচ্ছে এ নিয়ে এখন সংশয়ে নেই কেউই। এ ব্যাপারে সর্বত্র সতর্কবাণী উচ্চারিত হতে শুরু করেছে। বিদেশীরা তাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে। আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মতো যেকোনো সময় লাল সঙ্কেত বেজে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশী ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা আসছেন না এ দেশে। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ নিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী কূটনৈতিক অংশীদার দেশগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনিশ্চিত ও সংঘাতমুখী রাজনীতির মূল সমস্যার সমাধানের জন্য নানা উদ্যোগের কথাও উচ্চারিত হচ্ছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে। দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটা করে নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা উপস্থাপন করেছে। নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি সঙ্কট উত্তরণে তাদের সুপারিশ পেশ করেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি যেন এক নতুন বাঁকে এসে উপনীত হয়েছে, যদিও বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদ রয়েছে চলতি পঞ্জিকা সালের পুরোটাই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি নির্ণায়ক ইস্যু হলো নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ও যুদ্ধাপরাধের সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচারব্যবস্থা। দু’টি ক্ষেত্রে সরকার কৌশল গ্রহণ করেছে একতরফা। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ ও জনমত যেখানে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিল, সেখানে বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে এ ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে বড় রকমের কোনো বক্তব্য না থাকলেও অপরাধের বিচারের পরিবর্তে রাজনীতির বিচার করতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়ে পড়েছে বিতর্কিত। এই বিতর্ক শুধু দেশে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণবিদ্রোহ দেখা দেয়, তাতে কয়েক দিনে পৌনে ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মবিদ্রোহের পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্মরণকালের বৃহত্তম প্রতিবাদ সমাবেশ ও লংমার্চ হয়েছে রাজধানীতে। ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তারুণ্যের জাগরণ দেখাতে গিয়ে উল্টো জাগরণে ইসলামপন্থীদের পক্ষে দাঁড়ায় দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী। নীরবে নিভৃতে এক সময় সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার প্রতিবাদ আর শাহবাগ মঞ্চের কিছু ব্লগারের আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ একাকার হয়ে গেছে।
সৃষ্ট পরিস্থিতিকে নানাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে এখন। পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি অংশ বিষয়টিকে বিরোধী শিবিরের উদারপন্থী জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও মধ্যপন্থী ইসলামি দল জামায়াতকে সর্বাত্মকভাবে দমন করার সরকারি কৌশলের প্রতিক্রিয়ায় র‌্যাডিকেল (আমূল পরিবর্তনকামী) ইসলামিস্টদের উত্থান হিসেবে দেখেছেন। তাদের মধ্যে এ আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকারের বর্তমান সর্বাত্মক দমননীতি চলতে থাকলে র‌্যাডিকেল ইসলামিস্টরা ক্ষমতার পরিবর্তনে প্রধান নির্ণায়কে পরিণত হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের বোঝানো হয় এর উল্টোটা। বলা হয়, বিএনপির সমর্থন পেয়ে র‌্যাডিকেল ইসলামিস্টরা এতটা শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় রাখতে চাইলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে দেয়ার বিকল্প নেই। আবার তৃতীয় একটি ধারা পরিস্থিতি মূল্যায়নে উপসংহারে আসে যে, সরকার দেশকে যেভাবে স্পষ্ট বিভক্তি ও যুধ্যমান অবস্থায় নিয়ে গেছে, তাতে অচিরেই অচলাবস্থা নেমে আসবে। অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে চাইবে। এর বিরুদ্ধে জনগণ দাঁড়িয়ে গেলে অনিবার্য হয়ে উঠবে সামরিক হস্তক্ষেপ। এতে বিঘিœত হতে পারে সংবিধানের ধারাবাহিকতা। এ শঙ্কাটি বারবার উচ্চারণও করছে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। তিন বাহিনীর প্রধানকে ডেকে নিয়ে সংসদীয় কমিটির সামনে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতিশ্রতি নেয়া হয়েছে। এটি এমনভাবে করা হলো যাতে অনেকের মধ্যে যেন এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে তিন বাহিনী সংবিধানের ব্যবস্থার বাইরে কিছু করে ফেলতে যাচ্ছিল।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এসব মূল্যায়নের প্রভাব দেখা যাচ্ছে এখনকার রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতিতে। সেকুলারিজমের রক্ষাকর্তা হিসেবে ক্ষমতায় এসে গণবিস্ফোরণের মুখে আওয়ামী লীগের পতন ঘটলে এ সরকারের পৃষ্ঠপোষক বিদেশীদের স্বার্থ বিঘিœত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিতে পারে। আওয়ামী লীগকে আরেক দফা সমর্থন দিয়ে সরকারে আনার প্রক্রিয়া ব্যাকফায়ার করে প্রতিবেশীদের সব স্বার্থের তরি ডুবিয়ে দেয় কি না তার হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। একই সাথে চলেছে বিকল্প শক্তি খোঁজার চেষ্টা। যারা অন্ততপক্ষে প্রভাবশালী দেশগুলোর স্বার্থের প্রতি বৈরী হবে না। এ ক্ষেত্রে যে প্রধান দু’টি ইস্যুতে সঙ্ঘাত চরমে যেতে শুরু করেছে, সে বিষয়ে সমঝোতার ফর্মুলাও আসছে। সাম্প্রতিককালের আলোচিত ফর্মুলাটি সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এর পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন চেয়ারপারসন সুলতানা কামালও। বিরোধী দলের হরতালের কর্মসূচির বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন টিআইবি কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ বৃহদাকার দুর্নীতির আলোচিত বিষয়গুলোতে টিআইবির কোনো গভীর অনুসন্ধান দেখা যায় না। অথচ তারা সংবাদ সম্মেলন করেছে পাঁচ বছর আগের ওয়ান-ইলেভেন সরকারে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। চলতি সরকারের পুরো সময়টাতে টিআইবির কর্মকাণ্ডে সরকার বাঁচানোর এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি টিআইর প্রধান কার্যক্ষেত্র দুর্নীতি বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে নতুন ফর্মুলা দিয়েছে।
টিআইবি উপস্থাপিত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেয়া ফর্মুলার মূল ধারণা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে মামলা চলাকালে এমিকাস কিউরি হিসেবে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি সরকার ও বিরোধীপক্ষের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবেন না এমন পাঁচজন করে ১০ জনকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে বলেছিলেন। এতে অনির্বাচিত ব্যক্তি দিয়ে সরকার চলতে পারে না বলে যে বিতর্ক উত্থাপন করা হয়েছে তার অবসান ঘটবে। এমনকি সংবিধানের বিদ্যমান অবস্থাতেও নির্বাচনকালে সে ধরনের সরকার গঠন করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টিআইবি’র নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা অনুসারে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংসদীয় ঐকমত্য কমিটি গঠন করা হবে। চার, ছয় অথবা উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য অন্য সমসংখ্যক সদস্য নিয়ে এ কমিটি হবে। কমিটি উভয় রাজনৈতিক জোটের সাথে আলোচনা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দেবে। তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথবা অনির্বাচিতও হতে পারেন। সরকারের প্রধান নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে তারা অনধিক তিনজনের তালিকা করে স্পিকারের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাবেন। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট একজনকে সে সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন। ঐকমত্য কমিটি নির্বাচনকালীন সরকারের ১০ জন সদস্যের নামও চূড়ান্ত করবেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসংখ্যা দুই জোটের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে বাছাই করা সমসংখ্যকও হতে পারে। আবার অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে অথবা উভয় ধরনের লোকদের নিয়েও হতে পারে। বিগত তিনটি নির্বাচনে গড় প্রাপ্ত ভোটের দলীয় অনুপাতের ভিত্তিতেও প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত অনির্বাচিত ও নির্দলীয় ব্যক্তির তালিকা থেকেও ১০ সদস্যের মন্ত্রিসভা হতে পারে। প্রস্তাবের রূপরেখা পরবর্তী ও এর পরের নির্বাচনে কার্যকর করার জন্য সংবিধান সংশোধনেরও সুপারিশ করা হয় ফর্মুলায়।
টিআইবির এই প্রস্তাব উপস্থাপনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ নিয়ে সংস্থার চেয়ারপারসন দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে। দু’জনের এই বৈঠকে বিস্তারিত কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে প্রকাশ্য বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের আগে নতুন নতুন ফর্মুলা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করবে। তিনি অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা আবারো বলেন দৃঢ়তার সাথে। টিআইবির ফর্মুলা উপস্থাপনের পর সিপিডি চলমান রাজনৈতিক অবস্থা থেকে উত্তরণে তিন দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সব ধরনের ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কার্যক্রম বন্ধ করা, বিরোধী দলের সব নেতার মুক্তি এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষম ও অবাধ নির্বাচনের একটি কাঠামো ঘোষণা করা। এর মাধ্যমে বর্তমান অস্থিরতা দূর হবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
যুদ্ধাপরাধ মামলার অভিযুক্ত ও রাজাকারদের ফাঁসি আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ জমজমাট করে তোলার সময় সেকুলার ঘরানার সব শক্তি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হয়েছিল। ভারতের পত্রপত্রিকায় প্রতিবেশী দেশটির মদদে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আয়োজন সম্পন্ন বলেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব খবরাখবরে নয়াদিল্লিও সর্বতোভাবে এটিই প্রত্যাশা করে বলে মনে হয়। কিন্তু সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সারা দেশে সহিংস গণবিদ্রোহ এবং রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের স্মরণকালের বৃহৎ জনসমুদ্রের পর প্রতিবেশী দেশ এখন হয়তো ভিন্ন বিকল্প নিয়েও ভাবছে। টিআইবি ও সিপিডির ফর্মুলা ও সুপারিশের সাথে এর সম্পর্ক থাকলে শেখ হাসিনার সরকার আরেক দফা ক্ষমতায় আসার বিষয়টি যে বন্ধু দেশগুলোর দ্বারা পরিত্যক্ত হতে চলেছে তা এক প্রকার নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। ঘটনা পরম্পরার মেরুকরণ এভাবে হলে ২০০৮ সালে যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার পথ করে দিয়েছিল তারা সবাই আবার আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তিকে স্বাগত জানাতে পারে।  ঘটনাবহুল মাস এপ্রিলের শেষার্ধে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যাতে পরিস্থিতির ভিন্নমুখী গতি স্পষ্ট হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দু’দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বাংলাদেশ পরিস্থিতির উদ্বেগজনক দিকগুলো উত্থাপিত হবে এবং এ বিষয়ে মন্তব্য আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ক্রাইসিস গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এখানকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ ও করণীয় নির্ধারণের জন্য। ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি রয়েছে। তার আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অধ্যাপক গোলাম আযম ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় আসতে পারে। অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যাপারে যেকোনো চরম দণ্ড দেশের  ভেতরেই শুধু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না একই সাথে এতে দেশের বাইরেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল অধ্যাপক আযমের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি চিঠি লিখেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ও এর পরবর্তী দেশব্যাপী রক্তক্ষয়ী সহিংস বিক্ষোভের পর সরকার সব বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশনে ফ্রিডম চালিয়ে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে মর্মে একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল বর্তমান অবস্থায় সে পর্যায়ে নেই বলেই হয়তো বাস্তবে তা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সরকার হার্ড লাইনে যেতে যেতে এখন কারাগারে আর ঠাঁই নেই। যত সংখ্যক বন্দীকে সেখানে রাখা হয়েছে তাদের জন্য চার গুণ ধারাণক্ষমতা সম্পন্ন জেলের প্রয়োজন ছিল। আরো হার্ড লাইনে যাওয়ার জন্য হয়তো দেশের বন্ধ হওয়া মিল কারখানাগুলোকে কারাগার ঘোষণা করতে হবে। এসব দেখে প্রাজ্ঞ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক জরুরি অবস্থা জারির আয়োজন হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তা যদি কার্যকর করা না যায় তাহলে সরকারের সামনে এগোনোর পথে বিরাট এক দেয়াল খাড়া হয়ে যেতে পারে। তখন হয়তো পেছনে তৈরি হবে বিশাল এক খাদ। সে ধরনের এক পরিস্থিতির লক্ষণ দেশের বিভিন্ন স্থানে লক্ষ করা যাচ্ছে। কোনো কোনো সময় ক্ষণ নাকি হয় দিনের মতো, দিন পরিণত হয়ে যায় বছরে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রতিটি মুহূর্ত তেমনই মূল্যবান হয়ে উঠেছে সঙ্কট উত্তরণের জন্য। অথচ এ সময়ে ক্ষমতাসীনদের নির্বিকার মনোভাব ঠিক যেন হয়ে উঠেছে ‘রোম জ্বলছে, নিরু বাজাচ্ছে বাঁশি’র মতো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads