বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ হতাশাব্যঞ্জক, অসত্য ও চাতুর্যপূর্ণ !


প্রধানমন্ত্রী ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে জনগণের মধ্যে যে শঙ্কা, উৎকণ্ঠা ছিল তার সাথে হতাশা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল ও সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করেছিল। তিনি তার ভাষণে অনেকগুলো অসত্য ও চাতুর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। যার ফলে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন আর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তিনি তার ভাষণের শুরুতেই বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা জনগণের সেবা নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য! জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির জন্যে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকরীর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন!  ৯,৭১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছেন! মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত করেছেন! রমজানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল! সমুদ্র বিজয় করেছেন! সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দমন করেছেন! সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন ! আইনশৃংখলার উন্নতি করেছেন! বিএনপির (অপকর্মের) কারণে ১/১১ এসেছিল! বিরোধী দল মসজিদে আগুন দিয়েছে! কুরআন পোড়ায়! বোমা মারে! মাদ্রাসার নিরীহ এতিম ছাত্রদের ঢাকায় এনে হত্যা করেছে! বিরোধী দল দা, কুড়াল দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়! ৪, ৫ ও ৬ মে শান্তিপূর্ণ ভাবে (হেফাজতের) আন্দোলন দমন করেছেন! বিরোধী দলকে সংসদে এসে মুলতবী প্রস্তাব আনতে বলেছেন! সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন! ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন! এসবই ছিল প্রধানমন্ত্রীর স্বভাব সুলভ ও পুরানো কথা। নতুন করে বলেছেন, সকল দলের সমন্বয়ে নির্বাচনকালিন সরকার গঠনে বিরোধী দলের সদস্যদের তালিকা চেয়েছেন! সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন! সবশেষে ২০২১ ভিশণ বাস্তবায়নেরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন !
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মাঝে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা যদি জনগণের সেবা তিনি নিশ্চিত করতে চান, তা হলে ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে বাদ দিয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে নিজের পছন্দের লোকদের প্রশাসক হিসেবে বসালেন কেন ? তাছাড়াও সারা দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রায় দুই শত ইউপি চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধিদেরকে বরখাস্ত করে সেখানে আ’লীগ দলীয় লোকদের বসানো হলো কেন ?
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির জন্যে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকরীর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন ! জনগণের প্রশ্ন, যদি তাই হবে তবে সরকারের মেয়াদ শেষে কেন ? ৪ বা ৫ বছর আগে কোথায় ছিলেন ? জনগণ মনে করে এতে সরকারের হীন উদ্দেশ্য থাকতে পারে ! আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে আগামী নির্বাচনে আ’লীগের পক্ষে কাজ করার জন্যে এটা করা হয়েছে। কেউ এমনও বলছেন, এটা ঘুষ ! নয় কি ?
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, ৯,৭১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছেন ! তার এ বক্তব্য চাতুর্যপূর্ণ ! জনগণকে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, বিএনপির আমলের ৩,২২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থলে তিনি প্রায় তিন গুণ বেশী উৎপাদন করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, তিনি এ যাবত যতোগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন সবগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার যোগফল হচ্ছে ৯,৭১৩ মেগাওয়াট। ১৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সর্বনি¤œ ৪,৮২২ মেগাওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ৬,১৫২ মেগাওয়াট। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কপটোক্তি বা চাতুর্যপূর্ণ নয় কি ?
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বলেছেন, তিনি মানুষের মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত করেছেন! এটাও চাতুর্য পূর্ণ। কারণ যারা অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন করছে, প্রকৃতপক্ষে তাদেরই আয় বেড়েছে। আয় বেড়েছে আ’লীগের, যুবলীগের, ছাত্রলীগের, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, মামলার কারণে পুলিশের আর রিক্সা, টেক্সি, বাস, ট্রাক পরিবহন শ্রমিকদের। এদের বাহিরে কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক, প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মচারীদের সহ অন্যদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী। সরকার যদি সরকার দলীয় লোকদের আর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আয়ের হিসাব করে মাথাপিছু আয়ের হিসাব ধরা হয় তা হলে এটা হবে চাতুর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসছে সরকারের সফলতার মধ্যে সমুদ্র বিজয়ের কথা। সমুদ্র বিজয় নিয়েও সরকার ও সরকারি দল আ‘লীগ সুস্পষ্ট মিথ্যাচার করছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পরিধি হচ্ছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭১ বর্গ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমরা পেয়েছি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটার। আর মিয়ানমার পেয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩২ বর্গ কিলোমিটার। নোম্যানস্ এ্যারিয়া বা নোম্যানস্ জোনস্ হিসেবে বাদ দেয়া হয়েছে ৮ বর্গ কিলোমিটার। মিয়ানমারের চেয়ে আমরা কম পেয়েছি ৬০ হাজার ২০১ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশের ৫ টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ রয়েছে। ৫ টি অনুসন্ধান কূপ সমেত ৬০ হাজার ২০১ বর্গ কিলোমিটার আমাদের হাত ছাড়া হয়ে গেল। অথচ সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে আমরা সমুদ্র জয় করেছি! এটা একটা প্রতারণা ও জ্বলন্ত মিথ্যাচার নয় কি ?
সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তার মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নেই বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। কারণ প্রতিদিনই পত্রিকা খুললেই খুন ধর্ষণ আর ডাকাতির খবর পাওয়া যায়। দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু ডুবে গেলো। শেয়ার মার্কেট, ডেসটিনি, যুবক, হলমার্ক আরো কত কি ? তারপরও কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে হবে ? জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন আর জঙ্গিবাদের কথা বলছিলেন, তখন সে অধিবেশনেই রব উঠেছিল, বাংলাদেশে কখনোই জঙ্গিবাদ ছিল না। বর্তমানে আ’লীগের বানানো জঙ্গিবাদের ধুয়া তোলা হচ্ছে। এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যেই করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি’। তিনি অবশ্য এমন কথা গত ১ জানুয়ারী ২০১৩ইং তারিখেও শেরে বাংলা নগরে বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি”! একই দিনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথিত বড়ভাই, প্রাক্তন স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ বলেছেন, “হত্যা-খুন-গুম-দুর্নীতি আর দু:শাসন ছাড়া এ সরকার আর কিছুই দিতে পারেনি”। হত্যা-খুন-গুম-দুর্নীতি আর দু:শাসন, এগুলোর যোগফল কি সুশাসন?
আইন শৃংখলা উন্নতির দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে, অথচ প্রতিদিনই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এর ঘটনা ঘটছে। এমনকি আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা পর্যন্ত এহেন অপকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে। তারপরও কি জনগণকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিশ্বাস করতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন! আসলে কি যাদের বিচার করা হচ্ছে তারা যুদ্ধাপরাধী? নাকি যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী? প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে ৪২ বছর পর রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে আর বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার মানসে এ বিচারকার্য্য পরিচালিত হচ্ছে বলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, ১/১১ সরকার বিএনপির কারণে এসে জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল। অথচ তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে আ’লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ১/১১ সরকার আ’লীগের আন্দোলনের ফসল! ম. ইউ আহমদের অবৈধ সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের সুবিধা ভোগী একই ব্যক্তির একই মুখে দুই রকম কথা তাও কি দেশের সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে?
মসজিদে আগুন দেয়া আর কুরআন শরীফ পোড়ানোর জন্যে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলকে দায়ী করেছেন। অথচ গত ৫ মে হেফাজতের সমাবেশের দিনে বায়তুল মোকাররম সহ যে এলাকায় কুরআন শরীফ পোড়ানো হয়েছে সে এলাকাটি ছিল আ’লীগ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বিরোধীদল কিভাবে গেলো তা বোধগম্য নয়। তাছাড়াও ঘটনার পরপর বলা হয়েছিল টিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। সে কাজটি এখনো করা হয়নি কেন? এটাকি শুধুই বিরোধীদলকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে রাখা হয়েছে? সাধারণ মানুষ সরকারের এ সামান্য কূটকৌশল সম্পর্কে মোটামুটি বুঝে গেছে।
এতিম মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে এনে বিরোধীদল হত্যা করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন! পক্ষান্তরে তিনি কি স্বীকার করে নিলেন যে ৫ ও ৬ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে এতিম মাদ্রাসার ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে?
দা, কুড়াল নিয়ে রাস্তায় নামার কথা বলে বিরোধীদল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন! কিন্তুু তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে যখন ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকার রাজপথ দখলের কথা বলেছিলেন, সেটা কি শান্তির কথা বলেছিলেন? তার নির্দেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন সহ সারাদেশে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আর গুলী করে প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ হত্যা করা হলো সেটা কি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নয়?
২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী! এটা কি আ’লীগের কৃতিত্ব না বিরোধীদল শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর চেয়েছিল তাদের কৃতিত্ব? বিরোধীদল হিসেবে আ’লীগ ২০০৬ সালে যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়েছিল, রাজপথে মানুষ হত্যা করেছিল, ২০০১ সালে বিরোধীদল এমনটি ঘটাতে চায়নি বা ঘটায়নি। অতএব, ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ ভাবে আ’লীগের ক্ষমতা হস্তান্তর এটা তৎকালীন বিরোধী দলেরই কৃতিত্ব।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন। এটা একটা চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্য। সাধারণ মানুষ সার্চ কমিটি কি তা জানতে ও বুঝতে চায় না। মানুষ চায় যাদেরকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা দল নিরপেক্ষ কি না? তারা সৎ ব্যক্তি কি না? তারা কারো হুকুমের তাঁবেদার কি না? এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের ব্যাপারে ভালো ধারণা করার কিছু পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদেরকে সরকারের প্রতি অতিআগ্রহী বা আনুগত্যশীল অথবা আর একটু বেশী কিছুই মনে হয়! অর্থাৎ সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে সরকারের একান্ত অনুগত লোকদেরকেই বেছে নিয়েছে বলে মনে হয়। ২০১২ ইংরেজী বর্ষের বিদায়ক্ষণে ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন,“বর্তমান সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে”। ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ ইং তারিখে তার এ বক্তব্য জনমত জরিপের জন্যে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রশ্নাকারে দেয়া হলো, “বর্তমান সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে” আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সঠিক মনে করেন? ঐ জাতীয় দৈনিকের ৯৫.৬৯% পাঠক বলেছেন, ‘না’। ৪.০৫% পাঠক বলেছেন, ‘হ্যাঁ’।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিরোধীদলকে সংসদে এসে তাদের দাবি দাওয়ার পক্ষে মূলতবী প্রস্তাব দিতে বলেছেন। এটা তার আর একটা বক্তব্যের চতুরতা। যখনই বিরোধীদল মূলতবী প্রস্তাব আনবে তখনই কন্ঠ ভোটে তা নাকচ হয়ে যাবে! কারণ সরকারিদলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছে বিরোধীদলের নগণ্য সংখ্যক সংসদ সদস্যগণ টিকবেন না। প্রস্তাব সংসদে নাকচ হয়ে গেছে বলে তখন সরকারি দল মজা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে নির্বাচনকালিন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করে বিরোধীদলকে আহ্বান জানিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে নামের তালিকা দিতে। তিনি তার বক্তব্যে পরিষ্কার করেননি নির্বাচনকালিন সরকারের প্রধান কে হবেন বা থাকবেন। বিরোধীদল বলছে কোন অবস্থাতেই শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না ইত্যাদি। দেশের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বিএনপি যদি আ’লীগের বা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা হলে দল খন্ড খন্ড হয়ে যাবে।
সবশেষে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ২০২১ ভিশণের স্বপ্নের কথাও বলেছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ তার ভাষণে আশ্বস্ত হওয়ার পরিবর্তে নিরাশ হয়েছে। কারণ তার ভাষণে অনেক অসত্য ও চতুরতা স্থান পেয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads