মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

সেকুলার রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার


বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই সোচ্চার। আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করে থাকেন সেকুলার রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করার পক্ষে। আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার জন্য নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝানো হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আদর্শিকভাবে নয়, বরং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইসলামপন্থী রাজনীতি নির্মূল করা এখন ক্ষমতাসীন দলের কৌশল হিসেবে দেখা দিয়েছে। একই সাথে ইসলামপন্থী রাজনীতিকে মোকাবেলা ও জনসমর্থনের জন্য আবার ধর্মকেই তারা ব্যবহার করছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার ততই বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিয়তুল মুদার্রেসিনের নেতাদের সাথে বৈঠকে বলেছেন, ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে (প্রথম আলো ৫ সেপ্টেম্বর)। এর আগে সেনানিবাসে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের উদ্বোধনের সময় বলেছেন, ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই কাজ করেছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জাতীয় প্রেস কাবে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, এ পর্যন্ত যত সরকারপ্রধান এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই ইসলাম ধর্মের যথাযথ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। যারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেশকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনাই কেবল তাদের কঠোরহস্তে দমন করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কয়েকবার হজ পালন করেছেন এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তার পক্ষেই কেবল বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব (কালের কণ্ঠ ২০ আগস্ট)। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তার মা কতটা ধর্মভীরু তা তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও নৌপরিবহনমন্ত্রী যখন ইসলাম রক্ষার কথা বলছেন, তখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, যারা রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কেউ ধর্মকে ব্যবহার করতে না পারে। ধর্ম সবার জন্য। নির্বাচন কমিশনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টিতে নীরব থাকতে পারে না (ইত্তেফাক, ১২ জুলাই)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের সব পথ রুদ্ধ করতে হবে। এসব বক্তব্য থেকে আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগ নেতারা ধর্মের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে নিজেরাই একটি সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছেন। ধর্মকে যতই রাজনীতির বাইরে রাখতে চান না কেন, ধর্ম নিয়েই তাদের কথা বলতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রমাণ করতে চেয়েছেন অপরাপর রাজনৈতিক দলের চেয়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাই ধর্ম রক্ষায় বেশি ভূমিকা রাখছেন। দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল দূরে থাক খোদ আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করা যাচ্ছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মের রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণের কাজটি আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই শুরু করে দিয়েছে। তবে এ কাজটি এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এর কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে হেফাজতে ইসলামের উত্থান। শাহবাগে সমবেত কিছু ব্লগার মহানবী সা:-কে অবমাননার প্রতিক্রিয়া হিসেবে হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটেছিল। ব্লগার রাজীব হায়দার ওরফে থাবাবাবা নিহত হওয়ার পর তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। থাবা বাবার ব্লগে রাসূল সা: ও ইসলাম অবমাননা করা হয়েছিল। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। রাসূল সা:-এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন তাদের কর্তব্য হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। ফলে আল্লামা আহমদ শফীর ডাকে লাখো মানুষ রাজধানীর দিকে ছুটে এসেছিলেন। এ দেশের মানুষের শিকড়ের সাথে; অস্তিত্বের সাথে যে ধর্মের সরব উপস্থিতি তা আওয়ামী লীগের উগ্র ধর্মনিরপেক্ষবাদী বুদ্ধিজীবী ও নীতিনির্ধারকেরা কখনোই উপলব্ধি করতে পারেনি। এখন প্রধানমন্ত্রী যখন ইসলাম রক্ষার কথা বলেন, আবার একই সাথে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থীদের বিষোদগার করেন, তখন তার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। এটি নিছকই ভোট পাওয়ার রাজনীতি হিসেবে মানুষের সামনে বিবেচিত হয়। ইসলামপন্থীরা নারী অধিকারের বিরোধিতা করছেন, আওয়ামী লীগের প্রচারবিদেরা তা তুলে ধরার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে নারীরা রাস্তায় বেরোতে পারবে না। হেফাজতে ইসলামের কারণে গার্মেন্টকর্মীরা চাকরি হারাবে এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর নেতৃত্বে গার্মেন্টকর্মীদের সমবেত করা হয়েছিল এমন স্লোগানকে সামনে রেখে। কিন্তু তারা ভুলেই গেছেন দেশের কওমি মাদরাসাগুলোয় যে অভাবী শিশুরা লেখাপড়া করে তারা গার্মেন্টকর্মীদের সন্তান বা ভাই। মাদরাসার শিক্ষকদের সাথে তাদের ভালোই যোগাযোগ আছে। কারণ আলেমরাই তাদের সন্তানদের থাকা-খাওয়া এবং অভাবের মধ্যেও নৈতিক মানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তারা এটিও জানেন, আলেমরা কখনোই বলেননি যে নারীরা গার্মেন্টে চাকরি করতে পারবেন না। ফলে আলেমসমাজের বিরুদ্ধে নারীদের বিশেষ করে গার্মেন্টকর্মীদের ক্ষেপিয়ে তোলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ধর্মকে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, ব্যক্তিগত আক্রোশের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করছে। ড. ইউনূসের ওপর আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকছাড়া করার পর নানা উপায়ে সম্মানহানির চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে লাখ লাখ ইউনূসবিরোধী প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকদের দিয়ে জোর করে এসব প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এসব প্রচারপত্রে ড. ইউনূসকে ইসলামের আদর্শের বিরোধী হিসেবে তুলে ধরে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত নারীবাদীরা প্রান্তিকপর্যায়ের নারীর স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছেন। এমনকি গ্রামীণ ব্যাংক আর ড. ইউনূসের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটছে বলেও এসব বুদ্ধিজীবী ড. ইউনূসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক বা ড. ইউনূস নিয়ে এ দেশের আলেমসমাজের বাড়তি কোনো আগ্রহ ছিল না, এখনো নেই। কিন্তু তারা কখনো গ্রামীণ ব্যাংক; নারীর ঋণ গ্রহণ বা ড. ইউনূসের কাজের বিরোধিতা করেননি। তাকে ইসলামবিরোধী ব্যক্তি হিসেবেও তুলে ধরেননি। সুদখোর বা সমকামিতার সমর্থক বলে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করেনি; বরং আলেম-ওলামারা সামাজিক শক্তি হিসেবে তাদের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজের সবচেয়ে অভাবী মানুষের সন্তানদের ন্যূনতম বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধানের চেষ্টা করেছেন। ফলে এসব মানুষ যখন ঈমান রক্ষার ডাক দিয়েছেন, তখন লাখো মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এসব মানুষই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। সরকার সমর্থক প্রচারযন্ত্র ও উগ্র ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা যখন ধর্মপ্রাণ এসব মানুষকে জঙ্গি, নারীবিরোধী হিসেবে প্রচারণা চালায়, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরো বাড়তে থাকে। সরকার দেশের আলেমসমাজ ও ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু ৫ মের পর বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনেকখানি বদলে গেছে। সাধারণ মানুষের সাথে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিগুলোর সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে তা স্পষ্ট হয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার সমর্থক প্রচারযন্ত্র ও বুদ্ধিজীবীদেরও মাঠে নামানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এদের প্রধান টার্গেট দেশের প্রধান ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী। দলটির শীর্ষ নেতাদের একের পর এক ফাঁসির দণ্ড ঘোষণার পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার, নির্যাতন ও পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এর সাথে সমানতালে চলছে প্রচারণা। সম্প্রতি এই প্রচারণার অংশ হিসেবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদীর ছেলেকে ঢাকায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা হয়েছে। পাকিস্তানি এই নাগরিক এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে কথা বলছেন। যদিও তিনি নিজে জামায়াতের রাজনীতির সাথে কখনো সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। জামায়াতের রাজনীতির সমালোচনা যেকেউ করতেই পারেন। মওদূদীর ছেলের সমালোচনাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সমালোচনার ধরনটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার নাতি ড. তারিক রামাদান মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক কৌশলের যথেষ্ট সমালোচক। বিখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ মোহাম্মদ আসাদের ছেলে তালাল আসাদও তার বাবার দর্শন ও নীতি কৌশলের সমালোচক। যদিও তালাল আসাদ বা তারিক রামাদানের পাণ্ডিত্য ও দার্শিনিক প্রজ্ঞার সাথে ফারুক মওদূদীর কোনো তুলনা হতে পারে না। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বর্তমান সময়ে ইসলামপন্থী রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের কোনো ধারণা আমরা দেখছি না। স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে আরেকজনের চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির যেকেউ সমালোচনা করতে পারেন। তবে সমালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয় জানা ও বোঝা খুবই জরুরি। মওদূদীর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা নিয়ে শুধু বাংলাদেশে বা উপমহাদেশে আলোচনা হয় এমন নয়; রাজনৈতিক ইসলামের আলোচনা করতে গেলে মওদূদীর আলোচনা করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বেও তার চিন্তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে। বাংলাদেশের আলেমসমাজের মধ্যেও মাওলানা মওদূদীর চিন্তাধারার কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এ ভিন্ন মত থাকাই স্বাভাবিক। এ ভিন্ন মত আছে বলে চিন্তার বিকাশ ঘটছে। সাধারণ মানুষ তুলনামূলক পর্যালোচনার সুযোগ পাচ্ছে। মওদূদীর ছেলে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি করে। কিন্তু মওদূদীর রাজনৈতিক কর্মকৌশলে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির সামান্যতম ধারণাও নেই। বরং তিনি গণ-আন্দোলনের জন্য একটি রাজনৈতিক কাঠামোর ধারণা দিয়েছেন। মওদূদী ছেলের এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় তিনি তার বাবার বইগুলো পড়েননি বা তার রাজনৈতিক দর্শন বোঝার চেষ্টাও করেননি। অবশ্য তিনি নিজেই বলেছেন তার বাবার বইগুলো নাকি পড়তে দেয়া হতো না। শাহরিয়ার কবীরের সাথে দাঁড়িয়ে মওদূদীপুত্র জামায়াতের রাজনীতিকে যখন সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি বলেন, তা কৌতুকরও বটে। দুনিয়ায় বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সন্তানেরা মা-বাবার আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারেননি। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীদের নৈতিক পরাজয় হচ্ছে পাকিস্তান থেকে মওদূদীপুত্রকে ভাড়া করে এনে জামায়াতের রাজনীতিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই কিংবা একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাদের শাস্তি দিতে হবেÑ এমন কথা একজন পাকিস্তানি নাগরিককে দিয়ে বলানোর অর্থ হচ্ছে তাকেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের পথ করে দেয়া। জামায়াত নেতাদের বিচার ও রাজনৈতিক অধিকারহরণের প্রক্রিয়া নিয়ে যখন পশ্চিমা মানবাধিকার সংগঠন কথা বলছে, তখন আবার আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা তার সমালোচনা করছেন। মওদূদীপুত্রকে ঢাকায় এনে জামায়াত নেতাদের শাস্তি বা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে একজন ভাড়াটিয়া সাক্ষী হাজির করা হলো কি না সে প্রশ্নও তোলা যায়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামপন্থী রাজনীতি মোকাবেলায় ক্ষমতাসীনদের এসব তৎপরতা অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আদর্শিক রাজনীতিকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করা উচিত। এ ধরনের প্রোপাগান্ডা দিয়ে জনমতকে দীর্ঘ সময় প্রভাবিত করা যায় না; বরং মানুষ এর পেছনের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করে। ব্যাপক প্রচারণার মধ্যেই শাহবাগের পেছনের শক্তিকে মানুষ চিনতে পেরেছিল বলেই হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটেছিল। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads