সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

টকশোগুলোর - টক, ঝাল, মিষ্টি এবং সংকট উত্তরণে দায়িত্বশীলতা


জ.ই মামুন ও ড. সাদেকাকে বলছি
আমরা বাংলাদেশীরা আজকে একটা চরম সঙ্কটময় অবস্থা অতিবাহিত করছি। বিরাজমান পরিস্থিতির উন্নতি কবে ঘটবে এবং কিভাবে ঘটবে বা আদৌ ঘটবে কিনা- এই প্রশ্ন এখন সবার। যাই হোক, এই প্রশ্নকে সামনে রেখে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কবে আসবে সেই কাঙ্খিত সমাধান, কিভাবে আসবে সেই সমাধান এবং সর্বোপরি কবে ঘটবে আমাদের বর্তমানের এই দশার উত্তরণ। আমরা অপেক্ষা করছি কবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সত্যিকারের আন্তরিকতা ও উদারতা নিয়ে সংলাপে বসবে এবং যার ফলশ্রুতিতে আমরা পাব একটি কাক্সিক্ষত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, বিশেষত যার স্পষ্টতার অভাবে বর্তমান পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে, আমরা অপেক্ষা করছি কবে বন্ধ হবে হরতাল-অবরোধ, কবে বন্ধ হবে মানুষ-পুলিশ খুনোখুনি, কবে পাব একটি শান্তিময় পরিবেশ, যার পরশে আমরা বাংলাদেশীরা সবাই হতে পারব শান্তিকামী এবং যে পরিবেশের ছোঁয়ায় আমরা সবাই একে অপরের মানবিক গুণাবলি বিকাশের জন্য পুরস্কৃত করতে কুন্ঠিত হবনা। দেশে সমাজে ন্যায়পরায়ণতা, সততা, সত্যবাদিতা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা হবে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের উৎকর্ষতার মাপকাঠি। কিন্তু আমরা সবাই জানি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের এই চাওয়া পাওয়া সুদূর পরাহত। আমাদের দেশে এটি এখন সম্ভব নয় এ জন্য যে, আমাদের দেশের কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তিনি বাইরের দেশের মন্ত্রীর মত পদত্যাগ করবেন না কিংবা চাইবেন না প্রকাশ্যে ক্ষমা নিজের অনাকাক্সিক্ষত দায়িত্বে অবহেলার ন্যূনতম দায়ের জন্য। কারণ আমরা এখনও সেই স্বার্থত্যাগী দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বে নিজেদেরকে পরিণত করতে পারিনি।     
আজকের চলমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে মিথ্যাচার হচ্ছে বাগ্মিতা, অশ্লীলতা হচ্ছে নান্দনিকতা, দায়িত্ববান হচ্ছেন ক্ষমতাবান, আইন রক্ষাকারী হচ্ছেন আইন ভঙ্গকারী, দেশের উন্নয়নে বাধাদানকারী হচ্ছেন দেশপ্রেমিক, দুর্নীতি হচ্ছে মন্ত্রীত্বের রদবদল, নগ্ন গলাবাজি হচ্ছে তেজোদীপ্ত মহিমা, শান্তি বিনষ্টকারী হচ্ছে শান্তিকামী, অযুক্তি-কুযুক্তি হচ্ছে পরিশীলিত যুক্তি, অশালীন সমালোচক হচ্ছেন নন্দিত আলোচক ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে আশা করব যে আমাদের দেশ খুব তাড়াতাড়ি একটা ভাল সমাধান পাবে এবং বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পাবে। তারপরেও অনাগত সেই প্রত্যাশিত ভাল ভবিষ্যতের জন্য আমরা আশায় বুক বেধে অপেক্ষা করছি কখন আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থকে, দেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সত্যিকারের আন্তরিকতা, উদারতা, নিরপেক্ষতা দ্বারা দেশের এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সচেষ্ট হবেন?
দেশের একজন শান্তিকামী সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি আমার কাছে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত যে টক শোগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো আমাদের দেশবাসীর কাছে অনেক বেশি মূল্যায়িত হচ্ছে। আলেম সমাজ, ব্লগার, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সমাজবিদ, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ দেশবরেণ্য মাথামুরুব্বি ব্যক্তিত্ব চলমান বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন দিক বিভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের সামনে ব্যাখ্যা বিশ্নেষণ করার প্রয়াস পাচ্ছেন। এক্ষেত্রেও আমরা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দিকে চেয়ে থাকার মত তাদের দিকেও চেয়ে আছি- তারা হয়তো আমাদেরকে আমাদের জাতিকে একটা কাক্সিক্ষত সমাধানের পথ দেখাতে পারবেন। আমরা তাদেরকে পথ বাস্তবায়ন করতে বলছিনা বরং বলছি এমন একটি পথ বাতলে দিতে যে পথে আমরা সবাই একটা উত্তরণের লক্ষ্যে হাঁটতে পারব। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের ব্যক্তিত্বরা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট, আমরা স্বভাবতই ধরে নেই যে, আমরা তাদের কথায় কোন পক্ষের সমর্থন পাব আর তার বিপক্ষের কথা পাব। কিন্তু তারপরেও প্রেক্ষাপটের আলোকে তাদের কথাবার্তাতেও প্রত্যাশিত উত্তরণমূলক কিছু দিক নির্দেশনাও লক্ষ্য করা যায়, তব্ েযা যথেষ্ট নয়। আবার এমনও ব্যক্তিত্ব এই শোগুলোয় অংশগ্রহণ করেন যাদেরকে আমরা ভাবি অরাজনৈতিক দেশের সত্যিকার মঙ্গলাকাঙ্খী, মানসিক নিরপেক্ষতার দাবিদার, রাজনীতির বাইরে থেকে রাজনীতি প্রত্যক্ষকারী যারা পেশাকে রাজনীতির সাথে বা রাজনীতিকে পেশার সাথে সম্পৃক্ত করেননা অর্থাৎ যারা আপন পেশায় দায়িত্বশীল এবং যারা সেই দায়িত্বশীলতার দায় স্বীকার করতে কুন্ঠিত হন না; আর বাস্তবিকই এই সব ব্যক্তিদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি এইজন্য যে, তারা কোন রাজনৈতিক এজেন্ডার জন্য নয় বরং দেশ ও জাতিকে সামনে রেখে, দেশের স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে আমাদের বাঙালী জাতিকে এমন সমাধানের কথা বলবেন যা কোন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির বা নিজের দায় এড়ানোর জন্য নয় বরং যা হবে একনিষ্ঠ দায়িত্বশীল ব্যক্তির দায়মুক্তির তাড়নার আত্মপ্রকাশ। আমাদের প্রত্যাশা সেই সব ব্যক্তিদের আলোচনা হবে রাজনীতির উর্দ্ধে থেকে দেশ ও জাতির বৃহৎ কল্যাণকে সামনে রেখে দেশ ও দেশের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার এক সত্য সন্ধানী পিপাসার্ত হৃদয়ের দাবি। কিন্তু এইসব আলোচকের আলোচনাও যদি হয় নিজস্ব মতান্ধ রাজনৈতিক, দেশের শান্তি রক্ষায় সাংঘর্ষিক, পক্ষপাতদুষ্ট, সামাজিক নৈতিক অবক্ষয়ের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সমর্থন- তখন অবস্থা আরও জটিল হয়না কি? আর এসব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি উত্তরণ, অনাকাক্সিক্ষত বিষ্ফোরণে রূপ লাভ করেনা কি? তখন কোথায় থাকে আমাদের দায়িত্ববোধ এবং কোথায় থাকে দায়বদ্ধতা?
গত ০২-০৪-২০১৩ ইং মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রিতে এবং প্রায় সপ্তাহখানেক পর গত ০৮-০৪-২০১৩ ইং সোমবার দিবাগত রাত্রিতে চ্যানেল ৭১’র টকশোর স্টুডিওতে আমরা আলোচকদের মাঝে যথাক্রমে সাংবাদিক জ ই মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ড. সাদেকাকে পেয়েছিলাম। এটা ঠিক যে, ০২-০৪-২০১৩ ইং দিবাগত রাত্রির জ ই মামুনের অংশগ্রহণে এবং ০৮-০৪-২০১৩ ইং দিবাগত রাত্রির ড. সাদেকার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান দুটি অনেক টকশোর মত হই-হুল্লোড় ছাড়াই আমরা দর্শকরা শেষ পর্যন্ত উপভ্গো করতে পেরেছি। কিন্তু আপনাদের অনেক বক্তব্যে এবং যুক্তিতে সত্যিকার দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এবং অনাকাক্সিক্ষত পক্ষপাতদুষ্ট আলোচনা আমাদেরকে পীড়িত ও হতাশ করেছে। বিশেষত সাংবাদিক জ ই মামুন তার আলোচনায় যখন অনেকবারই দায়িত্বশীলের দায় স্বীকারের কথা বলতে ছিলেন তখন স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনেও প্রশ্ন জাগে তিনি নিজে আলোচকের কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে গেছেন?
হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে, কয়েকদিন আগের আলোচনার সাথে বর্তমান পরিস্থিতির মাখামাখির প্রয়োজনীয়তা কোথায়? প্রয়োজন এটাই যে, গণজাগরণ মঞ্চ কেন্দ্রিক জ ই মামুনের আলোচনাটি ছিল আলোচনার বৈশিষ্ট্যে নীতিগত; আর বর্তমানে গণজাগরণ মঞ্চের বাস্তব কর্মকান্ড হচ্ছে নীতিগর্হিত, স্ববিরোধী। সুযোগে সময়ে নীতিবান আর সুযোগের অভাবে দুঃসময়ে নীতিবিরোধী- এই যদি হয় আপনাদেরও অবস্থা, তাহলে আপনারা আপনাদের বিপক্ষ শক্তির তাদের গৃহীত যেসব পদক্ষেপের অবলম্বনের উপায় বা পন্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন ঠিক সেই অভিযোগগুলোর দোষে আপনাদেরকেও দুষ্ট বলা যায়না কি?
চ্যানেল ৭১’র স্টুডিওতে ০২-০৪-২০১৩ ইং মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রির আলোচনার ধাচে জ ই মামুন সাহেবকে মনে হয়েছে যে উনি গণজাগরণ মঞ্চের একজন অঘোষিত মুখপাত্র। জ ই মামুন সাহেবকে অনুরোধ করব এই মন্তব্যে আমার উপর এখনই রাগ করবেননা। আপনার স্বযুক্তিপূর্ণ আলোচনার রেশ ধরেই আমি দেখানোর প্রয়াস রাখছি যে, বিভিন্ন বিষয় ও বিভিন্ন দিক থেকে আপনি গণজাগরণ মঞ্চকে যেভাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভাসিত করতে চেয়েছেন এবং যে মানদন্ডে উন্নীত করতে চেয়েছেন- তা শুধুমাত্র যে আপনার পক্ষপাতদুষ্ট অনিরপেক্ষ আলোচনারই নামান্তর তা বর্তমান গণজাগরণ মঞ্চের স্বরিরোধী বাস্তব কর্মকান্ডের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয়েছে।
প্রথমে হরতাল বিষয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বপ্রনোদিত হয়ে হরতাল সমর্থন এবং পালনের নির্দেশনা দিলেন তাতে মনে হয় উনি আমাদের সামনে প্লেটোর সেই কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রকে উপস্থাপন করছেন। সে যাই হোক, সেই রাষ্ট্রের গার্ডিয়ান সমতুল্য নাগরিকদের বৈশিষ্ট্যধারী গণ জাগরণ মঞ্চের নাগরিকরা যখন হেফাজতে ইসলামের লং মার্চ ঠেকানোর জন্য অবরোধ কর্মসূচী দিল এবং স্বপ্রনোদিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বাধ্যবাধকতার অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই পুঁজি করল তখন থাকল আপনার হরতাল অবরোধের সংজ্ঞা আর তার বাস্তব প্রয়োগ?
ইসলামী মূল্যবোধের আঘাতের বিষয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আলাপচারিতার ধারাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে নি¤েœাক্ত সমীকরণ পাওয়া যায়।
প্রথম পর্যায়, হেফাজতে ইসলামের মুভমেন্ট -নাস্তিকতা অনুমোদনের চেষ্টায় কথার ফুলঝুড়ি
পরিস্থিতি গভীর-নাস্তিকতার সংজ্ঞা ও পর্যায় এবং নিজেদের অবস্থান যাচাই
পরিস্থিতি গভীরতর-নাস্তিকতা ও ব্লগে লেখার প্রমাণ
পরিস্থিতি গভীরতম-অবরোধ, লাঠিমিছিল
প্রথম পর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রদের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, আপনারা প্রকাশ্য স্বেচ্ছাচারী নাস্তিকতার অনুমোদন এবং সমর্থন পেতে বা নিতে মুখিয়ে আছেন। আর জ ই মামুন সাহেবও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তো ননই বরং নিরীহ ব্লগারদের ব্যক্তিগত ডায়েরী তুল্য ব্লগে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নাস্তিকতাকে যেভাবে সমর্থন করলেন আরও এই বলে যে, বাংলাদেশে তো নাস্তিকতার শাস্তির বিধান নেই-তখন তার কথাতেও কি এটাই প্রমাণ হয়না যে, ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অবশ্যই সত্য এবং সঠিক। এইক্ষেত্রে, জ ই মামুন সাহেবকে বলতে চাই আমাদের দেশের শান্তিকামী মুসলমানরা নাস্তিকতাকে সমর্থন করেনা তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। তবে সেই মত প্রকাশ যদি হয় কোন অনাকাক্সিক্ষত অশান্তির মূল কারণ, আপন লক্ষ্যে উদ্দেশ্যহীন, কোন অপ্রয়োজনীয় বিপথগামীতা, কোন নোংরা অশুভ মনের পৈশাচিক খেয়াল- তখনতো তাকে সমর্থন করার কারণ থাকেনা। আমরা কি বলতে পারিনা কি যে, আপনারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন?
স্ক্রিনের ব্লগারকে জ ই মামুন যেভাবে প্রশ্ন করলেন তাতে দেখা যায় যে, গণজাগরণ মঞ্চ শুরু থেকেই বিএনপিসহ অনেকেরই সমর্থন লাভ করতে পারেনি এবং শুরু থেকেই তারা এটির বিরোধিতা করে আসছেন। প্রথমদিকে অনেকাংশে সরকারদলীয় সমর্থন লাভ করলেও এখন তারা গণজাগরণ মঞ্চকে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বলছেন। আর সে প্রশ্নের উত্তরে স্ক্রিনের ব্লগার যে হতাশা ব্যক্ত করলেন তাতে ইহা স্পষ্ট হয় যে, এই মঞ্চটি সরকার পৃষ্ঠপোষকতায় সমর্থিত। গণজাগরণ মঞ্চ এবং এর উদ্যোক্তাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা যে, এই মঞ্চের উদ্দেশ্য কি যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি নাকি এই ছদ্মবেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের ইসলাম ধর্মের মূলোৎপাটন? কারণ অনেকের মত আপনারাও বলেন যে, ইসলাম শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরের একার সম্পত্তি নয় বরং আমাদের দেশের সকল মুসলমানের পালিত ধর্ম। তাহলে এই আপনারাই অসাম্প্রদায়িকতার নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলমানের ধর্মীয় মূলে আঘাত করছেন কোন যুক্তিতে এবং কোন শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে? সুতরাং আমরা কি আপনাদের অবস্থান দুই দিক থেকে ব্যাখ্যা করতে পারিনা। হয় আপনারা যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির ছদ্মবেশে ইসলামবিরোধী নতুবা পৈশাচিক মনের খেয়ালী স্বেচ্ছাকারী, বিশৃঙ্খলাকারী। আর এইসব শান্তি বিঘœকারী ব্লগারদের গ্রেফতার এবং গ্রেফতার পরবর্তী রিমান্ডে জ ই মামুন সাহেব যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাতে মনে হয়েছে যে, অনাকাক্সিক্ষত গ্রেফতার এবং রিমান্ড বাংলাদেশে এই প্রথম শুরু হয়েছে। আর এক্ষেত্রে আমাদেরও ছেলে-ছেলে মারামারির সেই কথাটাই মনে হয়েছে যে, আমার ছেলে মারতেই পারে কিন্তু তোর ছেলে চোখ পাকাবে কেন?
যারা পথ থেকে সরে গেছে সেইসব কতিপয় পথভ্রষ্টকে রক্ষার জন্য প্রতিবাদকারী এতগুলো মানুষকে পথে আনানোর ব্যাপারে আপনাদের আলোচনা যদি এতটুকুও ইন্ধন জুগিয়ে থাকে তবে তার দায়ভার আপনাদের উপর বর্তায় কিনা?
গত ০৮-০৪-২০১৩ ইং সোমবার দিবাগত রাত্রে চ্যানেল ৭১ র টকশোর আলোচনায় ড. সাদেকার কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে পারছি না।
প্রথমত ক্যান্টনমেন্ট হতে উৎপত্তি দল বিএনপি সম্পর্কিত যুক্তি খ-ন আমরা টেলিফোনে অংশগ্রহণকারী উপদেষ্টা মহোদয়ের মুখ থেকেই পেয়েছি। আর জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের ১৯৯১ সালের নেগোশিয়েশনের বিষয়টাকে উনি যে রাজনৈতিক প্রয়োজন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ কোন সে নীতির উপর সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত যার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি একই শক্তিতে পরিণত হয়?
স্ক্রিনে হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র এবং আপনার মাঝে কথোপকথনে আমরা দেখতে পাই যে, ইসলাম নারীদেরকে যে মর্যাদা এবং যে স্বাধীনতা দিয়েছে তা আপনারাও সমর্থন করছেন। কিন্তু তারপরেও শালীনতা এবং ইসলামী মূল্যবোধের বিপক্ষের উদাহরণ হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই লাখ মা বোনদের ধর্ষণকে এবং ত্রিশ লাখ বাঙ্গালীর গণহত্যাকে যেভাবে ইসলামী মোড়কে মুড়িয়ে ফেললেন তাতে আপনার ভাষ্যমতে মনে হয় গণধর্ষণ এবং গণহত্যা ইসলাম সমর্থিত একটি বিষয়। এক্ষেত্রে আপনার যুক্তি এবং এই উদাহরণ আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং পরিস্থিতিতে কতখানি সাংঘর্ষিক এবং হঠকারী। তা আপনি আপনার বিবেককেই প্রশ্ন করবেন।
বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে ধর্ষণ-নির্যাতনের উদাহরণকে ঢাকতে গিয়ে আপনি যে পাল্টা উদাহরণ এবং যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তা বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার আলোচনাকে আমাদের কাছে আরও খাটো করেছে বৈকি। ধর্ষণ-নির্যাতনের স্পষ্ট একশটা উদাহরণ দ্বারা যেখানে একশটার দায়ভারই আপনাদের সমর্থিত নারী নীতির উপর চাপানো সম্ভব সেখানে আপনারা কিভাবে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী পরিবারের অনুমিত একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ দ্বারা ইসলামের উপরে একহাজারটা দায়ভার চাপানোর দুঃসাহস দেখান?
সবমিলিয়ে আমরা দেখতে পাই যে, আপনাদের সমর্থিত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা কবিতা পাঠ, গণস্বাক্ষর কর্মসূচী, পতাকা উত্তোলন, আলো প্রজ্জ্বলন ইত্যাদি ইত্যাদি পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা আজ কোন দুঃখে কোন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধ শক্তির প্রতিবাদের পন্থাগুলোকেই আঁকড়ে ধরছেন; বিশেষত যে পন্থাগুলোর বিরুদ্ধে তাদের মুখর সোচ্চার অবস্থান আমাদের নজর এড়ায়নি। তাহলে আমরা কি বলবনা যে, আপনারা আপনাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর সমর্থন না পেয়ে হতাশ এবং দিশেহারা। আর সেজন্যই আজকে শান্তিকামী, নিরীহ আন্দোলনকারীর মুখোশ খসে ফেলে লাঠি হাতে মিছিল করছেন এবং যার নামকরণই করেছেন লাঠি মিছিল। এরকম প্রকাশ্য অস্ত্র সম্বলিত মিছিলের নাম আমরা এর আগে শুনেছি কিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।
এখন আপনাদের কাছে চাওয়া রাখব আপনারা দয়া করে আপনাদের নাস্তিকতার অযৌক্তিক ইসলাম অবমাননাকর আপত্তিকর ব্লগারী, অবরোধ কর্মসূচি, লাঠি মিছিল ইত্যাদি ইত্যাদি স্ববিরোধী কর্মকান্ডের প্রেক্ষাপট, যৌক্তিক দাবি, আত্মসমর্থনপুষ্ট সময়ের আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ইত্যাদির পক্ষে কথা বলবেননা। আর তাই যদি করেন তাহলে আপনাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আপনাদের বিপক্ষ শক্তিরও তাদের দৃষ্টিতে যৌক্তিক, প্রেক্ষাপটের আলোকে গৃহীত কর্মসূচী ছিল বা আছে যা বাস্তবায়নের জন্য তারাও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে বা করছে। যে পন্থাগুলোকে আপনারা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং যেগুলোর সমালোচনা করেছেন। আর আজকে যদি আপনারা আপনাদের নিজস্ব প্রয়োজনে সেই স্ববিরোধী পন্থাগুলোই অবলম্বন করেন তাহলে তাদের এবং আপনাদের চলার পথের পার্থক্য কোথায় পাওয়া যায়? আর এই বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির উত্তরণই বা কিভাবে ঘটে?
তখন আবার হয়ত খুব তাড়াতাড়ি নতুন করে উভয় পক্ষরই অভিন্ন চলার পথের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণমূলক আলোচনা সমালোচনা হবে। আপেক্ষিকতার মানদন্ডে বিচার হবে কে কতখানি ঠিক আর কতখানি বেঠিক, কতটুকু যৌক্তিক আর কতটুকু অযৌক্তিক। তখন কে শান্তির পক্ষে আর কে বিপক্ষে সে বিষয়টা আর হয়ত অতখানি মুখ্য থাকবেনা। আর আমরা হয়ত সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, জ্বালাও পোড়াও, হরতাল-অবরোধ, রক্তপাত, খুনোখুনির মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়ে যাব ঠিক সেই জায়গায় যে জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল। তখন হয়ত অনেকে নিজের ভুল স্বীকার করব, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের মানসিক উদারতার পরিচয় দেব আর আমরাও সাধারণ দেশবাসী অসময়ের উদার ব্যক্তিদেরকে বাহবা দিতে দিতে শান্তি উত্তরণের পথ খোঁজা বাদ দিয়ে অশান্তি এড়ানোর রাস্তা খুঁজব।
আর তখন হয়ত তৃতীয় শক্তির আগমন আপনার আমার আহ্বান নয় বরং দেশবাসীর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়াবে। আর সেই তৃতীয় শক্তি কোন শক্তির পক্ষের হবে তা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে খুঁজে পেতে মনে হয় খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। আর উত্তরণের সমাধান যদি এটিই হয় তবে তা মেনে নিতে আপনি আমি প্রস্তুত আছিতো?
এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের একটুখানি আশা টকশোগুলোর আলোচনায় কবে বন্ধ হবে অনাকাক্সিক্ষত এবং অপ্রয়োজনীয় ঝাল ঝাড়াঝাড়ি, কবে অনভিপ্রেত বাগ্মিতার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে টকশোগুলো টক হওয়ার হাত হতে রক্ষা পাবে এবং কবে সত্যিকার দায়িত্বশীল আলোচনা সংলাপে আমাদের জাতি পাবে উত্তরণের মিষ্টি স্বাদ?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads