শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৩

একটি নির্বাচন : অতঃপর...


২০০৫ সাল হঠাৎ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। মহাটেনশনে পড়ে গেলাম। মাত্র লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায় মনোযোগী হলাম, বয়স তেমন হলো না, বিয়েও করিনি। এ মুহূর্তে নির্বাচন করব! পরিবারের কাছে পরামর্শ চাইতেই মা তেলে বেগুনে জ¦লে উঠলেন। অন্যদেরও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া। তাদের পরামর্শ এ মুহূর্তে নির্বাচন না করার। বন্ধুদেরও বেশির ভাগ নয় এর পক্ষে। তার পরও কিছু শুভাকাক্সীর উৎসাহে সাহস পেলাম। তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। যথাসময়ে নির্বাচন হলো, তিন কেন্দ্রে প্রথম হলাম এবং আশার চেয়ে বেশি ভালো হলো ফলাফল। নির্বাচিতকে অভিনন্দন জানালাম। শুরু হলো পরবর্তী নিবার্চনের জন্য প্রস্তুতি। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে। অংশীদার হতে লাগলাম। এলাকার সমস্যাগুলো যতটুকু সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করার চেষ্টা করতে লাগলাম এবং এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে যেতে লাগলাম। ইতোমধ্যে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক জাতীয়ভাবে পুরস্কৃতও হলাম। দেখতে দেখতে এক সময় আবার চলে এলো চসিক নির্বাচন-২০১০। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুকূলে নয়। তার ওপর একের পর এক হুমকি আসতে থাকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য। পরিবারসহ বন্ধু, শুভাকাক্সীদের পরামর্শ চাইলাম। এবার সবাই এক পায়ে দাঁড়িয়ে, নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে, যা হওয়ার হবে। উৎসাহ পেয়ে আবার নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হলাম। সাংগঠনিক সহকর্মী, বন্ধু, শুভাকাক্সীসহ সাধারণ মানুষে অকান্ত পরিশ্রমের ফলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলাম। ফলাফল ঘোষণাকালে সমঝোতার জন্য অর্থলোভ ও হুমকি দুটোই শুরু হয়ে গেল। ফলাফল ঘোষণা হলে তিন-চার কেন্দ্রে হামলা করে আমার কর্মীদের আহত করা হলো। এমনকি আমার প্রধান নির্বাচনী অফিসে হামলার প্রস্তুতি চলল। প্রশাসনের কাছে সহযোগিতার চাইলে সাথে সাথে আমাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সাহায্য করল। পরদিন পরাজিত প্রার্থীর বাসায় গেলাম শুভেচ্ছাবিনিময় করতে, তখন যে আচরণ করলেন অবাক হয়ে গেলাম! অথচ গতবার তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর আমার বাসায় গেলে তার সাথে ভালো আচরণ করেছিলাম। তিনি পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য শুরু করলেন একে পর এক মিথ্যা মামলা। চুরি থেকে শুরু করে বোমা বানানোর মামলা। একের পর এক হামলা হতে থাকে। উন্নয়নমূলক কাজে বাধা, কন্ট্রাক্টরকে মারধর, মিস্ত্রিকে মারধর, নির্মাণসামগ্রী চুরি, রাতের আঁধারে ভাঙচুর, ওয়ার্ড অফিসে হামলা, উন্নয়নমূলককাজ উদ্বোধনে বাধা, ভিত্তিপ্রস্তর ভাঙচুর, অফিস স্টাফদের হুমকি, পদে পদে বাধা প্রদান, স্কুল-কলেজ, কাব, সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দেয়া হতো, আমাকে যেন কোনো প্রোগ্রামে দাওয়াত দেয়া না হয়। এমন কোনো নির্যাতন নেই, যা আমার ওপর করা হয়নি। এলাকাবাসীর ভালোবাসা আর সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যসহকারে এসব নির্যাতন মোকাবেলা করে চলেছি। প্রতিটি ঘটনা মেয়রসহ সতীর্থ কাউন্সিলরদের অবহিত করেছি। তারা সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্য ধরতে বলতেন। এলাকার জনগণ ও প্রসাশনকে আমার বিমুখ করার জন্য হেন কাজ নেই, যা প্রতিপক্ষ করেননি। একবার দেখা হলে আমাকে কটাক্ষ করে বলেন, বড় নেতা হতে হলে এ রকম হামলা মামলার শিকার হতে হয়। বললাম, এ ধরনের নেতা আমি হতে চাই না। কথা হলো, এভাবে যদি জনপ্রতিনিধিদের ওপর নির্যাতন চলে, প্রতি পদে প্রতিবন্ধকতা আসে, তবুও যদি প্রশাসনিক কোনো সহযোগিতা না পাওয়া যায়, তা হলে তো কোনো ভালো মানুষ জনগণের কাজে এগিয়ে আসবে না। প্রথমে হুমকি নির্বাচন না করতে, হুমকি নির্বাচনী কাজ করতে দেবে না, নির্বাচনী কেন্দ্রে যেতে দেবে না, শপথ নিতে দেবে না, এরপর অফিসে বসতে দেবে না, উন্নয়ন করতে দেবে না। এভাবে হেন চক্রান্ত নেই যা আমাকে মোকাবেলা করতে হয়নি। এত কিছুর পরও সবার সহযোগিতায় ওয়ার্ডের সেবামূল্যক উন্নয়ন কাজ এক দিনের জন্য থেমে থাকেনি। আর সফলতা ব্যর্থতা মূল্যায়নের দায়িত্ব ওয়ার্ডবাসীর ওপর ছেড়ে দিলাম। আমাকে দেখে অনেক শুভাকাক্সী বলে থাকেন, আগে ভালো ছিলে কেন এসব ঝামেলায় জড়িয়ে নিজের জীবন শেষ করছ? আসলে তো তাই, এলাম মানুষের সেবা করতে, সেখানে আমি নিজেই হয়রানির শিকার। এসব ভাবতে অবাক লাগে। আরো অবাক লাগে প্রশাসনযন্ত্রের ব্যক্তিদের আচরণ দেখে। সরি, ওপরের নির্দেশ... জানি না কোন পথে চলেছে এ দেশ! কবে সমাপ্ত হবে এ ধরনের আচরণ? অবশ্যই বিশ্বাস করি ষড়যন্ত্রীরা একদিন তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবে। সেদিন বেশি দূরে নয়। ভবিষ্যতের একটি সুন্দর সকালের আশায় কাজ করে চলেছি। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads